নন্দিত কারাগারে
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ০৬ মে, ২০১৬, ০১:৩০:২৭ রাত
একদেশে ছিল এক প্রধানমন্ত্রী (উত্তরাধিকারসূত্রে)! তিনি শুধু এই সূত্রের উপর নির্ভর করে থাকতে না পেরে ক্ষমতা আর লালসাকে চিরস্থায়ী(?) করতে ভিন্নসূত্র আবিষ্কার করলেন! তার এই সূত্রের নাম রাখলেন "বিশ্বশান্তি ও উন্নয়ণ"। উন্নয়ণের নানান ফিরিস্তি তিনি তার মতপ্রকাশের মাধ্যমে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিলেন, (ভিতরের খবর হলো, তিনি প্রতিবেশীর কাছে নিজের মুরগীকে বর্গা দিলেন আর প্রতিবেশী ডিমের কৃতজ্ঞতায় তাকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে) বিশ্ব তার তড়িৎকর্মায় আবেগাপ্লুত!!
তার ভক্তরা দাবি করল, তাকে "নোবেল পুরষ্কার" পেতেই হবে! সুতরাং শান্তিতে নোবেল প্রাইজ পাওয়ার জন্য বিশেষ এই দিকে মনোনিবেশ করলেন। দেশের শান্তির জন্য দরকার জনসংখ্যার ভারসাম্য! তাই তিনি জন্মনিয়ন্ত্রণের ফরমুলা আবিষ্কার করলেন! এই ফরমূলার নাম "বিরোধীমত দমন"।
তিনি বায়বীয় এক অপরাধকে নিয়ে বিশেষ ক্যাঙ্গারু আদালত বসালেন আর ফাঁসি দিতে লাগলেন। বুদ্ধিজীবিদের ধরে ধরে কয়েদখানায় ঢুকালেন আর উচিত শিক্ষায় শিক্ষিত করতে থাকলেন। পাইক-পেয়াদা দিয়ে গুম-খুন করে অস্বীকার করার নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করলেন!
এক সময় গোটাদেশটাই তার হলো, দেশ হলো রাজ্য! ভক্তরা আশা করল এবার নোবেল প্রাইজ না দিয়ে যাবে কোথায়?
নোবেল প্রাইজ পেলেন, তবে বিশ্বশান্তির জন্য শান্তিতে নয়- অর্থনীতিতে বিশেষ অবদানের জন্য!(রাজকোষকে ভাঁড়ার ঘর বানানোর উপায় ও সূত্রের জন্য) ভক্তরা চমকালেও মচকালো না, সুইডেশ একাডেমীর ব্যখ্যায় বিরক্ত হলো না।
একই নাটক, একই মঞ্চ; গুনাইবিবির পাট
আমি যেটা জানি, গোটাদেশবাসী তাই জানত! নিজামীর রিভিউ খারিজ হবে, দন্ড বহাল থাকবে; তার অনুসারীরা হরতাল ডাকবে।আরেকজনকে রশিতে লটকানো হবে; আরেকটা ইস্যুকে ধামাচাঁপা দেয়া হবে। মনে রাখা দরকার এটা পুরনো কৌশল; নতুন খেলা। যেদিন রিভিউ খারিজের রায় হলো সেদিন ছিল দেশের এক ঐতিহাসিক ট্রাজেডির দিন। জনগণের মন ভিন্নদিকে ফেরানো হলো। টকশোতে নতুন ইস্যু দেয়া হলো।
ভাড়া কমল তিন পয়সা! বেতন বাড়ল দ্বিগুণ
তেলের দাম বিশ্বময় অনেক আগেই দ্বিগুন কমলেও দেশে কমল সেদিন, তারপরও পরিবহন ভাড়া কমল না; তারপর কমানো হলো-
খবরে প্রকাশ: ডিজেলের মূল্য তিন টাকা কমানোর পরিপ্রেক্ষিতে দূরপাল্লার বাসভাড়া প্রতি কিলোমিটারে তিন পয়সা কমানোর প্রস্তাব করেছে বিআরটিএর ব্যয় বিশ্লেষণ কমিটি। অথচ ২০১২ সালে ডিজেলের মূল্য ৫ টাকা টাকা বাড়ার সূত্র ধরে বাসভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১৫ পয়সা বাড়ানো হয়েছিল।
গত সোমবার সকালে ব্যয় বিশ্লেষণ কমিটি বৈঠক করে তাদের প্রস্তাব সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। মন্ত্রণালয় পরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে।
অন্যখবর হলো-বুধবার সংসদ কাজে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ‘দ্যা প্রেসিডেন্ট’স (রেমুনেরেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল-২০১৬, ‘দ্যা প্রাইম মিনিস্টার’স (রেমুনেরেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল- ২০১৬’ সংসদে পাসের প্রস্তাব করেন। পরে বিল দুটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।
রাষ্ট্রপতির বেতন বাড়ানো সংক্রান্ত বিলে বর্তমান বেতন ৬১ হাজার ২০০ থেকে বাড়িয়ে এক লাখ ২০ হাজার টাকা এবং বিমান ভ্রমণের জন্য বিমা কভারেজ ১৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৭ লাখ টাকা করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর বেতন বাড়ানো সংক্রান্ত বিলে বর্তমান বেতন ৫৮ হাজার ৬০০ থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা, মাসিক বাড়ি ভাড়া ৫০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ টাকা, প্রধানমন্ত্রীর দৈনিক ভাতা ১ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ হাজার টাকা, বিমান ভ্রমণের জন্য বিমা কভারেজ ১৪ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ লাখ টাকা এবং স্বেচ্ছাধীন তহবিল ১ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে দেড় কোটি টাকা করার কথা বলা হয়েছে।
ভাবতেই ভালো লাগছে। দেশ কত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। এতো লুটপাট, ব্যাংক ডাকাতী হলেও রাজকোষে অর্থের অভাব নেই। সবই কারিশমা!!!
নন্দিত আসামী: নিন্দিত আদালত
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত জননন্দিত মেয়র, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক এম এ মান্নান সিটি কর্পোরেশনে জেতার অপরাধে বারবার জেলে যাচ্ছেন, রিমান্ড হচ্ছে, জামিন মঞ্জুর হয় আর নিত্য নতুন মামলা হয়! তার মতো জনপ্রিয় নেতার এই অবস্থা দেখেও পাতি নেতারা কেন যে হুঁশিয়ার হচ্ছে না বুঝতে পারছি না। যতই ইউপিতে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হও, চেয়ারে বসতে পারবে না, রিমান্ড খাইতে হবে! কেন যে এই সাধারণ সূত্র নেতারা বুঝে না।
নন্দিত কারাগার: নিন্দিত আইন
প্রথমে আইসিটি আইনে মামলা গ্রেপ্তার দেখানো হলেও পরবর্তীতে আরো অনেক মামলায় জড়িয়েছেন আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে যুক্তরাষ্ট্রে অপহরণ ও হত্যা পরিকল্পনার মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এই মানুষটি একজন সফল আমলা ছিলেন; নেতার হওয়ার খায়েস হয়তো ছিল; কপালে ছিল অন্যকিছু, তাই পরলেন একজনের রোষানলে। কত মামলায় যে জড়ানো হলো তাকে তা শুধু পুলিশই বলতে পারবে। আমার মনে হচ্ছে- গিনেজবুক অব রেকর্ডসে হয়তো তার উঠতে পারে " রেকর্ড সংখ্যকবার রিমান্ডের জন্য।"
তার বৃদ্ধা মা তাকে জেলে নিয়ে ছেলের মুক্তির দাবি জানান, এই দাবী হৃদয়বানদের হৃদয়ে তোলপাড় হলেও বিচারকরা নাকে তেল দিয়ে ঘুমান।
তাকে নিয়ে যা হচ্ছে, তাতে বলাই যায়- সত্যিই আইনের চোখ অন্ধ!!!!
রিমান্ড আর জেল
জনাব মাহমুদুর রহমানের মতো আরেকজন,জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বারবার জামিন হয়, নতুন মামলা আর রিমান্ডও হয়! সবই একই সূত্রে গাঁথা। তবুও কেন যে, জামিন চায়? তারচেয়ে ভালো কারাগারে থাকাটাই। জামিন মানে নতুন মামলা, নতুন করে রিমান্ড, জীবন দূর্বিসহ! অথবা কারাগারের ফটক থেকে অজ্ঞাতনামাদের দ্বারা অপহৃত আর গুম। তার মতো আরেকজন যুক্ত হয়েছেন, তিনি লাল গোলাপের জনাব শফিক রেহমান। বৃদ্ধ বয়সে উনারও জ্ঞানের ঘাটতি হয়েছিল। তবুও ভালো জেলে নিরাপদ আছেন!এখন শুধু নতুন মামলা আর রিমান্ড সেই একই সূত্রে!!!
নন্দিত কারাগারে
এই পর্যায়ে এসে এই কথাটাই চিরন্তন সত্য বলে প্রমাণিত, যারা জেলে আছেন, নিরাপদ আছেন; নইলে সাংবাদিক থেকে শুরু করে কৃষক-শ্রমিক কেউ এইদেশে আর নিরাপদ নয়; কখন যে কে কোন মামলায় ফাঁসবে, কিভাবে গুম হবে, কিভাবে খুন হবে, কেউ জানে না। কেউ জানে না শান্তির জন্য সামনে কোন নাটক সাজানো হবে!
বিষয়: বিবিধ
১০৬৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সুন্দর বিশ্লেষণ। জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন