খেলা জমবে কতটুকু! (কানধরা বেশি অপমানের না দিগম্বর হওয়া?) একটি নীল-মুসাফিরের কলাম
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ১৯ মে, ২০১৬, ১১:৫৫:০৭ রাত
১.শিক্ষক বনাম ছাত্র
প্রথম দুইদিন ফেসবুকের "কানধরা" বিষয়ক স্ট্যাটাস বুঝতে পারি নি। যেহেতু টিভি দেখি না ( সব চ্যানেলের উপস্থাপক, সংবাদপাঠক, সঞ্চালকগুলোকে মনে হয় চরম বেয়াদব; মুন্নী সাহা মার্কা। এদের প্রতি সব সময় ওয়াক থু!) সংবাদপত্র পড়া হয় না নিয়মিত, তাই খবর পেতে অনেক দেরি হলো। গতকাল জানলাম কোনো এক স্কুল শিক্ষক জনাব "শ্যামল কান্তি"কে ধর্ম-অবমাননার জন্য মাননীয় সাংসদ সামান্য "কানধরা" করিয়েছেন। এতেই নাস্তিক, বাম-রাম, প্রগতির গতিহীন উন্মাদরা ইস্যু পেয়ে গেল আর এতে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসীরা আরেকটু এগিয়ে দিলেন এবং সে এখন তিন তারকা বিশিষ্ট্য জাতীয় তারকা। ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা একজোটে প্রতিবাদ করছেন তার হারানো মান-সম্মান(?) ফিরিয়ে আনতে আর আমাদের ছাত্র নামক গর্দভরা নিজের কান ধরে ক্ষমা চাইছে। একই সময় ছাত্রলীগ কর্তৃক শিক্ষককে দিগম্বর করার খবরটি কেন এতো আলোচিত হলো না বুঝতে পারছি না। মনে হয় ন্যাংটা করাটা ততটা অসম্মানজনক নয়!!
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার ভোরে থেলাসেমিয়া নামক জটিল রোগে আক্রান্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র হাফিজুর রহমান পুলিশি হেফাজতে মারা যায়। তাকে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হত্যার সন্দেহভাজন আসামী হিসেবে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। একজন নিরীহ ছাত্র পুলিশের হাতে মারা পড়বে আর আমাদের মহামান্য শিক্ষকরা কি চুপ থাকতে পারেন? দেখি তারা কী করেন। আর আমাদের কোমলমতি ছাত্ররা আশা করি এবার প্রতিকী প্রতিবাদ হিসেবে মৃত্যুর মহড়া দিবে। যদি না করেন তাহলে ওয়াক থু!!
তার পরিচয় সে শিবিরের কর্মী। শিবির তো আর নিষিদ্ধ সংগঠন নয় বা তারা ভিনগ্রহের মানুষ নয় বা ভিন্নপ্রজাতী নয়?
যারা যারা শিক্ষক বিষয়ক স্ট্যাটাস দিয়েছেন; কানধরা বিষয়ক থি্উরি আউড়িয়েছেন আশা করি তারা এবার একজন নিরীহ ছাত্র হত্যা নিয়ে স্ট্যাটাস দিবেন। নইলে আপনাদের প্রতিও আমার ওয়াক থু!
একদিকে গডফাদার পরিবার অপরদিকে সুশীল সমাজ! একদিকে বাম অপরদিকে আওয়ামীলীগ; দেখা যাক খেলাটা কতটুকু জমে। সময়ই বলে দেবে হাসিনার শেষ চাল কোনটা? কে হয় বলির পাঠা!!
কানধরা দিবস: হুজুগে বাঙ্গালীরা অনেক অঘটন ঘটন পটিয়সী। সুতরাং তারা যেভাবে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনকে মাতৃভাষা আন্দোলনে রূপান্তরিত করে "বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস" নামে পালন করে তেমনি একজন নিরীহ সংখ্যালঘু শিক্ষকের অপমানে ব্যথিত হয়ে একদিন (১৩ মে) বিশ্ব কানধরা দিবস পালন করতে পারে।
২. ড. জাকির নায়ক ও পিসটিভি
কয়দিন আগে খবর দেখলাম (ফেসবুক ও সংবাদপত্রে) একশ্রেণীর হুজুর পুলিশের আইজির কাছে পিসটিভি বন্ধের দাবি জানান। আমাদের দেশে পীরপন্থী-মাযারপূজারী-কওমী/দেওবন্দী সহ অনেক তসবীহধারী হুজুররা ড. জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে ফতোয়া দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত! তার পিসটিভি বন্ধেরও দাবি জানান। অথচ তারা কখনো সরকারের কাছে দাবি জানাননি আমাদের সংস্কৃতি বিরোধী, ধর্মবিরোধী ইন্ডিয়ান চ্যানেলগুলো বন্ধের ব্যাপারে।
কারো সাথে মতের বিরোধ, আক্বীদার বিরোধ হতেই পারে, তাই বলে তার সকল ভালোকাজের বিরোধিতা করতে হবে কেন? পিসটিভি দেখে কেউ চুরি-ডাকাতি-ধর্ষণ-হত্যা করা শিখে না। স্টার চ্যানেল আর জি চ্যানেল দেখে এদেশের যুবতী থেকে বিবাহিত নারীরা আজ পথভ্রষ্ট। অনেক পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে। আজ পর্যন্ত কোনো সুশীল বা হুজুররা জোরালো প্রতিবাদ করেন নি যতটা ঝড় উঠেছে "কানধরা"গল্পটা।
ব্যাংক দূর্নীতি ও ভারতীয় আগ্রাসন: হাসিনা সরকার যখনই কোনো বড় দূর্নীতি আর অঘটন ঘটিয়ে ফেলে সাথে সাথেই নতুন একটা ইস্যু জনগণের সামনে তুলে ধরে! জনগণ সেটা নিয়ে অনেকদিন জাবর কাটেন আর অন্যদিকে আসল ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যায়।
অতীতে হলমার্ক, ডেসটিনি, শেয়ারবাজার থেকে শুরু করে
ব্যাংক ডাকাতী (কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রাষ্ট্রায়ত সকল ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা উধাও), এটিএম বুথ কলঙ্ক সব ধামা চাপা পড়ে গেছে।
এবার ভারতীয় আ্গ্রাসন যখন সামনে চলে আসে তখন একজন শ্যামল কান্তি নাটক সাজানো হলো। সুন্দরবন গেলে তিস্তা গেল, পুলিশ গেল. বিডিআর গেল! সামনে কী আছে কে জানে?
৩. বি এন পির রাজনীতি ও মওদুদীবাদ:
হাসিনা সরকার তাদের চিরস্থায়ী ক্ষমতার সূত্র মোতাবেক দেশকে দুইভাগে বিভক্ত করার পরও বি এন পি আজ পর্যন্ত ঠিক করতে পারল না তারা আসলে কোন দলে? আবার একা একাও আন্দোলন করতে না পেরে ইঁদুরের মতো গর্তে লুকিয়ে থাকে আর কালোবিড়াল ঠিকই গর্ত থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে সাবাড় করছে। যদি আওয়ামীলীগ আর রামদের কথায় কান না দিয়ে জামাত সহ সকল আওয়ামীবিরোধীদের নিয়ে মাঠে নামত কবেই আওয়ামীলীগের মসনদ উলটে যেতো।
আমাদের কওমী হুজুররা নতুন এক শব্দ চালু করেছেন " মওদুদীবাদ"। তাদের অবস্থা এতোই নাজুক যে, নিজের ঘরেই পরবাস। নিজেরা শতধা বিভক্ত, কী রাজনীতিতে কী আদর্শে! অথচ ইসলামের নামেই তারা আরো বিভক্তি বাড়িয়ে চলেছে। আমার মনে হয় এরা সামান্যতম লেখাপড়াও করে না। আল্লামা মওদুদী কী এমন আদর্শ তৈরি করলেন; কী এমন মতবাদ বাড়ালেন ইসলামে? এই প্রশ্নটি সবার সামনে, কিন্তু উত্তর জানা নেই। কেননা সবাই শুনে শুনে মুসলমান, জেনে বুঝে নয়।
ড, জাকির নায়েকের যে বিষয়ে এখন বিতর্ক হচ্ছে সেটা উনি তৈরি করেন নি "বিষয়গুলো আগে থেকেই ছিল, তেমনি আল্লামা মওদুদী যা বলেছেন, তা নতুন কিছু ছিল না আগে থেকেই এমন মতভেদ চালু ছিল।
মওদুদীর সাথে মতের অমিল থাকতে পারে, আদর্শের হয়তো কিছুটা সাংঘর্ষিক হতে পারে তারপরও তারই জানাযার ইমামতি করিয়েছেন বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ আলেম " আল্লামা ইউসুফ কারযাবী" আর আমরা বাতিলের মোকাবিলায় এখনও এক হতে পারলাম না।
পরিশেষে বলতে চাই, শিক্ষকের অপমান যেমন আপনার গায়ে লাগে তেমনি একজন ছাত্রের অপমৃত্যুও আপনার মনে সহানুভূতি আনবে! যদি না আনে তাহলে আপনার প্রতিও আমার ঘৃণার প্রকাশ ওয়াক থু! থু!!
এখনও হয়তো কিছু সময় আছে, নইলে হে বি এন পি আপনারাও ঝুলবেন আর সাথে সমর্থক জনগণকেও ঝুলাবেন।
এখনও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুযোগ হয়তো আছে, নইলে পাগড়ি-বাইয়াত বা মিলাদ পড়ার সুযোগও হারাবেন!
বিষয়: বিবিধ
১২১৮ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন