প্রচলিত সামাজিক ব্যাধি (৫ম পর্ব): গালি দেয়া কুফুরী
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ০৪ এপ্রিল, ২০১৬, ০২:২৭:৪১ রাত
গালি আমাদের সমাজের এক মারাত্মক ব্যাধি। গালি দেয়া শুধু পাপের কাজই নয় এটা বান্দাহর হকের সাথে জড়িত। এতে অনেক সময় বিশেষ করে বর্তমানে অশ্লীলতা ছড়ায়। গালিগালাজ করা কোনো সুস্থ মানসিকতার পরিচয় নয়। মুদ্রাদোষ বা অভ্যাসবশত অনেকেই কথায় কথায় গালি দেন, অনেকেই হাসি-তামাশা ও ঠাট্টাচ্ছলেও অন্যকে গালি দিয়ে বসেন এসবের কোনোটিই মুসলমানিত্বের লক্ষণ নয়।
অনেকে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করেন মসজিদে এসে, লম্বা দাঁড়ি, টুপি ও পাঞ্জাবী পড়েন। পাক্কা মুসুল্লী ও বুজুর্গ হিসেবে পরিচিত! দেখা যায় তিনি ঘরে পরিবারের উপর, বাইরে অধীনস্তদের উপর অবাঞ্চিত কথা ঝারছেন। অনেক মুসুল্লী তো (বিশেষ করে নেতৃস্খানীয়) মসজিদে বসেই প্রতিপক্ষকে গালি দিচ্ছেন। আমরা নির্বিকার!!!(ইমাম ও খতিবরাসহ ইসলামী পন্ডিতরা)
একজন প্রকৃত মুসলমান কারোা প্রতি রাগান্বিত হলেও সে খারাপ ভাষা ব্যবহার করে না। ভালো মানুষের রাগ প্রকাশের ভঙ্গিটাও হয় সুন্দর ও সংযত। পক্ষান্তরে মন্দ মানুষ যখন রাগান্বিত হয় তখন সে ভুলে যায় ভদ্রতা এবং তার আসল রূপ বের হয়ে পড়ে। সে তখন গালি দিতে থাকে।
একজন মুসলমান কখনোই এমন কথা বলতে পারে না যা অশ্লীল, যা কুরুচিপূর্ণ, যা পাপাচারের পথ খুলে দেয়, যা দ্বারা বিভাদ, সংঘাতের সূচনা হয়। মনে রাখবেন আপনার গালি বা মন্দকথা সংরক্ষিত হচ্ছে এবং শেষবিচারের দিন তা আপনার বিপক্ষে উপস্থাপিত হবে। আল্লাহ কুরআনে বলেন-
"মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে (তা লিপিবদ্ধ করার জন্য) তৎপর প্রহরী তার নিকটেই রয়েছে। (সূরা ৫০ ক্বাফ: ১৮)
একজন মুসলমান অপর মুসলমানকে হেয় করতে পারে না, এটা ইসলামেো হারাম! কাউকে গালি দেয়া মানে তাকে হেয় করা। নিজের অধীনস্ত কাউকেও গালি দেয়া যাবে না। আল্লাহ বলেন-
“হে ঈমানদারগণ, তোমাদের কোনো দল যেন অপর কোনো দলকে উপহাস না করে। কেননা, যাদের উপহাস করা হল তারা উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং নারীরা যেন অপর নারীদের উপহাস না করে। কেননা, যাদের উপহাস করা হল তারা উপহাসকারীনী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অপরকে দোষারোপ করো না এবং মন্দ নামে ডেকো না। ঈমানের পর ফুসূক অতি মন্দ। যারা তওবা করে না তারাই যালেম।” ( সূরা ৪৯ হুজুরাত : ১১)
তিনি আরো বলেন-
"যারা বিনা অপরাধে ঈমানদার পুরুষ ও নারীদেরকে কষ্ট দেয়, তারা অবশ্যই মিথ্যা অপবাদ এবং স্পষ্ট অপরাধের বোঝা বহন করে।" (সূরা ৩৩ আহযাব: ৫৮)
গালি দেয়া ফাসেকী আর মারামরি/ হত্যা করা কুফুরী:
একজন মুমিন কখনো গালি দিতে পারে না, মুখের দ্বারা সে কোনো মুসলমানকে কষ্ট দিতে পারে না। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘প্রকৃত মুসলিম সেই, যার মুখ ও হাত হতে মুসলিমগণ নিরাপদে থাকে। আর প্রকৃত মুহাজির [দ্বীন বাঁচানোর উদ্দেশ্যে স্বদেশ ত্যাগকারী] সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহর নিষিদ্ধ কর্মসমূহ ত্যাগ করে।’’(বুখারী ১০, ৬৪৮৪, মুসলিম ৪০, নাসায়ী ৪৯৯৬, আবূ দাউদ ২৪৮১, আহমাদ ৬৪৫১, ৬৪৭৮, ৬৭১৪, ৬৭৫৩, ৬৭৬৭, ৬৭৭৪, ৬৭৯৬, ৬৮৭৩, দারেমী ২৭১৬)
ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকী [আল্লাহর অবাধ্যাচরণ] এবং তার সাথে লড়াই ঝগড়া করা কুফরি।’’ (বুখারী ৪৮, ৬০৪৫, ৭০৭৬, মুসলিম ৬৪, তিরমিযী ১৯৮৩, ২৬৩৪, ২৬৩৫, নাসায়ী ৪১০৫, ৪১০৬, ৪১০৮-৪১১৩, ইবনু মাজাহ ৬৯, ৩৮৯৩, ৩৯৪৭)
নবী (সঃ) বলেন, মুমিন কখনো দোষারোপকারী, অভিশাপকারী, অশ্লীল ও গালিগালাজকারী হয় না। [তিরমিজি ২০৪৩]
গালির বিষয় গালিবাজের উপরই বর্তায়! যেমন হাদিসে এসেছে-
আবূ যার্র রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তিনি এ কথা বলতে শুনেছেন যে, ‘‘যখন কোন মানুষ অন্য মানুষের প্রতি ‘ফাসেক’ অথবা ‘কাফের’ বলে অপবাদ দেয়, তখনই তা তার উপরেই বর্তায়; যদি তার প্রতিপক্ষ তা না হয়।’’ (বুখারী ৬০৪৫, মুসলিম ৬১, আহমাদ ২০৯৫৪, ২১০৬১)
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আপোষে গালাগালিতে রত দু’জন ব্যক্তি যে সব কুবাক্য উচ্চারণ করে, সে সব তাদের মধ্যে সূচনাকারীর উপরে বর্তায়; যতক্ষণ না অত্যাচারিত ব্যক্তি [প্রতিশোধ গ্রহণে] সীমা অতিক্রম করে।’’ (মুসলিম ২৫৮৭, আহমাদ ৭১৬৪)
উক্ত রাবী হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি নিজ মালিকানাধীন দাসের উপর ব্যভিচারের অপবাদ দেবে, কিয়ামতের দিন তার উপর হদ [দণ্ডবিধি] প্রয়োগ করা হবে। তবে সে যা বলেছে, দাস যদি তাই হয় [তাহলে ভিন্ন কথা।]’’(বুখারী ৬৮৫৮, মুসলিম ১৬৬০, তিরমিযী ১৯৪৭, আবূ দাউদ ৫১৬৫, আহমাদ ৯২৮৩)
মৃতদের গালি দেয়া খুবই ঘোরতর। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা মৃতদেরকে গালি দিও না। যেহেতু তারা নিজেদের কৃতকর্মের পরিণতি পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।’’ [অর্থাৎ তার ফল ভোগ করছে।] (বুখারী ১৩৯৩, ৬৫১৬, নাসায়ী ১৯৩৬, আবূ দাউদ ৪৮৯৯, আহমাদ ২৪৯৪২, দারেমী ২৫১১)
একজন সভ্য মানুষ কখনো গালি দেন না, তিনি কখনো অশ্লীল কথা বলেন না, কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমন করে অশালীন ভাষা ব্যবহার করেন না। একজন ভদ্র-সভ্য মানুষ এসব করতেই পারেন না। কথায় আছে ব্যবহারে বংশের পরিচয়। সভ্য মানুষের মতো আচরণ তার ভালো বংশপরিচয় এবং উন্নত আচরণ প্রকাশ করে। ভদ্র-সভ্য ভালো মানুষ কারো প্রতি রাগান্বিত হলেও খারাপ ভাষা ব্যবহার করেন না। তাদের রাগ প্রকাশের ভঙ্গিটাও হয় সভ্য, সুন্দর ও সংযত। অপরদিকে একজন অসভ্য-অভদ্র মন্দ মানুষ যখন রেগে যায় তখন সে ভুলে যায় ভদ্রতা-সভ্যতা এবং তার পাশবিক রূপ বেরিয়ে আসে। সে তখন গালি দেয়, ব্যক্তি আক্রমন করে, যুক্তিহীন পাশবিক আচরণ করে। সে এগুলো ব্যবহার করে জিততে চায়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজেই হেরে যায়।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক ঈমানদার হিসেবে গ্রহণ করুন। আমাদের দ্বীনের সহীহ বুঝ দান করুন। অশ্লীলতা ও গালি-গালাজ থেকে হেফাজত করুন।। আমীন
বিষয়: সাহিত্য
১৩৬১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
রাজনীতিতে গালি তো এখন কমন ব্যাপার. ইসলাম পন্থীরাও এ কাজে পিছিয়ে নেই। কথার জবাব গালিতেই দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।
আমীন
মন্তব্য করতে লগইন করুন