বোবাজিনের কবলে
লিখেছেন লিখেছেন udash kobi ০৪ জানুয়ারি, ২০১৫, ১২:৪৮:৩৮ রাত
সেই রাতে আমি খুবই ভয় পেয়ে যাই, হাতের কাছে টর্চ লাইট থাকা সত্ত্বেও জ্বালাতে পারছিলাম না। অনেক চেষ্টা করেও আমি কাউকে ডাকতে পারছিলাম না। রাতটা ছিল খুবই রোমান্টিক ধরণের, আমার পাশে কেউ ছিল না। বাইরে ঝিরঝির করে বৃষ্টি হচ্ছিল, মৃদু বাতাসের সাথে। সঙ্গত কারণেই তখন বিদ্যুৎ চলে গিয়েছিল। আমি তাকিয়ে দেখি খোলা জানালা দিয়ে কী যেন একটা ঘরে ঢুকছে... ইয়া লম্বা তার দেহ, হাত; কোনোটাই তার পূর্ণাঙ্গ নয়। লম্বা আলখেল্লায় চেহারাটা স্পষ্ট নয়। মনে হচ্ছে যেন আমার কাছেই আসছে। ভয়ে আমি ঠান্ডায় জমে গিয়ে পাথরের মত। কী করব বুঝতে পারছিলাম না। ওই অদ্ভুত আকারটা আমার গায়ে চেঁপে বসে। আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। আমি প্রচন্ড শব্দে চিৎকার করে উঠি। কিন্তু গলা দিয়ে কোনো স্বর আসছে না। আমার কানে শুধু গোঙানির আওয়াজ আসছে। কে? কে? ওমন করে গোঙাচ্ছে?
কিছুক্ষণ পর অনুভব করলাম, আওয়াজটা আমার গলা দিয়েই আসছে।
আমি চিৎকার করছি আর হাত-পা ছুড়ছি। আমি বলছি বাঁচাও বাঁচাও আর মুখ দিয়ে বের হচ্ছে- গোঁ গোঁ। এক সময় আমি ক্লান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দিই। তখনই আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। এখন আমার প্রায়দিনই এমন হচ্ছে। সেই যে আট বছর আগে শুরু হয়ে ছিল। আচ্ছা আমি কী করতে পারি....?
প্রথম অভিক্ষতা-
প্রতিদিনের মত ছোট ভাই মন্জুকে নিয়ে বাংলাঘরে শুয়েছি, রাত ১০টার মত তখন। কোন মাস এই মূহুর্তে মনে পড়ছে না, তবে খুব গরমও না আবার শীতও ছিল না। সাথে ছিল হালকা কাথা।
মধ্যরাত। স্বপ্নে আমি বাড়ির পূর্বপাশের রাস্তা দিয়ে (মসজিদ রোড) কোথাও যাচ্ছি। সবই ছিল ঝাপসা আর অস্পষ্ট। হঠাৎ রাস্তার পাশের আম গাছটার(আমাদেরই) উপর থেকে ভয়ানক কিছু দেখে আমি চিৎকার করতে থাকি। ওই ভয়ঙ্কর কিছুটা অদ্ভুত চোখে আমার দিকে চেয়ে, আমার দিকে আসছে। আমি একদম নড়তে পারছি না। শুধু চিল্লিয়ে যাচ্ছি।
হঠাৎ এক সময় মনে হলো আমি বিছানায় শুয়ে আছি, আমার উপর কেউ চেঁপে বসে আছে, আমাকে দম আটকে মেরে ফেলবে। আমি হাত-পা নাড়াচ্ছি (বাস্তবে কিন্তু এসব কিছুই না, শুধু আমার মুখ দিয়ে নাকি গোঙানির মত অদ্ভুত শব্দ আসছে, পরবর্তী আমার ভাই ও অন্যান্যদের কাছ থেকে শুনতে পাই।)চিৎকার করে বলছি বাঁচাও বাঁচাও। এক সময় মনে হল আমি এখন বাংলা ঘরেই শুয়ে আছি, কিন্তু কেন জানি চিল্লাচ্ছি! মুথ দিয়ে কোনো কথা বলতে পারছি না। ঘরের বাইরে থেকে দরজা ধাক্কা-ধাক্কি, জানালায় শব্দ, কেউ যেন বলছে-'দরজা খোল'। আমি ভাবছি আমার ছোট ভাই গেল কোথায়?
এক সময় পুরোপুরি জাগতিক ভুবনে এলাম। হ্যারিকেনের মিটিমিটি আলোতে দেখি, আমার ছোট ভাই (তখন বয়স ছিল সাত বছর) বিছানার এক কোণে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে, ওর কাথা আর বালিশ আমার গায়ের উপর। বাইরে থেকে বাবা-মা-চাচা-চাচি ডাকা-ডাকি করছে, দরজা খোলার জন্য।
ঘটনা হলো- আমার মুখ থেকে গোঙানি শুনে ভাইটি ঘুম থেকে উঠে খুবই ভয় পেয়ে যায়, কাথা আর বালিশ আমার দিকে ঠেলে দিয়ে বিছানার এক কোণে বসে কাঁপতে থাকে। বাইরে থেকে ডাক শুনতে পেলেও ভয়ে উঠে গিয়ে দরজা খুলতে বা আমার গায়ে ধাক্কা দেয়ার মত সাহস হয় নি। আমার এই গোঙানির শব্দ এতই উচ্চ ছিল যে পশ্চিম ঘর থেকে ছোট চাচা, পূবঘর থেকে বাবা-মা জেগে বাইরে চলে আসে। এর আগে কখনো এমন হয় নি বলে সবাই বিষয়টিতে ভয়ানক ভয় পেয়ে যায়।
আমিও জীবনে নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলাম, ক্লাস তখন এইটে পড়ি।
তারপর নানাবিধ চিকিৎসা ............ ঝাড়ফুঁক আর তাবিজ-কবজ। পরবর্তীতে এক সময় লিখব সে বিষয়ে...
অবশ্য আমি এখন আর তাবিজ-কবজ ব্যবহার করি না। জীবনে খুব কম সময়ই ওগুলো ব্যবহার করেছিলাম।
আসলে যখনই খুব ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত থেকে ঘুমুতে যাই, চিন্তা বা অস্থিরতা থাকে বেশি সেই রাতেই সাধারণত দুঃস্বপ্ন দেখি আর ভিতরের কান্না বাইরে চলে আসে। যেদিন বোবায় ধরে সেদিন আমি নিজেই বুঝতে পারি। কেউ এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ থাকলে সমাধান দিয়ে বাধিত করবেন।. ^^ ^^ ^^ @}
বিষয়: বিবিধ
১২১৬ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
দুআ পড়ে ঘুমানো দরকার, তবে সেটার সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই।
যেটা হয় সেটাকেই বোবায় ধরা বলে! তাই জীবনের গল্পে এটাই শিরোনাম!
@আফরা- আমি এগুলো করি! ধন্যবাদ
মানুষের দুটো প্রধান ধমনী (আর্টারী) গলার দুপাশ দিয়ে মাথায় গিয়েছে, আর দুটো প্রধান ধমনী গিয়েছে দুই পায়ে। ঘুমের মধ্যে যখন শরীরের উপর অংশের ও নীচের অংশের রক্ত চলাচলের সিনক্রোনাইজেশন ব্যহত হয় তখন মানুষকে বোবায় ধরে। চিত হয়ে বা উপুড় হয়ে শুইলে এটা বেশী হয়। বাম বা ডান কাত হয়ে শুবেন। পায়ের নীচে কিছু দিয়ে সামান্য একটু উঁচুতে পা দুটো রাখতে পারেন। আমি এভাবে উপকৃত হয়েছি। আর কাউকে বোবায় ধরলে ভঁয় না পেয়ে তাকে হালকা ভাবে জাগিয় দিতে হবে। উপুড় বা চিত হয়ে থাকলে কাত করে দিতে হবে। ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন