স্বভাব ধর্ম

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ১২ নভেম্বর, ২০১৪, ১১:১৬:২৬ রাত

সত্যের সন্ধানে (২য় পর্ব)

আপনি যা জানেন,আপনি যা বিশ্বাস করেন, আপনি যা মানেন, পালন করেন, তা কি হৃদয়ে ধারণ করেন? কখনো কি ভেবে দেখেছেন আপনার বিশ্বাস, আপনার ধারণা সঠিক কীনা? কতটুকু সত্য আপনার বিশ্বাসের জায়গাগুলো? কখনো কি তা যাচাই করে দেখেছেন?

আপনার মতের সাথে যার ভিন্নমত, কখনো কি তার যুক্তি ও প্রমাণ যাচাই করে দেখেছেন?

আপনার বিশ্বাস কি আপনার বিবেকবিরুদ্ধ? আপনার কাজ কি স্বভাব বিরুদ্ধ? তাহলে কি আপনার মনে একবারও জাগে নি, এখানে নিশ্চয়ই কোনো ভুল রয়েছে?

আপনার পথ কি আপনাকে সঠিক গন্তব্যে নিয়ে যেতে পারবে? পথটা কতটুকু সঠিক আর সরল? আপনার পথচলা কোথায় গিয়ে শেষ হবে? তা কি আপনি জানেন? আপনার পথ ও মত শুদ্ধ বা অশুদ্ধ একটু যাচাই করুন, বিবেককে প্রশ্ন করুন!

ধর্ম কী: নৃবিজ্ঞানী আর দার্শনিকদের মতে ধর্মের অনেক সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা থাকলেও ধর্মের সহজ ও সঠিক মানে হলো- স্রষ্ট্রার পক্ষ থেকে তার সৃষ্টিজগতের প্রতিনিধির জন্য প্রেরিত বিধি-বিধান ও আচারের নাম। মানুষকে সঠিকভাবে বেঁচে থাকতে, পৃথিবীতে চলতে ও চালাতে ধর্মের প্রয়োজন অনস্বীকার্য। ধর্মহীন মানুষ পশুর সমান। কেননা তাদের কোনো নিয়ম নীতি ধর্মের দরকার নেই। মানুষ যদি ধর্ম না মানে বা নিজের জ্ঞান-বুদ্ধিতে ( স্বার্থ ও শর্তে) বিধান তৈরি করে, তাহলে কখনো তারা সঠিক পথ পাবে না। কারণ যিনি সৃষ্টিকর্তা তিনিই ভাল জানেন তার সৃষ্টিকর্ম সম্পর্কে। কীভাবে তা চালাতে হবে।

স্বভাব ধর্ম: প্রতিটি মানুষেরই জন্ম স্বভাব ধর্মের উপর। স্বভাব হলো, যা যুক্তিযুক্ত, জ্ঞান ও বিবেকের অনুকুলে। প্রতিটি মানুষের মনে একজন শক্তিমানের ভয় থাকে। প্রতিটি (সুস্থ) মানুষের রয়েছে একটি স্বাধীন বিবেক। আপনার প্রবৃত্তি, আপনার মনকে আপনি বিবেকের বিরুদ্ধে যেতে দিবেন না। প্রবৃত্তি আপনাকে নানা পথে ও মতে নিয়ে যেতে পারে, কিন্তু আপনার বিবেক আপনাকে সঠিক পথ দেখাতে সাহায্য করবে। । অনেক সময় যুক্তি আপনাকে ভুল পথে তাড়িত করবে, তাই প্রয়োজন আপনার বিবেককে সব সময় জাগ্রত রাখা। যে সব বিষয় জ্ঞান ও জানার উপর নির্ভরশীল তা আপনাকে জানতে হবে, বুদ্ধি আর যুক্তি দিয়ে কখনো তা প্রমাণ করা যাবে না।

মানুষের স্বভাব ধর্ম হলো, এক মালিকের উপর আস্থা ও বিশ্বাস। যিনি এই ভূমন্ডল-নভোমন্ডলের সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা। সমগ্র সৃষ্টিজগতের তিনিই মালিক, আমাদের মহান প্রভু। কোনো মানুষ বা সৃষ্টি কখনো প্রভু বা উপাস্য হতে পারে না।  কোনো সৃষ্টি কখনো উপাসনার যোগ্য হতে পারে না। সমস্ত সৃষ্টি জগত শুধুই স্রষ্ট্রার মুখাপেক্ষী। বিবেক কখনো বলবে না, আপনার মত কোনো সৃষ্টিকে উপাসনা করতে বা তার কাছে কিছু সাহায্য কামনা করতে। সৃষ্টির উপর কারো হাত নেই, সুতরাং মানুষের মাঝে পারস্পরিক কোনো বিভেদ বা বংশ-জাতে পার্থক্য থাকতে পারে না।

আপনার বিবেকই বলবে, এই সৃষ্টি ধারা যেই নীতি আর পথে চলছে আপনাকেও সেই পথে চলতে হবে। সৃষ্টি এই ক্রমধারা বজায় রাখার জন্য মানুষের মাঝে যে বিয়ে প্রথা আছে, তা যদি না থাকে তাহলে তো এক সময় মানুষ নামক প্রাণী বিলুপ্ত হবে যাবে, নতুবা পশু-পাখির মত অসামাজিক প্রথা চালু হয়ে যাবে। বিবেক বলবে 'বৈরাগ্যে' কোনো ধার্মিকতা নেই। সুতরাং বিয়ে না করে (গোপনে প্রবৃত্তির দাস হয়ে) কেউ কখনো ধার্মিক হতে পারে না।

মানুষের পরিচয়: পৃথিবীতে মানুষ হলো প্রভুর পক্ষ থেকে প্রতিনিধি।তাদের ঠিকানা ছিল স্বর্গে। পরবর্তীতে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে পরীক্ষা করা জন্য- কারা প্রভুর একনিষ্ঠ খাদেম, তাদের তিনি আবার সেখানে প্রবেশ করাবেন বাকিদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে অনন্ত নরক। সুতরাং তাদের কর্তব্য হলো, মালিকের গোলামি করা ও পৃথিবীতে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা। প্রভুর সন্তুষ্ট অর্জণের মাধ্যমে মৃত্যুর পরে অনন্ত জীবনের জন্য স্বর্গে প্রবেশ করা। কীভাবে আবার আমরা স্বর্গে যেতে পারি সেই জন্য মহান প্রভৃ আমাদের জন্য দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন।

মালিকের বিধান: যিনি আমাদের প্রতিপালক, যিনি আমাদের পালনকর্তা, নিশ্চয়ই তারপক্ষ থেকে একটি দিক-নির্দেশনা থাকবে- এই জগতের জন্য, এই সৃষ্টির সেরা ( দেহে-বুদ্ধিতে-বাকশক্তিতে)মানুষের জন্য। কেননা মানুষ হলো, প্রভুর পক্ষ থেকে এই পৃথিবীর প্রতিনিধি। সেই বিধানই হলো- ঐশ্বিক বা আসমানী বিধান। সকল ধর্মেই বলা আছে, যুগে যুগে মালিকের পক্ষ থেকে মানুষের পথ পরিচালনায় প্রেরিত পুরুষ (বার্তাবাহক রূপে নতুন নতুন গ্রন্থ ও বিধান সহ) এসেছেন। তারা আমাদেরই মধ্য থেকে আমাদের মত সাধারণ একজন মানুষ, পার্থক্য শুধু (মর্যাদায়) তারা প্রভুর পক্ষ থেকে বার্তাবাহক ও পথ নির্দেশক। তারা কখনো প্রভুর সমকক্ষ হতে পারে না বা তারা মানুষের গুণের বাইরে হতে পারে না।

সুতরাং প্রভু ছাড়া কারো কাছে আপনি মাথা নত করতে পারেন না, কারো কাছে আপনি সাহায্যপ্রার্থী হতে পারেন না। এক প্রভু ছাড়া কারো গোলাম হতে পারেন না। কোনো মানুষই প্রভুর গুণে গুণান্বিত হতে পারে না। (যেমন, চিরঞ্জীব- সদা জাগ্রত-সর্বদ্রষ্টা-সর্বশ্রোতা) সুতরাং যারা মারা যান তারা কখনো জীবিতদের মত নয়। তারা পৃথিবীর কারো কোনো উপকারে আসতে পারেন না।

একটি কথা: বিধান কখনো একই সময়ে একের অধিক থাকতে পারে না। যখন যেই বার্তাবাহক প্রভুর পক্ষ থেকে আসেন তখন সেই (বার্তা ও গ্রন্থের আলোকে )বিধান মানুষের উপর বাধ্যতামূলক। এটাই যুক্তিযুক্ত ও বিবেকের দাবি। সুতরাং নতুন বিধানের সাথে পুরাতন বিধান থাকতে পারে না। পরিপূর্ণ সংশোধিত বিধানের উপর থাকাই মানুষের কর্তব্য। একটু ভেবে দেখেছেন কি?

কোন বিধানটা সঠিক?

আপনি যদি দেখেন আপনার লালিত-পালিত বিধানের মাঝে অসামঞ্জস্যতা রয়েছে বা সেখানে নানা রঙের, বর্ণের, জাত আর বংশের মানুষের জন্য আলাদা বিধান, অথবা আপনারই মত কাউকে উপাসনা করতে বলে- তাহলে একটু মনোযোগ দিয়ে বিষয়টি ভাবুন। আপনার সামনে পৃথিবীটা এখন উন্মুক্ত। আপনি আপনার বিবেক-বিরুদ্ধ ধর্মচর্চাকে যাচাই করুন। আপনার বিধান আপনার বিবেকের বিরুদ্ধে গেলে, আপনি প্রচলিত সকল বিধানকে এবার দেখতে থাকুন। আমাদের মহান প্রভু  অবশ্যই সঠিক  পথ দেখাবেন। প্রয়োজন শুধু মুক্ত মন আর উদার হৃদয়ে অনুধাবনে সচেষ্ট হওয়া।

দরকার শুধু প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন আর গবেষণা করা। সবাইকে বিষয়গুলো ভালভাবে বুঝতে, জানতে, অনুধাবন করতে অনুরোধ করছি।

মহান প্রভু আমাদের সত্য-সঠিক পথের অনুসারী করুন, ন্যায় পথে চলতে সাহায্য করুন। আমিন।।

বিষয়: বিবিধ

১০৫৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

283755
১৩ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০২:৪০
আফরা লিখেছেন :
মহান প্রভু আমাদের সত্য-সঠিক পথের অনুসারী করুন, ন্যায় পথে চলতে সাহায্য করুন। আমিন।

জাজাকাল্লাহ খায়ের ।
283788
১৩ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ০৮:০৭
মামুন লিখেছেন : দরকার শুধু প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন আর গবেষণা করা। সবাইকে বিষয়গুলো ভালভাবে বুঝতে, জানতে, অনুধাবন করতে অনুরোধ করছি। আপনার অনুরোধ রক্ষা করব ইনশা আল্লাহ।
লিখাটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর। Thumbs Up Thumbs Up Thumbs Up

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File