অতি চালাকের গলায় দড়ি! ( জীবনের গল্প-৪)

লিখেছেন লিখেছেন udash kobi ০৫ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১১:২৮:৪৬ রাত

অতি চালাকের গলায় দড়ি!

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যাব ভর্তি পরীক্ষা দিতে। আমি এর আগে কোনোদিন যমুনার ওপার যাই নি । আমার সাথে যাচ্ছেন ফুফাত ভাই রফিক, যিনি এর আগে কয়েকবার উত্তরবঙ্গ ঘুরে এসেছেন। সুতরাং সঙ্গী একজন অভিক্ষ লোক। তিনি অতিচালাক এবং বাচাল প্রকৃতির। কম পয়সায় উত্তরালাকায় যাব, তাই ঢাকা বা চন্দ্রা থেকে  ভাল পরিবহণের টিকিট না কেটে প্রথমে জয়দেবপুর থেকে লোকাল বাসে ৪০ টাকা করে দুজন টাঙ্গাইল শহরে আসি। মহাসড়ক থেকে রাজশাহীগামী বাসে উঠে দেখি সিট তো দূরের কথা ভিতরে প্রবেশই মুশকিল। প্রবেশপথে আরো কয়েকজনের  সাথে দাঁড়িয়েই যেতে হচ্ছে। বাসের সুপারভাইজার এসে ভাড়া চাইতেই রফিক ভাইয়ের আক্কেল গুড়ুম। জনপ্রতি একশো করে দিতে হবে, এর কমে হবে না। আমরা প্রথমে ৫০ করে ও পরে আরো ২০ দিতে চাইলাম। সুপারভাইজার রাজি হল না। ফুফাত ভাই বললেন, এখন ১০০ দিলে তো আমাদের ভাড়া মোট দেড়শ করে পড়ে; তাহলে এভাবে কষ্ট করে আসার কী দরকার ছিল। ১৫০ টাকায় ভাল পরিবহণেই রাজশাহী যাওয়া যায়। আমি বললাম, আপনার জন্যই তো এই অবস্থা। উনি করুণ মুখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।

সুপারভাইজারের সাথে আমার এই বাচাল ভাইয়ের অনেক বাক-বিতন্ডা হয় এবং ফলশ্রুতিতে আমাদের "এলেঙ্গা" নামক স্থানে নামিয়ে দেয়। লজ্জায় আমার মাথা নিচে নেমে আসে। পাশে চেয়ে দেখি উনি ভাবলেশহীন মুডে প্রকৃতি দেখছেন।

পরবর্তীতে সিরাজগঞ্জগামী বাসে উঠে সিরাজগঞ্জ বাসষ্টেন্ডে নামি। এর ফলে আমার প্রথম যমুনা সেতু দেখা হয় খুব কাছ থেকে। যেহেতু ঝুলে ঝুলে যাচ্ছি।  সিরাজগঞ্জ থেকে আরেক বাসে যাই ইশ্বরদী। যদিও সেখানে যাওয়ার দরকার ছিল না। আমার এই সবজান্তা ভাইয়ের অতি চেনা ভাণে সেখান থেকে যাই পাবনার রাজাপুর বাজারে। সেখানে উনার একদূরাত্মীয় থাকেন। আমাদের এই পর্যন্ত ভ্রমণে খরচ হয় জনপ্রতি ১৫০ টাকা। যদিও এখনো আরো ৪০/৫০ টাকার ভ্রমণ বাকি। এখানে আজ রাতে থেকে আগামীকাল বিকেলে রাজশাহী যাব।

একেই বলে অতি চালাকের গলায় দড়ি!

১০০ নম্বরে ১০৭



দ্বিতীয় পিরিয়ডে রীণা ম্যাডামের (আমরা তাকে মেঝাফা=মেঝ+আপা ডাকতাম) বাংলা ক্লাস। ক্লাসে এসেই চেয়ারে বসে তার ছেলে (ফার্স্ট বয়!)কে বললেন, তোর খাতাটা দে দেখি। আজ প্রথম পিরিয়ডে অংক ক্লাসে হেড স্যার দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার খাতা দেন। তাতে মেঝাফার ছেলে ইমন পায় ১১৭ নম্বর; আমি (দ্বিতীয় ) পাই  ৯৯ নম্বর। ইমনের খাতা দেখে তিনি বললেন, খাতা নিয়ে হেডস্যারের কাছে গিয়ে বল কীভাবে ১১৭ পেলি ১০০ নম্বরের মধ্যে?

ইমন খাতা নিয়ে হেডস্যারের কাছে যায়। কিছুক্ষণ ফিরে এসে বলে, স্যার বললেন, ১০ নম্বর ভুলে দিয়েছেন, তিনি ১০ নম্বর কেটে দিয়েছেন। এখন রইল ১০৭ নম্বর। বললেন ১০০ নম্বর অংকের জন্য আর ৭ নম্বর ইমন নামের জন্য! মেঝাফা এই কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে তার ছেলের দিকে তাকিয়ে রইলেন বেশক্ষণ। আমরা তার চেয়েও বেশি আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে থাকলাম ম্যাডামের দিকে। সেইদিন আমরা ক্লাস ফোরের ছোট্টরা কিছুই বুঝি নি। এখন বেশ বুঝতে পারি; হেড স্যার মেঝাফার প্রতি এক হাত নিলেন। লেখাপড়ায় তেমন ভাল না হলেও ইমন যে সব সময় ফার্স্ট হত!!!

বিষয়: বিবিধ

১৫০১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

291571
০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১২:০৫
অনেক পথ বাকি লিখেছেন : ১০০ নম্বরের মধ্যে ১১৭ Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Surprised Surprised Surprised Surprised
291675
০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ১০:১৫
হতভাগা লিখেছেন : পরীক্ষা দিতে যাবার সময় কোন কাহিনীতে জড়ানো উচিত নয় । পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলে বরং কাহিনী ঘটানো , লম্বা চওড়া করা , ইচ্ছামত কাটাকুটি করা , প্লট চেন্জ সব করার সময় থাকে ।

ম্যাডামের ভয়ে হেড স্যারই যদি ম্যাডামের ছেলেকে ১০০ তে ১০৭ নম্বর দেয় তাহলে অন্য টিচারদের হাল কি ?

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File