হালের আলোচিত পার্বত্য বিচ্ছিন্নতাবাদ ও কিছু তথাকথিত ফ্যাক্টের ব্যবচ্ছদ

লিখেছেন লিখেছেন রাহমান বিপ্লব ২৪ আগস্ট, ২০১৫, ১২:৫১:৪১ দুপুর

পার্বত্য বিচ্ছিন্নতাবাদের আলোচনা উঠলেই কেউ কেউ কিছু বিষয়ের জন্য তার পুরো বিবেচনাকেই উপজাতীয়দের পক্ষে নেয়ার চেষ্টা করেন। বিবেচনা গুলো মানসিক ভাবে ব্যাপক প্রভাব বিস্তারক। সেগুলো হল- 'উপজাতীদের সরলতা', 'উপজাতী নারী নির্যাতন', 'আদিবাসী'। অথচ পার্বত্য অঞ্চলের প্রকৃত চিত্র মোটেও, বহু দূরে থেকে বাঙালীর কল্পনার পটে আঁকা সাধারন চিত্রের মতন 'আপন' নয়! বরং পরিপূর্ণ বিপরীত!



ক- পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদ আলোচনায় উপজাতিদের যারা 'খুবই সরল' বলেন তারা, 'এক কথায়'- পাহাড়ের রাজনীতি জানেননা। এমনকি উপজাতীদের মাঝে ঘাটি গাড়া সন্ত্রাসীদের প্রক্রিয়া ও চেতনার ব্যাপারগুলো অয়াকিবহাল নন।

খ- তাছাড়া যারা 'নারী ঘটিত ব্যাপার গুলো' বলছেন তারাও তাদের নিদারুন অজ্ঞতার প্রকাশ ঘটাচ্ছেন মাত্র।

ওপেন চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলা যায়-

পাহাড় কে জানুন, তারপর বলুন 'স্বসস্ত্র উপজাতীয় আর্মি' যে অঞ্চলে ওপেন ঘুরে বেড়ায়। সাম্রাজ্যবাদীদের এজেন্টদের হই-রই এর কথা ভেবে সরকার যেটা দেখেও দেখতে পারেনা। নিয়মিত পারস্পরিক বন্দুক লড়াই করে উপজাতিদের বিভিন্ন গ্রুপ যে পরিস্থিতির সৃষ্টি করে রেখেছে সেটার ভেতরই 'তাদের গড়া মগের মুলুকে' কোন বাঙালি তো দুরের কথা আর্মিও তাদের এলাকায় (উপজাতিরা নিজেদের এলাকায় একত্রে বাস করে। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রায়ই তারা গহীন পার্বত্য এরিয়ায় বাস করে, যেখান থেকে জঙ্গল কাছে। আর জঙ্গল গুলো তাদের সন্ত্রাসীদের ভয়ংকর ক্যান্টনমেন্ট কাম গোডাউন।) ঢুকে অপকর্ম করে আসতে পারবেনা। যাষ্ট যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে!

হ্যাঁ। উপজাতি মেয়েরাও ধর্ষনের শিকার হয়। তাদের উভয় গ্রুপই প্রতিপক্ষের নেতা-কর্মীদের সাজা দেয়ার ক্ষেত্রে খুব ঠান্ডা মাথায়ই এইসব কাজ করে থাকে। তারপর দালাল মিডিয়া দিয়ে প্রচার করা হয়, বাঙ্গালীরা এসব করেছে। দুইটা লাভ- স্থানীয় সহিংসতা জিইয়ে রাখা, সেনাবাহিনী খেদানোর চাপ বৃদ্ধি।

তাছাড়া উপজাতিদের মাঝে পুরুষেরা অলস ও কর্ম বিমুখ হওয়ায় এবং নারীদের ওপর কাজের ভার দেয়ার সামাজিক কানুন থাকায় উপজাতি শিক্ষিত উঠতি তরুনীরা প্রায়ই (শিক্ষাপ্রতীষ্ঠানে বাঙালি ছেলেদের সাথে পরিচিত হবার পর) ঘর বাধার স্বপ্ন দেখে। সেক্ষেত্রে প্রেম ঘটিত কিছু বিষয় হয়। এবং অন্যদিকে ব্যাপক ভাবে যেটা হয়, সেটা হল- 'সম্মানজনক প্রতিশোধ' বা নিজেদের সমাজের মেয়েকে ধর্ষণ করে সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপনের নিষ্ঠুর চর্চা। যাতে তাদের মেয়েরা আর বাঙালি মুখী না হয়। চরম জাতীয়তাবাদে আক্রান্ত উপজাতিরা তাদের আভ্যন্তরীন ব্যাপারে নিজেদের বিচার ব্যবস্থা ও আইনে চলে। ফলে তাদের ব্যবস্থার আলোকে যেটা সঠিক সেটা নিয়ে তারা রাষ্ট্রীয় আদালতে আসার সাহস করেনা।

(এমন সব সম্মানজনক প্রতিশোধের ঘটনার প্রমাণ হাজার হাজার রয়ে গেছে।)

কিছুদিন আগে প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক সৈকত ভদ্রের স্ত্রী রেন্টিনা চাকমা কে যাত্রাবাড়ী থেকে অপহরন করে পুনরায় সামাজিক নিলামে তুলে আরেকজন চাকমা যুবকের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়েছে! অথচ আইনগত ও রাষ্ট্রীয় ভাবে এর কোন বিহিত নেই! যা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে সেসময় মুক্তমনাদের মাঝে। মুক্তমনা নামের এক শ্রেনীর দালালদের অবস্থান সেসময় স্পষ্ট হয়ে যায়। ফলে বহু মুক্তমনাই এই শ্রেনীর প্রতি ঘৃণা পোষণ করতে শুরু করেন।

পার্বত্য অঞ্চলের সাধারন উপজাতিরা এই বহুমূখী সমস্যায় জর্জরিত সন্দেহ নেই। তারা বাঙ্গালীদেরকে একেবারে উগ্র ও চরম জাতীয়তাবাদে ভিন্নজাতী বিবেচনায় এই রাষ্ট্রকে বিশ্বাস করেনা। করার 'সাহস' পায়না; নিষ্ঠুর ও অন্ধ জাতীয়তাবাদের চর্চা তাদের ওপর সামাজিক ভাবে চাপিয়ে দেয়ার কারনে। পরস্পর দ্বন্দময় নিজেদের সন্ত্রাসীদের; যাদের তারা নেতা মানে ; সিন্ডিকেট জাতীতাবাদের মাঝে থেকে তাদেরকে উপেক্ষা করা সাধারনের পক্ষে সম্ভব নয়।

তারা একটা মনোপলির মাঝে বাস করে। ঐ অঞ্চলে বাংলাদেশের সাধারন আইন কার্যকর নেই। উপরন্তু 'আদিবাসী(!) অধিকার' নামে ষড়যন্ত্রমূলক আন্দলনের ভয়ে, সরকারও নিরোপেক্ষতা বজায় রাখার দায়ে দায়ী হওয়ায়, সেটা অনেকটাই বার্মার মত বর্বর মানসিকতার সমাজে পরিনত হয়ে গেছে বার্মিজ বংশোদ্ভূতদেরই দ্বারা।

গ- যারা 'আদিবাসী' শব্দের ব্যবহার করেছেন তারা সাধারন ভাবে ইতিহাসগত আত্মপরিচয়হীন বাঙালি।

বার্মার সীমান্তের নাফ নদীর পর থেকে এই সমগ্র অঞ্চলে ঐতিহাসিক ভাবে বাঙ্গালীদের আদিনিবাসের প্রকট প্রমাণ থাকার পরেও, উপরন্তু উপজাতিদের আগমন ধারা স্পষ্টভাবে তৎকালীন ব্রিটিশদের লিখে যাওয়া ডকুমেন্ট হতে জানার পরেও যারা তাদের 'আদিবাসী' বলে তারা হয় আত্মপরিচয় হীন নয়তো দেশদ্রোহী দালাল। কারন তারা জাতীসংঘের ঘোষণাপত্রও জানেন!

'আদিবাসী' শব্দের মজেজা নিম্নরুপ-

জাতীসংঘের 'আদিবাসী' বিষয়ক ধারা অনুযায়ী, যেকোন দেশের আদিবাসীরা তাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ব্যাপার গুলোতে পরিপূর্ণ 'স্বাধীনতা' ভোগ করার অধিকারী।

আদিবাসীদের অধিকারের উপর জাতিসঙ্ঘের ঘোষণাপত্র : ধারা ৩ -- আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার অংশে বলা হয়েছে-

"United Nations Declaration on the Rights of Indigenous Peoples: Article 3 -- Right to Self-determination

Article 3 -- Right to Self-determination

Indigenous peoples have the right of self determination. By virtue of that right they freely determine their political status and freely pursue their economic, social and cultural development."

ধারা ৩ -- আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার

আদিবাসীদের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার আছে। এই অধিকারের বলে তারা স্বাধীনভাবে তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে (অর্থাৎ তারা কি কোন দেশের মধ্যে থাকবে, না সেই দেশ থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন দেশ গঠন করবে -- সেটা তাদের রাজনৈতিক ইচ্ছার উপর নির্ভর করবে, যেমন উপজাতিরা কি বাংলাদেশের মধ্যে থাকবে, না বাংলাদেশ থেকে আলাদা হয়ে পার্বত্য এলাকাকে নিয়ে কিংবা পরবর্তীতে সমগ্র বাংলাদেশের সমতলীয় উপজাতি এলাকা যুক্ত করে স্বাধীন জুম্মল্যান্ড গঠন করবে -- তা একান্তই উপজাতিদের রাজনৈতিক ইচ্ছার উপর নির্ভর করবে) এবং স্বাধীনভাবে তাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন অনুসরণ করবে।

-এই ধারার আলোকেই বিনা রক্তপাতে পশ্চিমা দেশগুলো ও জাতীসংঘের প্রত্যক্ষ সহায়তায় সম্প্রতী সময়ে স্বাধীনতা লাভ করেছে পূর্বতীমুর। যা অখন্ড ইন্দোনেশিয়ার অঞ্চল ছিলো। 'আদিবাসী' শব্দ চর্চার বিষয়ে বাংলাদেশের মানুষের অজ্ঞতাকে পুঁজি করেই এক শ্রেনীর মানুষ পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের দক্ষীণ এশীয় এজেন্ট হিসেবে এদেশে সক্রিয় বলে ব্যাপক সন্দেহ রয়েছে।

আশা করি, বিতর্কে যুক্ত হবার আগেই একটু খোজ নিয়ে জানবেন। তাহলে সহজেই দালাল শ্রেণীটিকে চিহ্নিত করে বাঙালি হিসেবে আত্মমর্যাদা ও অধিকার সংরক্ষণে সফল হবেন।

বিষয়: বিবিধ

১৬৪৪ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

337814
২৪ আগস্ট ২০১৫ দুপুর ০৩:৫৭
আবু জান্নাত লিখেছেন : পার্বত্য অঞ্চলে অনেকবার যাওয়া হয়েছে, রামগড়, গুইমারা, মাটিরাঙ্গা, খাগড়াছড়ি, মহালছড়ি, মানিকছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান জেলাশহর সহ বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরেছি।

যতটুকু বুঝেছি, সমতল ভূমি তথা চট্টগ্রাম জেলা সংলগ্ন এলাকায় পাহাড়িরা কিছুটা অসহায়।

বাঙ্গালীদের কাজ করে খায়, ধান লাগায়, কাঠ কেটে বাঙ্গালীদের নিকট বিক্রয় করে, ফলফলাদি বিক্রয় করে এরা জিবন ধারন করে।

অনেক পাহাড়ী মেয়েরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে, হাটহাজারী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে দুই তৃতীয়াংশই পাহাড়ি ছেলে/মেয়ে অধ্যায়নরত।

উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে কেউ কেউ মুসলিম হয়ে যাচ্ছে, আবার কেউ শান্তি বাহিনীর উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে তাদের বিদ্যা বুদ্ধি কাজে লাগাচ্ছে।

যারা সীমান্ত থেকে অনেক দূরে গহীন পাহাড়ে ও জঙ্গলে বসবাস করে, তারা মোটেও অসহায় নয়, ধাপিয়ে বেড়াচ্ছে পার্বত্য অঞ্চলজুড়ে, বাঙ্গালীদের উপর হরহামেশা জুলুম ও নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে।

০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০২:৩৪
281507
রাহমান বিপ্লব লিখেছেন : ৭৪ ভাগ চাকমা জনগোষ্ঠী শিক্ষিত, ১২ ভাগ পার্বত্য বাঙালী শিক্ষিত। অন্যদিকে বাংলাদেশের টোটাল বাঙালীদের শিক্ষার হার ৪২ ভাগ। যদিও অন্যান্য উপজাতি গোষ্ঠীর অনেকেই শিক্ষায় পিছিয়ে আছে। মূলত সংখ্যাগুরু উপজাতি চাকমা জনগোষ্ঠীই এসব বিচ্ছিন্নতার উচ্চাভীলাষী অপকর্ম করে। সুযোগ গুলোও তারাই হাতিয়ে নেয়। বাকী জনগোষ্ঠীগুলোও চাকমাদের মেনে চলে।
337826
২৪ আগস্ট ২০১৫ রাত ০৮:২৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
উপজাতিয়দের মধ্যে চাকমা রা ছাড়া অন্যগোস্ঠিগুলির অবস্থা কিন্তু ভাল নয়।
০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০২:৩৫
281509
রাহমান বিপ্লব লিখেছেন : হ্যা ঠিক বলেছেন। তবে তারা চাকমাদের দ্বারা বার্মিজ জাতীয়তাবাদী ভাবধারায় বাংলাদেশ বিরোধী কাজে পরিচালিত হয়। আপনাকে ধন্যবাদ!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File