হে মুসলিম শাসকবৃন্দ ও নেতাবর্গ! (আপনারা প্রতি প্রদত্ত আমানতের কথা স্মরণ করুন)

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ১৬ জানুয়ারি, ২০১৬, ০১:২২:৪৯ রাত

হে মুসলিম শাসকবৃন্দ ও নেতাবর্গ!

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি...

"হে নেতৃত্বদানকারী শাসকেরা! এখনো কি সময় আসেনি আপনাদের একত্র হওয়ার, সব মুসলিম রাষ্ট্রের ঐক্যবদ্ধতার? আপনারা কি শুনতে পান না মজলুমদের আর্তনাদ? শুনতে কি পান না ফিলিস্তিনী, কাশমীরী, রোহিঙ্গাদের চিত্কার?"

আমি আপনাদের মহান স্রষ্টার পক্ষ থেকে আমানতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আপনাদের উপর মহান প্রভুর আরোপিত দায়িত্বের কথা বলছি। আল্লাহ তাআলা আপনাদের উপর অনুগ্রহ করে জনগণের নেতৃত্বের ভার দিয়েছেন, সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, সুতরাং সেই মহান প্রভুর প্রদত্ত বিধান চালু করে আল্লাহর জমীনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করুন। আপনারা যে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন (যেভাবে হোক আর যে পদ্ধতিতেই...) তার যথাযথ হক আদায় করুন। জনগণের মাঝে সুন্দর আর সুষম শাসনব্যবস্থার মাধ্যমে জনগণের অধিকার পুরোপুরি আদায় করে প্রভুর দরবারে মিলিত হোন, নইলে প্রথম দরজাতেই (কবরে) ধরা খেয়ে যাবেন।

মহান আল্লাহ বলেন:

"নিশ্চয়ই আমি আকাশ, পৃথিবী ও পর্বতমালার প্রতি এ আমানত অর্পণ করতে চেয়েছিলাম। ওরা ভয়ে বহন করতে অস্বীকার করল; কিন্তু মানুষ তা বহন করল। নিশ্চয় সে অতিশয় যালেম ও অতিশয় অজ্ঞ।" (সূরা আহযাব: ৭২)

ন্যায়বিচার করুন:

إِنَّ ٱللَّهَ يَأۡمُرُ بِٱلۡعَدۡلِ وَٱلۡإِحۡسَٰنِ وَإِيتَآيِٕ ذِي ٱلۡقُرۡبَىٰ وَيَنۡهَىٰ عَنِ ٱلۡفَحۡشَآءِ وَٱلۡمُنكَرِ وَٱلۡبَغۡيِۚ يَعِظُكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَذَكَّرُونَ

অর্থাৎ “নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ ও আত্মীয়-স্বজনকে দানের নির্দেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসৎকার্য ও সীমালংঘন করা হতে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন; যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর।” (সূরা নাহ্‌ল : ৯০ )

আল্লাহর আইনে রাষ্ট্র পরিচালনা করুন:

إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ মানে বিধান আল্লাহরই (সূরা ইউসুফ : ৬৭)

"আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ে ফায়সালা করলে কোন মু’মিন পুরুষ কিংবা মু’মিন নারীর নিজেদের কোন ব্যাপারে অন্য কোন সিদ্ধান্তের ইখতিয়ার থাকবে না। কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করলে সে তো স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে।”(সূরা আহযাব ৩৬)

যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কিছুকে দ্বীন হিসাবে তালাশ করবে, তার নিকট থেকে তা কবুল করা হবেনা। আর আখেরাতে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।(সূরা আল ইমরান:-৮৫)

“রাসূল তোমাদের যা কিছু দেয় তা তোমরা গ্রহণ করো এবং সে যা কিছু নিষেধ করে তা থেকে বিরত থাকো, আল্লাহ তায়ালাকেই ভয় করো; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা কঠোর শাস্তিদাতা।” (হাশর ৭)

দ্বীন সুরক্ষা ও প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব আপনার:

“যদি তোমরা আল্লাহর (দ্বীনের) সাহায্য কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন, এবং তোমাদের পা দৃঢ়-প্রতিষ্ঠিত রাখবেন।” (সূরা মুহাম্মাদ :৭ )

দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হোন:

عَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ: « كُلُّكُمْ رَاعٍ، وَكُلُّكُمْ مَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتهِ: الإمَامُ رَاعٍ وَمَسؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالرَّجُلُ رَاعٍ في أهلِهِ وَمَسؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ في بَيْتِ زَوْجِهَا وَمَسْؤُولَةٌ عَنْ رَعِيَّتِهَا، وَالخَادِمُ رَاعٍ في مال سيِّدِهِ وَمَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَكُلُّكُمْ رَاعٍ وَمَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ » متفقٌ عَلَيْهِ

ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘প্রতিটি মানুষই দায়িত্বশীল, সুতরাং প্রত্যেকে অবশ্যই তার অধীনস্থদের দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। দেশের শাসক জনগণের দায়িত্বশীল, সে তার দায়িত্বশীলতা ব্যাপারে জবাবদিহী করবে। পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল, অতএব সে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী তার স্বামীগৃহের দায়িত্বশীলা, কাজেই সে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিতা হবে। দাস তার প্রভুর সম্পদের দায়িত্বশীল, সে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই নিজ নিজ অধীনস্থের দায়িত্বশীলতা ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। (সহীহুল বুখারী ২৫৫৮, ৮৯৩, ২৪০৯, ২৫৫৪, ২৭৫১, ৫১৮৮, ৫২০০, ৭১৩৮, মুসলিম ১৮২৯)

যোগ্যতার ভিত্তিতে পদায়ন ও প্রশাসক:

আবূ সা‘ঈদ ও আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ যখনই কোন নবী প্রেরণ করেন এবং কোন খলীফা নির্বাচিত করেন, তখনই তাঁর জন্য দু’জন সঙ্গী নিযুক্ত করে দেন। একজন সঙ্গী তাঁকে ভাল কাজের নির্দেশ দেয় এবং তার প্রতি উৎসাহিত করে। আর দ্বিতীয়জন সঙ্গী তাঁকে মন্দ কাজের নির্দেশ দেয় এবং তার প্রতি উৎসাহিত করে। আর রক্ষা পান কেবলমাত্র তিনই, যাকে আল্লাহ রক্ষা করেন।’’ (বুখারী: ৭১৯৮)

ভালো উপদেষ্টা নিয়োক:

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যখন আল্লাহ কোন শাসকের মঙ্গল চান, তখন তিনি তার জন্য সত্যনিষ্ঠ (শুভাকাঙ্ক্ষী) মন্ত্রী নিযুক্ত করে দেন। শাসক (কোন কথা) ভুলে গেলে সে তাকে তা স্মরণ করিয়ে দেয় এবং স্মরণ থাকলে তার সাহায্য করে। আর যখন আল্লাহ তার অন্য কিছু (অমঙ্গল) চান, তখন তার জন্য মন্দ মন্ত্রী নিযুক্ত করে দেন। শাসক বিস্মৃত হলে সে তাকে স্মরণ করিয়ে দেয় না এবং স্মরণ থাকলে তার সাহায্য করে না।’’ (আবূ দাউদ ২৯৩২, নাসায়ী ৪২০২)

আবূ মূসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন যে, আমি এবং আমার চাচাতো দু’ভাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গেলাম। সে দু’জনের মধ্যে একজন বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! মহান আল্লাহ আপনাকে যে সব শাসন-ক্ষমতা দান করেছেন, তার মধ্যে কিছু (এলাকার) শাসনভার আমাকে প্রদান করুন।’ দ্বিতীয়জনও একই কথা বলল। উত্তরে তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহর কসম! যে সরকারী পদ চেয়ে নেয় অথবা তার প্রতি লোভ রাখে, তাকে অবশ্যই আমরা এ কাজ দই না।’’ (বুখারী ও মুসলিম, সূত্র: রিয়াদুস সালেহীন: ৬৮৫)

জনগণের মাঝে ন্যায়বিচার ও ইনসাফ কায়েম করুন:

আবূ য়্যা’লা মা‘ক্বিল ইবনে য়্যাসার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘কোনো বান্দাকে আল্লাহ কোন প্রজার উপর শাসক বানালে, যেদিন সে মরবে সেদিন যদি সে প্রজার প্রতি ধোঁকাবাজি করে মরে, তাহলে আল্লাহ তার প্রতি জান্নাত হারাম করে দেবেন।’’ (বুখারী ও মুসলিম)

অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘অতঃপর সে (শাসক) তার হিতাকাঙ্ক্ষিতার সাথে তাদের অধিকারসমূহ রক্ষা করল না, সে জান্নাতের সুগন্ধটুকুও পাবে না।’’

মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘যে কোনো আমীর মুসলিমদের দেখাশুনার দায়িত্ব নিল, অতঃপর সে তাদের (সমস্যা দূর করার) চেষ্টা করল না এবং তাদের হিতাকাঙ্ক্ষী হল না, সে তাদের সঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’’ (দ্রষ্টব্য: রিয়াদুস সালেহীন, পরিচ্ছদঃ ৭৮: প্রজাদের সাথে শাসকদের কোমল ব্যবহার করা, তাদের মঙ্গল কামনা করা, তাদের প্রতি স্নেহপরবশ হওয়ার আদেশ এবং প্রজাদেরকে ধোঁকা দেওয়া, তাদের প্রতি কঠোর হওয়া, তাদের সবার্থ উপেক্ষা করা, তাদের ও তাদের প্রয়োজন সম্বন্ধে উদাসীন হওয়া নিষিদ্ধ)

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমার এই ঘরে বলতে শুনেছি, ‘‘হে আল্লাহ! যে কেউ আমার উম্মতের কোন কাজের কিছু দায়িত্ব নিয়ে তাদেরকে কষ্টে ফেলবে, তুমি তাকে কষ্টে ফেলো। আর যে কেউ আমার উম্মতের কোন কাজের কিছু দায়িত্ব নিয়ে তাদের সাথে নমরতা করবে, তুমি তার সাথে নমরতা করো।’’ (মুসলিম ১৮২৮)

সরকারী দায়িত্ব একটি কঠিন আমানত:

আবূ সা‘ঈদ আব্দুর রহমান ইবনে সামুরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘‘হে আব্দুর রহমান ইবন সামুরাহ! তুমি সরকারী পদ চেয়ো না। কারণ তুমি যদি তা না চেয়ে পাও, তাহলে তাতে তোমাকে সাহায্য করা হবে। আর যদি তুমি তা চাওয়ার কারণে পাও, তাহলে তা তোমাকে সঁপে দেওয়া হবে। (এবং তাতে আল্লাহর সাহায্য পাবে না।) আর যখন তুমি কোন কথার উপর কসম খাবে, অতঃপর তা থেকে অন্য কাজ উত্তম মনে করবে, তখন উত্তম কাজটা কর এবং তোমার কসমের কাফফারা দিয়ে দাও।’’ (বুখারী ৭১৪৬, ৬৬২২, ৬৭২২, ৭১৪৭, মুসলিম ১৬৫২, তিরমিযী ১৫২৯, নাসায়ী ৩৭৮২, ৩৭৮৩, ৩৭৮৪, ৫৩৮৫, আবূ দাউদ ২৯২৯, ৩২৭৭, আহমাদ ২০০৯৩, ২০০৯৫, ২০০১৫, দারেমী ২৩৪৬)

আল্লাহকে ভয় করুন: এখনো কেন রাষ্ট্রে মদ, জুয়া, সুদ, সিনেমা-নাটক, অশ্লীল টিভি চ্যানেল বন্ধ করছেন না। এইসব অপরাধ ও পাপের সম পরিমাণ পাপ আপনার আমলনামাও যোগ হচ্ছে।

আবূ মারয়্যাম আযদী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু মু‘আবিয়াহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-কে বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘যে ব্যক্তিকে আল্লাহ মুসলিমদের কোনো (রাজ) কার্যে নিযুক্ত করলেন, অতঃপর সে তাদের অভাব-অভিযোগ, প্রয়োজন ও অনটন থেকে পর্দা বা বাধা সৃষ্টি করলো, কিয়ামতের দিন আল্লাহ সে ব্যক্তির অভাব-অভিযোগ, প্রয়োজন ও অনটন থেকে পর্দা বা বাধা প্রদান করবেন।’’ (তা পূরণ করবেন না।)

(তিরমিযী ১৩৩২, আহমাদ ১৭৫৭২, আবূ দাউদ ২৯৪৮)

ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়কে প্রতিহত করা:

তোমরাই শ্রেষ্ঠতম জাতি। মানবমন্ডলীর জন্য তোমাদের অভ্যুত্থান হয়েছে, তোমরা সৎকার্যের নির্দেশ দান করবে, অসৎ কার্য (করা থেকে) নিষেধ করবে, আর আল্লাহতে বিশ্বাস করবে। গ্রন্থধারিগণ যদি বিশ্বাস করত, তাহলে তা তাদের জন্য উত্তম হত। তাদের মধ্যে বিশ্বাসী আছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশ সত্যত্যাগী। (সূরা আলে ইমরান: ১১০)

সর্বত্র আল্লাহর বিধান চালুকরণে জিহাদ:

আর তোমরা তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাক, যতক্ষণ না ফিতনা (অশান্তি, শিরক বা ধর্মদ্রোহিতা) দূর হয়ে আল্লাহর দ্বীন (ধর্ম) প্রতিষ্ঠিত না হয়, কিন্তু যদি তারা নিবৃত্ত হয়, তবে অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে ছাড়া (অন্য কারো বিরুদ্ধে) আক্রমণ করা চলবে না। (সূরা বাকারা: ১৯৩)

"আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মুসলমানদের থেকে তাদের জান ও মাল এই মূল্যে যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত।তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর রাহেঃ অতঃপর মারে ও মরে।আর আল্লাহর চেয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় কে অধিক?সুতরাং তোমরা আনন্দিত হও সে লেন-দেনের উপর, যা তোমরা করছ তাঁর সাথে।আর এ হল মহান সাফল্য। (সূরা তাওবাঃ১১১)

"কাজেই আল্লাহর কাছে যারা পার্থিব জীবনকে আখেরাতের পরিবর্তে বিক্রি করে দেয় তাদের জেহাদ করাই কর্তব্য।বস্তুতঃ যারা আল্লাহর রাহে লড়াই করে এবং অতঃপর মৃত্যুবরণ করে কিংবা বিজয় অর্জন করে, আমি তাদেরকে মহাপুণ্য দান করব।" (সুরা নিসা-৭৪)

"যারা ঈমানদার তারা যে, জেহাদ করে আল্লাহর রাহেই।পক্ষান্তরে যারা কাফের তারা লড়াই করে শয়তানের পক্ষে সুতরাং তোমরা জেহাদ করতে থাক শয়তানের পক্ষালম্বনকারীদের বিরুদ্ধে, (দেখবে) শয়তানের চক্রান্ত একান্তই দুর্বল।" (সুরা নিসা-৭৬)

হে নেতৃত্বদানকারী শাসকেরা! এখনো কি সময় আসেনি আপনাদের একত্র হওয়ার, সব মুসলিম রাষ্ট্রের ঐক্যবদ্ধতার? আপনারা কি শুনতে পান না মজলুমদের আর্তনাদ? শুনতে কি পান না ফিলিস্তিনী, কাশমীরী, রোহিঙ্গাদের চিত্কার?

কী জবাব দেবেন আল্লাহর কাছে? মৃত্যুর কথা স্মরণ করুন, পরকালৈর হিসেবের কথা স্মরণ করুন। এখনই সময় তাদের রক্ষার জন্য সম্মিলিত উদ্যোগ। আপনারা এগিয়ে আসুন, আমাদের পাবেন ।

"

وَمَا لَكُمْ لَا تُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَانِ الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَٰذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا وَاجْعَلْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ وَلِيًّا وَاجْعَلْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ نَصِيرً

"আর তোমাদের কি হল যে, তেমারা আল্লাহর রাহে লড়াই করছ না দুর্বল সেই পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে,যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদিগকে এই জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান কর; এখানকার অধিবাসীরা যে, অত্যাচারী!আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য পক্ষালম্বনকারী নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও।"(সুরা নিসা-৭৫)

ন্যায়পরায়ণ শাসক ও বিচারকের ফযিলাত:

আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা সাত ব্যক্তিকে সেই দিনে তাঁর (আরশের) ছায়া দান করবেন যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া থাকবে না; (তারা হল,) ন্যায় পরায়ণ বাদশাহ (রাষ্ট্রনেতা), সেই যুবক যার যৌবন আল্লাহ আয্যা অজাল্লার ইবাদতে অতিবাহিত হয়, সেই ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদসমূহের সাথে লটকে থাকে (মসজিদের প্রতি তার মন সদা আকৃষ্ট থাকে।) সেই দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা স্থাপন করে; যারা এই ভালোবাসার উপর মিলিত হয় এবং এই ভালোবাসার উপরেই চিরবিচ্ছিন্ন (তাদের মৃত্যু) হয়। সেই ব্যক্তি যাকে কোন কুলকামিনী সুন্দরী (অবৈধ যৌন-মিলনের উদ্দেশ্যে) আহবান করে, কিন্তু সে বলে, ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি।’ সেই ব্যক্তি যে দান করে গোপন করে; এমনকি তার ডান হাত যা প্রদান করে, তা তার বাম হাত পর্যন্তও জানতে পারে না। আর সেই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে; ফলে তার উভয় চোখে পানি বয়ে যায়।’’ (বুখারী ৬৬০, ১৪২৩, ৬৪৭৯, ৬৮০৬, মুসলিম ১০৩১, তিরমিযী ২৩৯১, নাসায়ী ৫৩৮০, আহমাদ ৯৩৭৩, মুওয়াত্তা মালিক ১৭৭৭)

আওফ ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘তোমাদের সর্বোৎকৃষ্ট শাসকবৃন্দ তারা, যাদেরকে তোমরা ভালবাস এবং তারাও তোমাদেরকে ভালবাসে, তোমরা তাদের জন্য দো‘আ কর এবং তারাও তোমাদের জন্য দো‘আ করে। আর তোমাদের নিকৃষ্টতম শাসকবৃন্দ তারা, যাদেরকে তোমরা ঘৃণা কর এবং তারাও তোমাদেরকে ঘৃণা করে, তোমরা তাদেরকে অভিশাপ কর এবং তারাও তোমাদেরকে অভিশাপ করে।’’ (বর্ণনাকারী) বলেন, আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করব না?’ তিনি বললেন, ‘‘না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তোমাদের মধ্যে নামায প্রতিষ্ঠা করবে। না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তোমাদের মধ্যে নামায প্রতিষ্ঠা করবে।’’ ( মুসলিম ১৮৫৫, আহমাদ ২৩৪৬১, ২৩৪৭৯, দারেমী ২৭৯৭)

ইয়াদ্ব ইবনে হিমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘জান্নাতী তিন প্রকার।

(১) ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ, যাকে ভাল কাজ করার তওফীক দেওয়া হয়েছে।

(২) ঐ ব্যক্তি যে প্রত্যেক আত্মীয়-স্বজন ও মুসলিমের প্রতি দয়ালু ও নমর-হৃদয় এবং

(৩) সেই ব্যক্তি যে বহু সন্তানের (গরীব) পিতা হওয়া সত্ত্বেও হারাম ও ভিক্ষাবৃত্তি থেকে দূরে থাকে।

(মুসলিম ২৮৬৫, আবূ দাউদ ৪৮৯৫, ইবনু মাজাহ ৪১৭৯, আহমাদ ১৭০৩০, ১৭৮৭৪)

হে রাজনৈতিক কর্মী ও নেতৃত্বের প্রত্যাশী!

আবূ যার্র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, একদা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘‘হে আবূ যার্র! আমি তোমাকে দুর্বল দেখছি এবং আমি তোমার জন্য তাই ভালবাসি, যা আমি নিজের জন্য ভালবাসি। (সুতরাং) তুমি অবশ্যই দু’জনের নেতা হয়ো না এবং এতীমের মালের তত্ত্বাবধায়ক হয়ো না।’’ (মুসলিম:১৮২৬)

হে নেতৃত্বের প্রত্যাশী; একটু মনোযোগী হোন, আয়াতের মর্ম বুঝুন। দুনিয়ার স্বার্থে, ব্যক্তি আদর্শ প্রতিষ্ঠার রাজনীতি করে কেন পরকাল হারাচ্ছেন? আপনি যদি প্রচলিত রাজনীতি করেন, গণতন্ত্র বা অন্যকোনো মানব রচিত বিধানের জন্য সংগ্রাম করেন, তাহলে পরকালে আপনার কোনো অংশ নাই। ফালতু আপনার নামায-রোযা-হাজ্জ!!

তারা আরো বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আমাদের নেতা ও বড় বড় লোক (বুযুর্গ)দের আনুগত্য করেছিলাম, সুতরাং ওরা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল। (সূরা আহযাব: ৬৭)

আয়াতেরে বিস্তারিত তাফসির পড়ুন।

"আমরা তোমার পয়গম্বর ও দ্বীনের প্রতি আহবানকারীদেরকে বর্জন করে নিজেদের নেতা, বুযুর্গ ও বড়দের কথা মত চলেছিলাম, কিন্তু আজ আমরা বুঝতে পারলাম যে, তারা আমাদেরকে তোমার পয়গম্বর থেকে দূরে রেখে পথভ্রষ্ট করেছিল। বাপ-দাদাদের প্রথার অনুসরণ ও পাশ্চাত্য সভ্যতার অন্ধানুকরণ আজও বহু মানুষের পথভ্রষ্টতার কারণ। হায়! যদি মুসলিমরা আল্লাহর আয়াতসমূহ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে সেই মানুষের তৈরী পথ বর্জন করে কুরআন ও হাদীসের সরল পথ অবলম্বন করত, তাহলে তাদের কতই না মঙ্গল হত। কারণ পরিত্রাণ একমাত্র আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুসরণে নিহিত আছে। বুযুর্গ ও বড়দের অন্ধানুকরণে অথবা বাপ-দাদার প্রাচীন পথ অবলম্বনে নয়। (তাফসীরে আহসানুল বায়ান)

"সীমালংঘনকারী সেদিন নিজ হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে, ‘হায়! আমি যদি রসূলের সাথে সৎপথ অবলম্বন করতাম।হায় দুর্ভোগ আমার! আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম।" (সূরা ফুরকান: ২৭-২৮)

এখান হতে জানা যায় যে, যারা আল্লাহর অবাধ্য তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব রাখা ঠিক নয়। কারণ, মানুষ সৎ সঙ্গে ভালো ও অসৎ সঙ্গে খারাপ হয়ে যায়। বেশির ভাগ লোকদের পথভ্রষ্ট হওয়ার কারণ অসৎ বন্ধু ও খারাপ সঙ্গীদের সাথে উঠা বসা। সেই জন্য হাদীসে সৎ সঙ্গী গ্রহণ এবং অসৎ সঙ্গী বর্জন করার ব্যাপারকে (আতর-ওয়ালা ও কামারের সাথে) উদাহরণ দিয়ে স্পষ্ট করা হয়েছে। (মুসলিমঃ নেকী ও জ্ঞাতি বন্ধন অধ্যায়)

হে মুমিনগণ, যারা তোমাদের ধর্মকে উপহাস ও খেলা মনে করে, তাদেরকে এবং অন্যান্য কাফেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করো না। আল্লাহকে ভয় কর, যদি তোমরা ঈমানদার হও। (সূরা মায়েদাহ-৫৭)

আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা অতি সত্বর নেতৃত্বের লোভ করবে। (কিন্তু স্মরণ রাখো) এটি কিয়ামতের দিন অনুতাপের কারণ হবে। (বুখারী:৭১৪৮, নাসায়ী ৪২১১, ৫৩৮৫, আহমাদ ৯৪৯৯, ৯৮০৬)

ইমরান ইবন হুসায়ন রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, সর্বোত্তম যুগ হল আমার যুগ, এরপর যারা হবে অব্যহতির পরে। এরপর যারা হবে অব্যহতির পরে, এরপর যারা হবে অব্যহতির পরে। এই তিনটি যুগের কথা তিনি বললেন। পরবর্তীতে এমন এক সম্প্রদায় আসবে যারা হবে স্থলকায় এবং যারা স্থলকায় হওয়া ভালবাসবে। তারা সাক্ষ্য চাওয়ার আগেই সাক্ষ্য দিতে যাবে। (তিরমিযী:২৩০৫)

হে বিচারকমন্ডলী:

“সুবিচার কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবিচারকারীদেরকে ভালবাসেন।” (সূরা হুজুরাত ৩৮১ আয়াত)

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকেই বর্ণিত, যে মাখযূমী মহিলাটি চুরি করেছিল তার ব্যাপারটি কুরায়েশদেরকে চিন্তান্বিত করে তুলেছিল। সুতরাং তারা বলল, ‘এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রিয় উসামাহ ইবন যায়দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ছাড়া আর কে সাহস করতে পারবে?’ ফলে উসামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর সাথে কথা বললেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘আল্লাহর নির্ধারিত দণ্ডবিধির ব্যাপারে তুমি সুপারিশ করছ?’’ অতঃপর তিনি দাঁড়ালেন এবং ভাষণ দিলেন। তাতে তিনি বললেন, ‘‘তোমাদের পূর্বেকার লোকেরা এ জন্যই ধ্বংস হয়েছে যে, তাদের মধ্যে সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি চুরি করলে তারা তাকে ছেড়ে দিত। আর যখন তাদের মধ্যে কোন দুর্বল ব্যক্তি চুরি করত, তখন তারা তাকে শাস্তি প্রদান করত। আল্লাহর কসম! যদি মুহাম্মাদের কন্যা ফাতেমা চুরি করত, তাহলে আমি তারও হাত কেটে দিতাম।’’

(বুখারী ৩৪৭৫, ২৬৪৮, ৩৭৩৩, ৪৩০৪, ৬৭৮৭, ৬৭৮৮, ৬৮০০, মুসলিম ১৬৮৮, তিরমিযী ১৪৩০, নাসায়ী ৪৮৯৫, ৪৮৯৭, ৪৮৯৮, ৪৮১৯, ৪৯০০, ৪৯০১, ৪৯০২, ৪৯০৩, আবূ দাউদ ৪৩৭৩, ইবনু মাজাহ ২৫৪৭, আহমাদ ২২৯৬৮, ২৪৭৬৯, দারেমী ২৩০২)

‘আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় ন্যায় বিচারকরা আল্লাহর নিকট জ্যোতির মিম্বরের উপর অবস্থান করবে। যারা তাদের বিচারে এবং তাদের গৃহবাসীদের মধ্যে ও যে সমস্ত কাজে তারা দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছে, তাতে তারা ইনসাফ করে’ (মুসলিম ১৮২৭, নাসায়ী ৫৩৭৯, আহমাদ ৬৪৪৯, ৬৪৫৬, ৬৮৫৮)

জনগণের কর্তব্য:

"তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা (লোককে) কল্যাণের দিকে আহবান করবে এবং সৎকার্যের নির্দেশ দেবে ও অসৎ কার্য থেকে নিষেধ করবে। আর এ সকল লোকই হবে সফলকাম।"

তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শন আসার পর (বিভিন্ন দলে) বিভক্ত হয়েছে ও নিজেদের মধ্যে মতান্তর সৃষ্টি করেছে। তাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি। (সূরা আলে ইমরান: ১০৪-১০৫)

"হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের আত্মরক্ষা করাই কর্তব্য। তোমরা যদি সৎপথে পরিচালিত হও, তবে যে পথভ্রষ্ট হয়েছে, সে তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহরই দিকেই তোমাদের সকলের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর তোমরা যা করতে, তিনি সে সম্বন্ধে তোমাদেরকে অবহিত করবেন।" (সূরা মায়িদা: ১০৫)

এই আয়াতের মর্মার্থ সম্পর্কে যখন আবু বাকর (রাঃ) অবগত হলেন, তখন তিনি বললেন, ‘হে লোক সকল! তোমরা আয়াতকে ভুল জায়গায় ব্যবহার করছ। আমি তো রসূল (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, ‘‘লোকেরা যখন কাউকে কোন পাপ কাজে লিপ্ত দেখে এবং পরিবর্তন করার পরিকল্পনা বা চেষ্টা না করে, সম্ভবতঃ আল্লাহ তাদেরকে অচিরেই আযাব দ্বারা গ্রেফতার করবেন।’’ (আহমাদ, তিরমিযী ২১৭৮, আবু দাউদ ৪৩৩৮নং) সুতরাং আয়াতের সঠিক ভাবার্থ এই যে, তোমাদের বুঝানো সত্ত্বেও যদি তারা পাপ থেকে বিরত না থাকে এবং সৎপথ অবলম্বন না করে, তাহলে এই অবস্থায় তোমাদের কোন ক্ষতি হবে না; বরং তোমরা সৎপথে আছ এবং পাপ করা হতে বিরত আছ। অবশ্য একটি অবস্থায় সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে বাধা দেওয়া থেকে বিরত থাকা বৈধ, যদি কেউ সে কাজে নিজের মধ্যে দুর্বলতা পায় এবং জীবননাশের আশঙ্কা থাকে, তাহলে এই অবস্থায় ‘‘তাতে যদি সক্ষম না হয়, তাহলে হৃদয় দ্বারা; আর এ হল সবচেয়ে দুর্বল ঈমানের পরিচায়ক’’ হাদীসের ভিত্তিতে অনুমতি আছে। উক্ত আয়াতও এই অবস্থার প্রতি ইঙ্গিত বহন করতে পারে। (দ্রষ্টব্য : তাফসীরে আহসানুল বয়ান, তাফসীরে ইবনে কাসীর)

দাওয়াতের পদ্ধতি:

"তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান কর হিকমত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে আলোচনা কর সদ্ভাবে। নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক, তাঁর পথ ছেড়ে কে বিপথগামী হয়, সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত এবং কে সৎপথে আছে, তাও সবিশেষ অবহিত। (সূরা নাহল: ১২৫)

ইবনে ‘উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মুসলিমের জন্য (তার শাসকদের) কথা শোনা ও মানা ফরয, তাকে সে কথা পছন্দ লাগুক অথবা অপছন্দ লাগুক; যতক্ষণ না তাকে পাপকাজের নির্দেশ দেওয়া হয়। অতঃপর যখন তাকে পাপকাজের আদেশ দেওয়া হবে তখন তার কথা শোনাও যাবে না, মানাও যাবে না।’’ (বুখারী ২৯৫৫, ৭১৪৪, মুসলিম ১৮৩৯, ২৭৩৫, তিরমিযী ১৭০৭, আবূ দাউদ ২৬২৬, ইবনু মাজাহ ২৮৬৪, আহমাদ ৪৬৫৪, ৬২৪২)

বিষয়: বিবিধ

১২৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File