বল্মীক মৃত্তিকায় স্বপ্নবিলাস (নীল মুসাফিরের কলাম)
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ১৩ মার্চ, ২০১৬, ০৭:০৪:০১ সন্ধ্যা
১
গোটাদেশটাই আজ উলুবন। উইপোকার মহামারীতে এই ভেবে সুখ পাবার কোনো সুযোগ নেই যে, যা হবার প্রতিবেশীর হয়েছে আমার কী? আপনার ভিটার নিচে মাটি যে সড়ে যায় নি তা কে বলবে। একদিন দেখবেন আস্ত দালানটাই ভিটার নিচে চাঁপা পড়ে গেছে।
ক্ষণস্থায়ী ও চাক্ষুষ লাভের অংক দেখে স্বৈরাচারের সাথে গলা মিলিয়ে কিংবা হাতে হাত রেখে সূর তোলার খোসারত একদিন আপনাকেই দিতে হবে। একবার ভাবুন, দুধ-কলা দিয়ে পোষা সাপও আপনাকে ছোবল মারতে পারে!
ছোট্টবেলায় পড়তাম "একতাই বল"! এই সম্পর্কে কতই না গল্প শোনতাম। আজ তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। তবুও জাতি আজ ভ্রান্তিবিলাসে।
কাউকে ধ্বংস করার সহজ ও কার্যকর পদ্ধতি হলো- তার কাছ থেকে তার স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশীদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলে একাকী করা। তারপর একে একে সবাইকে সাইজ করা। পারস্পরিক "বিভেদ বা দ্বন্দ্ব" সৃষ্টি করা শয়তানের কাজ। আজ আমাদের চারপাশ শয়তানে ঘেরা।
মনে রাখবেন, ভাইয়ের চেয়ে প্রতিবেশী আপন হতে পারে না; প্রতিবেশির চেয়ে বিদেশী আপন হতে পারে না।
আমাদের মাঝে রাজনৈতিক আদর্শ ও চিন্তা-চেতনার মতপার্থক্য থাকতে পারে; তাই বলে- দেশ ও জাতির স্বার্থে কেন ঐক্যবদ্ধ হতে পারব না?
২
দ্বীনের ভিতর মতপার্থক্য ও বিভেদ সৃষ্টি করা হারাম ও খুবই জঘন্য তার প্রভাব! মুসলমানরা আজ লাঞ্ছিত, ক্ষত-বিক্ষত, ধিকৃত শুধু নিজেদের মাঝে পারস্পরিক বিভেদ-বিলাসের জন্য।
আমাদের পূর্ববর্তী তথা সাহাবাগণ, সালফে-সালেহীন ও অনুসরণীয় ইমামদের মাঝে ফিকহগত মতপার্থক্য থাকলেও তারা ছিলেন ঐক্যবদ্ধ। আমরা দেখতে পাই, আমাদের ইমামদের মাঝে মাসয়ালাগত বিষয়ে শত বিরোধ থাকার পরও তারা পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষ ভাব ও খারাপ ধারণা রাখতেন না। বরং তারা ছিলেন ঐক্যবদ্ধভাবে সুন্নাতে রাসূলের একনিষ্ঠ অনুসারী। সুন্নাতের কোনো বিষয়ে পরস্পর বিরোধপূর্ণ দলীল গ্রহণ করেও তারা একে অপরকে বাতিল বা গোমরাহী বলে আখ্যায়িত করতেন না।
আফসোস! হায়রে মুসলমান! সামান্য দুই একটা হাদীস পড়েই মাযহাবগত মতপার্থক্যের বিষয়ে নাড়াচাড়া করে নিজেদের মাঝে পারস্পরিক বিষাগুনে ঘি ঢালি!
পূর্ববর্তীদের নিয়ম ছিল- কোনো মতভেদপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করলে তারা ইমামদের মতামত তুলে ধরে নিজের মতের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করতেন আর শেষে বলতেন "আল্লাহই ভালো জানেন"। আর এখন আমরা দুই একটা হাদীসের কিতাব পড়ে বলে ফেলি " এটা সহীহ ওটা বাতিল"।
আসুন আমরা ফিকহের মুস্তাহাবগত বিষয়ে ইমামদের উপর ছেড়ে দিয়ে আর হাদীস গ্রহণের মানদন্ড মুহাদ্দিসদের (সালাফযুগের) উপর নির্ভর করি। পারস্পরিক মতভেদ মেনে নিয়ে আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই- বিদ'আতি, শিরকী ফের্কা ও জালিমদের বিরুদ্ধে।
এখনই সময়! নইলে এমন এক সময় আসবে; যখন নিজেরা পারস্পরিক বাহাস তো দুরের কথা সুন্নাতের উপর টিকেই থাকতে পারব না জালিমদের আস্ফালনে।
কুরআনের আলোকে বিভেদ ও বিভক্তির পরিণাম-
দ্বীনের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করা মুশরিকদের কাজ: আল্লাহ বলেন-
"তোমরা বিশুদ্ধ-চিত্তে তাঁর অভিমুখী হও; তাঁকে ভয় কর। যথাযথভাবে নামায পড় এবং অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না; যারা ধর্ম সম্বন্ধে নানা মত সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে; প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে আনন্দিত।" (সূরা ৩০ রূম: ৩১-৩২)
পারস্পরিক বিভেদ আল্লাহর গযব:
বল, ‘তোমাদের ঊর্ধ্বদেশ অথবা পদতল হতে শাস্তি প্রেরণ করতে, তোমাদেরকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করতে এবং এক দলকে অপর দলের নিপীড়নের আস্বাদ গ্রহণ করাতে তিনিই সক্ষম।’ দেখ, কিরূপ বিভিন্ন প্রকারে আয়াতসমূহ বিবৃত করি; যাতে তারা অনুধাবন করে। ( সূরা ৬ আনআম: ৬৫)
অবশ্যই যারা ধর্ম সম্বন্ধে নানা মতের সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে, তাদের কোন কাজের দায়িত্ব তোমার নেই, তাদের বিষয় আল্লাহর এখতিয়ারভুক্ত। তিনিই তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে তাদেরকে অবহিত করবেন। (সূরা ৬ আনআম: ১৬৫)
পারস্পরিক বিভেদ ফিতনাস্বরূপ:
কিন্তু তারা নিজেদের মধ্যে তাদের দ্বীনকে বহু ভাগে বিভক্ত করেছে; প্রত্যেক দলই তাদের নিকট যা আছে, তা নিয়েই আনন্দিত। (সূরা ২৩ মুমিনুন: ৫৩)
মতভেদকারী ও বিভেদকারীদের জন্য পারলৌকিক আযাব:
"তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শন আসার পর (বিভিন্ন দলে) বিভক্ত হয়েছে ও নিজেদের মধ্যে মতান্তর সৃষ্টি করেছে। তাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি। (সূরা ৩ আলে ইমরান: ১০৫)
মুমিনরা থাকবে ঐক্যবদ্ধ:
তোমরা সকলে আল্লাহর রশি (ধর্ম বা কুরআন)কে শক্ত করে ধর; এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। (সূরা ৩ আলে ইমরান: ১০৩)
আসুন ঐক্যবদ্ধভাবে শিরক, বিদআত ও জুলমের বিরুদ্ধে সাধ্যমত দাওয়াত-জিহাদ ও সংগ্রাম করি।
বিষয়: বিবিধ
১০৭০ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন