রাসূলকে ভালোবাসার তাত্পর্য (সত্যের সন্ধানে ৬ষ্ঠ পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ২৪ নভেম্বর, ২০১৪, ০৯:৪৭:০৬ রাত
আল্লাহ তা'আলা বলেন," তোমাদের জন্য (মুমিন) এবং যারা আল্লাহ ও কিয়ামত দিবসের আকাংখা করে এবং যারা আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জর্য আল্লাহর রাসূলের মাঝে রয়েছে উত্তম আদর্শ।" ( সূরা আহযাব: ২১; পারা-২১)
এই আয়াতে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, মুসলমানদের একমাত্র অনুসরণীয়, অনুকরণীয় আদর্শ হলেন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
আল্লাহ আরো বলেন, "বলুন! যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তাহলে আমার অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন। বস্তুত: আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরমদয়ালু। (সূরা আলে ইমরান: ৩১, পারা-৩)
তিনি অপর আয়াতে বলেন, যে রাসূলের আনুগত্য করে, সে তো আল্লাহরই আনুগত্য করে,... ( সূরা আন-নিসা: ৮০, পারা-৫)
আল্লাহ আরো বলেন, " হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের অনুসরণ আনুগত্য করো এবং ব্যর্থ করো না তোমাদের কর্মসমূহ। ( সূরা মুহাম্মাদ: ৩৩, পারা-২৬)
উপরোক্ত আয়াত সমূহের সারমর্ম হলো- আল্লাহকে ভালোবাসতে হলে ও তার আনুগত্যের জন্য রাসূলকে ভালোবাসতে হবে এবং তার আনুগত্য করতে হবে। আর তার আনুগত্য করা হবে সুন্নাতের অনুসরণের মাধ্যমে! তার আনুগত্য করা না হলে সব আমালই ব্যর্থ হয়ে যাবে।
আজকাল মুসলমানদের মাঝে রাসূলের সুন্নাত বা আদর্শের বড়ই অভাব। তারা ওহীর বিধানের প্রতি উদাসীন। অথচ এক শ্রেণীর রাসূল প্রেমী (আশেকে রাসূল)দের দ্বারা গোটা দেশ ভর্তি। না আছে তাদে মাঝে ধর্মীয় প্রতীক, না আছে তাদের মাঝে সুন্নাতের অনুসরণ- অনুকরণ।
কারো মাঝে হয়তো দাড়ি, টুপি, পাগড়ি দেখা যাবে. তারা নিয়মিত মসজিদে অথবা বাড়িতে জামাতের সাথে নামাজ আদায় করে, কেউ হয়তো ওযুতে, সালাতে, খাদ্য গ্রহণে, পোশাক পরিধানে অত্যন্ত মনোযোগি এবং রাসূলের সুন্নাতের খুবই পাবন্দী। কেউ কেউ বলবে বাড়াবাড়ি। অথচ তারাই আবার উপার্জণের বেলায় রাসূলের সুন্নাতে বা ইসলামী শরীয়াহর ব্যাপারে উদাসীন। তারা মানুষদের সুন্নাতের কথা বলবে অথচ কথা বলার ধরণ নবীজীর সুন্নাতের মতো নয়! তাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, স্বভাব, রীতি-নীতি, শিষ্টাচার ইত্যাদি রাসূলের সুন্নাতের মতো নয়।
গীবত, তোহমত (অপবাদ), চোগলখোরী, ছিদ্রাণ্বেষণ, মিথ্যা শপথ, ওয়াদাখেলাপে পারদর্শী। তারা পোষাকি সুন্নাতের অনুসারী। কিন্তু তাদের মুখে অশ্লীলতা, আচরণে কদর্যতা, ব্যবহারে হিংস্রতা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "যে ব্যক্তি তার প্রবৃত্তি আমার আনিত বিধানের অধীন করতে না পারবে সে (সত্যিকারের)মুমিন হতে পারবে না। (মিশকাত, হা/১৫৯)
সুন্নাতের অনুসরণের মানে হলো- যেমনটি আল্লাহ তা'আলা বলেছেন,
রাসূল যা নির্দেশ দেন তা গ্রহণ করো আর যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাকো। ( সূরা হাশর: ০৭, পারা:২৮)
এর মানে হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবাসা মানে, সুন্নাতের পুরোপুরি অনুকরণ অনুসরণ। আর সুন্নাতের অনুসরণ মানে- রাসূলের আদেশ মানা এবং নিষেধ থেকে বেচে থাকা।
ভালোবাসা অন্তরে ও কাজে:
আল্লাহ বলেন, নবী মুমিনদের নিজেদের প্রাণের অধিক প্রিয় এবং তার স্ত্রীগণ তাদের মায়ের মর্যাদায়।.... (সূরা আহযাব: ৬, পারা-২১)
এর মানে হলো, নিজেদের জীবন দিয়ে হলেও নবীজীর সুন্নাতের অনুসারী হবে এবং রাসূলের আদর্শের উপর সমাজকে প্রতিষ্ঠিত রাখবে।
শুধু মুখে বললে হবে না, কথায় আর কাজে প্রমাণ করতে যে, সত্যিকারের রাসূলপ্রেমী। তার জন্য প্রয়োজন- সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরা এবং বিদ'আতকে বর্জণ করা।
রাসূলকে ভালোবাসা মানে, ওহীর বিধান অনুসারে সমাজকে পরিচালিত করা।
রাসূলকে ভালোবাসা মানে, ইসলামী শরীয়াহ অনুসারে নিজেদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করা।
রাসূলকে ভালোবাসা মানে, সদ্ব্যবহার করা- নিজেদের পিতা-মাতা, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী, দু:স্থ, অসহায়দের প্রতি। এতিমদের প্রতি, পথিকদের প্রতি দায়িত্ব পালন করা।
রাসূলকে ভালোবাসা মানে, হালাল গ্রহণ, হারাম বর্জণ, জায়েযকে হা আর নাজায়েযকে বর্জণ।
আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আমার সব উম্মাত জান্নাতে প্রবেশ করবে যারা অস্বীকার করে তারা ব্যতীত। বলা হলো, কারা অস্বীকার করে হে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম? তিনি বললেন:
যে আমার আনুগত্য করল সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার বিরোধীতা করল সে অস্বীকার করল। (বুখারী, মিশকাত: ১৩৫)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন: যে আমার সুন্নাতকে ভালোবাসে, সে আমাকেই ভালোবাসে, আর যে আমাকে ভালোবাসে সে জান্নাতে আমার সাথে থাকবে। (তিরমিযী, মিশকাত_১৬৫)
রাসূলকে অনুসরণ ও আনুগত্যের নির্দেশের আরো আয়াতের তালিকা:-
সূরা আলে ইমরান: ৩২,৫০; সূরা আননিসা: ৫৯-৬৫, ৮০; সূরা আনফাল: ২০-২১; সূরা নূর: ৬২, সূরা আহযাব: ৭১; সূরা হাশর: ০৭। দরূদ ও সালামের নির্দেশ: সূরা আহযাব: ৫৬
রাসূলকে কষ্ট দেয়া মানে দুনিয়া আখিরাতে অভিশপ্ত হওয়া। (সূরা আহযাব: ৫৭)
জন্মদিন পালন: রাসূল তার জন্মদিন (সোমবার) পালন করেছেন এই দিনে রোযা রেখে। সুতরাং কেউ তার জন্মদিন পালন করতে চাইলে রোযা রেখে পালন করবে। এটাই সুন্নাহর দাবি। তবে জরুরী নয়, কেননা এই সম্পর্কে সাহাবীদের থেকে কোনো বণর্না পাওয়া যায় না।
রাসূল কখনও জন্মবার্ষিকী (?) পালন করেন নি। তাছাড়া যে তারিখকে (১২ রবিউল উলা) লোকেরা জন্মদিন বলে থাকে সেদিন সম্পর্কে ইতিহাসে বা সিরাতে নির্ভরযোগ্য কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না। বরং তার জন্মতারিখ সম্পর্কে সঠিক বর্ণনা হলো-৯ রবিউল উলা। (বিস্তারিত দেখুন, আর রাহিকুল মাখতুম)
বিষয়: বিবিধ
১০৯০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন