মানুষের সাথে প্রতারণা করার দুটি ঘটনা

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ২৫ জানুয়ারি, ২০১৬, ০৭:১১:৩৪ সন্ধ্যা

বিভা ছাত্রাবাস। মেসখালা কাহিনি

মির্জাপুর।২০০২। নতুন এই ছাত্রাবাসে আমরাই প্রথম বোর্ডার। মেসের রান্না ও ঘর-দোর পরিষ্কারের দায়িত্ব ছিল দুজন মহিলার উপর (যাদের আমরা খালা বলি)। তারা রান্না করলেও মেসের রুমগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করত না। (তবে কিছু ব্যতিক্রম ছিল, যারা অতিরিক্ত পরিশোধ করত বা যাদের প্রভাব ছিল অন্যভাবে, তাদের রুম শুধু নয়; জামা-কাপড়ও পরিষ্কার করে দিত।) মেসের সদস্যের মাঝে চাঁপা ক্ষোভ ছিল। তারা একরাতে টিভি রুমে (এমনকি ওটাই ছিল খাবারের রুম) মিটিং-এ বসল- খালাদের ব্যাপারে একটা ফয়সালায় আসতে। কেউ চাচ্ছিল, এখনই খালাদের বাদ দিয়ে নতুন খালা রাখবে,(আগে কয়েকবার খালাদের ব্যক্তিগতভাবে যেহেতু সতর্ক করা হয়েছিল)। দুজন চাচ্ছিল তাদের একটা সুযোগ দিয়ে তারপর চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবে। আমি ছিলাম দ্বিতীয় দলে। প্রথমদলের সংখ্যা ভারি হওয়াতে তারা সিদ্ধান্ত নিল আগামীকাল থেকে খালাদের আর রান্না করতে দেয়া হবে না।

পরদিন সকালে খালা এসে বলল-আমাদের নাকি রাখবেন না? আমি বললাম- আপনার ঠিকমত ভালো করে রান্না করেন না, রুম নিয়মিত পরিষ্কার করেন না, তাই সবাই মিলে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খালারা বললেন- মামা আপনিও এই কথা বললেন। বললাম-এখানে ব্যক্তিগত মত বড় কথা নয়, সবাই যেটা বলবে সেটাই হবে। ওনারা বললেন- অমুকেও তো বলল, সবাই নয় কিছু লোক চায়।

আমি বললাম- ঠিক আছে, কিছু লোক চেয়েছিল একটা সতর্কতা ও সুযোগ দিতে। তবে সবার মনেই আপনাদের প্রতি ক্ষোভ আছে।

খালা জানালেন, দুজন নাকি বলেছে তারা বাজার করে দেবে, দুপুরের রান্না হবে তাদের জন্য।

বললাম কে বলেছে? ওনারা যার কথা বললেন সে ছিল প্রথম পক্ষের লোক। খুবই আশ্চর্য হলাম তার এমন আচরণে! অথচ গতরাতে আমাদের সাথে কোনো সমর্থক পেলাম না।

প্রথমে খালারা ভুল বুঝেছিল (তারা ভেবেছিল আমিই হয়তো ছিলাম ডিসিশান ম্যাকার)। পরবর্তীতে অবশ্য তাদের ধারণা পাল্টে যায়।

সমাজে এই ধরণের লোকই বেশি, যারা গোপনে অন্যদের সাথে মিশে একজনের সম্পর্কে খারাপ কথা (সত্য বা মিথ্যা) বলবে অথচ তার সামনে গেলে তারই প্রশংসায় মুখে ফেনা তুলে ফেলবে। মনে হবে বাহ! কত ভালো মানুষ। তারাই সমাজে ভালো থাকে আর আমার মত লোকেরা হয় সমাজের জন্য আনফিট।

আল্লাগ বলেন-

وَلاَ تُطِعْ كُلَّ حَلَّافٍ مَهِينٍ - هَمَّازٍ مَّشَّاءٍ بِنَمِيمٍ-

‘যে অধিক শপথ করে, যে লাঞ্ছিত, যে পশ্চাতে নিন্দা করে, একের কথা অন্যের নিকটে লাগায় আপনি তার আনুগত্য করবেন না’ (ক্বলম ১০-১১)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَتَّاتٌ ‘চোগলখোর ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না’ (বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৪৮২৩)

ব্যবসায়ী বন্ধু ও মূর্খ ক্রেতা

আমার এক বন্ধু বিদেশ থেকে এসে সেই সময়ের সেরা ব্যবসা "মোবাইলের দোকান" খুলে একটি জমজমাট বাজারের সেরা জায়গায়। ভালই ব্যবসা করত। তখন নতুন সেট আর মোবাইল রিচার্জের কার্ড খুবই চলছিল। বাজারে ওর দোকান নিয়ে মাত্র তিনটি দোকান ছিল যেখানে মোবাইলের সামগ্রী ও কার্ড একসাথে পাওয়া যেতো, এখন সেখানে শতের উপর।

একদিন ওর দোকানে বসে আছি। একজন ছেলে একটা সেট নিয়ে বলল, ওর সেটটা খুলতে পরছেন না, কী হয়েছে সে বুঝতে পারছে না। বন্ধু কাস্টমার নিয়ে ব্যস্ত থাকায় আমি সেটটা হাতে নিয়ে দেখি সেট লক করা। ছেলেকে বললাম, তোমার সেট পাসওয়ার্ড দিয়ে লক করা, এখন এটা খুলতে পাসএয়ার্ড লাগবে। সে বলল, সে জানে না কে বা কিভাবে এই রকম হয়েছে। সুতরাং সে যে পাসওয়ার্ড জানবে না, এটাই স্বাভাবিক। আমি ভেবে দেখলাম, একটু চেষ্টা করে দেখি যদি খোলা যায় তাহলে অন্তত: ওর সার্ভিসিং চার্জ (তাকে কোনো সার্ভিসিং সেন্টারে যেতে হবে) বেঁচে যাবে। আমি প্রথমেই কমন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করলাম (০০০০) এবং সেটের লক খুলে গেল, ছেলেটি খুশি হয়ে চলে গেলে বন্ধু বলল- তুই একটা গাধা! চাইলেই ১০০ টাকা নিতে পারতি। আমি বললাম: সেটা কি ঠিক হতো? তাছাড়া মোবাইল চালালেও ছেলেটার অবস্থা খুব ভালো নয়।

আরেকদিন এর দোকানে একজন বয়স্ক লোক আসে যে কীনা ওর পরিচিত। গ্রামেরন সহজ সরল আর মূর্খ। লোকটি একটা মোবাইল কিনবে ( যাবতীয় মালামালসহ; সেট, সিম, কার্ড, এন্টেনা) লোকটির ছেলে সিঙ্গাপুর থাকে। বন্ধু লোকটিকে যেদামে সেটটি ধরিয়ে দিল তা অন্য জনের কাছে এর চেয়ে দুই হাজার কম রেখেছিল। আমি তো অবাক! বললাম-

একজন নিরীহ লোকের কাছে এটা করা কি ঠিক হলো?

সে বলল- এটাই ব্যবসা! একজনের কাছে হয়তো বেশি লাভ হবে না, অন্যজন থেকে সেটা পুষিয়ে নিতে হবে।

আমি বললাম- তাই বলে এমন পাথর্ক্য থাকবে? তাছাড়া আমার তো খুবই খারাপ লেগেছিল এই কারণে যে প্রথমজন ছিল ধনী আর দ্বিতীয়জন মেহেনতী। মাত্র অবস্থা ফিরবে (ছেলে বিদেশ থাকে)।

সে বলল: এটাই টিক্স! প্রথম জন চালু মাল। বেশি লাভ করা যাবে না, আর মুরুব্বীর কাছ থেকে যদি আরো বেশি রাখতাম তাহলেও ওনি আমার কাছ থেকেই কিনতেন। যা বুঝলাম, তোর দ্বারা ব্যবসা হবে না।

আমি বললাম, ব্যবসা হবে, বলতে পারিস বেশি লাভ হবে না। আচমকা অঢেল টাকা হবে না।

ওকে আর কী বলব? ওর দৃষ্টিতে আমি ছিলাম ব্যবসার জন্য আনফিট।

রাসূল (সা.) বললেন, 'যে ধোঁকা দেয় সে আমার উম্মত নয়।' (মুসলিম শরিফ : ১০১)।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«رَحِمَ اللَّهُ رَجُلًا سَمْحًا إِذَا بَاعَ، وَإِذَا اشْتَرَى، وَإِذَا اقْتَضَى».

“আল্লাহ তার প্রতি দয়া বর্ষণ করুক যে বিক্রির সময়, ক্রয়ের সময় এবং অভিযোগের সময় সদয় থাকে”

বিষয়: বিবিধ

১৫৬৭ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

357660
২৫ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ০৮:১৪
শেখের পোলা লিখেছেন : আল্লাহ আপনাকে সততার উপর বহাল রাখুক৷ধন্যবাদ৷
357666
২৫ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ০৮:৩৬
অনেক পথ বাকি লিখেছেন : হুম দুটাই পড়লাম। সমাজে চলছেই এসব। নষ্টদের দখলে সবকিছু।
357682
২৫ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ১১:১৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : দ্বিতিয় ঘটনাটি ব্যবসায়িদের মধ্যে খুব কমন। অনেকে এইভাবে প্রতারনা করাকেই ব্যবসা বলে দাবি করেন। এই জন্যই দেখা যা্য় উন্নত বিশ্বে এবং আমাদের দেশেও ৫-১০% বেশি দাম রাখা সত্বেয় সুপার ষ্টোর এর মত কনসেপ্ট দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে। কারন কোয়ালিটি ও অন্যান্য বিষয়ে নিরাপত্তা। আর কিছু ব্যবসায়ি আছেন যারা মনে করেন দরাদরি করাই ব্যবসা আর এই জন্য মিথ্যা বলা কে আবশ্যকিয় মনে করেন।
357713
২৬ জানুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০১:৪৫
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..


অনেকেই সারাটা জীবন বোকাই রয়ে যান-
তাঁদের জন্য মোবারকবাদ
বিশাল "লাভ" তাঁদের জন্য অপেক্ষমান ইনশাআল্লাহ

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File