আইএস নয়, খেলাফত প্রতীষ্ঠার মডেল আল্লাহর রাসূল সাঃ
লিখেছেন লিখেছেন রাহমান বিপ্লব ০১ মার্চ, ২০১৫, ০৬:০৩:০৬ সন্ধ্যা
মিশরে মূর্তি ভেঙ্গে দিয়েছে আইএস! খুব খুশি লাগছে? নিজের এই আনন্দকে ইসলাম সম্মত মেনে নিয়ে, এর বাইরে অবস্থানকারীকে, কুফুরির দ্বারা আচ্ছন্ন মনোভাবাপন্ন বলে মনে হচ্ছে??
মিশর কি ইসলামী রাষ্ট্র?
প্রত্যেক রাষ্ট্রের নিজস্ব কিছু নীতিমালা থাকে। রাষ্ট্রের একটা কাঠামো আছে। রাসূল সাঃ সেই কাঠামো তৈরি করেছেন আগে। তিনি মক্কায় তার সমর্থকদের নিয়ে একটা এলাকা 'বিচ্ছিন্ন' না করে হিজরত করলেন কেন? রাসূল সাঃ কি মদিনায় গিয়ে মূর্তি ভেঙ্গেছেন? অথচ মদীনায় তিনি নেতা ছিলেন!
ক-
মূলত ইসলামী রাষ্ট্র ছিলো মক্কা জয়ের পর। আর ইসলামী রাষ্ট্রের নীতি অনুসারে- 'মূর্তি ভাঙা হয়েছিলো এমন এলাকায় (গোটা মক্কা) যেখানে সবাই স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করেছেন'। বরং কাফেরদের বাঁধার কারনে এত দিন মুসলমান হতে পারেননি। অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতা মূর্তির বিপক্ষে এমন একটি রাষ্ট্রে 'মূর্তিকে' প্রধান্য দিয়ে বিবেচনা করা যায়না।
রাসূল সাঃ নিজেই সমসাময়িক কুটনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, রাজনীতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় কার্যকরী ব্যাক্তিত্ব ছিলেন।
খ-
আল্লাহ তো যেকোন সময় সব কুফুরি ভেঙ্গে দিয়ে ইসলাম কায়েম করতে পারেন! করেন না কেন? কারন আল্লাহর নির্ধারিত নীতি আছে। সেই নীতি হল সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষের স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পন করা।
তাহলে সেই নীতির আলোকে, আইএস কী আল্লাহর খেলাফ তথা প্রতিনিধিত্বের দ্বায়িত্ব পালন করছে? না আল্লাহর নীতি বিরুদ্ধ জোর জবরদোস্তি করে মানুষকে বাধ্য করছে?
গ-
আইএসের যে তাকফীরি স্বভাব! তা মদীনার যুগে মূর্তি না ভাঙ্গার 'অপরাধে' রাসূল সাঃ কেও বুঝি কুফুরির তকমা লাগাতে ভুলবেনা! কারন এরা চোখ দুইটা বন্ধ করে গায়ের সব শক্তি নিংড়ে একাধারে কাফের আখ্যা দিতে থাকে। ফলে বহু ইসলামী নীতিকেই, যা স্বয়ং রাসূল সাঃ এর সুন্নতের প্রকৃত রূপ; যেমন- উদারতা, হেকমত অবলম্বন, মানবাধিকার, অমুসলিমের অধিকার, চলমান মানবিকতা বোধ চর্চা... এসব মৌলিক সুন্নতকেই এরা কাফেরের কাজ বলে ঝেড়ে দেয়!!
ঘ-
আপনি ইসলাম কায়েম করতে চাইলে আপনার আশপাশ থেকে চেষ্টা শুরু করুন। কাল থেকে জামায়াতে ইসলামীর মৌলিকগুলো বই পড়ে, তার আহ্বান গুলো মানুষকে আলাপের ছলে বোঝান। দেখবেন কত প্রশান্তি লাভ করছেন। এসব প্রশান্তি ও দাওয়াতী আকুলতাই ইসলামের মূল শিক্ষা।
মানুষ মূল কাজের বাইরে থাকলেই ভুল বিষয় তার সে খালি স্থান দখলের চেষ্টা করে। কারন ১ টা মাত্র জান্নাতি পথের বিপরিতে মানুষের 'মানসিকতা উপযোগী' অসংখ্য জাহান্নামের পথ তৈরি হয়ে গেছে। সেগুলো মদ-জুয়ার মত স্পষ্ট কুফুরি থেকে শুরু করে ইসলামী লেবাসে কিতালের নামে 'খুন করা' পর্যন্ত সীমাছাড়া হয়ে পড়েছে।
ঙ-
এক ভাই জানালেন- "পরশু মিশরে আইএস কিছু মুর্তি আর কি কি জানি নষ্ট করে দিয়েছে"
যদি ভাবেন, আল্লাহর নীতি তথা মানবিকতা ও মানুষের ইচ্ছার স্বাধীনতাকে উর্ধ্বে রেখেই রাসূল সাঃ ইসলাম প্রতীষ্ঠা করেছিলেন, তাহলে আপনার আজকের এই ইসলামী জজবাকে সঠিক পথে প্রবাহিত করুন।
বাংলাদেশে ইসলাম মানার মত লোকের অভাব নেই। 'মানবতার ধর্ম' প্রতীষ্ঠা দেখতে চায় প্রায় সকল মানুষ। তারা মানসিক প্রশান্তির তালাশ করে ফিরছে। আর আপনিও তাদেরই দলে! মানুষ চাইলে সবই সম্ভব। এলাকায় জামায়াতের একটা সংগঠন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিন। আল্লাহ আপনার সাহায্যকারী হয়ে যাবেন।
নিজ থেকে সিলেবাস সংগ্রহ করুন। সে আলোকে বই পড়ুন। বই পড়ান। হাঁটতে-ফিরতে, উঠতে-বসতে, আলাপ করুন ওই শিক্ষাগুলো নিয়ে। মানুষকে ইসলামের 'স্বাদ' দিয়ে আহ্বান করুন। ইনশাল্লাহ আপনার এ আবেগ মানুষের মাঝে ইসলাম নিয়ে আগ্রহ সৃষ্টিতে অবদান রাখবে। সৃষ্টি করবে ইসলামী ভাতৃত্ববোধ! আর এভাবেই গড়ে উঠবে একটি সংগঠন থেকে একটি ইসলামী সামাজিক কাঠামো। এমন কাঠামোই বৃহৎ অংগনে গিয়ে তৈরি করবে ইসলামী সমাজ! আর সমাজ থেকেই রাষ্ট্র... এটাই ইসলামী রাষ্ট্র গঠনের পদ্ধতি। মানবিক পদ্ধতি। আল্লাহর পছন্দনীয় পদ্ধতি।
বিষয়: বিবিধ
১২২৩ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কে বলেছে মিশর ইসলামী রাষ্ট্র?
অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতা মূর্তির বিপক্ষে এমন একটি রাষ্ট্রে 'মূর্তিকে' প্রধান্য দিয়ে বিবেচনা করা যায়না।
এ কথা মানে কি এটা? আল্লাহর নবীর অধিকৃত ভূমিটুকুতে কোন বর্ডার ছিল না বা রাষ্ট্র ছিল না। এখানে সংখ্যাগরিষ্টের প্রশ্নই আসে না। আল্লাহর নবী যখন মক্কা বিজয় করলেন তখন তিনি মূর্তি ভাংলেন। এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা আসলো কোথাথেকে? মদীনা থেকে সাহাবী ্এসেছিলেন দশ হাজার। মক্কায় কি শুধুমাত্র দশ হাজারই মুরশির ছিল? আর মক্কা দখল করার সাথে সাথে কি তারা মুসলিম হয়ে গিয়েছিল? না কখনোই মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ট হয়নি। নবী সাঃ মূতি ভাঙার জন্য সংখ্যগরিষ্ঠতাকে প্রোয়জন মনে করেননি। আর এখনো হয়ত বা যারা সত্যিকার ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায় তারা সংখ্যাগরিষ্ট হ্ওয়ার প্রয়োজন মনে করে না, কারন আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বাহিনী জয়ী বিশাল বিশাল বাহিনীর বিরুদ্ধে জয়ী হয়েছেন, আল্লাহর হুকুমে। ধন্যবাদ।
আর সেজন্যই মদীনায় রাসূল সাঃ মূর্তি ভাঙ্গেননি। আর অবশ্যই মানুষের মতের বিরুদ্ধে ইসলাম কিছু চাপিয়ে দেয়না।
দাঁড়ি রাখার ব্যাপারেও ইসলাম চাপিয়ে দেয়নি। কারন সেটা সুন্নত। ইসলাম যা চাপিয়ে দেয় তা তাকে ফরজ করা হয়েছে।
সেই ফরজ চাপাবার আগে আপনাকে সম্মতি দিতে হবে যে আপনি ইসলাম কবুল করেছেন।
নবী সা: আরো বলেছেন, তোমরা দাড়ি ছেড়ে দাও গোফ ছোট রাখ।
কথাগুলো কাকে বলেছেন? নিশ্চয় মুমিনগণকে। আপনি এমন কোন সাহাবী পাবেন না যারা দাড়ি রাখতে গড়িমসি করেছেন অথবা সুন্নত বলে এড়িয়ে চলেছেন। দাড়ি রাখা এমন একটা সুন্নত যার কোন ওজর নাই। অথচ নামাজসহ অন্যান্য ইবাদতের ক্ষেত্রে ওজর আছে। যেমন বেহুশ হয়ে পড়লে নামাজ কাযা করা যাবে, অসুস্থ হলে রোজা কাজা করা যাবে,ইত্যাদি, কিন্তু দাড়ি না রাখার ব্যাপারে কোন ওজর নেই।
আর একটা কথা বলেছেন, ফরজ চাপাবার আগে ইসলাম কবুল করতে হবে।
এটা তো একটা ছোট বাচ্চাও জানে ভাই। ইসলামী হুকুমত কাফেরদের জন্য নয়। অমুসলিমদেরকে মুসলিমদের ইবাদত করতে বাধ্য যাবে না, তবে ইসলামী খেলাফতের অধীনে যেসব অমুসলিম থাকবে তারা ইসলামী রাষ্ট্রের নিয়ম মেনেই জিজিয়া কর দিয়ে শান্তিতে বাস করবে। ইসলামী খেলাফতের অধীনে একজন মুসলিম যে নিরাপত্তা ভোগ করবে, ঠিক অমুসলিমরাও তাই ভোগ করবে। ধন্যবাদ। আমার ব্লগে আমন্ত্রন রইল।
আমাদের আলোচনায় দাড়ি একটা উদাহরন ছিলো। বোঝার ইচ্ছা না থাকলে দয়া করে বাদ দেন। ইসলামী খেলাফতের বিধান ঐ বিধর্মীদের নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার নিয়ে পড়েন প্লিজ। বিধর্মীদের নিজ নিজ ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে আপনি মূর্তি ভেঙ্গে দিয়ে সেই অধিকার দেয়ার দাবি করছেন!
"ফরজ চাপাবার আগে ইসলাম কবুল করতে হবে।
এটা তো একটা ছোট বাচ্চাও জানে ভাই। ইসলামী হুকুমত কাফেরদের জন্য নয়।"
সালাম।
মন্তব্য করতে লগইন করুন