ঈমান, আমল ও মদীনার ফযিলত
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ১৪ মে, ২০১৬, ০২:০৮:১৮ রাত
কয়েকদিন আগে ইউটিউবে একজন বক্তার মুখে শুনলাম, তিনি প্রশ্ন রেখে বলছেন- সউদি আরবে কোনো আলেম আছে নাকি?
এটা বলেছেন তিনি ফিকহী কোনো মতভেদের ব্যাপারে। অনেক দ্বীনি ইলম কম জানা লোক বিদেশ গিয়ে হানাফি মাযহাবের বিপরীত আমল দেখে প্রথমে বিভ্রান্তিতে পড়ে ও পরে ওদের মুখে জানতে পারে ওটাই সহীহ আর এতোদিন করে আসা আমাল ছিল দূর্বল বর্ণনার ভিত্তিতে! অর্থ্যাৎ তাদের মনে এটা ঢুকিয়ে দেয়া হয় যে, হানাফি মাযহাবের সবকিছু দূর্বল বর্ণনার আর ওদেরটা সহীহ এমনকি হৌক চাই না-হৌক সবকিছুকে তারা বলবে-বুখারীতে আছে। এখন যারা শরীয়াতের ব্যাপারে বিজ্ঞ নয়, তারা ভাবে বুখারী এতো বড় সহীহ কিতাব আর এতে যা আছে সেটাই মনে হয় সহীহ এর বাইরে সহীহ নেই।
মাযহাবগত মতভেদ সাহাবীদের যুগ থেকে ছিল বলেই সালাফদের মাঝে মতভেদ ছিল, পরবর্তীতে তা চলতেই থাকে এবং সর্বশেষ চার মাযহাবে বিভক্ত হয়। মাযহাব মানা যেমন আবশ্যকীয় নয় তেমনি মানলেও দ্বীনের বাইরে কেউ চলে যায় না। পূর্ববতী সকল বিদ্ব্যানরাই মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। যেমন- ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.), তার ছাত্র হাফিজ ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.), আল্লামা ইবনে কাসীর (রহ.), আল্লামা মহীউদ্দীন নববী (রহ.), ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) প্রমুখ।
আসলে আমাদের উচিত ছিল- ফিকহী মতভেদের উর্দ্ধে থেকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বীদা বর্ণনা করা, বিদআতকে জানা আর তা থেকে ফেরানোর উপায় আলোচনা করা। কিভাবে সঠিক আক্বীদার ভিত্তির উপর দাড়িয়ে সকল মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ করা যায় তা করা। কিন্তু আমরা আছি ফিকহের ঐ সকল মুস্তাহাবগত মত-পার্থক্য বিষয় নিয়ে যা নিয়ে আমাদের পূর্বের সকল আলেমরা বিশদ আলোচনা করে গেছেন আর সবশেষে বলেছেন-সঠিক বিষয় আল্লাহই ভালো জানেন।
মানুষকে বুঝানোর সঠিক রাস্তা হলো, কুরআন আর হাদিস ভিত্তিক। অযথা কিসসা-কাহিনি বা বানোয়াট যুক্তি দিয়ে নয়! কেউ আমাদের মাযহাবের বিপরীত আমল করলেই তার পিছনে লাগা কি উচিত? যার যেটা পছন্দ সেটা করুক আর আপনি কুরআন সুন্নাহর আলোকে তাকে বুঝান। সে-ই সিদ্ধান্ত নেবে কোনটা গ্রহণ করবে। সামান্য মুস্তাহাবগত বিষয় নিয়ে মসজিদে, মাঠে অনর্থক ফিতনা করা থেকে বিরত থাকুন। এতেই উম্মাহর মঙ্গল। এতেই আপনার মুক্তি।
মদীনা বা হেজাজের ফযিলাত:
যিনি সউদি আরবের সমালোচনা করেছেন, তার জন্য আফসোস ছাড়া কী আর করার আছে! ওটাই আমাদের আদি শিক্ষাকেন্দ্র এবং সর্বশেষ শিক্ষাকেন্দ্র! মদীনার প্রতি যথেষ্ট ভালোবাসা যেমন থাকবে (বাস্তবিক, মাযারপূজারীদের মতো নয়!) তেমনি ওখানকার আলেমদের প্রতিও আমাদের রাখতে হবে অগাধ আস্থা। কেননা ওখানকার মর্যাদা সম্পর্কে রাসূলুলুল্লাহ সা. আমাদের আগেই বলে গেছেন।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
«إِنَّ الإِيمَانَ لَيَأْرِزُ إِلَى الْمَدِينَةِ كَمَا تَأْرِزُ الْحَيَّةُ إِلَى جُحْرِهَا».
“ঈমান মদীনার দিকে ফিরে আসবে, যেভাবে সাপ তার গর্তের দিকে ফিরে আসে’’। [সহীহ বুখারী – ১৮৭৬ ও মুসলিম – ৩৭২]
সুনানে আত তিরমিযীতে এসেছে-
কাছীর ইবন আবদুল্লাহ্ ইবন আমর ইবন আওফ ইবন কায়েস ইবন মিলহা তৎপিতা আবদুল্লাহ্ সূত্রে তৎপিতামহ আমর ইবন আওফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাপ যেমন সংকুচিত হয়ে আপন গর্তের দিকে প্রত্যাবর্তন করে তদ্রম্নপ দ্বীন ইসলামও একদিন সংকুচিত হয়ে হিজাযে ফিরে আসবে এবং পাহাড়ী বকরী যেমন পাহাড়ের চুড়ায় মজবুত আশ্রয় গ্রহণ করে তেমনি দ্বীনও হিজাযে তার মজবুত আশ্রয় নিবে। দ্বীন শুরুতে ছিল অপরিচিত। অচিরেই তা আবার অপরিচিত অবস্থায় ফিরে আসবে। সুতরাং সে অবস্থায় ইসলামে আঁকড়ে ধরে থাকা সেসব লোকদের জন্য সুসংবাদ যারা আমার পরে মানুষদের দ্বারা বিকৃত হওয়া আমার সুন্নতকে পুনরুজ্জীবিত করে।
(তিরমিযী: ২৬৩১ কিতাবুল ঈমান)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন মদীনার জ্ঞানচর্চা সম্পর্কে বলেছেন:-
«يَضْرِبُونَ أَكْبَادَ الإِبِلِ يَطْلُبُونَ الْعِلْمَ فَلاَ يَجِدُونَ عَالِمًا أَعْلَمَ مِنْ عَالِمِ الْمَدِينَة»
‘‘মানুষ হন্যে হয়ে ইলম অনুসন্ধান করবে, তবে মদীনার আলেমের চেয়ে অধিক বিজ্ঞ কোন আলেম তারা খুঁজে পাবে না।’’ [নাসায়ী: ৪২৭৭ ও হাকেম: ৩০৭ সহীহ সূত্রে]
রাসূলুল্লাহ সা. মদীনাকে হারাম ঘোষণা করেছেন:
‘‘ইবরাহীম আলাইহিস সালাম মক্কাকে ‘হারাম’ বলে ঘোষণা করেছিলেন, আর আমি মদীনাকে তথা এর প্রস্তরময় দু’ভূমির মাঝখানের অংশকে ‘হারাম’ বলে ঘোষণা করছি- এর বৃক্ষসমূহ কাটা যাবে না এবং এর প্রাণী শিকার করা যাবে না।’’ [সহীহ মুসলিম – ৩৩৮৩]
মদীনা সুরক্ষিত:
আল্লাহ তা’আলা মদীনার প্রবেশদ্বারসমূহে ফেরেশতাদের মধ্য থেকে প্রহরী নিযুক্ত করেছেন, যারা এতে মহামারী ও দাজ্জালের প্রবেশকে প্রতিহত করবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«عَلَى أَنْقَابِ الْمَدِينَةِ مَلاَئِكَةٌ لاَ يَدْخُلُهَا الطَّاعُونُ ، وَلاَ الدَّجَّالُ».
‘‘মদীনার পথে-প্রান্তরে রয়েছে (প্রহরী) ফেরেশতাগণ, (তাই) এখানে মহামারী ও দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না।’’ [সহীহ বুখারী – ১৮৮০, ৫৭৩১ ও সহীহ মুসলিম – ৩৩৩৭]
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমি এমন এক জনপদে হিজরত করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি, যে জনপদ অন্য সকল জনপদের উপর জয়ী হবে। লোকেরা তাকে ইয়াসরিব বলে থাকে। এ হল মদীনা। তা অবাঞ্ছিত লোকদেরকে এমনভাবে বহিষ্কার করে দেয়, যেমনভাবে কামারের অগ্নিচুলা লোহার মরিচা দূর করে দেয়। (বুখারী: ১৮৭১, অধ্যায় ২৯/২)
সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত-
তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - কে বলতে শুনেছিঃ যে কেউ মদীনাবাসীর সাথে ষড়যন্ত্র করবে বা প্রতারণা করবে, সে লবণ যেভাবে পানিতে গলে যায়, সেভাবে গলে যাবে। (বুখারী: ১৮৭৭, অধ্যায়: ২৯/৭)
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হে আল্লাহ! মক্কাতে তুমি যে বরকত দান করেছ, মদীনাতে এর দ্বিগুণ বরকত দাও।(বুখারী:১৮৮৫)
" اللَّهُمَّ اجْعَلْ بِالْمَدِينَةِ ضِعْفَىْ مَا جَعَلْتَ بِمَكَّةَ مِنَ الْبَرَكَةِ ".
সুতরাং মদীনার আলেম, হেজাজের আলেম এবং হেজাজের ভূমিকে ভালোবাসি। কোনো কুৎসা নয়, সত্য দিয়েই বাতিলের মুকাবিলা করতে হবে। আসুন মানুষকে দাওয়াত দিই হিকমত ও প্রজ্ঞার সাথে!
বিষয়: বিবিধ
১৫০৩ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমরাই সব বুঝি এই মানসিকতা থেকে আমাদের মুক্ত হওয়া প্রয়োজন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন