প্রচলিত সামাজিক ব্যাধি ও ইসলামের বিধানঃ প্রথম পর্ব (ধারণা করা)
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ২০ মার্চ, ২০১৬, ০১:৫৮:৩২ রাত
সামাজিক ব্যধি ও আমাদের করণীয়: ধারণা বা অনুমান নির্ভর কথা ও বিশ্বাস
---------------------------------------------------------------
বর্তমান সমাজে ধারণা বা অনুমান (কারো প্রতি সন্দেহ বশতঃ বিনা প্রমাণে কুধারণা বা খারাপ মনোভাব পোষণ করা) একটি ভয়াল ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ভাইরাসের কবলে পড়ে একটি পরিবার বা একটি সমাজের পতন হয়! কাউকে সন্দেহ করা ধারণা থেকেই সৃষ্টি হয়। তারপর তা আরো জটিল হয়, বিশ্বাস ভঙ্গ হয়, আস্থা হারায়, পরিবারের বন্ধন ও সামাজিক একতা বিনষ্ট হয়। ইসলামে ধারণা বা অনুমান নির্ভর কথা বলা হারাম।
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন-
"হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা বহুবিধ ধারণা হতে দূরে থাক; কারণ কোন কোন ধারণা পাপ"... (সূরা ৪৯ হুজুরাত: ১২)
তিনি আরো বলেন-
"যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই সেই বিষয়ে অনুমান দ্বারা পরিচালিত হইয়ো না। নিশ্চয় কর্ণ, চক্ষু ও হৃদয় ওদের প্রত্যেকের নিকট কৈফিয়ত তলব করা হবে।" (সূরা বনী ইসরাইল: ৩৬)
ধারণা বা অনুমান নির্ভর হলো কাফির ও মুশরিকদের কাজ-
"আর যে বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই, তারা কেবলমাত্র ধারণা অনুমানের অনুসরণ করে আর সত্যের মোকাবেলায় ধারনা অনুমান কোন কাজে আসবে না।" ( সূরা ৫৩ আন-নাজম:২৮)
ধারণা ভ্রান্তি তৈরি করে ও বিপথগামী করেঃ
"আর তুমি যদি দুনিয়ার অধিকাংশ লোকের কথা অনুসরণ কর তাহলে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিভ্রান্ত করে ফেলবে; তারা শুধুমাত্র ধারনা অনুমানের অনুসরণ করে আর তারা ধারনা অনুমান ছাড়া আর কিছুই করছে না।" ( সূরা ৬ আনআম: ১১৬)
সূরা ক্বাফে আল্লাহ বলেন- "মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে (তা লিপিবদ্ধ করার জন্য) তৎপর প্রহরী তার নিকটেই রয়েছে।" (সূরা ক্বাফ:১৮)
হাদীস:
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে; নচেৎ চুপ থাকে।” (বুখারী ও মুসলিম)১
রাসূল (ছাঃ) বলেনঃ إِيَّاكُمْ وَ الظَّنَّ، فَإِنَّ الظَّنَّ أَكْذَبُ الْحَدِيثِ، لاَ تَجَسَّسُوا، وَلاَ تَحَسَّسُوا، وَلاَ تَبَاغَضُوا، وَكُونُوا عِبَادَ اللهِ إِخْوَانًا ‘তোমরা ধারণা থেকে বেঁচে থাক। কারণ, ধারণা ভিত্তিক কথাই হ’ল সবচেয়ে বড় মিথ্যাকথা। তোমরা একে অপরের দোষ অনুসন্ধান কর না। পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ কর না এবং পরস্পর দুশমনি কর না, বরং তোমরা পরস্পর ভাই ভাই হয়ে যাও হে আল্লাহর বান্দারা’।[২]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাস আরো বলেন-
‘ওহে যারা মৌখিক স্বীকৃতির মাধ্যমে ঈমান এনেছ, অথচ এখনো অন্তঃকরণে ঈমান পৌঁছেনি! তোমরা মুসলিমদের নিন্দা কর না, তাদের ছিদ্রান্বেষণ কর না। কেননা যে ব্যক্তি অপরের দোষ খোঁজে আল্লাহ তার দোষ অনুসন্ধান করেন। আর আল্লাহ যার দোষ তালাশ করেন, তাকে তার নিজস্ব বাসগৃহেই অপদস্থ করেন’।[৩]
আসুন আমরা পরস্পরের প্রতি খারাপ ধারণা বা অনুমান নির্ভর কথা না বলি। পারস্পরিক সুধারণা রাখি। অন্যের সম্পর্কে সুধারণার ফলে পারস্পরিক ভুল বুঝাবুঝির অবসান পুরোপুরিভাবে সম্ভব। ফলে পরিবার ও সমাজের দ্বন্দ্ব কলহ নিঃশেষ হয়ে সমাজের মানুষের ভ্রতৃত্ববোধ অটুট হবে। দৃঢ় হবে পরিবার ও সামাজিক মেলবন্ধনের সেতু। তাই অপর মুসলিম ভাই সম্পর্কে স্বচ্ছ, নিষ্কলুষ ধারণা রেখে আমরা সমাজে বসবাস করার আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাব। আল্লাহ আমাদের সবাইকে অপর মুসলিম সম্পর্কে সুধারণা পোষণের জন্য সুস্থ অন্তঃকরণ দান করুন-আমীন!
টিকা ও সূত্রঃ
১.বুখারী ৬০১৮, ৩৩৩১, ৫১৮৬, ৬১৩৬, ৬১৩৮, ৬৪৭৫, মুসলিম ৪৭, ১৪৬৮, তিরমিযী ১১৮৮, আহমাদ ৭৫৭১, ৯২৪০, ৯৩১২, ৯৫০৩, ১০০৭১, ১০৪৭৫, দারেমী ২২২২
২. বুখারী হা/৪৮৪৯, ৫১৪৩
৩.আবুদাঊদ হা/৪৮৮০
বিষয়: বিবিধ
১৩৮০ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন