অলনের ছেলেবেলার গল্প-০১

লিখেছেন লিখেছেন udash kobi ০৬ জানুয়ারি, ২০১৫, ১২:০১:৪৯ রাত

ছেলেবেলার গল্প-০১

- আহমাদ সা-জিদ(উদাসকবি)

ইস্কুল থেকে ফিরে ভাতটা খেয়ে ঘর থেকে বের হয়েছে অলন। ইচ্ছে, টুডায় ( ভুমির কৌণিক সীমা )গিয়ে বিলের ধারে বসে বিশ্রাম নেবে। বাড়ি থেকে মসজিদের রাস্তায় আসতেই ওর মনে হলো সাথে করে গল্পের বইটা নিলে মন্দ হত না। যেই ভাবা ওমনি ফিরতি পথ ধরা। তখনই যমদূতের মত ওই রাস্তা দিয়ে আসতে ছিলেন প্রাইমারি ইস্কুল শিক্ষক অলনের জ্যাঠামশায়।

এই আমাকে দেখে লুকানো হচ্ছে?- উচ্চস্বরে চিল্লাতে লাগলেন। জ্যাঠামশায়ের গলা শুনে অলনের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে।

কখনো সে ওনার সামনে দাঁড়িয়ে মাথা তুলে কথা বলতে পারে না।

বাড়িতে এসে পিলারের আড়ালে দাঁড়িয়ে রইল সে। ঘরে গিয়ে গল্পের বই আনতে ভুলে গেল। জানে আজ তার কপালে কিছু একটা খারাপি আছে।

-আমাকে দেখে পালিয়ে যায়, কী জানি ফরমায়েশ দিয়ে বসি তাই- ভারি বজ্জাতি শিখেছে এই বয়সেই!

অলনদের যৌথ পরিবার। তিন কাকাদের সংসার একসাথে। ওর বাবা দুই নম্বরে হলে কী হবে, গলার আওয়াজটা ওদের চেয়ে নিচু। অলনদের মত ছোটদের দায়িত্ব হলো, ইস্কুল থেকে ফিরে গরুগুলো নিয়ে বের হওয়া কাজের ছেলেদের সাথে- ঘাস খাওয়ানোর জন্য। সে প্রতিদিনই এই দায়িত্ব পালন করে বিশ্রাম সেড়ে তারপর। আজও করত একটু পর। কিন্তু জ্যাঠামশায় যেভাবে প্যাঁচ লাগাতে যাচ্ছেন তাতে মনে হচ্ছে আজ ওর গায়ে কিছু উত্তম-মাধ্যম হবে। প্রায়ই এমন হয়।

কী জানি বড়রা কেন শুধু শুধু খুঁত ধরে মারতে ভালবাসে!

আজ ব্যাপারটা ধারণার চেয়ে জটিল। বড়কাকার চিল্লানি থামছেই না। ভয়ে অলনের হাফ-প্যান্ট ভিজে যায়। প্রায় সময়ই অলনের এমন হয়। জ্যাঠার শব্দ শুনলেই প্রস্রাব ঝরে যায়। তখন আসে পাশে কেউ থাকলে বিশেষ করে পিচ্চিগুলো, ওর লজ্জায় বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে।

অলনের মাকে ডেকে কৈফিয়ত চায় জ্যাঠামশায়। অলনের মা অন্দরমুখি আর চাঁপা স্বভাবের। জানে এ সংসারে কথা বললেও তার মুল্যায়ন হবে না। অলনকে ডেকে গালে দুটো থাপ্পড় মেরে আড়ালে গিয়ে অশ্রু ফেলা নৈমত্তিক ব্যাপার। আজো তাই হলো। যৌথ পরিবারের একদিকে সুখ অন্যদিকে লুকানো কষ্টের ইতিহাস।

অলন ভাবে, এ কেমন জীবন! যেখানে নিয়ম বেঁধে পড়াশুনা আর কাজ, কোনো অবসর বা খেলাধুলা নেই?

তাইতো তার ইস্কুলের বন্ধু-বান্ধব ছাড়া আশে-পাশের কোনো বন্ধু নেই। কেউ তার সাথে মিশতে চায় না, সেও কারো সাথে মিশতে পারে না।

এভাবেই কাটতে থাকে অলনের ছেলেবেলা।

বিষয়: বিবিধ

১১০৭ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

299390
০৬ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ১২:৩৩
দ্য স্লেভ লিখেছেন : অলন ভাবে, এ কেমন জীবন! যেখানে নিয়ম বেঁধে পড়াশুনা আর কাজ, কোনো অবসর বা খেলাধুলা নেই?
অনেক পরিবারের বড়রা ছোটদের সাথে এমন আচরণ করে যেন তারা কখনই ছোট ছিলনা।
০৬ জানুয়ারি ২০১৫ বিকাল ০৫:৩৯
242471
udash kobi লিখেছেন : ধন্যবাদ। ভালো থাকুন
Good Luck
299513
০৬ জানুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০২:৪৪
সন্ধাতারা লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ খুব ভালো লাগলো লিখাটি ভাইয়া।
০৬ জানুয়ারি ২০১৫ বিকাল ০৫:৩৯
242472
udash kobi লিখেছেন : Good Luck Good Luck Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File