মান্না নন, ধরা পড়েছে সরকার!
লিখেছেন লিখেছেন রাহমান বিপ্লব ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ১২:১১:১৫ দুপুর
মাহমুদুর রহমান মান্না একজন ডাকসাইটে ভিপি ছিলেন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের! আগামাথা ডাকসাইটে ছাত্রনেতা এবং পরবর্তীতে বাম সংগঠক হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রিয় নেতা ছিলেন। ১/১১র পর সংস্কারপন্থী হয়ে ছিটকে পড়েন রাজনীতি থেকে। এরপর তিনি গড়ে তুলেন নিজস্ব রাজনৈতিক দল। টকশো সহ বিভিন্ন সভা সমাবেশে সরকারের বিরুদ্ধেই অবস্থান নিয়েছেন, ফলে দীর্ঘদিন থেকেই সরকারের বিরাগভাজন ছিলেন তিনি। তার পেছনে যে ঘুঘু লেগেছিলো তা ই প্রমাণ করে সরকারের কতটা রোষানলে ছিলেন তিনি। ফাঁস হওয়া দুইটি ডকুমেন্টের একটিতে তাকে বলতে শোনা যায় "মোবাইলে কথা বলতে আমি ভয় পাই"!
এই 'ভয়' কথাটা কতটা স্বাভাবিক ভাবে তিনি বলে ফেললেন তা বুঝতে আমাকে কয়েকবার রিপিট করে শুনতে হয়েছে। ভাবছিলাম! এই মান্না, সেই মান্না! কত বদলে গেলেন!
বাংলাদেশের অপরাজনীতি এতদিন অনেকটা স্টাবল ছিলো একটা নির্দিষ্ট ছকে। কিন্তু এখন তা এমন একটি বৃত্তের দিকে এগিয়ে যেতে চাইছে, যেন বিরোধী দলের পুরাতন আন্দোলন আর হরতাল-অবরোধেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারছেনা।
স্বাভাবিক ভাবে হরতাল অবরোধে সরকারী অপরাজনীতিতে নাকাল সাধারন মানুষ হয়ে পড়ে আরও নাকাল। যদিও দীর্ঘদিনের ধারাবাহিকতার একটা পর্যায়ে এসেই হরতাল অবরোধ হয়, তবুও তা সয়ে নেয়ার মত প্রস্তুতি কোনদিন সম্পন্ন করে উঠতে পারেনি এদেশের সাধারন মানুষেরা। যারা নিত্য বাড়ন্ত বাজারদর পরিশোধে বেতনের হিসাব মেলাতে অক্ষম, তারা অতিরিক্ত অর্থ সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন না- রাজনীতিবিদদের রেষারেষি সময়কে পার করবার উদ্দেশ্যে। ফলে আরেকটি রাজনীতি গড়ে ওঠে এই 'অপারগতাকে' নিয়েও! একদল ক্লান্ত জনতার মুখোচ্ছবিকে সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে ব্যাবহার করে, তো অন্যদল ব্যবহার করে বিরোধীদের আন্দোলনের প্রতিক্রিয়া হিসেবে!
সেদিক থেকে কিন্তু খেলাটা নতুন না হলেও মান্নাদের এবারকার পরিস্থিতি সম্পূর্ণই নতুন।
মান্না এরেষ্ট হয়েছেন নাশকতার ছক আটার অভিযোগে। এরেষ্ট হয়েছেন একটি 'গণতান্ত্রিক' দেশে সেনা বাহিনীর মত স্পর্ষকাতর বিষয়ে নাড়াচাড়া করার অপরাধে! আটক হয়েছেন স্বাভাবিক রাজনীতি না করে অস্বাভাবিক উপায়ে ধাবিত হবার অপরাধে! মান্না আটক হয়েছেন বুদ্ধিজীবি ট্যাগ লাগিয়ে রাজনীতি করতে চাওয়ার অপরাধে?
একটি বিষয় বিশ্লেষণের জন্য, আমরা কি গ্লাসের ভরা অংশটি কিংবা খালি অংশটিকেই বিবেচনা করব? নাকি উভয় অংশকেই? সরকার সমর্থিত স্পষ্ট পক্ষপাতিত্বের মিডিয়া আলোচনার বিপরীতে স্পষ্ট সরকার বিরোধীতার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত মিডিয়াগুলো বন্ধ। গ্লাসের সার্বিক অবস্থা জানার ক্ষেত্রে মিডিয়া কি করে ব্যালান্স করবে?
ক- মান্নারা যখন সুশিলতার ট্যাগে একটি মিছিলের জন্য খোকার মত পালিয়ে থাকা রাজনীতিকের দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত হন, তখন তা অপরাধ হয়। কারন? মান্নার আদর্শ আছে অথচ কর্মী নেই!
কিন্তু আগের গল্পটার হিসাব কেউ নিলেন না কেন? খোকার কর্মীও আছে আদর্শও আছে! খোকা পালিয়ে কেন? সেই আদর্শ গায়ে মেখে তার কর্মীরা রাস্তায় নামতে পারেনা কিন্তু মান্নার আদর্শ গায়ে চড়িয়ে 'সেই কর্মীরাই রাস্তায় নামতে পারেন' এমন একটি পরিস্থিতি কেন! আমরা কি বুঝিনা, বড় ধরনের পলিটিকাল সমস্যাটি খোদ ওপর থেকে বুনে রাখা হয়েছে?
খ- মান্নারা যখন আর্মি নিয়ে নাড়াচাড়া করেন, তখন কি একটিবারও তাকে অপরাজনীতির জন্য অপরাধী করার আগে ভাবা হয়, সেনাবাহিনি নিয়ে নাড়াচাড়া করার আগে তার স্বাভাবিক রাজনৈতিক চাওয়াকে দমন করে দেয়া হয়েছে? অপজিটে, একবারও কি ভাবা হয়, মান্নার মত মানুষ কেন এমনটা করতে গেলেন? ভালো লাগা থেকে না বাধ্যতা...?
গ- মান্নারা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের হল দখলের কথা বলেন তখন আমরা ভাবি, হল দখল মানেই বোমা আর অস্ত্রবাজি! আমরা কি ভাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের হল দখল করতে হবে কেন? কিংবা, হল দখল তো ছাত্ররাই করবে! সেই ছাত্ররা হলে নেই কেন??
ঘ- মান্নারা যখন বলেন সরকার ক্ষেপে গিয়ে ছাত্রদের লাশ ফেলে দিলে সরকার আরও বেকায়দায় পড়ে যাবে, আন্দোলন জমবে। তখন আমরা একটিবারও একে লাশের রাজনীতি বলার আগে ভাবতে যাইনা, নিত্য কথিত ক্রসফায়ার কাহিনীর আড়ালে নিহত হওয়া কর্মীগুলোর মৃত চোখ দিয়ে সরকার বিরোধিদলকে ভয় দেখিয়ে লাশের রাজনীতি করছে কিনা!
এবার একটি শেষ কথা বলে লেখাটির হঠাৎই ইতি টানব। কারন এসব আলোচনাগুলো শুরু হওয়া দরকার। এখানেই শেষ করাটা উচিত হবেনা।
২১ শে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে সাবেক বিরোধীদলীয় নেত্রী যখন শহীদ মিনারে যেতে না পেরে অফিসবন্দি থাকেন তখন নিশ্চই প্রতিপক্ষ এ থেকেই রাজনৈতিক শিষ্টাচারের দীক্ষা গ্রহণ করে।
আজ গোটা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেদিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তাতে সুস্পষ্ট ভাবেই প্রতিপক্ষকে 'আগুন' বেছে নিতে বলা হচ্ছে। বাধ্য করা হচ্ছে। আর আগুন নেয়ার পর পর "শুট এন্ড আউটের" যে অপশন সরকারের হাতে এসে যাবে তা নিশ্চিত ভাবেই গণত্রন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করবে।
এক্ষেত্রে শুধু বলব- দয়া করে দুঃখি মানুষকে এমন কোন পরিস্থিতির মাঝে নিক্ষেপ করবেন না, যে পরিস্থিতিতে আপনাদের পরস্পর বিরোধী গোলাগুলিতে তারা ক্রসফায়ারের শিকার হয়ে জীবন হারান!
মূলত মাহমুদুর রহমান মান্নার "ধরা খাওয়ার" দ্বারা সরকারই "ধরা খেয়েছে"। বিপরীত চিন্তাটাও মাথায় রেখে আমাদের সকলের এগোনো উচিত।
সেই চিরোন্তন সত্য নিয়ে ভাবা উচিত- "সবাই বলে বয়স বাড়ে, আমি বলি কমে রে.... "
বিষয়: রাজনীতি
১১১৫ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কিন্তু আজকের প্রেক্ষাপটে আমার মনে হয় - একথাটি আমাদের অবশ্যই শিকার করা উচিত যে - আমাদের দেশের পলিটিক্যাল নেতৃবৃন্দ গত ৬ বছর জুড়ে হাজারটা ঘটনা, হাজারটা ফ্যাক্টস থাকা স্বত্তেও যেন বুঝতেই পারছেনা কিংবা বুঝতেই চাইছেনা যে - এ দেশে গণতন্ত্র নেই, নেই কোন গণতান্ত্রিক আইন কানুন। এ দেশ বাংলাদেশী দ্বারা শাসিত হচ্ছে না - বরং প্রক্সি দিয়ে শাসিত হচ্ছে। আর যে সব দেশ সমূহের প্রক্সি সমষ্টি দেশ চালাচ্ছে - তারা তাদের লক্ষ্যের দিকে ধাবিত হবার জন্য অপোজিশান এর মধ্যেও তাদের এজেন্ট বসিয়ে রেখেছে - সো আমাদেরকে সামনে দিয়ে গণতন্ত্রের, মানবাধিকারের লজেন্স গিলিয়ে - আর্টিফিসিয়াল ক্রাইসিস অবস্থা বজায় রেখে - দেশকে চুড়ান্ত ক্রীতদাস বানিয়ে ফেলেছে।
আজকে এ দেশের মানুষ লিটারেলী ১০/১৫ হাজার টাকায় শুধু স্লেইভারীতে জড়াচ্ছে না - তারা সেক্স স্লেইভ হয়ে মিডলইস্টে যেতেও লাইনে দাঁড়াচ্ছে।
এ অবস্থা হতে বের হবার জন্য দরকার - সরকারকে আইডেন্টিফাই করা - মূলতঃ কাদের জন্য সে কাজ করছে, সরকারকে ব্রান্ডিং করা, সরকারের কার্যক্রমকে উপযুক্ত বিশেষ্য ও বিশেষন দেওয়া। আর সে সাথে প্রক্সি সরকার যে ভাষায় ও যে আইনে খেলতে চায় - সে আইনে খেলা।
আপনি জংগলের শাসন ছাপিয়ে দেওয়া একটা সরকারকে সদপোদেশ, সাবধান ও শান্তিপূর্ন কোন কর্মসূচী দিয়ে কি বোঝাবেন আর কি ই বা করবেন। বরং জংগল মেকানিজম দিয়ে অপোজ করলে - ন্যায়ের পক্ষে আপনি হয়রানী হতে পারেন, জীবন যেতে পারে - কিন্তু হারার সম্ভাবনা থাকবে না - এখন যে ভাবে এ দেশের বিরোধীরা হেরে যাচ্ছে। বিকল্প ওয়াক ওভার দেওয়া। লেট দ্যাম ডু হোয়াট দ্যে ক্যান ডু।
কিন্তু হকিস্টিক, বোমা, চাপাতি আর রিভলবার হাতে মাঠে নামা কোন লোকাল ফুটবল দলের বিরুদ্ধে ফিফার নিয়ম মেনে বিশ্বকাপ চ্যেম্পিয়ান কোন দল কোন দিন জিততে পারবে না। এটা আমাদের মানুষ ও নেতাদের বোঝা উচিত এবং বারিধারার মানুষদের রব না মানা উচিত এবং তাদের দ্বারা প্রতারিত না হওয়া উচিত।
একটি গণতান্ত্রিক দেশের জন্য সরকার ও বিরোধী পক্ষের স্বাভাবিক আচরন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে আমরা বিরোধী দলকে যেমন হারাতে চাইনা। ঠিক তেমনই সরকারী দলের আত্মহত্যার পথকে আরও শানিত করতে চাইনা।
দেশে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ এলে তা সাধারন মানুষের ক্ষতির কারন হয়। সরকার বা বিরোধীদলের নেতাদের জন্য নয়। কারন তারা তখন বিদেশী আশ্রয় লাভ করেন।
তাই অস্ত্রের ভাষার বদলে অস্ত্র ব্যবহার সুবিবেচনা প্রসুত হতে পারেনা। আমার দলের ৫ জন মারা গেছে বলে অন্য দলের ৩ জন মেরে দিয়ে একটা গেইমের পথ চালু করা আমার জন্য কল্যানকর হবেনা। যে গেইম চালু করতে চাইছে খোদ আত্মহত্যায় উদ্যোত সরকার। সেই গেইমে আজকের ৫ জন মারা যাওয়ার সংবাদটি আমার দলের জন্য নিত্য ৫০০ জন মারা যাওয়ার সংবাদ এনে দেবে।
আর তারপর আসবে বিদেশী হস্তক্ষেপের মত পরাধীনতা.।
কিন্তু আজকের পলিটিক্যাল পরিবেশ এ - (তত্ত্ববধায়ক সরকার বাতিল, সাধারন কোর্ট হতে সুপ্রিম কোর্ট পয্যন্ত সবই আজ্ঞাবহ, পুলিশ ও প্রশাসন শেখ হাসিনার ক্রীতদাস এ পরিনত, দেশের মিডিয়া পুরোটাই সরকারের মুখপত্রে পরিনত হয়ে নিউজ ও ভিউজ ম্যানুফেকচার করে, ভারত, রাশিয়া ও পশ্চিমা সরকারের কাছে দেশের সম্পদ, ভূমি, ইন্ফ্রাস্ট্রাকচার ও নিরাপত্তা পুরোটাই বিক্রি করে এক্সিট রুট সেট করে রেখেছে, আইনকে পলিটিক্যাল কিলিং, পলিটিক্যাল সাপরেশান ও পলিটিক্যাল প্রতিশোধ এর নিমিত্তে ব্যবহার করছে, পাবলিকলী মানুষকে ক্রিমিনাল উপাধী দিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাদের নির্মূল করছে দিনে দুপুরে পাবলীকলী। অন্যদিকে সমাজ ও পরিবারের জন্য ইভিল তথা সেক্স, পতিতাবৃত্তি, প্রতারনা, নেশাদ্রব্যের প্রসার, এক্সট্রিমিজম, প্রতিশোধপরায়নতা, ধর্ম দ্রোহীতা, দেশের মানুষকে বিবেদের দিকে ঠেলে দেওয়া ইত্যাদি) - অমন সিচ্যুয়েশান এ পলিটিক্যাল এ্যানালিস্ট হিসাবে যদি সরকারকে দেশের ও দেশের মানুষের কল্যানকামী শক্তি মনে করে - কন্সট্রাক্টিভ এ্যাংগেইজমেন্ট কে প্রমোট করা হয় - তবে তা আলটিমেটলী স্লোমোশান এ দিন দিন আরো বেশী মানুষকে খুন করবে, আরো বেশী মানুষকে গুম করবে, আরো বেশী মানুষের জীবন ও জীবিকার জন্য থ্রেট তৈরী করবে এবং আখেরে দেশের আরো বেশী ক্ষতি করবে - কারন এ্যান্টি ফোর্সকে আমি পরিকল্পনা করে, রিসোর্স মোবিলাইজেশান করার সুযোগ করে দিচ্ছি।
সে জন্য আমার মনে হয় সরকারের ইভিল ও ডেসট্রাকটিভ ইনটেনশান বুঝার চেষ্টা করে আলোচনা করলে ভাল হয় মানুষের, দেশের।
নয়তো দেশ ও দেশের মানুষ ১৯৭১ এ যেমন ঠকেছে, ১৯৯০ তে যেমন ঠকেছে তেমনি আবারো ঠকবে।
আর বাঁচলে ন্যায় ও নৈতিকতা নিয়ে বাঁচা দরকার - অন্যায় ও অনৈতিকতার সাথে কম্প্রোমাইজ করে আগামীতে ক্রীতদাসের মত বাঁচার কোন মানে হয় না।
বরং এসব ক্ষেত্রে একটু সময় ব্যয়ের বিষয় থাকে। সময়ের ব্যাবধানে এক্সট্রিমিজম নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এক্সট্রিমিজোমের সাহায্যকারী পাল্টা এক্সট্রিমিস্ট হওয়া ঠিক হবেনা মোটেও।
মন্তব্য করতে লগইন করুন