সূরা ১৭ বানী ইসরাইল: ৫৩ আয়াতের তাফসীর : (ভালো কথা বলা ও অহেতুক কথা-বার্তা থেকে বিরত থাকা।)
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ২৩ মার্চ, ২০১৬, ১২:৪০:৪৬ রাত
সূরা ১৭ বানী ইসরাইল: ৫৩ আয়াতের তাফসীর : (ভালো কথা বলা ও অহেতুক কথা-বার্তা থেকে বিরত থাকা।)
---------------------------------------------------------
وَقُلْ لِعِبَادِي يَقُولُوا الَّتِي هِيَ أَحْسَنُ ۚ إِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْزَغُ بَيْنَهُمْ ۚ إِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ
لِلْإِنْسَانِ عَدُوًّا مُبِينًا
অনুবাদ: আমার বান্দাদেরকে বল, তারা যেন সেই কথা বলে যা উত্তম। নিশ্চয়ই শয়তান তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উস্কানি দেয়; নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শক্র ।
যে কথায় উপকার আছে বলে স্পষ্ট হয়, সে কথা ছাড়া অন্য সব (অসঙ্গত) কথা হতে নিজ জিহ্বাকে সংযত রাখা প্রত্যেক ভারপ্রাপ্ত মুসলিম ব্যক্তির উচিত। যেখানে কথা বলা ও চুপ থাকা দুটোই সমান, সেখানে চুপ থাকাটাই সুন্নত। কেননা, বৈধ কথাবার্তাও অনেক সময় হারাম অথবা মাকরূহ পর্যায়ে পৌঁছে দেয়। অধিকাংশ এরূপই ঘটে থাকে। আর (বিপদ ও পাপ থেকে) নিরাপত্তার সমতুল্য কোন বস্তু নেই। শয়তান সব সময়ই মানুষের মাঝে বিভেদ লাগানোর জন্য তৎপর থাকে। এই জন্যই আল্লাহ তাআলা আয়াতের দ্বিতীয় অংশে শয়তানের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, সে মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। যে যত বেশি কথা বলবে তার ততো বিপদ দুনিয়া ও আখিরাতে; কেননা শয়তান তার কথাতে বিভ্রান্তির আলামত রেখে দিবে। আল্লাহ তাআলা সূরা ক্বাফে বলেন-
"মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে (তা লিপিবদ্ধ করার জন্য) তৎপর প্রহরী তার নিকটেই রয়েছে"। (সূরা ক্বাফ: ১৮)
আল্লাহর রাসূল সা.বলেছেন: যে চুপ থাকল সে মুক্তি পেল। ( সহীহ বুখারী: ৫০৭৯; সহীহ মুসলিম:৭১৫)
ভালোকথা বলা এবং মুখের সংযমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম থেকে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এখন কিছু সহীহ হাদীস পেশ করব।
১
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে; নচেৎ চুপ থাকে।” (বুখারী ৬০১৮, ৩৩৩১, ৫১৮৬, ৬১৩৬, ৬১৩৮, ৬৪৭৫, মুসলিম ৪৭, ১৪৬৮, তিরমিযী ১১৮৮, আহমাদ ৭৫৭১, ৯২৪০, ৯৩১২, ৯৫০৩, ১০০৭১, ১০৪৭৫, দারেমী ২২২২)
আবূ মুসা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! সর্বোত্তম মুসলিম কে?’ তিনি বললেন, “যার জিহ্বা ও হাত থেকে মুসলিমরা নিরাপদ থাকে।” ( বুখারী ১১, মুসলিম ৪২, তিরমিযী ২৫০৪, ২৬২৮, নাসায়ী ৪৯৯৯)
সাহাল ইবনে সায়াদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী (অঙ্গ জিভ) এবং দুই পায়ের মধ্যবর্তী (অঙ্গ গুপ্তা-ঙ্গ) সম্বন্ধে নিশ্চয়তা দেবে, আমি তার জন্য জান্নাতের নিশ্চয়তা দেব।” ( বুখারী ৬৪৭৪, ৬৮০৭, তিরমিযী ২৪০৮, আহমাদ ২২৩১৬)
বেশি ও অহেতুক কথা বলার ফলে অনেক সময় মুখ ফসকে খুবই খারাপ কথা বের হয়ে আসে যা আল্লাহর নিকট খুবই অপছন্দের।
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন যে, “মানুষ চিন্তা-ভাবনা না করে এমন কথাবার্তা বলে ফেলে, যার দ্বারা তার পদস্খলন ঘ’টে পূর্ব-পশ্চিমের মধ্যবর্তী দূরত্ব থেকে বেশি দূরত্ব দোযখে গিয়ে পতিত হয়।”( বুখারী ৬৪৭৭, ৬৪৭৮, মুসলিম ২৯৮৮, তিরমিযী ২৩১৪, আহমাদ ৭১৭৪, ৭৮৯৮, ৮২০৬, ৮৪৪৪, ৮৭০৩, ৮৯৬৭, ১০৫১৪, মুওয়াত্তা মালিক ১৮৯৪)
উক্ববাহ ইবনে আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নিবেদন করলাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! কিসে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব?’ তিনি বললেন, “তুমি নিজ রসনাকে নিয়ন্ত্রণে রাখ। তোমার ঘর তোমার জন্য প্রশস্ত হোক। (অর্থাৎ অবসর সময়ে নিজ গৃহে অবস্থান কর।) আর নিজ পাপের জন্য ক্রন্দন কর।” (তিরমিযী: ২৪০৬)
আজ পৃথিবীর যাবতীয় অনাচার ও অশান্তির মূল বা প্রধান কারণ হলো-লাগামহীন মুখের ব্যবহার! আল্লাহ আমাদের অহেতুক ফালতু কথা থেকে বাঁচিয়ে রাখুন এবং মুখের সংযমিত ব্যবহারে পারস্পরিক সদ্ব্যবহারে সবাইকে ভালো রাখুন। আমীন!!
-সামসুল আলম দোয়েল
বিষয়: বিবিধ
১৩০৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন