সম্পদের মোহ ও হারাম উপার্জন
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০৬:২৬ রাত
মসজিদে খতিব বা ইমামের সুন্নাতের উপর গুরুত্বপূর্ণ বয়ান শুনি দীর্ঘদিন থেকে। তিনি কুরআন ও হাদীসের আলোকে সব সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের গুরুত্ব ও ফযিলাতের বর্ণনা দিয়ে যা বুঝাতে চান সে পর্যন্ত তা গিয়ে দাঁড়ায়- দাঁড়ি, টুপি, পাঞ্জাবি, পাগড়ির মর্যাদা। (অথচ একমাত্র দাঁড়ি ছাড়া অন্যগুলোর গুরুত্ব বা ফযিলত রাসূল থেকে প্রমাণিত নয়)
কখনো এটা বুঝাতে চান না যে, রাসূলের সুন্নাতের অনুসরণ মানে হলো, মিথ্যা বলা যাবে না, মিথ্যা শপথ করা যাবে না, হারাম উপার্জন করা যাবে না, কাউকে শারীরিক/মানসিকভাবে আঘাত করা যাবে না, পরের হক নষ্ট করা যাবে না।
তিনি এটা বুঝাতে ব্যর্থ হোন যে, সুন্নাত মানে নয় ফযরের দুই রাকাত কিংবা যোহরে চার রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা; সুন্নাত মানে হলো বিদ'আতের বিপরীত। সুতরাং ইবাদতের নামে এমন কিছু করা যাবে না যা রাসূল সা. থেকে প্রমাণিত নয়, কিংবা এমন পদ্ধতিতে করা যাবে না যে পদ্ধতিতে রাসূল সা. করেন নি।
সুন্নাতের মানে হলো সমস্ত হারাম থেকে বেঁচে থাকা, কবীরা গুনাহ না করা (হয়ে গেলেও সাথে সাথে তাওবা করা)। সুন্নাত মানে হলো- রাসূল সা. যা করেছেন তা-ই করা, আর যা করতে বারণ করেছেন তা থেকে বিরত থাকা। কিন্তু আমরা রাসূলের বৈশিষ্ট্যগত ও স্বভাবগত সুন্নাত নিয়ে বাড়াবাড়ি করছি আর ইবাদতের সুন্নাতের ব্যাপারে উদাসীন! সেখানে বিদ'আতের ছড়াছড়ি!! আর বিদ'আত মানেই প্রত্যাখ্যাত।
জাবের (রা) হতে বর্ণিত। রাসূল(সা) তাঁর খুতবায় বলতেনঃ আম্মা বা’দ (আল্লাহর প্রশংসা ও সাক্ষ্যদানের পর) নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম কথা আল্লাহর কিতাব এবং সর্বোত্তম রীতি মুহাম্মদ (সা) এর রীতি। সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজ হল দ্বীনের ব্যাপারে নতুন কাজ উদ্ভাবন করা তথা বিদা’আত। আর প্রত্যেকটি বিদ’আতই ভ্রষ্টতা। – ( রিয়াযুস সালেহীন :১৭৪, মুসলিম, নাসায়ী, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, আহমাদ)
এর কারণ-
যিনি আমাদের কাছে বয়ান করছেন এবং যারা শুনছি সবাই দুনিয়া কামাইয়ের ব্যাপারে সচেষ্ট আর দ্বীনের ব্যাপারে (শুধু দাঁড়ি-টুপি আর সালাতেই দ্বীন সীমাবদ্ধ) উদাসীন। হারামের বা অশ্লীলতার বিরুদ্ধে বললে যে, কমিটি নাখোশ হবে (হাদিয়া মিলবে না), মুসুল্লী বেশি আসবে না; আর না আসলে বেতন বাড়বে না।
দুনিয়ামুখিতার পরিণাম: আল্লাহ তাআলা বলেন-
"প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে" (আল কুরআন সূরা ১০২ তাকাসুর: ১)
تَكَاثُر অধিক কামনা করা বা প্রাচুর্য নিয়ে পরস্পর প্রতিযোগিতা করা। এ কথাটি ব্যাপক; প্রাচুর্যে মাল-ধন, সন্তান-সন্ততি, সহযোগী-পৃষ্ঠপোষক, বংশ-গোত্র প্রভৃতি সবই শামিল। প্রত্যেক ঐ বস্তু যার প্রাচুর্য ও আধিক্য মানুষের প্রিয় এবং যা অধিকভাবে পাবার প্রচেষ্টা ও কামনা মানুষকে আল্লাহর আহকাম এবং আখেরাত হতে উদাসীন করে দেয়, তাই উদ্দেশ্য এখানে। এ স্থানে আল্লাহ তাআলা মানুষের সেই দুর্বলতাকে ব্যক্ত করেছেন, অধিকাংশ মানুষ সর্বযুগে যার শিকার হয়ে থাকে। (দ্রষ্টব্য: তাফসীরে আহসানুল বায়ান)
"দুর্ভোগ প্রত্যেকের, যে পশ্চাতে ও সম্মুখে লোকের নিন্দা করে। যে অর্থ জমায় ও তা গণনা করে রাখে। সে ধারণা করে যে, তার অর্থ তাকে অমর করে রাখবে।কখনও না, সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে হুত্বামায়।" ( সূরা ১০৪হুমাযাহ: ১-৪)
এই প্রশ্নসূচক বাক্য ‘হুত্বামাহ’ জাহান্নামের ভয়াবহতাকে ব্যক্ত করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ, সেটা এমন ভয়ংকর আগুন হবে, যার প্রকৃতত্বে তোমার জ্ঞান-বুদ্ধি পৌঁছতে পারে না এবং তোমার সমঝ ও অনুভব তা আয়ত্ত করতে পারে না। ( তাফসীরে আহসানুল বায়ান)
হারাম উপার্জনের ভয়াবহতা:
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,আর যে দেহ হারাম খাদ্য দ্বারা গড়ে ওঠে তার জন্য দোযখের আগুনই উত্তম। [সহিহ জামিউস সগির : ৮৬৪৮]
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে কাব ইবন উজরাহ,যে দেহ হারাম খাদ্য দ্বারা গড়ে উঠে তা জান্নাতে যাবে না। [দারেমি : ২৮১৮]
হারাম উপার্জন এমন খারাপ জিনিস যা থেকে দান করলেও কোনো লাভ নেই এবং আল্লাহ তাআলা তা গ্রহণ করেন না। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা পবিত্রতা ছাড়া কোনো সালাত কবুল করেন না, আর হারাম উপার্জনের দানও আল্লাহ তাআলা কবুল করেন না। [সহিহ ইবনে খুজাইমাহ : ১০]
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন,
«لَا تَزُولُ قَدَمُ ابْنِ آدَمَ يَوْمَ القِيَامَةِ مِنْ عِنْدِ رَبِّهِ حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ خَمْسٍ، عَنْ عُمُرِهِ فِيمَ أَفْنَاهُ، وَعَنْ شَبَابِهِ فِيمَ أَبْلَاهُ، وَمَالِهِ مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَهُ وَفِيمَ أَنْفَقَهُ، وَمَاذَا عَمِلَ فِيمَا عَلِمَ»
‘‘কিয়ামতের দিন আদম সন্তানকে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে এক কদমও স্বস্থান হতে নড়তে দেওয়া হবে না।
১. তার জীবনকাল কিভাবে অতিবাহিত করেছে,
২. যৌবনের সময়টা কিভাবে ব্যয় করেছে,
৩. ধন সম্পদ কিভাবে উপার্জন করেছে,
৪. তা কিভাবে ব্যয় করেছে,
৫. সে দ্বীনের যতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছে সেই অনুযায়ী আমল করেছে কিনা।’’ (তিরমিযী খ- ৪, হাদীস নং ২৪১৭)
রাসূলুল্লাহ সা. বলেন:
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র। তিনি শুধু পবিত্র বস্তুই গ্রহণ করেন। তিনি মু’মিনদের সেই আদেশই দিয়েছেন, যে আদেশ তিনি দিয়েছিলেন রাসূলগণের।’’ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘হে ইমানদারগণ তোমরা পবিত্র বস্তু-সামগ্রী আহার কর, যেগুলো আমি তোমাদেরকে রুযী হিসেবে দান করেছি।’’ (সূরা বাকারা:১৭২) অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে দীর্ঘ সফরে থাকা অবস্থায় এলোমেলো চুল ও ধূলি-ধুসরিত ক্লান্ত-শ্রান্ত বদনে আকাশের দিকে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে প্রার্থনা করে ডাকছে, হে আমার রব, হে আমার রব অথচ সে যা খায় তা হারাম, যা পান করে তা হারাম, যা পরিধান করে তা হারাম এবং হারামের দ্বারা সে পুষ্টি অর্জন করে। সুতরাং তার প্রার্থনা কীভাবে কবুল হবে?।’ (ইমাম মুসলিম, সহীহ, খ- ৩, পৃ. ৮৫, হাদীস নং ২৩৯৩
বিষয়: বিবিধ
১৩০৮ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন