সুদ: একটি হারাম উপার্জন ও তার পরিণতি
লিখেছেন লিখেছেন udash kobi ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০১:০৮:৫৮ রাত
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষের সামনে এমন একটি যুগ আসবে, যখন কেউ কী উপায়ে ধন-সম্পদ উপার্জন করলো, হারাম না হালাল উপায়ে- এ ব্যাপারে কেউ কোনো প্রকার পরোয়া করবে না। (সহীহ বুখারী: ১৯৫৪, সুনানুল কুবরা: ১০১৬৬, নাসাঈ: ৪৪৫৪, আহমাদ: ৯৩৩৭, দারেমী: ২৫৩৬)
মানুষেরকাছে যখন মুখ্য উদ্দেশ্য হবে সম্পদ অর্জন করা। তখনই এ অর্জন হারাম পন্থায় হলো নাকি হারাম পন্থায় হলো তা সে পরোয়া করবে না। তার নিকট হালাল হারামের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। উভয়টাই তার নিকট সমান।
হারাম উপার্জনের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন-
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে দেহের গোশত/গোশত হারাম উপার্জনে গঠিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। হারাম ধন-সম্পদে গঠিত ও লালিত পালিত দেহের জন্য জাহান্নামই উপযোগী। (আহমাদ, দারিমী, মিশকাত: ২৭৭২)
সুদ:
সকল মুসলিম এ বিষয়ে ঐকমত্য যে, সুদ হারাম। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
যারা সূদ খায়, তারা (কিয়ামতে) সেই ব্যক্তির মত দন্ডায়মান হবে, যাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা পাগল করে দিয়েছে। তা এ জন্য যে, তারা বলে, ‘ব্যবসা তো সূদের মতই।’ অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে বৈধ ও সূদকে অবৈধ করেছেন। (সূরা বাকারা, ২:২৭৫)
সুদের পাপ:
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা‘নাত করেছেন, "যে ব্যক্তি সুদ খায়, যে সুদ দেয়, যে সুদের কাগজপত্র লিখে, যে দু’জন সুদের সাক্ষী হয় তাদের সকলের ওপর। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেছেন, (গুনাহের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার কারণে) তারা সকলেই সমান"। ( সহীহ মুসলিম:১৫৯৮, সুনানুল কুবরা: ১০২২৬, আহমাদ: ১৩৮৫১)
পুনশ্চ: অর্থাৎ সুদগ্রহীতা, সুদদাতা, এর লেখক এবং সাক্ষী- এরা সকলেই পাপের সমান ভাগীদার। ‘আল্লামা নববী বলেনঃ এতে সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় যে, সুদ আদান প্রদান যেমন হারাম, অনুরূপভাবে সুদের চুক্তি লেখা এবং এর সাক্ষী দেয়া উভয়ই হারাম। এর দ্বারা বুঝা যায়, সর্বপ্রকার হারাম কাজে সহযোগিতা করা হারাম। এতে হারাম কার্য সম্পাদনকারীর মতো সহযোগিতাকারীও পাপের সমান অংশীদার। সুতরাং যারা সুদী ব্যাংকের উদ্যোক্তা, মালিক, কর্মচারী ও যারা এর থেকে লাভবান হয় সবাই সুদের পাপে পাপী।
বাহ্যিক দৃষ্টিতে সুদের মাঝে লাভ দেখতে পেলেও পরিণামের দিক দিয়ে এতে অভ্যন্তরীণ ও আধ্যাত্মিক ক্ষতি রয়েছে এবং আল্লাহর নির্দেশের অমান্যতা বিদ্যমান। অপরদিকে দান-সাদাকার মাঝে বরকত রয়েছে। সূদ বাহ্যিকভাবে দেখতে বৃদ্ধিশীল লাগলেও অভ্যন্তরীণভাবে অথবা পরিণামের দিক দিয়ে সূদের অর্থ ধ্বংস ও বিনাশেরই হয়। আল্লাহ বলেন-
"আল্লাহ সূদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বৃদ্ধি দেন। আল্লাহ কোন অকৃতজ্ঞ পাপীকে ভালবাসেন না।" ( সূরা বাকারা, ২:২৭৬)যেমন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সুদের মাধ্যমে সম্পদ (বাহ্যত) বেশি হলেও পরিণামে তা স্বল্পই। (ইবনু মাজাহ ও বায়হাক্বী-মিশকাত: ২৮২৭)
লোকের ধন বৃদ্ধি পাবে এ উদ্দেশ্যে তোমরা যে সূদ দিয়ে থাক, আল্লাহর দৃষ্টিতে তা বৃদ্ধি হয় না; কিন্তু তোমরা আল্লাহর মুখমন্ডল (দর্শন বা সন্তুষ্টি) লাভের জন্য যে যাকাত দিয়ে থাক, তাই বৃদ্ধি পেয়ে থাকে; সুতরাং ওরাই সমৃদ্ধিশালী। ( সূরা রূম, ৩০:৩৯)
সুদগ্রহীতার বিরুদ্ধে যু্দ্ধ ঘোষণা:
'হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সূদের যা বকেয়া আছে তা বর্জন কর; যদি তোমরা বিশ্বাসী হও'।এখানে বলা হচ্ছে-সূদ খাওয়া মানে, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামা।
আর যদি তোমরা (সূদ বর্জন) না কর, তাহলে আল্লাহ ও তার রসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধ সুনিশ্চিত জানো। কিন্তু যদি তোমরা তওবা কর, তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই। তোমরা কারো উপর অত্যাচার করবে না এবং নিজেরাও অত্যাচারিত হবে না। ( সূরা বাকারা, ২:২৭৮-২৭৯)
হে বিশ্বাসিগণ! তোমরা ক্রমবর্ধমান হারে (দ্বিগুণ-চতুর্গুণ বা চক্রবৃদ্ধি হারে) সূদ খেয়ো না, এবং আল্লাহকে ভয় কর, তাহলে তোমরা সফলকাম হতে পারবে। ( সূরা আলে ইমরান, ৩: ১৩০)পুনশ্চ: সূদ হারাম হওয়ার জন্য চক্রবৃদ্ধি হারে খাওয়া শর্ত নয়। বরং এখানে জাহেলী যুগের সূদ খাওয়ার যে পরিবেশ ও ধরন ছিল, তাই প্রকাশ ও বর্ণনা করা হয়েছে। জাহেলিয়াতে সূদের সাধারণ প্রচলন এই ছিল যে, ঋণ পরিশোধ করার সময় এসে যাওয়ার পর তা পরিশোধ করা সম্ভব না হলে, তার (পরিশোধের) সময় বৃদ্ধি করার সাথে সাথে সূদও বর্ধিত হতে থাকত।
(দ্রষ্টব্য: সুদের আরবি রিবা (الرِّبَا) শব্দটি কুরআনে ৬টি আয়াতে ৭ বার এসেছে।)
উমার ইবনুল খত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সুদ হারাম হওয়ার আয়াতই (কুরআন মাজীদের) সর্বশেষ আয়াত। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তেকাল হয়ে গেছে অথচ সুদের পরিপূর্ণ বর্ণনা তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের কাছে (স্পষ্ট করে) রেখে যাননি। সুতরাং কুরআন সুন্নাহ্’য় বর্ণিত সুদ এবং যে সব ক্ষেত্রে সুদের কোনো প্রকার সন্দেহের সৃষ্টি হয়, তাও বর্জন করবে। (ইবনু মাজাহ: ২২৭৬, আহমাদ: ২৪৬, মিশকাত:২৮৩০)
অর্থাৎ সুদ সম্পর্কিত আয়াত অনুসারে তোমরা কর্ম পরিচালনা করো। এতে তোমরা কোনো প্রকার সন্দেহ পোষণ করো না এবং সুদ হালাল করার জন্য কোনো প্রকার বাহানার আশ্রয় গ্রহণ করো না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
আবূ বুরদাহ্ ইবনু আবূ মূসা (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি মাদীনায় এসে ‘আব্দুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম। আমাকে তিনি বললেন, তুমি এমন এলাকায় বসবাস করছো, যেখানে সুদের প্রচলন অত্যধিক। অতএব কারো কাছে যদি তোমার কোনো পাওনা থাকে, সে যদি তোমাকে হাদিয়া হিসেবে এক বোঝা খড় অথবা এক গাঠুরী যব, অথবা ঘাসের একটি বোঝাও দেয়; তুমি তা গ্রহণ করবে না। কারণ এটা সুদ হিসেবে সাব্যস্ত হবে। (বুখারী, মিশকাত: ২৮৩৩)
পুন্শ্চ: সুদ ও সুদের অনুরূপ কোনোকিছুর ধারে কাছেও যাওয়া যাবে না।
সংকলন ও সম্পাদনা: সামসুল আলম
বিষয়: বিবিধ
৭৩৭ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন