প্রচলিত সামাজিক ব্যাধি ( ৬ষ্ঠ পর্ব) পারস্পরিক বিদ্বেষ ও শত্রুতাভাব

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ১০ এপ্রিল, ২০১৬, ০২:৪৩:১৬ রাত

ইসলামের মহান নির্দেশ যেখানে ঐক্যবদ্ধ থাকা, পরস্পর বিচ্ছিন্ন না হওয়া; সেখানে আজ আমরা বিভিন্ন দলে উপদলে বিভক্ত। এর প্রধান কারণ হলো পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতা ভাব। কারো মতের প্রতিই আমাদের শ্রদ্ধা নেই। নিজস্ব মতামত, অভিব্যক্তি, ভালো লাগার উৎসকেই একমাত্র সার্বজনীন মনে করি আর সবার মতকে হেয় প্রতিপন্ন করতে উৎসাহিত বোধ করি। এর প্রধান হলো পার্থিবমোহ বা দুনিয়া অর্জন। আমাদের যদি আল্লাহভীতি থাকত; পরকালের চিন্তা মাথায় ঢুকত তাহলে কখনোই এমন দ্বন্দ্ববিলাস থাকত না। আল্লাহ বলেন- "সকল মুমিনরা (বিশ্বাসীরা) তো পরস্পর ভাই ভাই, সুতরাং তোমরা তোমাদের দুই ভাই-এর মধ্যে সন্ধি স্থাপন কর এবং আল্লাহকে ভয় কর; যাতে তোমরা করুণাপ্রাপ্ত হও। ( সূরা ৪৯ হুজুরাত: ১০)

এর মানে হলো- মুমিনরা ঈমানের দাবিতে পরস্পরকে ভালবেসে এবং একে অপরের হিতাকাঙ্ক্ষী ও কল্যাণকামী হয়ে থাকবে। আর যদি কখনও ভুল বুঝাবুঝির ফলে তাদের মধ্যে দূরত্ব ও ঘৃণা সৃষ্টি হয়ে যায়, তবে তা দূর করে তাদের আপোসে পুনরায় সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব কায়েম করতে হবে। (যেহেতু এক মু’মিন অপর মুমিনের জন্য আয়না স্বরূপ।)

আল্লাহ অপর আয়াতে বলেন-

আর বিশ্বাসী পুরুষরা ও বিশ্বাসী নারীরা হচ্ছে পরস্পর একে অন্যের বন্ধু, তারা সৎ কাজের আদেশ দেয় এবং অসৎ কাজে নিষেধ করে। আর যথাযথভাবে নামায আদায় করে ও যাকাত প্রদান করে, আর আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে। এসব লোকের প্রতিই আল্লাহ অতি সত্বর করুণা বর্ষণ করবেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ অতিশয় ক্ষমতাবান হিকমতওয়ালা। ( সূরা ৯ তাওবা: ৭১)

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করো না, একে অপরের প্রতি হিংসাপরায়ণ হইয়ো না, পরস্পরের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন হইয়ো না, পরস্পরের সাথে সম্পর্ক ছেদন করো না। তোমরা আল্লাহর বান্দা ভাই ভাই হয়ে যাও। আর কোন মুসলিমের জন্য এটা বৈধ নয় যে, সে তার (মুসলিম) ভাইয়ের সঙ্গে তিনদিনের বেশি কথাবার্তা বলা ত্যাগ করে।’’ (বুখারী ৬০৫৬, ৬০৭৬, মুসলিম ২৫৫৯, তিরমিযী ১৯৩৫, আবূ দাউদ ৪৯১০, আহমাদ ১১৬৬৩, ১২২৮০, ১২৬৪০, ১২৭৬৭, ১২৯৪১, মুওয়াত্তা মালিক ১৬৮৩)

মুসলিম ভাইদের প্রতি বিদ্বেষভাবাপন্ন বা শত্রুতাপোষণকারীর জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেছেন,

আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘সোম ও বৃহস্পতিবার জান্নাতের দ্বারসমূহ খুলে দেওয়া হয়। [ঐ দিনে] প্রত্যেক সেই বান্দাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়, যে আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে অংশীদার স্থাপন করেনি। কিন্তু সেই ব্যক্তিকে নয়, যার সাথে তার মুসলিম ভাইয়ের শত্রুতা থাকে। [তাদের সম্পর্কে] বলা হয়, এদের দু’জনকে সন্ধি হওয়া পর্যন্ত অবকাশ দাও, এদের দু’জনকে সন্ধি হওয়া পর্যন্ত অবকাশ দাও।’’ (মুসলিম ২৫৬৫, তিরমিযী ৭৪৭, ২০২৩, আবূ দাউদ ৪৯১৬, ইবনু মাজাহ ১৭৪০, আহমাদ ৭৫৮৩, ৮১৬১, ৮৯৪৬, ৯৯০২, মুওয়াত্তা মালিক ১৬৮৬, ১৬৮৭)

একজন প্রকৃত মুসলমান কখনো অপর মুসলমানের প্রতি বিদ্বেষী হতে পারে না; তারা হবে পরস্পরের কল্যাণকামী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে পছন্দ করে যে, তাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হোক এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হোক, তার মরণ যেন এমন অবস্থায় হয় যে, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান রাখে এবং অন্যের প্রতি এমন ব্যবহার দেখায়, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে।’’ (হাদীসটি সংক্ষেপিত; মুসলিম: ১৮৪৪)

আল্লাহ আমাদের সঠিক দ্বীন বুঝার তাওফিক দান করুক। আমীন!!!

বিষয়: সাহিত্য

৯৭৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File