ঝগড়া ও বুদ্ধিমতী রুমা ( অলনের শৈশব)
লিখেছেন লিখেছেন udash kobi ০৪ মার্চ, ২০১৯, ১১:৫৩:৩৩ রাত
ঝগড়া করতে অলনের কখনোই ভালো লাগে না। তারপরও তাকে বাক-বিতন্ডা, ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হতে দেখা যায়, অন্যদের ঝগড়া থেকে ফেরাতে গিয়ে। কেউ তার গায়ে হাত তুললেও সে কাউকে আঘাত করতো না এবং বাড়িতে গিয়ে মুরুব্বিদের কাছে নালিশ করতো না। অনেক ছেলে-মেয়ে আছে যারা ইস্কুলের বা মাঠের বিবাদে না পেরে বাড়িতে গিয়ে বড়দের বলতো, তাতে ছোট ঝগড়া এক সময় পাড়ায় পাড়ায় কখনো গ্রামে গ্রামে লড়াই লেগে যেতো।
সকালে ইস্কুলে যাবার সময় রাস্তায় বুড়ো রাজিব (ক্লাস ফোরে ৫ বছর ধরে পড়ছে) ধুলো উড়াচ্ছিলো। অলন ধুলা উড়াতে নিষেধ করতেই তেড়ে এলো মোষের মতো। অলন তার হাতের চড় খেয়ে কাঁচা রাস্তায় পড়ে যায়। তার বাম হাতের সামান্য অংশ এতে ছিলে যায়। তবুও সে কিছু না বলেই ইস্কুলে চলে যায়। বিকেলে বাড়িতে ফেরার পর এক সময় তা বড়বোনের চোখে পড়ে যায়, এক সময় মা-ও জানতে পারেন। অলন বলছিল সে পা পিছলে পড়ে গিয়ে হাতে ব্যাথা পায়। কিন্তু কোত্থেকে ফুফাতো ভাই রফিক এসে হাজির। নিজের থেকে জানিয়ে দিলো সকালের ঘটনা। অমনি মা আরেকটা চড় বসিয়ে দিয়ে বললো, মিথ্যে বললি কেন?
-আমি যদি বলতাম রাজিব মেরেছে, তাহলে তোমরা তাকে মারতে
-তাতে তোর সমস্যা কী?
-সে তো ছোট, সে ব্যাথ্যা পাবে।
-তুই ব্যাথা পাসনি?
-আমি পেয়েছি, সেটা তো সামান্য, কিন্তু স্যারদের বা চাচাকে বললে তাকে অনেক মারতো।
আরেকদিন ইস্কুলে যাবার পথে গেইটের বাইরে লিখনকে বেশ চিন্তিত ও মলিন চেহারায় দেখতে পেয়ে বললো- তোর কী হয়েছে?
-কাইয়ুম আমাকে মারার জন্য ঢাক্কইল্যা মিযানকে ( ঢাকায় বেশ কিছুদিন থেকে এখন গ্রামে এসে বাস করে এমন লোকদের ঢাকাইয়্যা বা ঢাক্কইল্যা বলে ডাকা হয়) ভাড়া করেছে।
লিখন আর কাইয়ুম দুজনই বেপারী বাড়ির। অলনদের পাশের গ্রামের।
-কেন?
-গতকাল মক্তবে কাইয়ুমের সাথে আমার মারামারি হয়েছিল, ও একটু বেশি মার খেয়েছে, তাই আজ সকালে ইস্কুলে এসে ঢাক্কুইল্যাকে বলে...
অলন তাকে আশ্বাস দিয়ে জানালো ওর কিছু হবে না, ওর সাথে সে আছে। গেইট দিয়ে ভিতরে ঢুকেই ইস্কুলের মাঠে মিযানকে পেয়ে বিষয়টা জানতে চাইলো। মিযান জানালো, ঠিকই শুনেছিস, ওকে আজ সাইজ করবো। অলন বলল- আমি তার সাথে আছি
-তাই? তোকে তাহলে সাইজ করবো।
-আচ্ছা? আমি এখনই গিয়ে হেডস্যারকে গিয়ে বলছি
-খবরদার! যদি স্যারদের কিছু বলেছিস, বাড়ি ফেরার পথে তোকে আর আনাম রাখবো না। মিযান ওকে প্রচন্ড ভয় দেখাতে লাগলো। কারণ স্যারদের কাছে অলনের কথার মূল্য অনেক। অলন যে কথা বলবে, বাকি সবাই তার বিপক্ষে বললেও স্যার অলনের পক্ষে থাকবে।
মাঠের মাঝে দুইটা পক্ষ হয়ে গেলো। ঢাক্কুইল্যার পক্ষ আর অলনের পক্ষ। এই সময় অলনের ক্লাসমেট রুমা এসে ব্যাপারটা জানতে পেরে অলনকে বললো- তোমার কষ্ট করতে হবে না।
অলন বললো- মানে?
- আমি আর লিখনরা একই মক্তবে পড়ি। কাল সকালে বড়ভাইকে বলে ব্যাপারটা মিট করিয়ে ফেলবো। কাইয়ুম কখনোই লিখনের গায়ে হাত তোলার সাহস পাবে না।
অলনদের ব্যাপারটা ক্লাসের সময় হয়ে যাওয়ার পর এখানেই থেমে যায়। ইস্কুল ছুটির পর দেখা যায় লিখন আর কাইয়ুম পাশাপাশি গল্প করতে করতে যাচ্ছে। অলন তো অবাক। রুমা এসে অলনের কাঁধে হাত রেখে বললো- ওদেরকে আমি বলেছি, তোরা যদি নিজেরা ব্যাপারটা মিটমাট না করিস তাহলে বড়ভাইকে বলে দুজনকেই মার খাওয়াবো।
পরে সে বুঝতে পারে রুমা আসলে ওর সাথে চালাকি করেছে, যাতে সে ঢাক্কুইল্যার কাছে মার না খায়।
মানুষ যে বলে মেয়েদের বুদ্ধি ছেলেদের হাঁটুর নিচে! কথাটা মনে হচ্ছে উল্টো। অলন ভাবছে, রুমা একাই ব্যাপারটা কী রকম করে সামলিয়েছে। ঝগড়াটা ভয়াবহ আকার ধারণ করতো এমনকি বড়দের মাঝে তা সংক্রমিত হতো। যাক! আল্লাহ পাক প্রতিটি ক্লাসে এই রকম দুই-একজন রুমার মতো বুদ্ধিমতি রেখে দেন ছেলেদের নাকানি চুবানি খাওয়ানোর জন্য।
দেখা গেলো লিখন আর কাইয়ুমের বন্ধুত্ব হয়েছে, অথচ মিযানের সাথে অলকের শত্রুতা হয়ে গেলো। মিযানের সাথে অলকের একলা দেখা হলেই ও বলতো, আমার সাথে পাঙ্গা লড়বি না? একদম সাইজ করে ফেলবো। অলন বলতো- তোমার সাথে আমার দ্বন্দ্ব কিসের? আমি তো কারো সাথে পাঙ্গা লড়ি না।
-এখন নরম হয়ে গেলি কেন? ভয় পাইছিস?
অলন মুচকি হাসে। মিযান আরো রেগে যায়। অলন বুঝতে পারে না, মানুষ এতো ঝগড়াপ্রিয় কেন?
বিষয়: সাহিত্য
১০৪৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন