সমস্যা হল- হাসিনার ‘প্রাণ ভোমরা’ থাকলেও মুজিবের ভুল তিনি করছেন না।

লিখেছেন লিখেছেন রাহমান বিপ্লব ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৮:২৯:৩৬ রাত

কথায় কথায় বলেন- মুজিবের থেকে শিক্ষা নিন! একই ভাবে আপনারও বিপদ ঘটে যাবে। ১৫ আগস্টের কথা স্মরণ করুন!

কখনো ভেবেছেন- হাসিনা কিন্তু মুজিবের ভুলটি না করেও স্থায়ী ‘বাকশাল’ গঠনের পথে এগিয়ে গেছেন?

মুজিবের ভুল- প্রতিপক্ষকে কনভেন্স না করেই রাজত্ব প্রতিষ্ঠা!

হাসিনার কারেকশন- প্রতিপক্ষের দ্বারাই হাসিনা রাজত্বের দাবি করানো ও প্রতিষ্ঠা করিয়ে নেয়া!

এবার আসুন আলাপ করি-

আপনি জানেন- বাকশালের কন্দেপ্ট হল, “এক দল, এক নেতা, এক দেশ”। সকল দলের মিশ্রণে সৃষ্ট একটি সংকরদলের প্রধান ও মৌলিক শক্তিগুলো যদি একটি নির্দিষ্ট ঘরানার আদর্শ থেকে হয়, তাহলে একটি দল হল। যার কাজ গুলো হবে একটি আদর্শকে বাস্তবায়ন করে যাওয়া। অর্থাৎ সকল দলের নেতাদের নিয়ে সরকার ও তার মন্ত্রী পরিষদ! যার আজীবন প্রধান একটি নির্দিষ্ট ডিকটেটর! যিনি আমরন এ কাজ করে যাবেন। আর দেশটি হবে ইন্ডিয়ান কলোনি বাংলাদেশ!

পাঠক, শেখ মুজিব এ কন্সেপ্টে সামান্য স্কীপ করে বড় ধরনের ভুল করেছিলেন সে সময়ের প্রধান বিরোধী শক্তি জাসদকে অবজ্ঞা করে! আজ হাসিনা সেই জাসদকে আজ পকেটে পুরে বর্তমান বিরোধী শক্তি বিএনপিকে ধীরে ধীরে হাতে নিয়ে এসেছেন। যার ধারাবাহিকতায় সাহায্যকারীর ভূমিকা পালন করে গেছে জাতীয় পার্টি। (উল্লেখ্য, জাসদ তার কিছু মৌলিক যোগ্যতা ও প্রভাবের কারনে আজও একটি বড় ফ্যাক্ট।)

সরকার অবৈধ উপায়ে ফিরে আসার সময় এবার ঠিক যেভাবে বিরুপ এরশাদকে পকেটস্থ করে ফেলেছে ঠিক একই কায়দায় বৃহত্তর পরিকল্পনায় বিএনপি নেত্রী খালেদাকেও পকেটস্থ করে ফেলেছে!

যার কারনে, ইদের পর ইদ আর আল্টিমেটামের পর আল্টিমেটাম! ঠিক জনরা বেরিয়ে আসার আগ মুহুর্তেই যৌথ নাটক করে প্রতিবারই ঘটতে যাওয়া ইদকে স্থগিত ঘোষনা করা হয়।

ফলে ত্যাগী নেতা-কর্মী-জনতার একটি অগ্রগামী বড় অংশই খুন, গুম, আহত, নিরুদ্দেশ, গ্রেফতার ও মামলার মুখে পড়ে নিঃশেষ হয়ে গেছেন। অন্যদিকে নব্য এরশাদ তথা খালেদা জিয়া নিজ পরিবার ও সন্তানের কথা ভেবে বাংলার অগণিত দুঃখি মায়ের চোখের পানির সাথে বেইমানি করেন! যার উপমা খুঁজে পাবেন, একসময়ের স্বৈরশাসক এরশাদের ভেজা বিড়াল বনে যাবার প্রক্রিয়া থেকে।

পাঠক। শুরুতেই বলেছি, হাসিনা তার বাবার করা ভুল করছেন না। যার প্রমাণ বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর বিরোধী দল থেকে মন্ত্রী দেয়ার প্রক্রিয়া বিশ্লেষণের মাঝে সুপ্ত রয়েছে

প্রক্রিয়াটা মনে করি-

এরশাদের আশাহীন অথচ জারুয়া রাজনীতিকদের প্রথমে এমপি করা তারপর বিরোধীদলের সংসদীয় পদ বন্টন করে ‘অতি উতসাহ’ প্রদান। পরবর্তীতে তাদের ভেতর গোয়েন্দা তৎপরতায় মন্ত্রীত্বের লোভ ঢুকিয়ে দেয়ার ,আধ্যমে প্রথম তাদের মাধ্যমেই এ দাবি বের করে আনা। মূলত বাকশালের পথে পথে এটা লীগের মৌলিক ও অপরিহার্য চাওয়া! অথচ তা দাবি আকারে আসছে হাসিনার মুখ থেকে নয়, বরং তারই সাংবিধানিক প্রতিপক্ষ মহল থেকে।

হাসিনার মানসিক ত্রুটির কথা সর্বজনবিদিত। সবাই জানেন তিনি মাথা গরম টাইপ ব্যাক্তিত্ব। যখন অতি সংবেদনশীল অবস্থা আসে বলে দেন ‘বেফাঁস” কথা। যা শুনতে পেয়েছি বিগত নির্বাচনী তরি পার করবার পর তার কথা- ‘ভালো বামগুলো সব আমার হয়ে গেছে, বাইরে আছে সব নস্ট বামগুলো’ এবং ‘বিএনপি চাইলে তাদেরও মন্ত্রীত্ব দেয়া হত, এ ব্যাপারে আমি অনেক উদার! যা থেকে খুব ভালো ভাবেই বুঝে নেয়া সম্ভব!

অথচ ইন্ডিয়ান ‘র’ দ্বারা পরিবেষ্টিত লীগের বাকশালী এ ইন্ডিয়ান চাহিদা শুধু পূরণ করেই ক্ষ্যান্ত হননি এরশাদের উচ্চাভিলাষী অযোগ্য নেতারা! সাথে সাথে কিছু মন্ত্রীত্ব পাবার পরে আরও মন্ত্রীত্ব পেতে রীতি মত হুলুস্থুল কান্ড বাঁধিয়ে এই সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যটিকে জাতীয় পার্টির ঢাকনায় ঢেকে দেয়ার কাজে ব্যবহৃত হলেন! আড়াল হয়ে গেল, বাকশাল আগমনের সম্পূর্ণ কৃত্রিম প্রক্রিয়াটি!

খালেদা জিয়াও যে এখন এরশাদ, তার প্রমাণ-

পাঠক আপনারা ভাবুন তো, দেশের মানুষের বর্তমান সরকার বিরোধী বিক্ষুব্ধাবস্থা কতটা তীব্র এবং তীব্রতর হয়ে আছে? ভাবুন- এরা শুধু নেতৃত্ব পেলে এই সরকার এক দিনও টিকে থাকবার কথা কিনা! ভাবুন- সরকার বিরোধী জামায়াত শিবিরের মত এমন ক্যাডার জনবল থাকবার পরেও কেন আন্দোলন হয়না?

একটিবার দৃষ্টি দিন ‘রোড মার্চ টু ঢাকা’র দিকে। একটিবার দৃষ্টি দিন শাপলা চত্ত্বরের ভয়াবহ রাতে। একটিবার দৃষ্টি দিন নির্বাচনের আগের দিন গুলোতে। একটিবার দৃষ্টি দিন সম্প্রতি গাজীপুরের ১৪৪ ধারা ঘোষণার আগে-পরের ঘটনা প্রবাহর দিকে। শুধু একটি ১৪৪ ধারা কী করে একটি জাতীয় সুযোগকে জেলা ভিত্তিক নিস্প্রাণ হরতালের দ্বারা বদল হয়ে গেল!!

এবার ভাবুন, এদেশে অতীতে এমন অসংখ্যবার সরকার পতন সুযোগ এসেছে কি? এসব সুযোগের সামান্য একটিও আসার পর পূর্বে কখনো সরকার টিকে গেছে কিনা!

☛রোড মার্চ টু ঢাকা-

‘রোড মার্চ টু ঢাকা’র দিন স্বয়ং খালেদা জিয়ার চুড়ান্ত নির্দেশনা না থাকলে শতভাগ বিএনপির নেতারা আত্মগোপন করে থাকতে পারেন কিনা!

তাহলে শতভাগ বিএনপি নেতা সরকারের হাতে চলে গেছেন কিনা! যার কারনে একজন নেতাকেও সরকারী বাহিনির বিরুদ্ধে আন্দোলিত করতে দেখা গেল না! একজন নেতাকেও জীবন হাতে নিয়ে কর্মী বাহিনি মাঠে নামাতে দেখা গেলনা!

একটি দলও নামলে জনতা ঘরে ঘরে ছিলো প্রস্তুত! প্রস্তুত ছিলো ঢাকাবাসী জনতা একটি নেতৃত্ব পাবার আশায়!

এইসব দৃশ্যপটকে অস্বীকার করে রাষ্ট্রীয় স্পর্শকাতর অংগন সুপ্রীম কোর্টের অভ্যন্তরে আর প্রেসক্লাবে পেশাজীবি নেতাদের অভিনয় দিয়ে ভিন্ন ম্যাসেজ দেয়ার কোন সুযোগ নেই। কোন সুযোগ নেই স্বয়ং খালেদার একক প্রকাশ হওয়া, ট্রাক অবরুদ্ধ দৃশ্য দিয়ে!

☛শাপলা চত্তর এক বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা-

এই ঐতিহাসিক শাপলা চত্তরের রাতে বিএনপির শতভাগ নেতারা ছিলেন আত্মগোপনে! অথচ হাই কমান্ড থেকে ‘প্রকাশিত’ নির্দেশ ছিলো চুড়ান্ত। নির্দেশ ছিলো হেফাজতকে যেকোন মূল্যে নিরাপত্তা দেয়ার! কেন তারা প্রতিশ্রুতি ভংগ করেছিলেন? কী লাভের আশায় তারা ঘরে বসে ছিলেন চুড়ি পরে, শাড়ি গায়ে! তারা কতটা ক্ষতি করেছিলেন এদেশের ইসলামী শক্তি আলেম সমাজের ওপর! কতটা অপদস্ত করেছিলেন? আমি বিশ্বাস করি, বিএনপি নেতারা শুধু এই ‘অপমান’ করার জন্য আল্লাহর গজবের সম্মুখীন হবেন। আজ হোক কাল হোক তাদের ঠিকানায় পৌছে যাবে আল্লাহর দেয়া উপহার।

☛নির্বাচন ৫ জানুয়ারী-

এমন একটি সুযোগ বারেবার আসেনা। এমন একটি মুহুর্তে জাতীসংঘের হস্তক্ষেপ আনার জন্য নির্বাচনের আগে কিছু স্যাম্পল লাগে! যে বিএনপি জনতার শক্তিকে অগ্রাহ্য করে পশ্চিমাদের সাথে গোপন দেন-দরবার করে তারা এ সুযোগকেও কাজে লাগালেন না! আগে পরে কিছুই হলনা! কিচ্ছু নাহ!

এখনও শুনি “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অবৈধ”!

☛গাজীপুরের ১৪৪ ধারা নিয়ে কিছুই স্মরণ করানোর প্রয়োজন নেই। আমাদের সামনে একটি দগদগে ঘটমান বর্তমান এই “গাজীপুর” ট্রাজেডি!

একটি ১৪৪ ধারা ভাঙা হলনা! একটি দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে দেয়া হলনা! একটি সর্বাত্মক রিহার্সাল হিসেবেও করা হলনা “গ্রহণ”! একটি জেলা ভিত্তিক মরা লোকের ডাকা হরতাল দিয়ে জাতিকে স্পষ্ট বুঝিয়ে দেয়া হল- আরও কত দিনের জন্য এ পরাধীনতার রাত দীর্ঘ হতে যাচ্ছে!!

নিঃসন্দেহে এসব ভালো লক্ষণ নয়।

এসব আল্টিমেটাম মূলত একেকটি তীব্র আছাড়! বিশাল উচ্চতা থেকে মুক্তিকামী জনতার তীব্র শপথকে স্বজোরে আছড়ে দেয়াই এসব আল্টিমেটামের উদ্দেশ্য! এর মাধ্যমে জাতির আশাকে গলা টিপে টিপে হত্যা করে চলেছে সরকার তারই প্রতিপক্ষ বিএনপির মাধ্যমে!

একেকটি আন্টিমেটাম নস্ট হয়, নস্ট হয় জনতার স্বতস্ফূর্ত উনুপ্রেরণা!

হ্যাঁ, আমরা (লেখক) বিশ্বাস করতে পারিনা খালেদা জিয়া স্বয়ং এ কাজে স্বতঃপ্রনোদিত হয়ে সাহায্য করে যাচ্ছেন।

আমাদের শুধু মনে হয়, অন্ডিয়ান ‘র’ আর ইন্ডিয়ার সবচেয়ে বড় সাহায্যকারী ইজরাইলী ‘মোসাদের’ অতীত অপারেশন্স প্রক্রিয়া গুলোর কথা!

কী ভাবে তারা একটি দেশ ও জাতির মূল নেতাদের কাউকে অর্থ, কাউকে নারী আবার কাউকে জিম্মি করে সে জাতির সর্বনাশে বাধ্য করে এসেছে শতাব্দীর পর শতাব্দী! এসব ইতিহাস দগদগে হয়ে জ্বল জ্বল করছে মুসলিম বিশ্ব, বিশেষ করে মিডল ইষ্টের প্রান্তরে প্রান্তরে! গোটা বিশ্বের সকল পরিবেশে।

জনগণ আমাদের এসব কথা খুব সহজে বুঝতে পারবেনা বলেই এসব চক্রাকার ষড়যন্ত্র হুট করে থামিয়ে দেয়া যাবেনা। যদিও সকল সময়েই জনতা উপলব্ধি করতে পারবে, তারা কীভাবে নিরাশার অতল গহ্বরে তলিয়েই যাচ্ছে!?

☛অথচ, জনতার সামনে জামায়াত শিবিরের মত ইন্ডিয়া-ইজরাইলের প্রবল বিরোধী শক্তিকে “সমঝোতাকারী” বলে প্রচার ও প্রপাগান্ডা চলতে দেখেছি পক্ষ-বিপক্ষ সকল শক্তির কাছ থেকেই! এর নেতাদের ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে প্রচার করা হয়েছে!

১- এই চলমান ঝাঞ্ঝাক্ষুব্ধ পথে চূড়ান্ত সরকারী টার্গেট হল কারা?

২- আন্দোলন করল কারা?

৩- নিহত হল কারা?

৪- ফাঁশিতে ঝুলে গেল কারা?

৫- গুমের প্রচন্ডতা দেখল কারা?

৬- যাবতীয় নির্যাতন পায়ে পিষে সরব ছিলো কারা?

তারাই দেশের জন্য আমরণ অবিক্রিত থাকবে বলে বিশ্বাস করি। এ বিশ্বাসের কারন তাদের রাজনীতি বাড়ি-গাড়, মন্ত্রীত্ব নিয়ে ধনিক শ্রেণী বনে যাওয়া কিংবা পরিবার তন্ত্র প্রতিষ্ঠার রাজনীতি নয়। এদের কর্মীদের রাজনীতি, মিছিল করে দিয়ে পারিশ্রমিক নেয়ার পরিবর্তে আখেরাত কেন্দ্রিক বলেই শ্লোগাণ তুলে-

মরলে শহীদ বাঁচলে গাজী

আমরা সবাই মরতে রাজি!

যে মিছিলে সামনে থেকে লিড দেয় স্বয়ং লিডার!

দেশের জন্য জীবন দিতে হলে সঠিক ক্ষেত্রটি জানতে হবে। ধর্মের জন্য জীবন দিতে চাইলে সঠিক ধারাটি চিনতে হবে! কারন ইসলাম জাগতিক ও আখেরাতের সফলতা বহন করে নিয়ে বেড়ায়।

তাই ইসলামী মানুষেরা মূলতই বলান না, লেখান না, দেখান না। তারা তাদের বিশ্বাস ফুটিয়ে চলে যান মানুষের পাশ দিয়ে। আর আমাদের মত দর্শক সেটা দেখে যুগে যুগে চক্ষু জুড়ান, বলে প্রাণ ভরে তৃপ্তি নেন, লিখে গর্বিত হন!

যদিও কিছু কিছু মুহুর্তে বাংলাদেশীদের সকল পক্ষ বিপক্ষই উপলব্ধি করেন, কারা ছাইচাপা কয়লাগুলো ধরে রাখার যোগ্য; তার নিরন্তর পোড়া যাতনা সয়ে যাবার।

'একান্ত ভাবনা গুলো'

রাহমান বিপ্লব

২৯/১২/২০১৪

বিষয়: রাজনীতি

১২০৫ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

298035
৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ১০:১৭
হতভাগা লিখেছেন : শেখ হাসিনার রাজনৈতিক মস্তিষ্ক খুব প্রখর । তার ধারে কাছে আসতে আগামী ১৫০-২০০ বছর অপেক্ষা করতে হবে তারেক জিয়ার।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File