ব্যবসা নিয়ে ভাবনাঃ ১ (১৫ টাকার ঔষুধে লাভ ৬৮০০ টাকা)
লিখেছেন লিখেছেন মুসা বিন মোস্তফা ২৩ নভেম্বর, ২০১৫, ১০:২৩:৩৭ রাত
১ কিলো গ্রাম ক্যালসিয়াম কার্বোনেট দাম ১৮ টাকা । ১০০০ গ্রামের দাম মাত্র ১৮ টাকা । (১ মিলিগ্রাম (mg) = ১/১,০০০,০০০ কিলোগ্রাম = ১/১,০০০ গ্রাম) ৫০ গ্রাম ক্যালসিয়াম কার্বোনেট বিক্রি করা হয় ৫০০ টাকায় । ১০০০ গ্রাম ১০,০০০ (দশ হাজার টাকা মাত্র) ।
আগেই একটা মাথামোটা হিসেব দিয়ে দিলাম । অনেকে রেগে যাবেন , অনেকে কৌতুহলী হবেন , অনেকে পাগলের প্রলাপ বলে চলে যাবেন । আপনাদের মধ্যে ২য় শ্রেনীটাই আমার দরকার ।
একটি ওষুধের দোকানে যান । গিয়ে বলুন ক্যালবো ৫০০ (calbo 500mg),এ-ক্যাল (A-cal 500) , অস্টোক্যাল (ostocal 500) আর যেই কোম্পানিরই হোক দিতে বলুন । প্যাকেটে যা যা লেখা আছে ভালো করে দেখুন । এর পর আমার হিসেবটা মিলিয়ে দেখুন ।
উপরে উল্লেখিত ঔষুধের কোম্পানীগুলো ১২.৫% লাভ দেয় কেমিস্ট/ঔষুধ ব্যবসায়ীকে (কাগজ কলমের হিসাবে) । অর্থাৎ ১০০ টাকায় ১২.৫০ আর এক হাজার টাকায় ১২৫ টাকা । দশ হাজার টাকায় ১২৫০ টাকা ।
এবার প্রথম বাক্যটি পড়ুন । এক কিলোগ্রাম ক্যালসিয়াম কার্বোনেট ১৮ টাকা । ইহা খোলাবাজারের হিসাব । উনারা খোলা কিনেন না উনারা টন টন কিনেন । তাইলে উনাদের পড়ে ১২-১৫ টাকা সর্বোচ্চ । কারন যে ১৮ টাকা বেচে সে লাভ করেই দেয় ।
ধরুন একটি ঔষুধ কোম্পানী ১৫ টাকা খরচ করিয়া ১০,০০০ (দশ হাজার টাকা) বিক্রি করিলো । আবার বলছি শুনুন , একটি ঔষুধ কোম্পানী ১৫ টাকা খরচ করিয়া ১০,০০০ (দশ হাজার টাকা) বিক্রি করিলো । ভাই উত্তেজিত হওয়ার কিছু নেই ভাববেন না তারা ৯৮৮৫ টাকা লাভ করলো ! এখানে খরচ আছে । আচ্ছা আমরা গড়ে ধরে নিচ্ছি একশটা ট্যাবলেট ব্লিস্টার আকারে আনতে তাদের খরচ হলো ২০০ টাকা । একটু বাড়ায়েই ধরি প্যাকেট ০১ টাকা আর ব্লিস্টারের (ধুত্তরি নামটা ভুলে গেছি) হিজিবিজিতে ১০ পাতায় ১০ টাকা । ১১+১৫=২৬ টাকার স্থলে আমরা ধরলাম তাহারা ২০০ টাকা খরচ করিল ।
এবং বিক্রয় করিল ১০০০০ টাকা । মাত্র ৯৮০০ টাকা লাভ করিল । না ভাই ৯৮০০ থেকে ১২৫০ টাকা দোকানীকে দিলে থাকে ৮৬৫০ টাকা ।
অনেকের মাথায় ঢোকে নাই । আমি এর চেয়ে ক্লিয়ার করে বলতে পারি না বলে দুঃখিত । আচ্ছা সেম জিনিসটা যদি পটে দেওয়া হয় ? দেখেন না ঔষুধের দোকানে রঙ বেরঙ্গের পট ঝুলিয়ে রাখে ? অরকম আর কি :D তাহলে ১৫+৪=১৯ টাকা :D থাক এটা নিয়ে আর কথা বলে বিরক্ত করবো না ।
এবার আসুন তারপরের খরচ গুলো । এই পন্যটি আসার পরে তাদের যা যা লাগবে (প্যাড,কলম,লেটারেচার,স্টীকার হেন তেন ) যাই হোক ধরে রাখেন এক প্যাকেটের জন্য এসবে তাদের খরচ গেল গড়ে দশ টাকা । আর ডাক্তারকে সম্মানী (কানে কানে বলি ইহা চুক্তি করিয়া প্রদান করা হয়, সহজ ভাষায় ঘুষ) দেওয়া হলো গড় প্যাকেটে ১০ টাকা (একটা ডাক্তারকে ৫ হাজার টাকা দিলে ওই ডাক্তার ৫০ হাজার প্যাকেট চালাইয়া দিবে :D ) ।
অর্থাৎ ওদিকে ২০০ আর এদিকে ২০ টাকার এর স্থলে ১০০ ধরলাম । আর কর্মচারী গোডাউন সব মিলিয়া প্রত্যেক বক্সের উপরে ১০০ টাকা ধরলাম । আরেকটা হিসেব ভুল হয়ে গেছে সরকারকে ভ্যাট দিতে হয় ১৬.৫ পার্সেন্ট । অর্থাৎ ২৯% বাদ দেওয়া হোক । ১০০০০-২৯%= ৭১০০ আর এদিকে ৩০০ । ৭১০০-৩০০= ৬৮০০ টাকা সমুদয় খরচ বাদ দিয়া তারা লাভ করে । আচ্ছা আরো বাদ দিলাম কোম্পানীর মালিকের কাজের বুয়ার বেতন বাবদ প্রতেক প্যাকে ৫০০ টাকা বাদ দেওয়া হলো । তাহলে বাকী থাকতেছে ৬৩০০ টাকা ।
আরো কিছু বাদ দিতে বলবেন ? দিয়ে দিলাম । কোম্পানীর মালিকের স্ত্রী প্রত্যেক বক্সের উপরে ১৩০০ টাকা নিলো গহনা কিনার জন্য :D । আচ্ছা তাহলে ৫০০০ টাকা :D । ১৫ টাকা খরচ করে মাত্র ৫০০০ টাকা :D
আগেই বলেছি অনেকে রেগে যাবেন , অনেকে কৌতুহলী হবেন , অনেকে পাগলের প্রলাপ বলে চলে যাবেন । আপনাদের মধ্যে ২য় শ্রেনীটাই আমার দরকার ।
হিসেবটা মাথা মোটা হলেও সহজ করেই বলেছি ঢোকার কথা ।
আচ্ছা এবার আর কিছু তথ্য দেই ।
একটি কোম্পানী ১০০ টি সেই ট্যাবলেট বিক্রি করে ৩০ টাকায় :D মাত্র ৩০ টাকায় । আরেকটু উন্নত কোয়ালিটির ৩০ টার দাম ১৫ টাকা । হয়তো এদের স্কয়ার বেক্সিমকোর মতো উন্নতমানের ফ্যাক্টারী নাই কিন্তু যা আছে তা মানসম্মত বলেই সরকার লাইসেন্স দিয়েছে ।
এরা ৩০ টাকা বেচেও লাভ করে ।১৫ টাকা কিনা আর প্যাকেটে পাচ টাকা । দোকানে পৌছাতে ৫ টাকা । আর লাভ করে পাচ টাকা । এদেরও দিন চলে । আম পাবলিক এদের ঔষুধ খুজেই খায় । ডাক্তারকে ঘুষ দিতে হয় না । মূলা ঝুলিয়ে কাস্টমার খুজতে হয় না :D
একটি ওষুধের দোকানীও পর্যাপ্ত পরিমান লাভ করতে পারে । কাস্টমার ও কম দামে পায় ।
আজ এপর্যন্তই । আরেকদিন আসবো ঔষুধের দোকানীর লাভের ব্যবচ্ছেদ করতে । আর ঔষধ নিয়ে আর কিছু লেখা থাকবে ইনশা আল্লাহ ।
প্রথম প্রকাশঃ[url href="http://www.amaderboi.com/post/5284" target="_blank"]www.amaderboi.com/blog[/url
বিষয়: বিবিধ
৫৩১০ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আরেকদিন যখন আসবেন-ই, মন্তব্যটা সেদিনের জন্য রেখে দিলাম!
Coralcal D / Sandocal এর এক একটা ট্যাবলেট ১০-১২ টাকা করে । এগুলো বাইরের ঔষধ. লোকজন লাফিয়ে লাফিয়ে কিনে এসব।
গার্মেন্ট শিল্পের পর বাংলাদেশের আর যে সেক্টরটি খুব প্রমিজিং সেটা ঔষধ সেক্টর ।
স্কয়ার , বেক্সিমকো , ইনসেপ্টাসহ প্রায় ১০-১২ টা কোম্পানী আছে যাদের ঔষধের গুন গত মান ১৯-২০ । এদের কারও কারও ঔষধ বাইরেও রপ্তানী হয় ।
দেশের চাহিদার প্রায় ৯৫% ভাগ ঔষধ দেশেই উৎপন্ন হয় ।
বাইরের কোম্পানীগুলো দেশীয় ঔষধের দামের সাথে পাল্লা দিয়ে না পেরে কিছু লোক নিয়োগ করে দেশীয় ঔষধের বদনাম করতে ।
গার্মেন্টস শিল্পের মত ঔষধ শিল্পকেও ধ্বংস করতে নেমে গেছে বাইরের শত্রুরা । এসব ক্ষেত্রে এরা দেশের কিছু লোককে ব্যবহার করে। বদমান যদি ৪-৫ মাস বাতাসে চালিয়ে দেওয়া যায় তাহলে এর মাঝে বাহিরের কোম্পানী গুলো বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা হাতিয়ে নিয়ে যায় এবং চামচাদেরকেও ট্যুর খাওয়ায় , গাড়ি দেয়।
পরে দেখা যায় যে ঐ প্রচার ভূঁয়া ছিল।
যাই হোক ভাই, টাকা যাক, তবুও যদি মেডিসিনটা খাটি হয়, এটাই পাওনা।
বাহির থেকে অনেক কিছুই মনে হয়, কিন্তু বাস্তব বড় কঠিন।
চাকুরীতে যোগ দেয়ার পর প্রথম একটা এন্টিবায়োটিক নিয়ে কাজ করি। ওটার বাচ্চাদের উপযোগী তরল ফরমে তৈরী করতে হবে। কিন্তু ওটা আবার পানিতে দ্রবনীয় নয় বলে তা সিরাপ ফরমে তৈরী করা যায়না। তাই সাসপেনসন ফরমে তৈরী করতে হবে। আমরা দেশে প্রথম বারের মত একটা নতুন এক্সিপিয়েন্ট এক্ষেত্রে ব্যবহার করি, যা ঐ এন্টিবায়োটিকের চারপাশে একটা আবরন তৈরী করে দেয়। ফলে তা তিতা মুক্ত হয় এবং মজাদার স্বাধ অনুভূত হয়। তবে এতে যে জিনিসটি আমাদের সাথে যোগ করতে হয়েছে তাঁর মূল্য মূল এন্টিবায়োটিকের প্রায় দ্বিগুন। এক বোতল ঔষুধে যেখানে এন্টিবায়োটিকের খরচ ৮ টাকা, সেখানে সাথে যা যোগ করতে হয় তার দাম ১৫ টাকা। অন্যান্য এক্সিপিয়েন্ট তো আছেই। সাথে আবার ওভার হেড খরচ ইত্যাদি ইত্যাদি। সব মিলিয়ে দেখা গেলো আমার প্রতি বোতলে মোট খরচ হবে ১০৯ টাকা। কিন্তু ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন থেকে প্রথমে তাঁর অনুমোদন না দিয়ে ১০০ টাকায় বাজারজাত করতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এবং আমরা ১০০ টাকাতেই বাজারজাত করি। পরবর্তীতে আমাদের এ ঔষুধটি বিদেশে রপ্তানি হয়। এবং ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশনে নতুন টেকনোলজির বিষয়টি বুঝিয়ে বলার পর ১২০ টাকায় বাজার জাত করার অনুমতি পাওয়া যায়। এখন যদি আপনি বলেন- ৮ টাকার ঔষুধ ১২০ টাকায় বিক্রি করা হয়, তাহলে বিষয়টা কেমন হয়???
ফার্মাসিউটিক্যালসে এমন মেশিনও আছে যার একটির মূল্য ১১, ১২ কোটি টাকা। আমাদের খেয়াল রাখা উচিত- এসবের দামও কিন্তু ঔষুধের বিক্রির টাকা থেকেই উঠাতে হয়। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন