নেকীকে তুচ্ছ ভাবা ও মানুষকে হেয় করা
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ২৬ জানুয়ারি, ২০১৬, ১১:৪৫:৩০ রাত
বিসমিল্লাহি নাহমাদু অনুসাল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম-
চিত্র: মেসবাসায় আমরা ৭জন থাকি। একসাথে সবাইকে পাওয়া যায় না; তবুও চেষ্টা করি যেন জামাতে নামায পড়তে পারি। বিশেষ করে মাগরিবের নামায সবাইকে নিয়ে পড়তে চেষ্টা করি । ( দুজন ছাড়া সবাই নিয়মিত নামায পড়েন না) জামাতে পড়ার কারণই হলো, যেন তাদের নামায পড়াতে পারি। এ পর্যন্ত একজন ছাড়া সবাইকে পেরেছি।
সেদিন মাগরিবের সময় আমরা তিনজন জায়নামাযে দাঁড়িয়ে একজনের অপেক্ষায় আছি। একজন বলে বসল- (একটা জেলার নাম নিয়ে, এবং ঘৃণার সাথে উচ্চারণ করে) তাদের নামাযের দরকার আছে নাকি? ওরা তো সব জায়গাতেই আছে!
- এমন করে বলবেন না, সবারই নেকীর দরকার! এই যে ওনার জন্য অপেক্ষা করছি, এতেও আমাদের সওয়াব আছে! সুতরাং ওনার চেয়ে আমাদেরই লাভ বেশি।
সে লোকটি বলে বসল: এতো সওয়াব দিয়ে কী করেন?
ঠিক এই লোকটির মতো অনেকেই কাউকে তুচ্ছ করে, কারো প্রতি অভিমানের জন্য বলে থাকেন- এতো সওয়াব দিয়ে কী হবে? বা ওর দ্বারা অর্জিত সওয়াবের দরকার নেই।
চিত্র ২: কাঁচাবাজারে ফল ও সব্জির দোকান মিজান সাহেবের। শনিবার দিন অনেক মাল থেকে যায় অবিক্রিত, দোকান বন্ধ করার আগে কাঁচা তরকারী ও নষ্ট হতে পারে এমন ফল (রবিবার দিন যেহেতু ছুটি) স্বদেশীদের দিয়ে দেন।
সোহেলকে একদিন বললেন: এই সব্জি আর ফলগুলো নিয়ে যান, বাসায় সবাই খাবেন।
-বাসায় নিয়ে লাভ নেই, আমি ফল বেশি পছন্দ করি না।
- অন্যেরা খাবে।
-মানুষের খাইয়ে লাভ নেই। আমার মালিক কত মাল দেন আমি নিই না।
এমন ধরণের চিত্র প্রতিদিনই দেখছি। আমার পরিচিত অনেক মুদি দোকানীদের দেখেছি, অনেক উত্তীর্ণ মাল ডাস্টবিনে ফেলে দেন তবুও মানুষকে (স্বদেশী কি প্রতিবেশী) দেন না, কেননা তাদের দৃষ্টিতে লোকগুলো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না বা তাদের মতবিরোধী !
আমাদের এই ধরণের মানুসিকতার কারণ হলো-
মানুষকে হেয়, তুচ্ছ, নগণ্য ও শত্রু মনে করা। দুনিয়াকে প্রাধান্য দেয়া। মুসলমান অথচ নিজের সাফল্য মনে করে দুনিয়াতে কত সম্পদের মালিক হলো তার উপর।
নিজের চরিত্রকে সুন্দর, অপরকে প্রাধান্য দেয়াটা শুধুই কিতাবী বিষয় মনে করে।
এর একমাত্র কারণ হলো আমাদের মুসলমানদের "দুনিয়াকে" প্রাধান্য দেয়া। দুনিয়াকে প্রাধান্য দেই সাধারণত দুই কারণে।
×সম্পদের প্রতি ভালোবাসা
×রাজনৈতিক/ ক্ষমতার বড়াই
আসলেই কি কোনো নেকী তুচ্ছ হতে পারে? বা আমাদের বেশি নেকীর প্রয়োজন নেই!
আল্লাহ বলেন-
"সুতরাং কেউ অণু পরিমাণ ভালো কাজ করলে, সে তা দেখতে পাবে।" এবং কেউ অণু পরিমাণ মন্দ কাজ করলে, তাও সে দেখতে পাবে।" (সূরা যিলযাল: ৭-৮)
ইমাম মুক্বাতিল (রঃ) বলেন, এই সূরাটি সেই দুই ব্যক্তি সম্বন্ধে অবতীর্ণ হয়েছে, যাদের একজন ভিখারীকে অল্প কিছু সদকা করতে ইতস্ততঃবোধ করত। আর অপরজন ছোট ছোট পাপ করতে কোন প্রকার ভয় অনুভব করত না। (ফাতহুল ক্বাদীর)
"দুর্ভোগ প্রত্যেকের, যে পশ্চাতে ও সম্মুখে লোকের নিন্দা করে। যে অর্থ জমায় ও তা গণনা করে রাখে।" (সূরা হুমাযাহ: ১-২)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “তোমরা কোন নেক কাজকে ছোট মনে করো না যদিও তা হয় তোমার ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাত।-সহীহ মুসলিম
কাউকে তুচ্ছ বা হেয় প্রতিপন্ন করার অপরাধ:
আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা একে অপরের প্রতি হিংসা করো না, কেনা-বেচাতে জিনিসের মূল্য বাড়িয়ে একে অপরকে ধোঁকা দিয়ো না, একে অপরের প্রতি শত্রুতা রেখো না, এক অপর থেকে (ঘৃণাভরে) মুখ ফিরায়ো না এবং একে অপরের (জিনিস) কেনা-বেচার প্রস্তাবের উপর কেনা-বেচা করো না। আর হে আল্লাহর বান্দারা! তোমরা ভাই-ভাই হয়ে যাও। মুসলিম মুসলিমের ভাই। সে তার প্রতি জুলুম করবে না, তাকে তুচ্ছ ভাববে না এবং তাকে অসহায় অবস্থায় ছেড়ে দেবে না। তাকওয়া তথা আল্লাহ-সচেতনতা এখানে (অন্তরে) রয়েছে। (তিনি নিজ বুকের দিকে ইঙ্গিত করে এ কথা তিনবার বললেন।) কোন মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ ভাবা একটি মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য যথেষ্ট। প্রত্যেক মুসলিমের রক্ত, মাল এবং তার মর্যাদা অপর মুসলিমের উপর হারাম।’’
[বুখারি৫১৪৪, ৬০৬৬, মুসলিম ২৫৬৪, ২৫৬৩, তিরমিযি ১১৩৪, ১৯৮৮, নাসায়ি ৩২৩৯, ৪৪৯৬, ৪৫০৬, ৪৫০৭, আবু দাউদ ৩৪৩৮, ৩৪৪৩, ৪৯১৭, ইবন মাজাহ ১৮৬৭, ২১৭২, ২১৭৪ আহমদ ৭৬৭০, ৭৮১৫, ৮০৩৯, ২৭৩৩৪, ৮২৯৯, ২৭৪৮৮,মুওয়াত্তা মালেক ১৩৯১, ১৬৮৪]
সম্পদ কোনে কাজে আসবে না কিয়ামতের দিন:
যখন সে ধ্বংস হবে, তখন তার সম্পদ তার কোনই কাজে আসবে না।(সূরা লাইল: ১১)
সূরা আসরের শিক্ষা নিন।
বিষয়: বিবিধ
১৭০৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাঝাক আললাহ খাইরান
আললাহ সবাইকে সঠিক বুঝ দিন
আমিন
মন্তব্য করতে লগইন করুন