প্রচলিত সামাজিক ব্যাধি (৮ম পর্ব) : মুসলমানদের তুচ্ছ জ্ঞান (হেয় প্রতিপন্ন) করা
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ২৫ এপ্রিল, ২০১৬, ১১:৪০:১৫ রাত
বর্তমান সমাজের একটি মারাত্মক ব্যাধি হলো, যে যাকে পারছে হেয় প্রতিপন্ন করছে, তুচ্ছ ভাবছে। অপরের কাছে নিজের বড়ত্ব তুলে ধরার জন্য দূর্বলদের বা অপরকে প্রতিপক্ষ ভাবছে। মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছ্বিল্য করাটাই আজকে ফ্যাশনে পরিণিত হয়েছে। ফলে সমাজে নেমে এসেছে বিপর্যয়। কে কাকে ছোট করবে, কে কাকে প্রতিপক্ষ বানাবে আর মারামারিতে মেতে উঠবে।
অথচ একজন মুসলমান না কোনো মুসলমানকে এবং কোনো সাধারণ মানুষকে তুচ্ছ জ্ঞান করবে; না হেয় করে নিজেকে প্রকাশ করবে।
কোনো মুসলমানকে হেয় প্রতিপন্ন করা হারাম। কবীরাহ গুনাহ।এর ফল স্বরূপ পারস্পরিক দলাদলি, বিভক্তি, হানাহানি-মারামারি সবই ইসলামে হারাম!
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِّن قَوْمٍ عَسَى أَن يَكُونُوا خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَاءٌ مِّن نِّسَاءٍ عَسَى أَن يَكُنَّ خَيْرًا مِّنْهُنَّ وَلَا تَلْمِزُوا أَنفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ وَمَن لَّمْ يَتُبْ فَأُولَـئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ
বাংলা অনুবাদ:
হে ঈমানদারগণ! একদল পুরুষ যেন অপর একদল পুরুষকে উপহাস না করে; কেননা যাদেরকে উপহাস করা হয় তারা উপহাসকারী দল অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং একদল নারী যেন অপর একদল নারীকেও উপহাস না করে; কেননা যাদেরকে উপহাস করা হয় তারা উপহাস-কারিণী দল অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। আর তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না; কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাকে মন্দ নামে ডাকা গর্হিত কাজ। যারা [এ ধরনের আচরণ হতে] নিবৃত্ত না হয়, তারাই সীমালংঘনকারী।(সূরা ৪৯ হুজুরাত: ১১)
অপর আয়াতে বলেন-
দুর্ভোগ প্রত্যেকের, যে পশ্চাতে ও সম্মুখে লোকের নিন্দা করে। (সূরা ১০৪ হুমাযাহ:১)
মানুষকে হেয় করা বা তুচ্ছ-তাচ্ছ্বিল্য করা মোটের উপর তাদের কষ্ট দেওয়ার নামান্তর। মুমিনদের কষ্ট দেয়াও হারাম। যেমন আল্লাহ বলেন-
যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে।(সূরা ৩৩ আহযাব: ৫৮)
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে তুচ্ছভাবে।’’(হাদীসের অংশবিশেষ) দ্রষ্টব্য: মুসলিম ৯১, তিরমিযী ১৯৯৮, ১৯৯৯, আবূ দাউদ ৪০৯১, ইবনু মাজাহ ৫৯, ৪১৭৩, আহমাদ ৩৭৭৯
মানুষের প্রতি অহংকার বশত হেয় প্রতিপন্ন করা বা তুচ্ছ জ্ঞান করা সম্পর্কে রাসূল সা. বলেন-
ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যার অন্তরে অণু পরিমাণও অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’’ [এ কথা শুনে] এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, ‘মানুষ তো পছন্দ করে যে, তার কাপড়-চোপড় সুন্দর হোক, তার জুতা সুন্দর হোক, [তাহলে সেটাও কি অহংকারের মধ্যে গণ্য হবে?]’ তিনি বললেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ সুন্দর, তিনি সৌন্দর্য ভালবাসেন। অহংকার হচ্ছে সত্যকে প্রত্যাখ্যান করা ও মানুষকে তুচ্ছজ্ঞান করা।’’(মুসলিম ৯১, তিরমিযী ১৯৯৮, ১৯৯৯, আবূ দাউদ ৪০৯১, ইবনু মাজাহ ৫৯)
আল্লাহ আমাদের এ ধরণের গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন।
বিষয়: সাহিত্য
১২২৮ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন