প্রচলিত সামাজিক ব্যাধি : ৩য় পর্ব (চোগলখুরী বা কথা লাগানো)

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ২১ মার্চ, ২০১৬, ০৫:০৫:১৫ বিকাল

প্রচলিত সামাজিক ব্যাধি : ৩য় পর্ব (চোগলখুরী বা কথা লাগানো)

বর্তমান সমাজে যে ব্যাধিটি সবচেয়ে মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে গেছে তা হলো- চোখলখুরী বা একের কথা অন্যের কাছে লাগানো। মানুষ দুনিয়াকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে এবং সমাজের মাঝে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে সামান্য ফায়দা হাসিলের জন্যই এই জঘন্য কাজটি করে থাকে। একবারের জন্যও ভাবে না যে, এতে কত বড় গোনাহ তার আমালনামায় যোগ হচ্ছে এবং পরিবার বা সমাজের মাঝে ফিতনা বাড়ানোর গোনাহও তার উপর আরোপিত হচ্ছে।

চোগলখুরীর ফলে মানুষের সম্পর্কে ফাটল ধরে এবং তাদের মাঝে হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতার বহ্নিশিখা জ্বলে ওঠে এতে পারিবারিক বন্ধন কিংবা সামাজিক একতা বিনষ্ট হয়। চোগলখুরীর নিন্দায় আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,

وَلاَ تُطِعْ كُلَّ حَلَّافٍ مَهِينٍ - هَمَّازٍ مَّشَّاءٍ بِنَمِيمٍ-

‘যে অধিক শপথ করে, যে লাঞ্ছিত, যে পশ্চাতে নিন্দা করে, একের কথা অন্যের নিকটে লাগায় আপনি তার আনুগত্য করবেন না’ (সূরা ৬৮ ক্বলম ১০-১১)।

সমাজের মোড়লজাতীয় বা নেতা জাতীয় লোকেরাই এই কাজটি বেশি করে থাকে যাতে পরবর্তীতে শালিসী বা বিচারের নামে দুপক্ষ থেকেই অর্থ কামাতে পারে।

চোগলখুরের পরিণতি:

হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘চোগলখোর জান্নাতে যাবে না।’’ (বুখারী ৬০৫৬, মুসলিম ১০৫, তিরমিযী ২০২৬, আবূ দাউদ ৪৮৭১, আহমাদ ২২৭৩৬, ২২৭৯৪, ২২৮১৪, ২২৮৫০, ২২৮৫৯, ২২৮৭৮, ২২৯১১, ২২৯২৪, ২২৯৪০)

ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটো কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় বললেন, ‘‘ঐ দুই কবর-বাসীর আযাব হচ্ছে। অবশ্য ওদেরকে কোন বড় ধরনের অপরাধ [বা কোন কঠিন কাজের] জন্য আযাব দেওয়া হচ্ছে না।’’ [তারপর বললেন,] ‘‘হ্যাঁ, অপরাধ তো বড়ই ছিল। ওদের একজন [লোকের] চুগলী করে বেড়াত। আর অপরজন পেশাবের ছিটা থেকে বাঁচত না।’’ (বুখারী:২১৬, ২১৮, ১৩৬১, ১৩৭৮, ৬০৫২, ৬০৫৫, মুসলিম: ২৯২, তিরমিযী: ৭০, নাসায়ী: ৩১, ২০৬৮, আবূ দাউদ: ২০, ইবনু মাজাহ: ৩৪৭, আহমাদ: ১৯৮১, দারেমী: ৭৩৯)

‘ওদেরকে কোন বড় ধরনের অপরাধের জন্য আযাব দেওয়া হচ্ছে না’-এর ব্যাখ্যায় উলামাগণ বলেন, এর মানে তাদের দু’জনের ধারণা অনুপাতে তা বড় অপরাধ ছিল না। কারো মতে, এমন অপরাধ ছিল না, যা ত্যাগ করা তাদের জন্য খুব কঠিন ছিল।

আল্লাহ বলেন-

وَتَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡبِرِّ وَٱلتَّقۡوَىٰۖ وَلَا تَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡإِثۡمِ وَٱلۡعُدۡوَٰنِ

পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে একে অন্যের সাহায্য করো না। (সূরা ৫ মায়েদাহ: ২)

ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মিথ্যা ও অপবাদ’ কি জিনিস আমি কি তোমাদেরকে বলে দেব না? তা হচ্ছে চুগলী করা, লোকালয়ে কারো সমালোচনা করা।’’(বুখারী ৬১৩৪, মুসলিম ২৬০৬, তিরমিযী ১৯৭১, আবূ দাউদ ৪৯৮৯, আহমাদ ৩৬৩১, ৩৭১৯)

চোগলখুরীর নিকৃষ্ট প্রক্রিয়া হ’লঃ স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে এবং স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বামীকে; ভাইয়ের কথা অপর ভাইয়ের কাছে বলে; এক প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে আরেকজনকে ক্ষেপিয়ে তুলে তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরানো। অনুরূপভাবে অনেক কর্মজীবি অফিসের বস কিংবা দায়িত্বশীলের নিকট অন্য কোন কর্মজীবির কথা তুলে ধরে। এতে তার উদ্দেশ্য উক্ত কর্মজীবির ক্ষতি সাধন করা এবং নিজেকে উক্ত দায়িত্বশীলের শুভার্থী বা কল্যাণকামী হিসাবে তুলে ধরা। এসব কাজ চোগলখুরী হিসাবে গণ্য এবং তা হারাম। এটা বান্দাহর হকের সাথে জড়িত বলে তাওবা করার শর্ত হলো- যাদের ব্যাপারে চোগলখুরী হয়েছে প্রত্যেকের কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে তাওবা করা।

বিষয়: বিবিধ

১৮৬৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

363147
২১ মার্চ ২০১৬ বিকাল ০৫:৪৩
কুয়েত থেকে লিখেছেন : লেখাটি ভালো লাগলো ত্বাকওয়া ভিত্তিক জীবনই সকল সমশ্যার সমধাণ। ধন্যবাদ আপনাকে
363166
২১ মার্চ ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:২২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ধন্যবাদ। এই ব্যাধিতে আমরা খুব বেশি আক্রান্ত।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File