ইসলামে গান-বাদ্য হারাম (কুরআন সুন্নাহ ও ইমামদের মতামতের আলোকে )
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ২৮ মার্চ, ২০১৬, ০৬:৩৭:৩৯ সন্ধ্যা
ইসলামে গান-বাদ্য হারাম! এটা অশ্লীলতা ও অসাড়বাক্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। (সূরা ৩১ লুকমান: ৬) পূর্বতন সকল সালাফ তথা ইমাম-মুজতাহিদগণের মতে, বাদ্য-বাজনা হারাম! মূলত বাদ্যযুক্ত গান বা অশ্লীল সঙ্গীত শয়তানের আওয়াজ। যারা এগুলোতে লিপ্ত থাকে তারা শয়তানেরই সঙ্গী। (সূরা ১৭ ইসরা: ৬৪) এখন বাদ্যহীন গান ভালো কবিতার মতো যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ভালো কবিতা ভালো কথার মতো। মানে ভালো কথা হলে বৈধ আর খারাপ হলে অবৈধ। (দ্রষ্টব্য: মিশকাত: ৪৫৯৭, ৪৫৭৫)
যারা শুধু কুরআনের কথা বলে মানুষদের (বিশেষকরে মুসলমানদের) বিভ্রান্ত করছে যে, ইসলামে গান-বাজনা হারাম নয়, কুরআনে কোথাও বলা হয় নি। তারা এই উম্মাতের ইজমা ও সলফে সালেহীনদের পথ থেকে বহুদূরে এবং নিজেরা পথভ্রষ্ট ও অন্যদের পথভ্রষ্ট করছে। মুফাসসিরদের মতামত বাদ দিয়ে নিজেরাই কুরআন বুঝে আঁধারে হাবুডুবু খেয়ে মরছে!!
আল্লাহ বলেন-
"আর রসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করেন, তা হতে বিরত থাক। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি দানে কঠোর।" ( সূরা ৫৯ হাশর: ৭)
গান- বাজনা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“আমার উম্মতের মধ্য হতে একদল লোক এমন হবে যারা ব্যভিচার, রেশমি বস্ত্র পরিধান, মদ পান এবং বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার ইত্যাদি হালাল মনে করবে। এবং কিছু লোক এমন হবে যারা একটি পর্বতের নিকটে অবস্থান করবে এবং সন্ধ্যাবেলায় তাদের মেষপালক তাদের নিকট মেষগুলো নিয়ে আসবে এবং তাদের নিকট কিছু চাইবে, কিন্তু তারা বলবে, ‘আগামীকাল ফেরত এসো’। রাতের বেলায় আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ধ্বংস করে দিবেন এবং তাদের উপর পর্বত ধ্বসিয়ে দিবেন, বাকি লোকদেরকে তিনি বানর ও শূকরে পরিণত করে দিবেন এবং শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত তারা এই অবস্থায় থাকবে”। [বুখারী, খন্ড ৭,নম্বর ৪৯৪]
• গান-গায়িকা এবং এর ব্যবসা ও চর্চাকে হারাম আখ্যায়িত করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
তোমরা গায়িকা (দাসী) ক্রয়-বিক্রয় কর না এবং তাদেরকে গান শিক্ষা দিও না। আর এসবের ব্যবসায় কোনো কল্যাণ নেই। জেনে রেখ, এর প্রাপ্ত মূল্য হারাম।-জামে তিরমিযী হাদীস : ১২৮২; ইবনে মাজাহ হাদীস : ২১৬৮
বর্তমানে গান ও বাদ্যযন্ত্রের বিশাল বাজার তৈরি হয়েছে যাতে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে। মনে রাখতে হবে, এর সকল উপার্জন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস অনুযায়ী সম্পূর্ণ হারাম।
• রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও ইরশাদ করেন,
আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে। আর তাদের মাথার উপর বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকা রমনীদের গান বাজতে থাকবে। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে যমীনে ধ্বসিয়ে দিবেন।-সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস : ৪০২০; সহীহ ইবনে হিব্বান হাদীস : ৬৭৫৮
• হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, পানি যেমন (ভূমিতে) তৃণলতা উৎপন্ন করে তেমনি গান মানুষের অন্তরে নিফাক সৃষ্টি করে।-ইগাছাতুল লাহফান ১/১৯৩; তাফসীরে কুরতুবী ১৪/৫২
বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত নাফে’ রাহ. থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার চলার পথে আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বাঁশির আওয়াজ শুনলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি দুই কানে আঙ্গুল দিলেন। কিছু দূর গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, হে নাফে’! এখনো কি আওয়াজ শুনছ? আমি বললাম হ্যাঁ। অতঃপর আমি যখন বললাম, এখন আর আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না তখন তিনি কান থেকে আঙ্গুল সরালেন এবং বললেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলার পথে বাঁশির আওয়াজ শুনে এমনই করেছিলেন। -মুসনাদে আহমদ হাদীস : ৪৫৩৫; সুনানে আবু দাউদ হাদীস : ৪৯২৪ বিখ্যাত তাবেয়ী মুজাহিদ রাহ. থেকেও এমন একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে।-ইবনে মাজাহ হাদীস : ১৯০১
বাজনাদার নুপুর ও ঘুঙুরের আওয়াজও সাহাবায়ে কেরাম বরদাশত করতেন না। তাহলে গান ও বাদ্যযন্ত্রের প্রশ্নই কি অবান্তর নয়?
নাসাঈ ও সুনানে আবু দাউদে বর্ণিত আছে,
একদিন হযরত আয়েশা রা.-এর নিকট বাজনাদার নুপুর পরে কোনো বালিকা আসলে আয়েশা রা. বললেন, খবরদার, তা কেটে না ফেলা পর্যন্ত আমার ঘরে প্রবেশ করবে না। অতঃপর তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ঘরে ঘণ্টি থাকে সেই ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না।-সুনানে আবু দাউদ হাদীস : ৪২৩১; সুনানে নাসাঈ হাদীস : ৫২৩৭
সহীহ মুসলিমে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
ঘণ্টি, বাজা, ঘুঙুর হল শয়তানের বাদ্যযন্ত্র।-সহীহ মুসলিম হাদীস : ২১১৪
মৃদু আওয়াজের ঘণ্টি-ঘুঙুরের যদি এই অবস্থা হয় তাহলে আধুনিক সুরেলা বাদ্যযন্ত্রের বিধান কী হবে তা খুব সহজেই বুঝা যায়।
চার ইমামের ভাষ্য
গান ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যাপারে ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ী ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ.-অভিন্ন সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। সকলেই গান-বাদ্যকে হারাম বলে আখ্যায়িত করেছেন।
ইমাম মালেক রাহ. কে গান-বাদ্যের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কেবল ফাসিকরাই তা করতে পারে।-কুরতুবী ১৪/৫৫ ইমাম শাফেয়ী রাহ. বলেছেন যে, গান-বাদ্যে লিপ্ত ব্যক্তি হল আহমক।তিনি আরো বলেন, সর্বপ্রকার বীণা, তন্ত্রী, ঢাকঢোল, তবলা, সারেঙ্গী সবই হারাম এবং এর শ্রোতা ফাসেক। তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে না।-ইগাছাতুল লাহফান ১/১৭৯; কুরতুবী ১৪/৫৫
হাম্বলী মাযহাবের প্রখ্যাত ফকীহ আল্লামা আলী মারদভী লেখেন, বাদ্য ছাড়া গান মাকরূহে তাহরীমী। আর যদি বাদ্য থাকে তবে তা হারাম।-আহসানুল ফাতাওয়া ৮/৩৮৮
দফ বাজানোর যে কথা হাদীসে এসেছে, তাতে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, কোনো খুশির সংবাদে বা খুশির দিনে বাচ্চা ছেলে-মেয়েরা (অপ্রাপ্ত বয়স্করা)আনন্দে দফ (বিশেষ বাদ্য) বাজাতে পারবে। তবে তাও খুব পছ্ন্দীয় কাজ ছিল বলে প্রমাণিত হয় না।(জামে তিরমিযী হাদীস : ১০৮৯; সহীহ বুখারী হাদীস : ৫১৪৭, ৫১৬২)
আমাদের রাসূলেরও আনুগত্য হবে, তার নির্দেশিত পথই আল্লাহর পথ। আল্লাহ বলেন-
হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য কর এবং (তার কথা) শ্রবণ করার পরেও তার (আনুগত্য) হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না।
আর তোমরা তাদের মত হয়ো না যারা বলে, ‘শ্রবণ করলাম’ অথচ তারা শ্রবণ করে না।[সূরা ৮ আনফাল: ২০-২১]
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক দ্বীন বুঝার তাওফিক দান করুন ও যাবতীয় অশ্লীলতা থেকে মুখ ফিরিয়ে সত্য ও সুন্দরের প্রতি ধাবিত করুন। আমীন।।
বি.দ্র. আজকের এই পোস্টটি লিখেছিলাম ফেসবুকে বাংলা গায়ক আসিফ আকবরের একটি পোস্ট দেখে (২৮.০৩.১৬) তিনি নাকি নন্দিত নরকে যেতে চান
বিষয়: সাহিত্য
১৬৫৬ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আর যখন তাদেরকে বলা হয়, অন্যান্যরা যেভাবে ঈমান এনেছে তোমরাও সেভাবে ঈমান আন, তখন তারা বলে, আমরাও কি ঈমান আনব বোকাদেরই মত! মনে রেখো, প্রকৃতপক্ষে তারাই বোকা, কিন্তু তারা তা বোঝে না।
And when it is said to them (hypocrites): ”Believe as the people (followers of Muhammad Peace be upon him , Al-Ansâr and Al-Muhajirûn) have believed,” they say: ”Shall we believe as the fools have believed?” Verily, they are the fools, but they know not ( সুরা বাকারাঃ আয়াত-১৩)
মন্তব্য করতে লগইন করুন