এই ছেলে (ছেলেবেলার গল্প)
লিখেছেন লিখেছেন udash kobi ১৩ মার্চ, ২০১৯, ০৭:৩৮:১৫ সন্ধ্যা
ভালোবাসার মানুষের কাছে কিছু বিক্রি করা, তা-ও আবার মাথায় করে বাজারের পথে; সেটা যে কতটা কষ্টের আর লজ্জার তা শুধু ভুক্তভোগীরাই জানে
সুমীকে পছন্দ করতাম, কখন থেকে এবং কিভাবে তা জানি না। আমার প্রতি সুমীর যে আচরণ, ব্যবহার তারই নাম যে ভালোবাসা তা বড় হয়ে বুঝতে পেরেছি। নইলে ক্লাস থ্রিতে পড়া কোনো ছেলে সেটা বুঝার কথা নয়, তবে মেয়েদের কথা আলাদা। ওরা অল্প বয়সে নাকি পেকে যায়। বিষয়টা আমি বুঝতে পারি সহপাঠী রূমার কথা-বার্তায়।
সুমী আমাকে ছাড়া ইস্কুলে কোনো খাবার খেতো না। মূলত তারই আচরণের কারণে এক সময় তার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ি।
সব ছেলেরা যখন মাঠে খেলায় ব্যস্ত, মেয়েরা মেয়েদের সাথে। সুমী তখন মাঠ থেকে ডেকে নিয়ে আসতো জোর করে, হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতো ইস্কুলের পিছনে। বড় আমগাছটার নিচে বসে ওর বাড়ির গল্প, নানীর বাড়ি গল্প বলতো। আরো কী সব বলতো এখন আর মনে নেই।
ক্লাস ফোরে ওঠে, একদিন ইস্কুলে যাবার পথে ওর সাথে দেখা, পাশে ওর মামা । ও বললো, আর সে এই ইস্কুলে পড়বে না। সে আজ বিদায় নিতে এসেছে। ওর সাথে ওটায় আমার শেষ কথা। তারপর ক্লাস ফাইভে ওঠে আমি এই ইস্কুল ছাড়ি, ও এসে আবার এখানে ভর্তি হয়।
মাথায় করে তরি-তরকারী গ্রামের সাপ্তাহিক হাঁটে নিয়ে বিক্রি করা আমার কাছে বিরাট লজ্জা আর অপমানের মনে হতো। তারপরও সংসারের চাহিদায় তা করতে কতো। সেদিন বাড়ি থেকে কয়েকটা লাউ নিয়ে যাচ্ছি। বাজারের ঢুকার পথে দেখি সুমী, পাশে ওর আব্বা। আমি মনে মনে চাচ্ছিলাম ওর বাবা যেন আমার কাছ থেকে লাউ কিনতে না চায়।
ভাগ্য বড় বেদনাদায়ক! ওর আব্বা লাউয়ের দাম জিগ্যেস করতে আমি অস্বাভাবিক দাম হাঁকলাম, যাতে ওরা চলে যায়। ওরা নাছোড়বান্দা। মুলামুলি চলতে থাকলো। ওর বাবা যে দাম বলছিল তা বাজারের দরের চেয়ে একটু বেশিই ছিল। তারপরও আমি বিক্রি না করে বাজারের দিকে হাঁটতে থাকি, পিছন থেকে শুনি সুমী আমাকে অভিশাপ দিচ্ছে, লাউ আমি যেন বিক্রি করতে না পারি।
আমার সবচেয়ে কষ্ট আর লজ্জা লাগছিল, সুমি সেদিন আমাকে সম্ভোধন করেছিল 'এই ছেলে' বলে।
#উদাসকবি
বিষয়: সাহিত্য
৮১৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন