জীবনের গল্প
লিখেছেন লিখেছেন udash kobi ০৩ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৮:৪৩:৪৫ রাত
জীবনের গল্প (২য় পর্ব)
(০৩) অদ্ভুত ঝগড়া
ক্লাস ফোরে পড়ি। স্কুলে যাবার পথে মেলার (এখানে বৈশাখি মেলা বসে) মোড়ে দেখি কাইয়ুম আর লিখনের ভিষণ ঝগড়া। কাইয়ুমের পক্ষে যোগ দিয়েছে ঢাককইল্লা (ঢাকায় বাস করে যে এখন গ্রামে ফিরেছে তাদের আমরা এই বলে ক্ষেপাতাম) কলিম! আমার নীতি হলো সবাই যার পক্ষে আমি তার বিপরীত। লিখনের পক্ষে কেউ না থাকাতে আমি তার পক্ষ নিয়ে কাইয়ুমের বিরুদ্ধে যা খুশি তাই বলতে লাগলাম। কাইয়ুমের পক্ষে জবাব দিচ্ছে কলিম। ঘটনার শুরু ছিল ওদের দুজনের মক্তবে (খুব ভোরে গ্রামে মক্তবে আরবী পড়তে হয়) বসার জায়গা নিয়ে। এখন ঘটনার এই পর্যায়ে আমি আবিষ্কার করলাম ঝগড়া করছি আমি আর কলিম, ঘটনার হোতারা অকুস্থলে নেই। অনেক সহপাঠি আর স্কুলের ছাত্র ছাড়াও অনেক উত্সাহি দর্শক আমাদের মজা করে দেখছে।
তখন সহপাঠি রুমা এসে হাজির!(গোপনে বলছি, অনেক বুদ্ধিমতী আর পরোপকারী, এখন কী অবস্থায় আছে, আদৌ কি জীবিত নাকি মৃত জানি না!)সে এসে আমার কাছে সব শোনে জানালো, সেও ওই মক্তবে পড়ে। তার বড় ভাইদের দিয়ে কাইয়ুমের একটা ব্যবস্থা করবে। আমাকে নিয়ে সে স্কুলের পথে রওয়ানা দেয়। কিংকর্তব্য বিমূঢ় কলিম সেখানেই দাঁড়িয়ে.................স্কুলে এসে দেখি ওই দুই ভবের গোল্লা মাঠে একসাথে বল খেলছে!
[i]পুনশ্চ: লিখন বিদেশে আছে।তার সাথে অনেকদিন কথা বন্ধ! আর কাইয়ুম বিদেশ থেকে এসে সফল ব্যবসায়ী! ওর সাথে যোগাযোগ আছে। কাপাসিয়া বাজারে ফার্নিচারের দোকান। কলিমের খবর জানি না।[/i
(০৪) অঙ্ক স্যারের মার!
ক্লাস ফোর! গণিতের স্যার ওমর! আমাদের সবার প্রিয়। বিশেষ করে আমার। সব সময় আমাকে অবাধ্য আর অঙ্ক কষায় ব্যর্থ ছাত্র-ছাত্রীদের কান মলতে দেন।
সেদিন স্যার অন্যান্যদিনের মত একটা অংক ব্ল্যাকবোর্ডে করতে দিলেন।(তারপর নিজের কাজে ব্যস্ত)। ছাত্র আর ছাত্রীদের বসার জায়গা (বেঞ্চ) ছিল ভিন্ন সারিতে। আমি ক্লাসের সেকেন্ড বয় হলেও ছেলেরা সবাই আমার খাতা দেখেই অংক করত। এই হিসেবে সব ছেলেদের অংক আমার মতো হলো। স্যারের টেবিলে খাতা জমা দেবার পর দেখি আমার আর রুমার খাতার অংক ভিন্নভাবে, আর ফলও ভিন্ন। স্যার আমার খাতা দেখে বাকি সবার খাতা দেখলেন। ফল দাঁড়ালো ছেলেদের সবার খাতায় টিক চিহ্ন পড়ল আর মেয়েদের খাতায় ক্রস। স্যার বেত নিয়ে দাঁড়িয়ে সব মেয়েদের গণবেত দিলেন, আমি রুমার দিকে তাকিয়ে দেখি সেও আমার দিকে.. রক্ত চোখে! ভাষা মনে হলো-আমার অংকই সঠিক-তোমারটা ভুল। আমার মনে ভাবান্তর হলো (ভয়ের) আমি বেঞ্চিতে দাঁড়িয়ে আমার খাতা ভালো করে দেখি- আমার অংকই ভুল। আমি জানি- এখন স্যার ঠান্ডা মাথায় বসে খাতাগুলো দেখবেন।
কিছুক্ষণ পরের ঘটনা! স্যার দপ্তরি দিয়ে নতুন বেত আনিয়ে সব ছেলেদের বেঞ্চে দাঁড় করিয়ে ডানে বামে দুই-দুই করে চারটি বাড়ি দিচ্ছেন, ফলশ্রুতিতে কারো গায়ে অনেকগুলো বেতের আঘাত, আবার কারো গায়ে শুধু একটু বেতের পরশ! পুরো ক্লাসে স্যার পাঁচটি বেত ভেঙ্গে কাহিল হয়ে ক্লাস থেকে চলে গেলেন। যেহেতু আমার থেকে শুরু করলেন তাই আমার অবস্থা হলো-পরের সপ্তাহ স্কুল কামাই!
বিষয়: বিবিধ
১১৭০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন