ভাবীর ডায়েরী Call Me Call Me Call Me Call Me Call Me Call Me

লিখেছেন লিখেছেন মুসা বিন মোস্তফা ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১০:১৯:২০ রাত

—কানের সামনে এত ঘ্যান ঘ্যান করিস

নাতো। একবার নিষেধ করেছিতো।

—প্লিজ মা, এই প্রথম আর এই শেষ। আর কখনো এই আবদার করব না। এইবারের মত ভাবির জন্মদিন টা পালন করতে দাও। বিয়ের পর এটাই আমাদের বাসায় প্রথম জন্মদিন ভাবির।

—প্রশ্নই আসে না অনুমতি দেয়ার। যা ইসলাম অনুমোদন দেয় না তার অনুমতি আমি কিছুতেই দিব না।

ততক্ষনে ভাবির আগমন। এসেই জিজ্ঞেস করলোঃ

—কি ব্যপার? ওকে বকছেন কেন মা?

—দেখনা বউমা, ও কথাই শুনতে চায় না।

ইসলামে যার অনুমতি নাই তা আমি ওকে কি করে করতে বলি?

—আচ্ছা আমি ওকে বুঝিয়ে বলছি আর এমন করবে না।

ভাবি বললোঃ মনি চল!! আমরা কফি খেতে খেতে গল্প করি। মনি গাল ফুলিয়ে মায়ের কাছ থেকে চলে গেল। কফি নিয়ে দুইজন বাড়ির বাগানে গিয়ে বসল।

—কিরে, তুই মায়ের সাথে জেদ করছিস কেন? মা নিশ্চয়ই তোর ভাল হয় যেটা

সেটাই করতে বলছেন।

—মিষ্টি ভাবি শোন না, আমি একজনকে একটা সারপ্রাইজ দিতে চাইছি কিন্তু কিছুতেই মা অনুমতি দিচ্ছে না।

—এটা কি ইসলামিক বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক? কিংবা এটার অনুমতি কি ইসলামে আছে?

—না নেই।

—তাহলে? তুই কেন জেদ করছিস? তুই কি এমন কিছু করতে চাস যাতে আল্লাহ্ নারাজ হন? আল্লাহকে নারাজ করে তুই

আরেকজনকে খুশি করতে চাস? এটা কি করে হয়? তুই কি মনে করিস, এতে কল্যাণ রয়েছে?

—এটাতো মাথায় আসেনি।

—মাথায় আনতে হয়রে পাগলী। শোন!! যাই কিছু করিস না কেন আগে দেখবি যে এতে আল্লাহ্ অসন্তুষ্ট হন কিনা? যদি এমন হয়

তো সেটা কখনই করবি না।

—আচ্ছা ঠিক আছে।

—আর সারপ্রাইজ তো অন্যভাবেও দেয়া যায় তাই না? যাতে আল্লাহ্ও সন্তুষ্ট থাকেন

আর সেই মানুষটিও খুশি হয়।

—হুম... বুঝেছি। এমনি এমনি তো আমি তোমাকে মিষ্টি ভাবি ডাকি না, তুমি এত মিষ্টি করে কথা বল যে কেউ তোমার কথার জাদুতে বিমোহিত হয়ে পড়বে। এরপর তুমি যাই করতে বলবে তাই করবে। অনেকটা হিপ্নোটাইজ করার মত।

—হয়েছে হয়েছে...আর তেল দিতে হবে না।

তোর দেয়া তেলে তেলায়িত হয়ে গেলে আবার তেলের জন্য যুদ্ধ বাঁধাবে মানুষ।

মনি তার ভাইয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।

ভাইয়া বাসায় এলে দুই সদস্য বিশিষ্ট একটা রুদ্ধ দ্বার বৈঠক ডাকতে হবে।

—কিরে গাধী!! হঠাৎ তোর মিটিং। মিটিং এর হেতু কি?

—আরে দেখনা ভাইয়া, আমি চাইলাম ভাবির জন্মদিনে কিছু করতে কিন্তু আমার মাথায় ছিল না যে এতে আল্লাহ্ অসন্তুষ্ট হবেন। এখন কি করি বলতো...আমি সব কিছুর ব্যবস্থা করে ফেলেছি।

—আচ্ছা বল কি করেছিস? আগে শুনি তারপর দেখা যাবে।

—আমি ভাবির জন্য কিছু বই কিনেছিলাম আর ভেবেছিলাম ভাবির জন্মদিনে ভাবিকে নিয়ে ঘুরতে বের হব। আর ভাবিকে ভাবির পছন্দের একগুচ্ছ গোলাপ

ফুল কিনে দেব। আর সন্ধ্যায় একটা কেক

নিয়ে এসে সবাই মিলে খাব।

—আর কিছু?

—আপাতত না।

—ব্যাস এটুকুই। তাই এত অস্থির হচ্ছিস... তুই আসলেই গাধী, তোর উচিত ঘাস খাওয়া।

—আমি গাধী হলে তুমি গাধীর বড় ভাই।

তুমি বড় গাধা। হেহেহে...

—প্রশ্নই আসে না। শুধু তুই গাধী এই বাসার

মধ্যে।

—আচ্ছা ঠিক আছে মানলাম যাহ, এখন বল না ভাইয়া কি করব?

—আরে বোকা মেয়ে, জন্মদিনেই যে উপহার

দিতে হবে এমন কোন কথা নেই। তুই বইগুলো জন্মদিনের আগে অথবা পরে যেকোনো সময় দিতে পারিস। আর ঘুরতে যাওয়া, ফুল কিনে দেয়া সেটাতো যেকোনো দিনই যাওয়া যায়। আর কেকও পরে অথবা আগে আনলেই হবে।

—ওরে কত সহজে তুমি সমাধান দিয়ে দিলে। তুমি আসলেই আমার সুপার হিরো। আই লাভ ইউ ভাইয়া।

—হয়েছে, আর ন্যাকামো করতে হবে না। চল মা খেতে ডাকছে।

হাসি মুখে মনি খাওয়ার টেবিলের দিকে গেল। তার সব সমস্যার সমাধান হয়েছে। ২৭ Dec ভাবির জন্মদিনেই সব করতে হবে এমন কোন কথা নেই। আগে বা পরে একসময় করলেই হল। শুধু মাত্র একটি দিনকে কেন্দ্র করেই আনন্দ করতে হবে এমন কোন নিয়ম নাই, প্রতিটি দিনকে আনন্দের করা যায়। স্পেশাল করা যায় সব দিন।

২৫ তারিখ রাতে মনি তার ভাবির জন্য

কেনা বইগুলো উপহার দিয়ে দিল। আর ভাবিকে একরকম হুমকি দিয়েই রাজি করাল যে তারা পরদিন বিকেলে ঘুরতে যাচ্ছে। রাইসা (মনির ভাবি) এত কিছুর কারণ খুঁজে পাচ্ছে না। জিজ্ঞেস করায় মনি বলল যে, সে প্ল্যান করেছিল এবারের মত সে ভাবির জন্মদিন পালন করবে। কিন্তু এই সিদ্ধান্তটা ঠিক ছিল না। এতে আল্লাহ্ অসন্তুষ্ট হতেন।

রাইসা ততক্ষনে বুঝে গেছেন সেইদিন তাহলে মা এইজন্যই রাজি হচ্ছিলেন না। হঠাৎ উপহার পেয়ে রাইসা বেশ খুশিই হল। একটু পর লুকিয়ে রাখা কিছু একটা বের করতে লাগল মনি। সেটা দেখে মাহমুদ

(মনির ভাই) আর রাইসা বেশ অবাকই হল।

তারা একসাথে বলে উঠল, এটা আবার কি? তখন এক গাল হেসে মনি বলল, এটা তোমাদের দুইজনের জন্য সারপ্রাইজ। জানো মিষ্টি ভাবি, ভাইয়া দেশের ৩৫ টা জেলা ঘুরেছে, বান্দরবানেও গিয়েছে, কিন্তু নীলগিরিতে যায়নি কখনো। এর কারণ সেখানে তার বউ এর সাথে যাবে বলে ঠিক করে রেখেছে। এখন তো তুমি এসেছ। তাই এই শীতে ভাইয়া আর তুমি মিলে যাবে।

মাহমুদ অবাক হয়ে বলল, তুই এটা ম্যানেজ

করলি কিভাবে? তখন মনি বলল, আমি আব্বুকে বলে রেখেছিলাম। আব্বুর বন্ধু আশরাফ আঙ্কেল কয়দিন আগে একটা কাজে বান্দরবান গেলে আব্বু তাকে দিয়ে নীলগিরি রিসোর্ট বুকিং করিয়েছিলেন। আর বুকিং এর ডকুমেন্ট আমাকে দিয়েছেন। রাইসা কিছু বলতে যাবে আর তখনই মনির মা এসে ওদের ডেকে নিয়ে বৈঠক খানায় বসালেন।

ঘুমোতে যাওয়ার আগে প্রতিদিন মনিদের বাসায় ইসলামিক আলোচনা করা হয়। একেকদিন একেকজন আলোচনা করে থাকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। পরেরদিন কি আলোচনা করা হবে তা আগেরদিন ঠিক করে দেয়া হয়।

তখনও মনির বাবা আসেন নাই আলোচনার জন্য। এই ফাঁকে মাহমুদ তার মায়ের কাছে মনির কাণ্ড বলছে। তাদের মাও উত্তরে বলছেন, তোকে তো মনে হয়

পাগলীটা একটা কথা বলে নাই যে সে এবার ঈদে জামা না নিয়ে টাকাটা বাবার

হাতে দিয়ে বলেছে নীলগিরি রিসোর্ট বুকিং এর জন্য এর সাথে আরও কিছু টাকা যোগ করে যেন। তোদের বাবা নিষেধ করলেও পাকনা বুড়ি কথা শোনে নাই, সে একটু হলেও কন্ট্রিবিউট করবেই এই জেদ করছিল। পরে তোর বাবা বাধ্য হয়ে টাকাটা নিয়েছে। সব কিছু শুনে মাহমুদ অবাক না হয়ে পারল না। আনন্দে রাইসার চোখ ছল ছল করে উঠল। তখন মাহমুদ মনিকে বলল,

তুই এত ভাল কেন পাঁজি মেয়ে। মনি হেসে বলল, তোমরা ভাল মানুষ বলেই আমাকে ভাল বল।

[গল্পটি "রাইসা খাইরুল তিয়াশা" (মনির ভাবি) এর ডায়রি থেকে সংগৃহীত]

==============================================

আমারো এমন একটা মিষ্টি ভাবি চাই, যার

দুষ্ট ননদ হব আমি। ইশশ কবে আসবে সেই শুভদিন!! আমিও চাই এমন ভাবির সাথে ভালবাসার গল্প তৈরি করতে। হয়তো এমনি করে হাজারো মুনমুনি আর রাইসারা প্রতিদিন অসংখ্য পারিবারিক বন্ধনের গল্প রচনা করে যাচ্ছে। যা কোনদিন প্রকাশিত হবে না। ধর্মীয় অনুশাসন, পারিবারিক মূল্যবোধ, মা-বাবার আদর সোহাগ আর ভাইবোনের মায়ায় জড়ানো খুনসুটি সব মিলিয়ে তাদের ভালবাসার গল্প। পৃথিবীতে মানব জাতির আবির্ভাবের পর থেকে অসংখ্য অলিখিত পারিবারিক বন্ধনের গল্প রচিত হয়েছে যার কোন ইয়ত্তা নেই। আগের সেই মানুষগুলো আর নেই, একদিন আমরাও থাকব না কিন্তু এই মিষ্টি মধুর ভালবাসাগুলো শেষদিন পর্যন্ত রয়ে যাবে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এই ভালবাসা হস্তান্তরিত হতে থাকবে। পরিবার থেকে পরিবারে ছড়িয়ে পড়ে এই একই গল্প। শুধু গল্পের চরিত্র আর প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন ঘটে কিন্তু গল্পের মূল কাহিনী একই থাকে। অটুট থাক এই মায়ার বাঁধন। মৃত্যুর পর জান্নাতেও ছড়িয়ে পড়ুক এই ভালবাসার সুবাস।

[[এই গল্পে যে ধর্মীয় অনুশাসন বা জন্মদিন পালন না করার কথা বলা হয়েছে এটা অনেকের ভাল নাও লাগতে পারে। তাদেরকে বলছি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে এমন হাজারো পরিবার আছে। আর এটা তেমনি একটা পরিবারের গল্প। তাদের বিশ্বাসকে ছোট করবেন না দয়া করে, আপনি ধর্মীয় বিধান মানতে নাই পারেন তাই বলে আপনাকে কেউ অধিকার দেয় নাই অন্যের বিশ্বাসকে হেয় করার। জাযাকাল্লাহ খায়ের]

[লেখাটি ফেসবুকের Syeda Jarifa আপুর ওয়াল থেকে সংগ্রহীত]

বিষয়: বিবিধ

২৮৫০৩ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

292170
০৭ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১০:৩৩
অবাক মুসাফীর লিখেছেন : অটুট থাক এই মায়ার বাঁধন। মৃত্যুর পর জান্নাতেও ছড়িয়ে পড়ুক এই ভালবাসার সুবাস। valo laglo ...
০৭ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১০:৪৪
235737
মুসা বিন মোস্তফা লিখেছেন : মুসাফীর ভাই আপনাকে ধন্যবাদ
292221
০৮ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০২:০০
আফরা লিখেছেন : এটা তো এই ব্লগেই আগে ও পড়েছি ।
০৮ ডিসেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৪
236009
মুসা বিন মোস্তফা লিখেছেন : কোথায় Liar Liar
০৮ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:১৬
236041
আফরা লিখেছেন : এই ব্লগেই মেয়ে ব্লগার শেয়ার করেছিল আমার এখন নাম মনে নেই ।এটা আমি পড়েছি এটা ঠিক মনে আছে কারন বিডি ব্লগ ছাড়া আমি আর কোথাও বাংলা পড়ি না ।
০৮ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১০:১৬
236080
মুসা বিন মোস্তফা লিখেছেন : Syeda Jarifa আপুর হতে পারে । তবে আমি উনাকে কোনদিনই ব্লগে দেখি নি টুডে তো নয় অন্য ব্লগেও নয় । নিক ইউজ করতে পারে Straight Face Straight Face
০৮ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১০:২০
236086
আফরা লিখেছেন : হয়ত সেটা হবে ।ধন্যবাদ ।
292266
০৮ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ০৯:১২
নিরবে লিখেছেন : আমার ভাবি কবে হবে?
০৮ ডিসেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৫
236010
মুসা বিন মোস্তফা লিখেছেন : আগে বড় হই Tongue Tongue
292518
০৮ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১০:২৯
নোমান২৯ লিখেছেন : নিরবে লিখেছেন : আমার ভাবি কবে হবে? আর আমরা কবে দেবর হবো? Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor
০৮ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১১:১৫
236105
মুসা বিন মোস্তফা লিখেছেন : Crying Crying Crying Crying Crying
০৮ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১১:৩৫
236111
নোমান২৯ লিখেছেন : Worried Worried Worried Worriedআমি আবার কি করিলুম?
০৯ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১২:০৮
236124
মুসা বিন মোস্তফা লিখেছেন : দেবর হবার জন্য আপনার পেট ফাইট্যা যাইতেছে দেখে কান্না পেলো
০৯ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১২:১৮
236128
নোমান২৯ লিখেছেন : Time Out Time Out Time Out Time Outআমার উপর ছাপান ক্যানphbbbbt phbbbbt phbbbbt?আপনার লেখা দেখেই তো....।
০৯ ডিসেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১৬
236402
মুসা বিন মোস্তফা লিখেছেন : Talk to the hand Talk to the hand Talk to the hand Talk to the hand
293663
১২ ডিসেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:৫৯
আবু বকর সিদ্দিক লিখেছেন : ধন্যবাদ Rose Rose Rose
১২ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:২০
237348
মুসা বিন মোস্তফা লিখেছেন : Good Luck Good Luck Good Luck
378783
১৭ অক্টোবর ২০১৬ রাত ০৯:৪৩
লুকোচুরি লিখেছেন : গল্পটা লিখেছিলাম কিভাবে, আর এটাকে কেটেকুটে এডিট করে যাচ্ছেতাই অবস্থা করেছে, উপরন্তু যিনি ফেসবুকে দিয়েছেন তিনি নিজের নামে চালিয়েছেন। এটা আমার ভাবীর জন্য লেখা গল্প ছিল। ফেসবুকের একটা পেইজেও প্রকাশ করা হয়েছিল ভাবীকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য। যাই হোক যিনি চুরি করেছেন, নিজের অজান্তেই গল্পের মেসেজ অন্যকে জানিয়েছেন। এটা একটা গল্প, গল্পের নাম "মায়ার বাঁধন" ভাবীর ডায়রি থেকে নেয়া কিছু না।
১৬ ডিসেম্বর ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:০৭
315040
মুসা বিন মোস্তফা লিখেছেন : Crying

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File