বিচিত্র ক্যাম্পাসে, রঙিলা কান্ড!
লিখেছেন লিখেছেন udash kobi ০৪ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৬:৫৮:৪৪ সন্ধ্যা
বিচিত্র ক্যাম্পাস! বিচিত্র কান্ড-কারখানা (জীবনের গল্প-০৩)
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। রবীন্দ্র বাণিজ্য ভবনের পূর্বপাশের প্রবেশদ্বার। বিজনেজ অনুষদের জুনিয়রদের সমাবেশ- (পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে) সেমিষ্টারের দাবিতে। মাইক এনে তোড়েজোড়ে চলছে আন্দোলনের মহড়া।
ক্যাম্পাসে সকাল থেকে কানাঘুষা চলছে সিনিয়র ভাইরা ( যারা ইয়ারলী পরীক্ষার পক্ষে, কেননা ইতোমধ্যে তারা এখানে এসে সেশনযটে বিয়ের বয়স পার করে ফেলেছে।) জুনিয়রদের উত্তম-মধ্যম দেবে। এ নিয়ে মোটামুটি টেনশনে ক্যাম্পাস!
শহীদুল্লাহ কলাভবনের ৪র্থ তলায় বসে ক্লাস করছিলাম। হঠাত টুকিটাকির দিক থেকে হৈচৈ শুনতে পাই। সাটার মারার শব্দ, চিত্কার চিল্লা-ফাল্লা।
ঘটনা হল- সমাবেশে বড়দের আগমন হবে এই আশঙকায় আমাদের মহান পুলিশ বাহিনী অতি উত্সাহী হয়ে জুনিয়রদের লাঠিপেটা করে গেইট থেকে তাড়িয়ে দিলে শুরু হয় চরম বিশৃঙ্খলা। শুরু হয় ছাত্র-পুলিশ ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়া। আমরা কলা ভবন থেকে পরম মমতায় (ছাত্রদের প্রতি অন্যায় আক্রমণের প্রতিবাদে) পুলিশদের উপর ইটের কণা, ভাঙ্গা পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকি। বাণিজ্য অনুষদের জুনিয়র-সিনিয়র ছাত্ররা শহীদুল্লাহ কলাভবনে এসে আশ্রয় নিলে লড়াই বাঁধে কলা ভবনের ছাত্রদের সাথে পুলিশের। এক পর্যায়ে এক পুলিশের মাথা ফেটে গেলে পুলিশ ফাঁকা গুলি আর টিয়ার শেল নিক্ষেপ করতে থাকে। মূহুর্তে পরিস্থিতি পাল্টে যায়, জুনিয়র-সিনিয়র ইস্যু ভুলে ঘটনা দাঁড়ায় ছাত্র-পুলিশ লড়াই। পরদিন প্রতিটি জাতীয় দৈনিকের হেডলাইন-" রাবিতে রণক্ষেত্র"ছাত্র,পুলিসসহ ৫০জন আহত। "ছাত্র-পুলিসের লড়াইয়ে নতুন ডিনস ভবন, কলা ভবন, আর নতুন বাস ভাঙ্চুর। ক্যাম্পাস অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা।"
এই আমাদের দেশ! এই আমাদের রঙ্গিলা ক্যাম্পাস!! সেলুকাস!!! ঘটনার পটভুমিকা কী ছিল, কী বিষয়ে, আর কারা ছিল কুশিলব! আর ঘটল কী?? দিনশেষে কারা কুশিলব। সেলুকাস ক্যাম্পাস!!
এই তো আমাদের নিত্য রাজ-দর্শন, এটাই আমাদের পলিটিক্স! আমাদের পরম স্বাধীনতার স্বাদ, মুক্তির উন্মাদনা।
শফিকের ড্রাম বাদ্য (মজার স্মৃতি)
বিভা ছাত্রাবাস;মির্জাপুর, রাজশাহী। ২০০৩। সেপ্টেম্বরের এক রাত। ১০টার মত বাজে। কেউ আছে টিভি রুমে রিমোর্ট হাতে নিয়ে, কেউ পড়ার টেবিলে, কেউ ওয়াকম্যান বা রেডিওতে গান শোনায়। কেউ হয়তো শোয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়।
আমার পাশের রুম থেকে গিটারের টুং টাং শব্দ আসছে। শাকিলের কাজ। কোথা থেকে যেন রেডিওর আওয়াজ আসছে। টিভি রুম থেকে হৈ হুল্লোড় আর গল্পের মত শোনা যাচ্ছে। হঠাৎ যেন মাথায় বাজ পড়ল! কে যেন স্টিলের দরজায় হাতুড়ি পিটাচ্ছে।
সবাই চিৎকার শোরগোলে বাইরে এসে দাঁড়ায়। আমি বাইরে এসে দেখি আমার পাশের রুমের পরের রুমের শফিক (পপুলেশন্স সাইন্স এন্ড হিউমেন রিসোর্সের ছাত্র ) তার রুমের দরজা ধরে ঝাকাচ্ছে। ব্যাপার কী জানতে চাইলে, সে উত্তেজিত স্বরে (কিছুটা বোধগম্যের সীমার বাইরে ) যা বলল, তার সারমর্ম হল-
কারেন্ট চলে যাওয়াতে গরমে এমনিতে অবস্থা কাহিল। তার উপর আগামীকাল তার টিউটোরিয়াল পরীক্ষা। তার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু সবাই যেভাবে গান গাইছে, গিটার বাজাচ্ছে (শুধু একজনের গিটার আছে; এবং সে ভাল বাজায় ), রেডিও শুনছে, হৈ হুল্লোড় করছে, এতে তার পড়ার Disturb হচ্ছে। তাই সেও বাদ্য বাজাচ্ছে। তার ভাষায় সে ড্রাম পিটাচ্ছে। সুতরাং কারো তো আপত্তি থাকার কথা নয়।
সবাই তো অবাক হয়ে শফিকের দিকে তাকিয়ে আছে, কে কী বলবে?
হঠাৎ একজন আযান দিতে লাগল। পাগলা মিযান! সে বলল, আমি গান বাদ্যে বিশ্বাসী নই; তাই আমি আযান দেব।
শফিকের এই আজব কান্ড আমার স্মৃতিতে আজীবন থাকবে। শফিক এখন কোথায় আছে জানি না। ভাল আছে নিশ্চয়ই। ভাল থাকুক এটাই চাই।
বিষয়: বিবিধ
৯৭৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তবে ভাই সেমেষ্টার পদ্ধতির বিপক্ষে আন্দোলন এই দেশে ছাড়া আর কোথাও হওয়ার রেকর্ড আদেী নাই!!!
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সেই সময় প্রচলিত তিন বছর শেষে সব পরিক্ষা নিয়ে অনার্স ডিগ্রির পরিবর্তে। প্রতি বছর পরিক্ষা নেওয়ার সিষ্টেম চালু করেছিল। কিন্তু সেই নিয়ম ও পাল্টাতে বাধ্য হয়েছে ছাত্র(!) আন্দোলন এর জন্য। যারা সেই আন্দোলন এর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তারা আবার এখন বিশিস্ট নেতাও বুদ্ধিজিবি।
আপনাকে ধন্যবাদ এতটা পড়ার জন্য। ভালো থাকুন....
মন্তব্য করতে লগইন করুন