শান্তিবাহিনীর পাপ ! (মেজর অবঃ ফারুকের লেখা থেকে)

লিখেছেন লিখেছেন রাহমান বিপ্লব ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১০:৪৮:৫৫ রাত

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) এর সশস্ত্রশাখা তথাকথিত শান্তিবাহিনীর আক্রমনে এযাবত প্রায় ৩৫০০০ মানুষ মারা যায়। মূলতঃ পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্চিন্নতাবাদ এবং পার্বত্য বাংগালীদের বিরুদ্ধে জাতিগত নির্মূল অভিযান পরিচালনার লক্ষ্যেই স্বাধীন বাংলাদেশে এ মানবতা বিরোধী গনহত্যা পরিচালনা করা হয়। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ- মাকে কুপিয়ে এবং শিশুকে পুড়িয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসী শান্তিবাহিনী। চুক্তি অনুযায়ী জেএসএস কিছু সেকালে অস্ত্রসহ আত্মসমর্পনের নাটক মঞ্চায়ন করলেও চুক্তির পর এযাবত ৭০০-এরও বেশী মানুষকে হত্যা এবং ১৩০০- এরও বেশী মানুষকে অস্ত্রের মুখে অপহরন করা হয়।...পার্বত্য বাঙ্গালীদের লাশ এবং অঙ্গার হওয়া দেহাবশেষ শান্তিবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত কতিপয় গণহত্যা পার্বত্য চট্টগ্রামে বাংগালী অধ্যুষিত অসংখ্য পাড়াতেই শান্তিবাহিনী গণহত্যা চালায়।

তবে জেএসএস-এর মূল উদ্দেশ্য ছিলঃ (ক) পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বায়ত্ব-শাসন প্রতিষ্ঠা করা, (খ) পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করতে সক্ষম না হলেও সেখানে বাংলাদেশ সরকারের সার্বভৌম ক্ষমতা বিলোপ করা, (গ) পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাংলা ভাষা-ভাষী নাগরিকদের কে অস্ত্রের মুখে উৎখাত করে পার্বত্য চট্টগ্রামকে একমাত্র উপজাতিদের আবাস ‘উপজাতীয় এলাকা’ বা ‘জুম্মল্যান্ড’ হিসেবে পরিণত করা। এসব বাংলাদেশ বিরোধী উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে জেএসএস পরিচালনা করে বাংলাদেশের ইতিহাসে বর্বরতম জাতিগত নির্মূল অভিযান।

জেএসএস কর্তৃক সংঘটিত সন্ত্রাসের ধরনঃ জেএসএস ভারত থেকে প্রাপ্ত প্রশিক্ষন, অস্ত্র, গোলাবারূদ ও আশ্রয় ব্যবহার করে গোটা পার্বত্য ৩ জেলায় বাংগালী নিধন শুরু করে। নিরস্ত্র ও নিরীহ বাংগালীদের বিভিন্ন পাড়ায় আক্রমন করে গ্রামের সব বাড়ি-ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়, নির্বিচারে হত্যা করে গ্রামের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতাকে, গর্ভবতী মায়েদের পেটে বেয়োনেট দিয়ে আঘাত করে সন্তানসহ মাকে হত্যা করা হয়,ধর্ষনের শিকার হয় অসংখ্য পার্বত্য বাঙ্গালী নারী, গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে প্রায় ৩৫০০০ (পয়ত্রিশহাজার)-এরও বেশি মানুষ, আহত করে কয়েক হাজার। অস্ত্রের মুখে শত-শত বাংগালী কৃষক,কাঠুরিয়া, জেলে ও ব্যবসায়ীকে কিডন্যাপ করে মুক্তিপণ আদায় করে, এসব ভিকটিমদের অনেককেই নির্যাতন করে ওকুপিয়ে হত্যা করে। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায় সকল দোকান মালিক,কৃষক, জেলে, অফিস-আদালতের কর্মচারী এবং ঠিকাদারদের কাছ থেকে আদায় করে চাঁদা ও মুক্তিপণ হিসেবে শত-সহস্র কোটি টাকা।সন্ত্রাস-বিরোধী কয়েকশত উপজাতি নাগরিক ও জেএসএস কর্তৃক হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়। অস্ত্রের মুখে ত্রাস সৃষ্টি করে তারা লক্ষাধিক পার্বত্য বাংগালীকে ভিটা-মাটি ছেড়ে গুচ্ছগ্রামে আশ্রয় নিতে বাধ্য করে, লক্ষাধিক বাঙ্গালী পার্বত্য চট্টগ্রাম ছেড়ে সমতলে এসে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। এছাড়া প্রায় বিশ হাজার উপজাতিকে বাধ্য করে ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিতে।

নিরাপত্তা বাহিনীর টহল দলের উপর এ্যাম্বুশ করে কয়েকশত সেনা সদস্যকে হতাহত করে, বিডিআর-পুলিশ-আনসার ও ভিডিপি (গ্রামপ্রতিরক্ষা দল) ইত্যাদি দূর্বল লক্ষ্যবস্তুর উপর পরিচালনা করে অতর্কিতে হামলা বা এ্যাম্বুশ– যাতে বহু সদস্য হতাহত হয়। এভাবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে প্রশিক্ষিত শান্তিবাহিনী নামধারী সন্ত্রাসীরা তাদের প্রশিক্ষনের পুরো দক্ষতা প্রয়োগ করে বাংলাদেশের হাজার হাজার নারী-পুরুষ-শিশু ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হত্যায়। স্বাধীন বাংলাদেশে সশস্ত্র উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা বাংলাদেশের কয়েক হাজার নাগরিককে নিজভূমি থেকে উৎখাত করার ঘৃন্য উদ্দেশ্যে পাড়া ঘেড়াও করে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে, বেধরক কুপিয়ে এবং খড়ের ঘরগুলোতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে জলন্ত ঘরের মধ্যে শত-শত মা ও শিশুকে জ্যান্ত পুড়িয়ে অংগার করে মানবতার বিরুদ্ধে যে অপরাধ করেছে- তার নজির ১৯৭১ সালেও দেখা যায়নি।

(ক) শান্তিবাহিনীর এরিয়া কমান্ডার তথাকথিত মেজর রাজেশ এর নেতৃত্বে পরিচালিত হয় ভূষনছড়া হত্যাকান্ড যেখানে এক রাতেই ৪৫০ জনের অধিক বাংগালীকে হত্যা করা হয়েছে।তার আসল নাম-মনিস্বপন দেওয়ান,যাকে আওয়ামী লীগ চুক্তির পরে রাংগামাটির এমপি ও প্রতিমন্ত্রী বানিয়ে গণহত্যা পরিচালিনার জন্য পুরস্কৃত করেছিল, বর্তমানে সে গৌতম দেওয়ানের সভাপতিত্বে সিএইচটি নাগরিক কমিটি গঠন করেছে।

(খ)রাংগামাটি জেলার লংগদু থানার পাকুয়াখালীতে ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তারিখে শান্তিবাহিনী ৩৫জন বাংগালী কাঠুরিয়াকে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।

(গ)রাংগামাটি জেলার জুরাছড়ি থানার পাহাড়ি এলাকায় শান্তিবাহিনীর এরিয়া কমান্ডার তথাকথিত মেজর পেলে (আসল নাম-তাতিন্দ্র লালচাকমা) একটি সেনা টহলের উপর এ্যাম্বুশ করে মেজর মহসীন সহ ৩০ জন সেনা সদস্যকে হত্যা করে। সন্ত্রাসীরা দা দিয়ে কুপিয়ে নিহতদের পা কেটে পায়ের বুটগুলো আলাদা করে নিয়েছিল। বর্তমানে সে জেএসএস (এম এন লারমা) গ্রুপের সাধারন সম্পাদক। অনুরূপ, কাশখালী, কাউখালী, নানিয়ারচর (এখানে একরাতেই ৩০০ জনের অধিক পার্বত্য বাংগালীকে হত্যা করা হয়েছে) ইত্যাদি অগনিত হত্যাকান্ড পরিচালনা করে এই শান্তিবাহিনী- যাদের প্রায় ৮৫০ জনকে চুক্তির পর পুলিশ বাহিনীতে চাকুরী দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে- অথচ, এদেশে দেশ স্বাধীনকারী মুক্তিযোদ্ধারা এখনো রিক্সা চালায়।

সুত্রঃ পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাস ও ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে করনীয়- মেজর ফারুক (অবঃ) ০৩ , ২০১৪।

বিষয়: আন্তর্জাতিক

১৫৬৭ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

297166
২৫ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১১:২০
সামসুল আলম দোয়েল লিখেছেন : শান্তিবাহিনীর নানা কুকর্ম আর সন্ত্রাস, মানবতাবিরোধী অপরাধ আর নিষ্ঠুর হত্যাকান্ডকে বাকশালীরা বৈধ করে দিয়েছিল শান্তি (অবৈধ!)চুক্তির মাধ্যমে, এর দ্বারা তথাকথিত শান্তিকন্যা শান্তির জন্য নোবেল পাওয়ার আশা করেছিলেন।
আফসোস পেলেন না।
এবার তথাকথিত মানবতাবিরোধীদের তথাগত বিচার করে নোবেল পুরষ্কার পেতে পারেন।

লেখাটির জন্য ব্লগারকে ধন্যবাদ
২৬ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০২:৫২
240666
রাহমান বিপ্লব লিখেছেন : আসলে কথাটা "কারও পৌষ মাস কারও সর্বনাশ" হলেও এক্ষেত্রে একজনের পৌষ মাদের আশায় একটা জাতির মোটা দাগের সর্বনাস হয়ে গেছে! অথচ সেই একক ব্যাক্তির পৌষ আজও এলোনা!

আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য!

আশা করি পার্বত্য আন্দোলনে আপনাকে সক্রিয় লেখক হিসেবে পাবে এ জাতি!
297172
২৫ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১১:৪৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
২৬ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০২:৫৫
240667
রাহমান বিপ্লব লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ পার্বত্য বিষয়টি পড়ার জন্য!

আশা করি পার্বত্য আন্দোলনে আপনাকেও আমরা সক্রিয় ভাবে পাশে পাব!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File