তারা যে "বাড়িওয়ালা" !
লিখেছেন লিখেছেন মুসা বিন মোস্তফা ২৬ এপ্রিল, ২০১৬, ০৯:৫৭:৩১ রাত
মিরপুরে আমাদের একটা ওষুধের দোকান ছিল । দোকানে একবার এক ঔষুধ কোম্পানীর রিপ্রেজেন্টিভ একটা মন্তব্য করেছিলেন যে , তিনি দোয়া করেন যাতে ঢাকায় এমন ভূমিকম্প হয় সকল বিল্ডিং ভেঙ্গে পড়ে যায় । বাড়িওয়ালারা যখন গ্রামে খাবার আনতে কিংবা ভিক্ষা করতে যাবে তখন বাশের লাঠি দিয়ে তাদেরকে তাড়িয়ে দিবেন । কথাটা শুনতে খারাপ লাগলেও তার দৃষ্টিকোন থেকে সঠিক ছিল ।
তার বাড়িওয়ালা সাড়া বাড়ি ঝাড়ু ও পরিস্কারের জন্য বুয়ার বিল বাবদ সকল ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে ২৪ হাজার টাকা উঠাত । এবং বুয়ার বিল দিতো ৮ হাজার । হিসেব টা পুরাটো স্মরন নেই তবে এরকমই হবে ।বুয়ার বিল বাবদ মালিক খাইতো ১৮ হাজার টাকা ।
বেশির ভাগ স্থানেই বাড়িওয়ালা আর ভাড়াটিয়ার মাঝে তিক্ত সম্পর্ক । বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়াদের মনে করে শত্রু । ভাড়াটিয়াদের রাস্তার লোকদের চেয়ে উত্তম লাগে না তাদের চোখে । আর ভাড়াটিয়াদের চোখে "বাড়িওয়ালাদের মনই ভরে না" কিসের দুঃখে যে এই বাসাটা নিছিলাম । এই টাইপের দৃষ্টি ভঙ্গী কাজ করে । যেটা অস্বীকারের উপায় নেই ।
লিখিত চুক্তি ছাড়া যেকোন বাসা ভাড়া নেওয়া এবং ছাড়ার আগে বলার নিয়ম হলো ১ মাস । এবং আপনি যদি দেড় মাস আগেও বলেন যে আমাকে এই সমস্যার জন্য বাসা ছেড়ে দিতে হচ্ছে , ব্যাপারটা এমন নয় যে আপনি তার বাসা ছেড়ে দিয়ে নিকটবর্তী বাসায় উঠছেন , ব্যাপারটা হলো বাসা ছেড়ে আশেপাশে কোন বাসা নিচ্ছেন না । এরপরেও বাড়িওয়ালা আপনাকে "ওয়াদা ভঙ্গের" অভিযোগ করতে পারে কারন আপনি অনেক দিন থাকতে চেয়ে ৫ মাস পরে বাসা ছাড়তে চেয়েছেন। এটা বাড়িওয়ালাদের অধিকারই বটে । কারন তারা যে "বাড়িওয়ালা" ।
একটা বাসা নেওয়ার আগে এক দুইবার দেখে কিছুই বুঝা যায় না । বুঝা যায় নেওয়ার পরে । ইহা কি বনজঙ্গল নাকি পরিস্কার বাড়ি ইহা প্রথম রাত্রি ঘুমানোর আগে বুঝতে পারবেন না । ডাস্টবিন থেকে সবকিছুকে সুন্দর করে সাজিয়ে নেওয়ার ক্রেডিট কিন্তু আপনি পাবেন না ! ইদু্রের অত্যাচার ঠান্ডা করার জন্য ম্যানিব্যাগের শূন্যতা কিন্তু বাড়িওয়ালা দেখেবে না !কিংবা বাথরূমের কেচো ! বিড়ালের লফফঝপ্প কিংবা জানালার ভাঙ্গা গ্লাসের অভিযোগ কিন্তু কানেই নিবে না । কারন তারা যে "বাড়িওয়ালা" ।
যেটা সত্য কথা সেটা হলো ঢাকায় একটা বাড়ি থাকলে বাড়ির মালিক নিজেকে বাড়িপতি ভাবে না , ভাবে সেই "রাষ্ট্রপতি" । ভাড়াটিয়া কোন ছাই । ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করাও এমন ভাড়াটিয়া অভাব হবে না । তারাই কিন্তু হাত পা ধরে আবার ভাড়াটিয়া খুজবে ! থাক অদিকে আপনার না তাকালেও হবে । তাকানোও দোষের কারন আপনি ভাড়াটিয়া । আর তারা "বাড়িওয়ালা" ।
আর একটা ব্যাপারে না বলেই পারছি না তা হলো "অনেক দিন থাকতে চাওয়ার" সীমানা । সত্যিই হাস্যকর লাগে বিদ্বান ব্যাক্তিদের মূর্খ্যের মতো যুক্তি । একদা খুবই যুক্তিবাদী ছিলাম । অনলাইনে কিংবা অফলাইনে । এমনকি কোন একটা মিথ্যা মিথের উপরে যুক্তি দিয়েও প্রতিপক্ষকে পরাস্তের চেস্টা করতাম । আল্লাহ মাফ করুন । কিন্তু এখন আর "অতিরিক্ত যুক্তিবাদী" ভালো লাগে না । এটা সত্যিই আপনাকে এমন পর্যায়েই নিয়ে যাবে যে "আপনি যুক্তিবাদী হবেন শুধুই জয়ের জন্য" । তার্কিক হবেন তর্ক করবেন কিন্তু সেটা শুধু জয়ী হওয়ার জন্যই শুধু । সত্যকে গ্রহন করার মন মানসিকতা হারিয়ে যাবে ।
কিছু দিন পূর্বে এক নামকরা লেখিকা ও ব্লগারের সাথে একটা ঠুনকো বিষয়ে জড়িয়ে পড়েছিলাম । উনি সুন্নাতী চিকিৎসা পদ্ধতি "হিজামাহ" নিয়ে উলটাপালটা কথা বলেছিলেন । প্রমান চেয়েছিলেন হাদীসের ষ্পষ্ট দলিল দেওয়ার পরেও তালবাহানা করছিলেন । সত্যকথা তিনি চাইছিলেন যুক্তিতে জয়ী হওয়া আমি চেয়েছিলাম তার মিথ্যা ধারনাটি দূর হোক । সর্বশেষ আমাকে মিথ্যাবাদী আখ্যায়িত করে ব্লক করে দিয়েছিলেন । অথচ তিনি প্রমান চেয়েছেন আমি প্রমান দিয়েছি উনি হাদীসের প্রমান দেওয়াকে মিথ্যা বলে কি হাদীসটিই অস্বীকার করলেন না ?
নামকরা তার্কিক হওয়ার টার্গেট না থাকলে বাস্তব জীবনে যদি যুক্তি দিতে চান তবে দয়া করে মাথায় রাখবেন "তর্ক শুধু জয়ের জন্য নয় , সত্যকে সত্য বলে স্বীকার করার জন্যই তর্ক করবেন" ।
আর ওয়াদা ভঙ্গের বিষয়টা হলো আপনি যদি কারো কাছে অয়াদা করেন আপনি "কিছুদিনের ভিতরে তার সাথে সাক্ষাত করবেন " , তাহলে এটা কি নিদ্রিষ্ট কোন দিন বুঝায় ? আর সে যদি ৫ মাস পরে সাক্ষাত করে তবে কি সেটা অয়াদার খেলাফ হবে ?
যেহেতু এখানে ওয়াদাতে স্পষ্ট উল্লেখ নেই যে কতো দিনে সাক্ষাত করবে । বরং বলা হয়েছে কিছু দিনের ভিতরে । কিছু দিনটা যদি মাসের কাছে কাছে পৌছে যায় এবং তা কারন বশত হয় তাহলে কি সেটা ওয়াদা ভঙ্গ হবে ?
সেম ব্যাপার নিয়ে বিদ্বান ব্যাক্তিরা যখন অভিযোগ করেন তখন শুধু হাসি ছাড়া আর কিছু থাকে না
বিষয়: বিবিধ
১৭২৮ বার পঠিত, ২৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
http://at-tahreek.com/april2015/article0401.html
অনেকাংশে সত্য।
মালিকরা ব্যাংক অথবা রিয়েল ষ্টেট কোম্পানী থেকে তাদের পাওনা মিটিয়ে নেন।
কেউ রেন্ট নিতে চাইলে ব্যাংকের সাথে কন্ট্রাক হবে, অতঃপর ওয়াটার ইলেক্ট্রিসিটির সাথে কন্ট্রাক হবে।
ছেড়ে দেওয়া বা তাড়িয়ে দেওয়ার ব্যপারেও একই নীতি, অন্তত পক্ষে ১মাস আগে নোটিশ দেওয়া হবে।
ধন্যবাদ
আমি বলি- ঢাকায় নয় শুধু, সারা দেশে- এমন খারাপ বাসা মালিকদের জন্য বেছে বেছে আসুক ভূমিকম্প।
কারণ আমিও একজন সহজ সরল ভাড়াটিয়া। অনেক কষ্ট আমার বুকেও জমা আছে। লিখব সময় পেলে। তবে ফেসবুকে ২ বার লিখেছি।
সত্যি বলতে কী বিষয়টি হচ্ছে আর্থিক। ভাড়াটিয়া দু’পয়সা কম দিতে চায়। আবার বাড়িওয়ালা দু’পয়সা বাড়তি চায়। কম নিলে বাড়িওয়ালা ভাল, না হলে খারাপ। শুধুমাত্র এটা দিয়ে ভাল খারাপ পরিমাপ করার নীতি হতে আমাদের বের হতে হবে।
আমি ঢাকাতে ভাড়া থাকা হয়নি তাই বাস্তবে বলতে পারলাম না
আপনার অভিযোগ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সত্য হলেও সবক্ষেত্রে এটা ঠিক নয়। অনেক ভাল বাড়িওয়ালা আছে বিপরীতে অনেক কাইস্টা ভাড়াটিয়াও আছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন