আসুন পরিপূর্ণ মুমিন হই এবং মানুষদের আল্লাহর পথে ডাকি সঠিক পন্থায়

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ১৮ জানুয়ারি, ২০১৬, ০৭:৫২:৩২ সন্ধ্যা

বিসমিল্লাহি, অসসালাতু অসসালামু আলা রাসূলিল্লাহি, অ আলিহি অসাহবিহী অতবায়িহী ইলা ইয়ামুদ্দীন..সবার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক

চিত্র ০১. সাল ২০১৩, ঈদুল আযহার দিন

রোম শহরের অত্তাভিয়ানোতে নতুন মসজিদ(পাঞ্জেগানা) হয়েছে, ভাবলাম, ঈদের নামাযটা ঐখানেই আদায় করি। অন্যান্য সময় বড় মসজিদ বা ভিক্টোরিয়া পার্কে গিয়ে নামাজ পড়তাম। মসজিদে গিয়ে দেখি ছোট বড় তিনটা কামরাতে নামাজ হবে। আর কর্তৃপক্ষ শুধু একটা জামাতেরই অনুমোদন দিয়েছে। আমি ছোট রুমের পিছনের কাতারে দাঁড়িয়ে আছি তখনো অনেক জায়গা ফাঁকা ছিল, যা অল্প সময়েই ভরাট হয়ে যায়। জামাতের তাকবীর হয়ে যায়। আমি হাত তুলে আর নামাবার সময় পাই নি, দেখি আমার সামনে (বুকের সঙ্গে ঘেঁষে) একজন এসে নামাজের হাত বেঁধে ফেলেছে! আমি তো হতবাক! আমার পিছনে সরবার কিংবা ডানে বামে যাবার কোনো সুযোগ নেই। একেতো কাতারগুলো ছিল মাত্র দেড়ফুট কি সোয়াফুট প্রস্থের। কেউ ফতোয়া দিয়েছে আরেকজনের পিঠৈও নাকি সাজদা দেয়া যায়। যাহোক-আমি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলাম, নামাজ শেষ হবার অপেক্ষায়। ঐ পাগল নামক দুনিয়ার বুঝধারীকে কী বলব? (এরা দুনিয়ার অর্থ কামাইয়ৈর মতো সওয়াব কামাতে চায়)

ঝগড়া হবে ভেবে চলে আসলাম, আল্লাহর দুনিয়া প্রশস্ত। ঐখানে পিঠে সাজদা দেয়া যায়, অথচ ভোক্টোরিয়াতে মুসুল্লীদের জন্য অনেক জায়গা। (এখানে এসে তৃতীয় ও শেষ জামাতে শরিক হই।)

চিত্র: ০২. সাল ২০১১ এপ্রিল

তখন বিরোধীদলের ডাকা অনির্দিষ্টকালের হরতাল-অবরোধ চলছে। আমি খিরাটী থেকে বাড়ি আসবো, একটা সিএনজিতে চড়লাম। একজন যুবক আপাদশরীর ব্যন্ডেজ বাঁধা এসে ড্রাইভারকে বলল, সে কাপাসিয়া যাবে। ড্রাইভার বিনাভাড়ায় তুলবে না, আমরা দুজনলোক বললাম, ঠিক আছে ওর ভাড়া আমরাই দিয়ে দেবো। সি এন জি কিছু চলার পর যুবকটি তার বৃত্তান্ত বলতে শুরু করল-

সে এই খিরাটীর হাইস্কুলের নতুন যোগ দেয়া ইংরেজির শিক্ষক। গত সপ্তাহে গাজীপুর থেকে বই কিনে ফেরার পথে (মোটর সাইকেলে) সালনাতে একসিডেন্ট করে ওর এক বন্ধু মারা যায়, আর দুইজন মারাত্মক আহত হয়। পত্রিকায় নাকি এসেছে। আমি অবশ্য জানি না। তার বুকের হাড় ভেঙ্গে গেছে, ইবনেসিনাতে অপারেশন হবে। তিন লক্ষ টাকা লাগবে। দুই লক্ষ টাকা দেবে দানবীর আব্দুল কাদের মোল্লা। বাকি টাকা সে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গিয়েকালৈকশন করছে। আমি জানতে চাইলাম, তার যে অবস্থা সে একা কেন? সে জানালো, সে এতীম, এক ভাই ছাড়া কেউ নেই। ভাই ক্লাস এইটে পড়ে। এতোদিন ওর সাথেই বের হতো। আজ ও একাই কাপাসিয়া পাইলট ইস্কুলে যাচ্ছে, ম্যাডাম নাকি বলেছে কিছু টাকা দেবে কালেকশন করে। আমাদের কাছে কিছু চাইল। (আমি কিছু না বলে ওর ব্যাপারে জানতে ইচ্ছে করল।) আমি বাড়িতে না নেমে কাপাসিয়া যাব বলে ঠিক করি। তরগাঁও খেয়াঘাটে এসে ওকে ধরে নৌকায় করে (রির্জাভ) ঐপার নিয়ে যাই । একজন পরিচিত ওর অবস্থা ও ঘটনা শুনে ৫০টাকা দেয়। আমি ওকে রিক্সায় করে কাপাসিয়া পাইলটে নিয়ে যাই। ও বলল-

আপনি আমার বড় ভাইয়ের কাজ করেছেন, আমি একচিল্লা (৪০দিন) দিয়েছি, আমার চিল্লার সমস্ত সওয়াব (?) আপনাকে দিয়ে দিলাম। আমি বললাম, আপনার চিল্লার সওয়াব আমার লাগবে না, আপনার প্রতি আমারও দায়িত্ব রয়েছে সেটাই পালন করছি।

সংক্ষেপে বলছি- ম্যাডাম ওকে ইস্কুলের ফান্ড থেকে তিনহাজার টাকা দিয়ে বললেন, ক্লঅসে ঘুরে ঘুরে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে টাকা চাওয়া আমরা এলাউ করি না। আর ওদের কাছেে টিফিনের কতই বা থাকে। সে মানতে নারাজ, আমি বুঝালাম। শিক্ষক রুমে নিয়ে শিক্ষকদের কাছ থেকেও আরো হাজারের মত কালেকশন হলো। এরই মাঝে ও এমন অভিনয় করতে লাগল, যেম ওর বহু কষ্ট হচ্ছে, চলতে ও কথা বলতে। ওর পকেটে থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রধানের চিঠি ও প্যাডে অর্থ সাহায্যের দলীল দেখতে পেয়ে ( কাপাসিয়া কলেজসহ ) কেন জানি মনে হলো, ওর ব্যাপারটা হয়তো সত্যিই! যেহেতু ও একজন শিক্ষক আর কাপাসিয়ার অন্য একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান যাচাই না করে সাহায্য করবে?

আমি ওকে নিজ থেকে একহাজার টাকা ও ভাড়া দিয়ে রিক্সায় তুলে দিলাম।

ব্যস্ততার কারণে পরদিন আর খিরাটী যেতে পারি নি, কিছুদিন পর খিরাটী হাইস্কুলে গিয়ে জানতে পারলাম, ওই ইস্কুলে গত ২০ বত্সর যাবত কোনো শিক্ষক নিয়োগ হয় নি। তারপর আমার বর্ণনা শুনে একজন বাটপারের ব্যাপারে সন্ধান দিতে লাগল। খিরাটি বাজারে এসে আরো তথ্য পেলাম। সে একটা দলের (ক্ষমতায় থাকতে) ক্যাডার ছিল, নিজের চাচার বুকে যে পিস্তল তুলে ছিল! বাপ-মা- বউ সন্তান সব আছে। বাপ নাকি পুরো আল্লাওয়ালা, টঙ দোকান চালায়, তাবলীগ করে, বাপ-ব্যাটা দুজনই চিল্লা দিয়ে আসছে, ছেলেকে তবুও মানুষ করতে পারে নি। প্রতিবেশীরা অনেকবার উত্তম মাধ্যম দিলেও, পুলিশের হাতে দিলেও বাপের কারণে ওর প্রাপ্য সাজা ওর পাওয়া হয়ে ওঠছেনা। বাপ ওর পরিবারের ভোরণ-পোষণ চালায়। আর সে বাটপারী করে, টাকা কামাই করে (গণধোলাই মাঝে মধ্যে) জুয়া খেলে।

চিত্র: ০৩: ইউটিউবে দেখলাম, বাংলাদেশের একজন চিত্রনায়ক (অনন্ত জলিল) মসজিদে চিল্লাতে গিয়ে মুসুল্লীদের মাঝে কিতাবী তালিম (বই দেখে পড়া) ও বয়ান করছে।

ও আল্লাহর রাস্তায় বের হয়েছে কিন্তু নিজের অবৈধ উপার্জনের পথ ও অশ্লীলতার পথ পরিত্যাগের কোনো খবর পাই নি। বরং মনে হচ্ছে, অশ্লীলতা ছড়িয়ে দিয়ে, (নিজের বিবিসহ) হারাম পথে চলে আল্লাহর রাস্তায় (মুরুব্বীদের বাতানো)মাঝে মাঝে বের হতে চায়। এটাই ওর কাছে দ্বীনের পথে চলা।

আমার কাছে মনে হচ্ছে, আমরা সবাই যে যার মতো দ্বীনকে বুঝছি, দ্বীনের ব্যখ্যা দিচ্ছি, আল্লাহর রাস্তায় বের হচ্ছি এবং অনেক সওয়াব কামাই করছি। আসলেই কী তাই?

প্রিয় ভাই-বোনেরা! বিষয়টি কি যাচাই করে দেখেছি

একবারও কি ভেবেছি, আমার চলার পথই সঠিক কীনা?

আমার কথাই সঠিক কীনা

আমার মতের, পক্ষের দলটা সত্য কীনা?

মৃত্যুতো দ্রুত ঘনিয়ে আসছে......

নিজ নিজ ধারণায় বসে না থেকে সবাইকে একটু ভাবতে বলছি। এতো সওয়াবের যে বস্তা ও ঘাট্টি ভরছি, ওতে ফুটো আছে কীনা?

তাহলে তো সবই গেলো

আসুন সংক্ষেপে মুসলমানদের বৈশিষ্ট্য জানার চেষ্টা করি

মুসলমান ও মুহাজিরের সংজ্ঞা দিয়ে রাসূলুল্লাহ সা. বলেন-

আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘প্রকৃত মুসলিম সেই, যার জিভ ও হাত থেকে সকল মুসলিম নিরাপদ থাকে। আর প্রকৃত মুহাজির (দ্বীনের খাতিরে স্বদেশ ত্যাগকারী) সেই, যে আল্লাহ যে সব কাজ করতে নিষেধ করেছেন, তা ত্যাগ করে।’ (বুখারী ১০, ৬৪৮৪, মুসলিম ৪০, নাসায়ী ৪৯৯৬, আবূ দাউদ ২৪৮১, আহমাদ ৬৪৫১)

১.মুসলমানের দাওয়াত হবে কুরআন দিয়ে (হিকমাত ও সুদপোদেশের মাধ্যমে):

"অতএব, যে আমার শাস্তিকে ভয় করে, তাকে কোরআনের মাধ্যমে উপদেশ দান করুন।" (সূরা ক্বাফ: ৪৫)

﴿ ٱدۡعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِٱلۡحِكۡمَةِ وَٱلۡمَوۡعِظَةِ ٱلۡحَسَنَةِۖ ﴾ [النحل: ١٢٥]

অর্থাৎ “তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহ্বান কর হিকমত ও সদুপদেশ দ্বারা।”(সূরা নাহল:১২৫)

×আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি (কাউকে) সৎপথের দিকে আহ্বান করবে, সে তার প্রতি আমলকারীদের সমান নেকী পাবে। এটা তাদের নেকীসমূহ থেকে কিছুই কম করবে না। আর যে ব্যক্তি (কাউকে) ভ্রষ্টতার দিকে আহ্বান করবে, তার উপর তার সমস্ত অনুসারীদের গোনাহ চাপবে। এটা তাদের গোনাহ থেকে কিছুই কম করবে না।’’ (মুসলিম ২৬৭৪, তিরমিযী ২৬৭৪)

২. ন্যায়পরায়ণ, সদাচারী, দাতা, অশ্লীলতা-অন্যায়কাজের প্রতিবাদী। আল্লাহ বলেন-

"আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ এবং আত্নীয়-স্বজনকে দান করার আদেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসঙ্গত কাজ এবং অবাধ্যতা করতে বারণ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন যাতে তোমরা স্মরণ রাখ।" (সূরা আন নাহল: ৯০)

إِنَّ اللَّـهَ يَأمُرُ بِالعَدلِ وَالإِحسانِ وَإيتاءِ ذِي القُربى وَيَنهى عَنِ الفَحشاءِ وَالمُنكَرِ وَالبَغيِ يَعِظُكُم لَعَلَّكُم تَذَكَّرونَ

৩. জালেম হবে না:

জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমরা অত্যাচার করা থেকে বাঁচো, কেননা অত্যাচার কিয়ামতের দিন অন্ধকার স্বরূপ। (অর্থাৎ অত্যাচারী সেদিন আলো পাবে না)। আর তোমরা কৃপণতা থেকে দূরে থাকো। কেননা, কৃপণতা পূর্ববর্তী লোকেদেরকে ধ্বংস করেছে। এ কৃপণতা তাদেরকে নিজেদের রক্তপাত করার এবং হারামকে হালাল জানার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছে।’’ (মুসলিম ২৫৭৮, আহমাদ ১৪০৫২)

৪. প্রাপ্য হক আদায়কারী:

আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কিয়ামতের দিন প্রত্যেক হকদারের হক অবশ্যই আদায় করা হবে। এমন কি শিংবিহীন ছাগলকে শিংযুক্ত ছাগলের নিকট থেকে বদলা দেওয়া হবে।’’ ( মুসলিম ২৫৮২, তিরমিযী ২৪২০, আহমাদ ৭১৬৩, ৭৯৩৬, ৮০৮৯, ৮৬৩০)

×আবূ উমামাহ ইয়াস ইবনু সা’লাবা হারেসী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি (মিথ্যা) কসম খেয়ে কোন মুসলিমর হক মেরে নেবে, তার জন্য আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নাম ওয়াজেব এবং জান্নাত হারাম করে দেবেন।’’ একটি লোক বলল, ‘যদি তা নগণ্য জিনিস হয় হে আল্লাহর রাসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘যদিও তা পিল্লু গাছের একটি ডালও হয়।’’ (মুসলিম ১৩৭)

৫. হারাম ও অন্যায়কারী হবে না:

ইবনু উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমরা বিদায়ী হজ্জ্বের ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করেছিলাম। এমতবস্থায় যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন। আর আমরা জানতাম না যে, বিদায়ী হজ্জ কী? পরিশেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রশংসা করলেন। অতঃপর কানা দাজ্জালের কথা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করলেন। তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহ যে নবীই পাঠিয়েছেন, তিনি নিজ জাতিকে তার ব্যাপারে ভয় দেখিয়েছেন। নূহ ও তাঁর পরে আগমনকারী নবীগণ তার ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করেছেন। যদি সে তোমাদের মধ্যে বের হয়, তবে তার অবস্থা তোমাদের কাছে গোপন থাকবে না। তোমাদের কাছে এ কথা গোপন নয় যে, তোমাদের প্রভু কানা নয়, আর দাজ্জাল কানা হবে। তার ডান চোখ কানা হবে, তার চোখটি যেন (গুচ্ছ থেকে) ভেসে ওঠা আঙ্গুর। সতর্ক হয়ে যাও, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের প্রতি তোমাদের রক্ত ও মাল হারাম করে দিয়েছেন। যেমন তোমাদের এদিন হারাম তোমাদের এই শহরে, তোমাদের এই মাসে। শোনো! আমি কি (আল্লাহর পয়গাম) পৌঁছে দিয়েছি?’’ সাহাবীগণ বললেন, ‘হ্যাঁ।’ অতঃপর তিনি তিনবার বললেন, ‘‘হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাক। (অতঃপর বললেন,) তোমাদের জন্য বিনাশ অথবা আফশোস। দেখো, তোমরা আমার পর এমন কাফের হয়ে যেও না যে, তোমরা একে অপরের গর্দান মারবে।’’ (বুখারী ৪৪০৩, ১৭৪২, ৬০৪৩, ৬১৬৬, ৬৭৭৫, ৬৮৫৮, ৭০৭৭, মুসলিম ৬৬)

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি কারো জমি এক বিঘত পরিমাণ অন্যায়ভাবে দখল করে নেবে, (কিয়ামতের দিন) সাত তবক (স্তর) যমীন তার গলায় লটকে দেওয়া হবে। (বুখারী, মুসলিম)

৬.বিদআতী হবে না:

﴿ وَأَنَّ هَٰذَا صِرَٰطِي مُسۡتَقِيمٗا فَٱتَّبِعُوهُۖ وَلَا تَتَّبِعُواْ ٱلسُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمۡ عَن سَبِيلِهِۦۚ﴾ [الانعام: ١٥٣]

অর্থাৎ “নিশ্চয়ই এটি আমার সরল পথ। সুতরাং এরই অনুসরণ কর এবং ভিন্ন পথ অনুসরণ করো না, করলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ হতে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে।”(সূরা আনআম ১৫৩ আয়াত)

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার এই দ্বীনে কোনো নতুন কিছু উদ্ভাবন করল---যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য।’’ (বুখারী ও মুসলিম)

৭. কথা ও কাজে মিল:

আবূ যায়দ উসামাহ ইবনু যায়দ ইবনু হারেসাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘‘কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে আনা হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। সেখানে তার নাড়ি-ভুঁড়ি বের হয়ে যাবে এবং সে তার চারিপাশে এমনভাবে ঘুরতে থাকবে, যেমন গাধা তার চাকির চারিপাশে ঘুরতে থাকে। তখন জাহান্নামীরা তার কাছে একত্রিত হয়ে তাকে বলবে, ‘ওহে অমুক! তোমার এ অবস্থা কেন? তুমি না (আমাদেরকে) সৎ কাজের আদেশ, আর অসৎ কাজে বাধা দান করতে?’ সে বলবে, ‘অবশ্যই। আমি (তোমাদেরকে) সৎকাজের আদেশ দিতাম; কিন্তু আমি তা নিজে করতাম না এবং অসৎ কাজে বাধা দান করতাম; অথচ আমি নিজেই তা করতাম!’ (বুখারী ৩২৬৭, ৭০৯৮, মুসলিম ২৯৮৯, আহমাদ ২১২৭৭, ২১২৮৭, ২১২৯৩, ২১৩১২)

আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মুনাফিকের চিহ্ন তিনটি; (১) কথা বললে মিথ্যা বলে। (২) ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে এবং (৩) তার কাছে আমানত রাখা হলে তার খিয়ানত করে।’’ (বুখারী:৩৩, ২৬৮২, ২৭৪৯, ৬০৯৫, মুসলিম ৫৯, তিরমিযী ২৬৩১, নাসায়ী ৫০২১)

মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে, ‘‘যদিও সে রোযা রাখে এবং নামায পড়ে ও ধারণা করে যে, সে মুসলিম (তবু সে মুনাফিক)।’’

৮. মুসলমানদের প্রতি দয়া ও ক্ষমা প্রদর্শন:

"তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে ছুটে যাও যার সীমানা হচ্ছে আসমান ও যমীন, যা তৈরী করা হয়েছে পরহেযগারদের জন্য।

যারা স্বচ্ছলতায় ও অভাবের সময় ব্যয় করে, যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে, বস্তুতঃ আল্লাহ সৎকর্মশীলদিগকেই ভালবাসেন।

তারা কখনও কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে কিংবা কোন মন্দ কাজে জড়িত হয়ে নিজের উপর জুলুম করে ফেললে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করবেন? তারা নিজের কৃতকর্মের জন্য হঠকারিতা প্রদর্শন করে না এবং জেনে-শুনে তাই করতে থাকে না।

(সূরা আলে ইমরান: ১৩৩-১৩৫)

৯. মুসলমানরা পরস্পর বন্ধূ ও সাহায্যকারী:

আবূ মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘এক মু’মিন অপর মু’মিনের জন্য অট্টালিকার ন্যায়, যার এক অংশ অন্য অংশকে মজবূত করে রাখে।’’ তারপর তিনি (বুঝাবার জন্য) তাঁর এক হাতের আঙ্গুলগুলি অপর হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে ঢুকালেন।(বুখারী-মুসলিম)

নু’মান ইবনু বাশীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মু’মিনদের একে অপরের প্রতি সম্প্রীতি, দয়া ও মায়া-মমতার উদাহরণ (একটি) দেহের মত। যখন দেহের কোন অঙ্গ পীড়িত হয়, তখন তার জন্য সারা দেহ অনিদ্রা ও জ্বরে আক্রান্ত হয়।’’ (বুখারী ও মুসলিম)

জারীর ইবনু আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করবে না, আল্লাহও তার প্রতি দয়া করবেন না।’’ (বুখারী-মুসলিম)

১০. মুসলমানদের পরস্পরের জান-মাল-সম্মান হারাম:

আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মুসলিম মুসলিমের ভাই। সে তার বিশ্বাসঘাতকতা করবে না, তাকে মিথ্যা বলবে না (বা মিথ্যাবাদী ভাববে না), তার সাহায্য না করে তাকে অসহায় ছেড়ে দেবে না। এক মুসলিমের মর্যাদা, মাল ও খুন অপর মুসলিমের জন্য হারাম। তাকওয়া তথা আল্লাহ-সচেতনতা এখানে (অন্তরে) রয়েছে। কোনো মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ মনে করাটাই একটি মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য যথেষ্ট।’’ (মুসলিম ২৫৬৪, তিরমিযী ১৯২৭)

১১. পরস্পরের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখা:

﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ يُحِبُّونَ أَن تَشِيعَ ٱلۡفَٰحِشَةُ فِي ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٞ فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِۚ ﴾ [النور: ١٩]

অর্থাৎ “যারা মু’মিনদের মাঝে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে।”(সূরা নূর ১৯ আয়াত)

আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে দুনিয়াতে কোনো বান্দার দোষ গোপন রাখে, আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তার দোষ গোপন রাখবেন।’’ (মুসলিম)

ইবনু উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মুসলিম মুসলিমের ভাই, সে তার উপর অত্যাচার করবে না এবং তাকে অত্যাচারীর হাতে ছেড়ে দেবে না। যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূর্ণ করবে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূর্ণ করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের কোন এক বিপদ দূর করে দেবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার বহু বিপদের একটি বিপদ দূর করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ-ত্রুটি গোপন করবে, আল্লাহ কিয়ামতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন করবেন।’’ (বুখারী, মুসলিম)

আরো কিছু বৈশিষ্ট্য:

ইবনু উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মুসলিম মুসলিমের ভাই, সে তার উপর অত্যাচার করবে না এবং তাকে অত্যাচারীর হাতে ছেড়ে দেবে না। যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূর্ণ করবে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূর্ণ করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের কোনো এক বিপদ দূর করে দেবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার বহু বিপদের একটি বিপদ দূর করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ-ত্রুটি গোপন করবে, আল্লাহ কিয়ামতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন করবেন।’( বুখারী ২৪৪২, মুসলিম ২৫৮০, তিরমিযী ১৪২৬, নাসায়ী ৪৮৯৩, আহমাদ ৫৩৩৪, ৫৬১৪)

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে কেউ (পূর্ণ) মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ করবে, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে।’’ (বুখারী ১৩, মুসলিম ৪৫)

আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের কোন পার্থিব দুর্ভোগ দূরীভূত করবে, আল্লাহ তার কিয়ামতের দিনের দুর্ভোগসমূহের মধ্যে কোন একটি দুর্ভোগ দূর করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো ঋণ পরিশোধে অক্ষম ব্যক্তির প্রতি সহজ করবে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে তার প্রতি সহজ করবেন। আর যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দা তার মুসলিম ভাইয়ের সহযোগিতা করতে থাকে, আল্লাহও সে বান্দার সাহায্য করতে থাকেন। যে ব্যক্তি এমন পথে চলে--যাতে সে (দ্বীনী) বিদ্যা অর্জন করে, তার জন্য আল্লাহ জান্নাতের পথ সহজ করে দেন। আর যখনই কোনো সম্প্রদায় আল্লাহর কোনো এক ঘরে একত্রিত হয়ে আল্লাহর কিতাব পাঠ করে ও নিজেদের মধ্যে তা অধ্যয়ন করে, তখনই (আল্লাহর পক্ষ থেকে) তাদের উপর প্রশান্তি অবতীর্ণ হয়, তাদেরকে (আল্লাহর) রহমত আচ্ছাদিত করে নেয়, ফিরিশ্তা তাদেরকে ঘিরে নেয় এবং আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তী (ফিরিশ্তা)দের মধ্যে তাদের কথা আলোচনা করেন। আর যাকে তার আমল পশ্চাদ্গামী করেছে (অর্থাৎ নেকীর কাজ করেনি) তার বংশ তাকে অগ্রগামী করতে পারবে না।’’ (মুসলিম)

সবচেয়ে বড় নি:স্ব কে?

আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমরা কি জান, নিঃস্ব কে?’’ তাঁরা বললেন, ‘আমাদের মধ্যে নিঃস্ব ঐ ব্যক্তি, যার কাছে কোন দিরহাম এবং কোনো আসবাব-পত্র নেই।’ তিনি বললেন, ‘‘আমার উম্মতের মধ্যে (আসল) নিঃস্ব তো সেই ব্যক্তি, যে কিয়ামতের দিন নামায, রোযা ও যাকাতের (নেকী) নিয়ে হাযির হবে। (কিন্তু এর সাথে সাথে সে এ অবস্থায় আসবে যে, সে কাউকে গালি দিয়েছে। কারো প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করেছে, কারো (অবৈধরূপে) মাল ভক্ষণ করেছে। কারো রক্তপাত করেছে এবং কাউকে মেরেছে। অতঃপর এ (অত্যাচারিত)কে তার নেকী দেওয়া হবে, এ (অত্যাচারিত)কে তার নেকী দেওয়া হবে। পরিশেষে যদি তার নেকীরাশি অন্যান্যদের দাবী পূরণ করার পূর্বেই শেষ হয়ে যায়, তাহলে তাদের পাপরাশি নিয়ে তার উপর নিক্ষেপ করা হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।’’(মুসলিম ২৫৮১, তিরমিযী ২৪১৮, আহমাদ ৭৯৬৯, ৮২০৯, ৮৬২৫)

অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং নিজেদের অবস্থা সংশোধন করে নাও। আর আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের হুকুম মান্য কর, যদি ঈমানদার হয়ে থাক। (আনফাল: ১)

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন

বিষয়: বিবিধ

১৩০২ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

357192
১৮ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ০৮:৩২
তোমার হৃদয় জুড়ে আমি লিখেছেন : খুব ভালো লাগলো পড়ে,জ্ঞানগর্ভ লেখা। ধন্যবাদ আপনাকে
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন
১৯ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ০৩:১০
296430
সামসুল আলম দোয়েল লিখেছেন : Thank you very much
357193
১৮ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ০৮:৩৯
শেখের পোলা লিখেছেন : আমিন৷ পর্বগুলো একটু ছোট হলে ভাল হয়৷ ধন্যবাদ৷ আরও লিখুন৷
357206
১৯ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ০৩:১১
সামসুল আলম দোয়েল লিখেছেন : Thanks for your comment

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File