ভাগ্যের লিখন ও মানুষকে তুচ্ছজ্ঞান করা (ইসলামের আলোকে)
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ১২ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১১:২৮:৫০ রাত
ঠাট্টা, বিদ্রুপ, উপহাস করা ইসলামে হারাম বা নিষিদ্ধ। কোনো মুসলমান অপর মুসলমানকে উপহাস করতে পারে না, পারে না তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে।তাকে নিয়ে কেউ রঙ করা, ব্যঙ্গ করা, হাসি-তামাশা করা, মন্দনামে ডাকা,ব্যঙ্গ করে ডাকা ( যদি সে নিজেই এই নামে পরিচিত হতে চায়, সেটা ভিন্ন) কেউই পছন্দ করে না! কিন্তু আমরা সবাই অপরকে ছোট করতে, হেয় করতে, মানুষের সামনে অপদস্ত করতে খুবই পছন্দ করি।
আল্লাহ তাআলা বলেন:-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِّن قَوْمٍ عَسَى أَن يَكُونُوا خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَاءٌ مِّن نِّسَاءٍ عَسَى أَن يَكُنَّ خَيْرًا مِّنْهُنَّ وَلَا تَلْمِزُوا أَنفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ وَمَن لَّمْ يَتُبْ فَأُولَـئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ
"মুমিনগণ, কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গোনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালেম"। (সূরা হুজুরাত: ১১, পারা: ২৬)
মানুষকে উপহাস করা এতোই গুরুত্বপুর্ণ অপরাধ যে, এখানে আল্লাহ তা'আলা পুরুষ ও নারীদের আলাদা ভাবে উল্লেখ করে তা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
যারা তাকদীরে (ভাগ্য) বিশ্বাস করেন না বা যারা বলেন নিজের ভাগ্য নিজেই বদলাবেন, তারাও স্বীকার করবেন যে-
মানুষের জন্ম, জন্মস্থান, জন্মোদর, পরিবার বা বংশ, তার আকার-আকৃতি( লম্বা-খাটো-সুন্দর-কুত্সিত-বিকলাঙ্গ-প্রতিবন্ধী), বুদ্ধির কম-বেশ, মেধা- যোগ্যতার উপর তার কোনো হাত নেই! মানে হলো- তার জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তার তাকদীর নির্দিষ্ট। শুধু সে তার কাজের সীমিত নিয়ন্ত্রক। তাই মানুষের কাজের হিসাব হবে, তার আকার-আকৃতি বা তার ধৌলত. তার সৌন্দর্যের প্রতি দৃষ্টি দেয়া হবে না।
তারপরও আমরা মুসলমান নামধারী যে যেভাবে পারি অপরকে হেয় প্রতিপন্ন করছি যাতে তার কোনো হাত নেই অথবা আমার এই যোগত্যা আমারই নয়।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, কোনো কুকুরকে উপহাস করতে আমার ভয় হয়, না জানি আমি কুকুরের মত হয়ে যাই। (কুরতবী) দ্রষ্টব্য: সংক্ষিপ্ত তাফসির মারেফুল কুরআন, পৃষ্ঠা: ১২৮২
মানুষের মাঝে সেই বেশি মর্যাদাবান যার তাকওয়া যতো বেশি। আল্লাহ বলেন-
إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّـهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّـهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ
নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন। (সূরা হুজুরাত : ১৩)
তিনি আরো বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِّنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ وَاتَّقُوا اللَّـهَ إِنَّ اللَّـهَ تَوَّابٌ رَّحِيمٌ
হে মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। (সূরা হুজুরাত:১২, পারা:২৬)
হারেস ইবনে ওয়াহাব খুযায়ী থেকে বর্ণিত, নবী করীম ( স.) বলেছেন: আমি কি তোমাদের জান্নাতীদের পরিচয় বলে দিব না? তারা কোমল প্রকৃতির লোক, মানুষের কাছেও তারা কোমল চিত্তের বলে গণ্য। যদি তারা কোনো ব্যাপারে আল্লাহর কসম করে, আল্লাহ অবশ্যই তা পুরা করে দেন, আর আমি কি তোমাদের জাহান্নামীদের অবস্থা বলব না? তারা কঠোর প্রকৃতির লোক, দেমাগী-অহঙ্কারী। (বুখারী-৫৬৩৯)
আসুন আমরা ভাই ভাই হয়ে যাই আর ভাইয়ের প্রতি হৃদ্যতার হাত বাড়িয়ে দিই, সহানুভূতিশীল আর সহনশীল হই। কাউকে উপহাস না করি।
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللَّـهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
মুমিনরা তো পরস্পর ভাই-ভাই। অতএব, তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করবে এবং আল্লাহকে ভয় করবে-যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও। (সূরা হুজুরাত: ১০)
(সংক্ষেপিত! বিস্তারিত জানতে পড়ুন তাফসিরে ইবনে কাসীর, কুরতুবী, মারেফুল কুরআন- সূরা হুজুরাত : ১১-১৩ আয়াতের তাফসীর, বুখারী- কিতাবুল আদাব)
বিষয়: বিবিধ
১৭৩৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন