প্রচলিত সামাজিক ব্যাধি (৭ম পর্ব): দোষ-ত্রুটি খোজা
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ১১ এপ্রিল, ২০১৬, ০১:৪৩:০৩ রাত
আমাদের মাঝে প্রচলিত আরেকটি মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি হলো "অপরের দোষ অনুসন্ধান করা বা আড়ি পেতে গোপন কথা শোনা"। দুটি একই অপরাধে যুক্ত অথবা আলাদা আলাদা ভাবে কবীরাহ গোনাহ। অপরের গোপন দোষ-ত্রুটির পিছনে পড়ে থাকা বা কারো গোপনীয়কে তালাশ করে প্রকাশ করা হলো মানুষকে কষ্ট দেওয়ার শামিল। মানুষকে বিশেষ করে মুমিনদের কষ্ট দেয়া সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-
"যারা বিনা অপরাধে ঈমানদার পুরুষ ও নারীদেরকে কষ্ট দেয়, তারা অবশ্যই মিথ্যা অপবাদ এবং স্পষ্ট অপরাধের বোঝা বহন করে। (সূরা আহযাব :৫৮ )
অপর আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের পারস্পরিক গোপনীয়কে অনুসন্ধান করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন-
"হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা বহুবিধ ধারণা হতে দূরে থাক; কারণ কোন কোন ধারণা পাপ এবং তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান করো না".. (সূরা ৪৯ হুজুরাত: ১২)
কারো গোপন বিষয়ের পিছনে পড়ে থাকাটা ব্যাক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয়। ইসলামও দোষ অনুসন্ধান করা থেকে নিষেধ করে মানুষের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু তা ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ পর্যন্ত সে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা সম্পাদন না করে অথবা যতক্ষণ পর্যন্ত সে অপরের কষ্টের কারণ না হয়।
এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা কু-ধারণা পোষণ করা থেকে বিরত থাক। কারণ কু-ধারণা সব চাইতে বড় মিথ্যা কথা। অপরের গোপনীয় দোষ খুঁজে বেড়ায়ো না, অপরের গোয়েন্দাগিরি করো না, একে অপরের সাথে [অসৎ কাজে] প্রতিদ্বন্দ্বিতা করো না, পরস্পরের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণ করো না, একে অপরের বিরুদ্ধে শত্রুভাবাপন্ন হইয়ো না। তোমরা আল্লাহর বান্দা, ভাই ভাই হয়ে যাও; যেমন তিনি তোমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন। এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার প্রতি জুলুম করবে না, তাকে অসহায় অবস্থায় ছেড়ে দেবে না এবং তাকে তুচ্ছ ভাববে না। আল্লাহ-ভীতি এখানে রয়েছে। আল্লাহ-ভীতি এখানে রয়েছে। [এই সাথে তিনি নিজ বুকের দিকে ইঙ্গিত করলেন।] কোন মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ ভাবা একটি মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য যথেষ্ট। প্রত্যেক মুসলিমের রক্ত, সম্ভ্রম ও সম্পদ অপর মুসলিমের উপর হারাম। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের দেহ ও আকার-আকৃতি দেখেন না, বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও আমল দেখেন।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘তোমরা পরস্পর হিংসা করো না, পরস্পরের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণ করো না, অপরের গোয়েন্দাগিরি করো না, অপরের গোপনীয় দোষ খুঁজে বেড়ায়ো না, পরস্পরের পণ্যদ্রব্যের মূল্য বাড়িয়ে দিয়ো না। তোমরা আল্লাহর বান্দা, ভাই ভাই হয়ে যাও।’’
আর এক বর্ণনায় আছে, ‘‘তোমরা পরস্পর সম্পর্ক-ছেদ করো না, একে অপরের বিরুদ্ধে শত্রুভাবাপন্ন হইয়ো না, পরস্পরের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণ করো না, পরস্পর হিংসা করো না। তোমরা আল্লাহর বান্দা, ভাই ভাই হয়ে যাও।’’
অন্য আরও এক বর্ণনায় আছে, ‘‘তোমরা একে অন্যের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করো না এবং অপরের ক্রয়-বিক্রয়ের উপর ক্রয়-বিক্রয় করো না।’’ (এ সবগুলি মুসলিম বর্ণনা করেছেন এবং এর অধিকাংশ বর্ণনা করেছেন বুখারী)( দ্রষ্টব্য: বুখারী ৫১৪৪, ৬০৬৪, ৬০৬৬, ৬৭২৪, মুসলিম ১৪১৩, ২৫৬৩; রিয়াদুস সালেহীন: ১৫৭৮)
কারো গোপনীয় পাপাচার দৃষ্ট হলে তাকেই সংশোধনের জন্য বলতে হবে। তা মানুষের কাছে প্রকাশ করা যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তা মানুষের জন্য ক্ষতিকর না হবে। আর যদি পাপাচার প্রকাশ্যে চলে আসে তখনই তা প্রতিহত করতে হবে এবং নির্দিষ্ট শাস্তি কার্যকর করা হবে।
ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তাঁর নিকট একটি লোককে নিয়ে আসা হল এবং তার সম্পর্কে বলা হল যে, ‘এ লোকটি অমুক, এর দাড়ি থেকে মদ ঝরছে।’ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘আমাদেরকে গোয়েন্দাগিরি করতে [গুপ্ত দোষ খুঁজে বেড়াতে] নিষেধ করা হয়েছে। তবে যদি কোন [প্রমাণ] আমাদের সামনে স্পষ্ট হয়ে যায়, তাহলে আমরা তা দিয়ে তাকে পাকড়াও করব।’ ( আবূ দাউদ ৪৮৯০)
"যে ব্যক্তি একজন ভাইয়ের দোষকে গোপন রাখবে পরকালে আল্লাহ তার একটি দোষ গোপন রাখবেন। (মুসলিম)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে পছন্দ করে যে, তাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হোক এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হোক, তার মরণ যেন এমন অবস্থায় হয় যে, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান রাখে এবং অন্যের প্রতি এমন ব্যবহার দেখায়, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে।’’(মুসলিম ১৮৪৪, নাসায়ী ৪১৯১, আবূ দাউদ ৪২৪৮)
আসুন পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক বজায় রাখি ও কারো গোপন দোষ অনুসন্ধান করা থেকে বিরত থাকি। এতেই আমাদের কল্যাণ ও সমাজের মঙ্গল।
বিষয়: সাহিত্য
১৯১৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন