মাদকাসক্ত মায়ের টাকা যোগারে ছেলের বন্ধ্যাকরণ !!!
লিখেছেন লিখেছেন মুসা বিন মোস্তফা ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১২:৫১:২৭ দুপুর
২২ বছরের যুবক অনিক ইসলাম তুহিন। অবিবাহিত এ যুবক কোন দিন জনক হতে পারবেন না। বিয়ের আগেই ভুল বুঝিয়ে তাকে করানো হয়েছে পুরুষদের জন্য স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ছুরিবিহীন ভ্যাসেকটমি (এনএসভি)। রাজধানীর গাবতলীর বাসিন্দা তুহিন এজন্য একজন দালালকে দায়ী করেছেন। একই ভাবে সমপ্রতি রাজশাহীতে এক যুবককে স্থায়ী বন্ধ্যাকরণ করা হয়েছে। অর্থের লোভ দেখিয়ে এভাবেই প্রায়ই অবিবাহিত সহজ-সরল যুবকদের বন্ধ্যাকরণ করছে এই কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত দালালরা। মাদকাসক্ত অনেক অবিবাহিত যুবক স্বেচ্ছায় গ্রহণ করছে এই পদ্ধতি।
এনএসভি গ্রহণকারী প্রত্যেককে সরকারের এই কর্মসূচির আওতায় ২০০০ টাকা করে দেয়া হয়। যে ব্যক্তির মাধ্যমে এই পদ্ধতি গ্রহণ করা হয় ওই ব্যক্তিকে দেয়া হয় ৩০০ টাকা। স্থানীয়রা তাদের দালাল বলেই জানেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে তারা স্বেচ্ছাসেবক বা প্রেরণকারী হিসেবে পরিচিত। দালালরা সরকারি তহবিল থেকে ৩০০ টাকা পেলেও এনএসভি গ্রহণকারী ব্যক্তির প্রাপ্ত ২০০০ টাকাতেও ভাগ বসায়। কোন কোন ক্ষেত্রে এর অর্ধেকেরও বেশি টাকা কেড়ে নেয় তারা। মূলত এই টাকার লোভেই অবিবাহিত যুবকদের ভুল বুঝিয়ে বন্ধ্যাকরণে উৎসাহ দেয় কোন কোন দালাল।
রাজধানীর গাবতলীর বাগবাড়ীর বড়বাজারের বাসিন্দা অনিক ইসলাম তুহিন জানান, দালালের পাল্লায় পড়ে তার মা তাকে বন্ধ্যাকরণ করিয়েছেন। অবিবাহিত এই যুবক বলেন, যদি জানতাম এটা জন্মনিয়ন্ত্রণের স্থায়ী পদ্ধতি তাহলে এক কোটি টাকা দিলেও এটা করতাম না। জন্মগতভাবেই তুহিন শারীরিক প্রতিবন্ধী। তার বাম হাত নিষ্ক্রিয়। এক পায়েও আছে সমস্যা। টেনে টেনে হাঁটেন। প্রায় পাঁচ বছর আগে তার পিতা আবুল কাশেমের সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে মা আরুবিননেসা ডলির। এর মধ্যে তার পিতা চলে যান দেশের বাইরে।
তুহিন জানান, তারপর থেকেই মা ডলি হয়ে যান মাদকাসক্ত। একদিন তাকে প্রস্তাব দেন, একটা চিকিৎসা আছে তোর হাত-পা ভাল হয়ে যাবে। তুই ঠিকমতো হাত নাড়াতে পারবি। হাঁটতে পারবি। তোকে নিয়ে সেখানে যাবো। তবে সেখানে তোকে একটা মিথ্যা কথা বলতে হবে। নতুবা ডাক্তাররা চিকিৎসা করবে না।
তুহিন তখন জানতে চান তাকে সেখানে কি বলতে হবে। মা জানান, বলতে হবে আমি বিয়ে করেছি। দু’টি বাচ্চা আছে। আমি আর বাচ্চা নিতে চাই না।
সাত-পাঁচ না ভেবে তুহিন রাজি হন। মিরপুরের এক দালাল তাদের নিয়ে যায় মোহাম্মদপুরের ফার্টিলিটি সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার এবং মা ও শিশু স্বাস্থ্য হাসপাতালে। হাসপাতালে ঢোকার আগে ডলি ও ওই দালাল তাকে আবার মনে করিয়ে দেয় চিকিৎসককে কি বলতে হবে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই এনএসভি’র মাধ্যমে সারাজীবনের জন্য তিনি হারান তার প্রজনন ক্ষমতা। আবুল কাশেম বলেন, ছেলেকে আর বিয়ে করাতে পারবো না। অন্য একটা মেয়ের জীবন তো নষ্ট করা যাবে না। এ বিষয়ে ডলি জানান, দালাল তাকে বলেছিল পরে অস্ত্রোপচার করে ঠিক করা যাবে। না বুঝে মাদকের টাকার জন্য তিনি ছেলের সর্বনাশ করেছেন। তবে এ জন্য তিনি দালালকে দায়ী করেন। কিন্তু দালালের পরিচয় তিনি দিতে পারেননি। ডলি জানান, মিরপুরে অল্প সময়ে তার সঙ্গে পরিচয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোহাম্মদপুরের ওই প্রতিষ্ঠানে এ রকম দালাল আছেন নয়জন। তবে তারা কেউ এই ঘটনা স্বীকার করেননি। দালালদের একজন এনামুল হক জানান, তারা যারা এখানে নিয়মিত কাজ করেন তারা ভুল বুঝিয়ে কাউকে এনএসভি করান না। বাইরের কেউ এটা করতে পারে।
সূত্রে জানা গেছে, গত বছর সারা দেশে এনএসভি পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন ১ লাখ ১২ হাজার ৪৭২ জন। চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত গ্রহণ করেছেন ৫৭ হাজার ২৪৮ জন। কিন্তু এনএসভি করাতে গিয়ে শারীরিক কারণে কতজনকে তা করানো হয়নি। এছাড়া একবার এই পদ্ধতি গ্রহণের পর অর্থের লোভে দ্বিতীয়বার তা গ্রহণ করতে গিয়ে কতজন সংশ্লিষ্টদের কাছে ধরা পড়েছেন এর কোন পরিসংখ্যান পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে নেই বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। মোহাম্মদপুরের ফার্টিলিটি সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারে এবং মা ও শিশু স্বাস্থ্য হাসপাতালে গত ২৮শে অক্টোবর পর্যন্ত ১১ জন টাকার লোভে দ্বিতীয়বার এনএসভি করাতে গেলে চিকিৎসকের কাছে ধরা পড়েন। একই ভাবে গত ১লা জুলাই ২৫শে অক্টোবর পর্যন্ত থেকে আজিমপুরের মা ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে দ্বিতীয়বার এনএসভি করাতে এসে ধরা পড়েছেন ৯৬ জন। এ ব্যাপারে ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক মহসিন আলম জানান, এই পদ্ধতি একবারই গ্রহণ করা যায়। অনেকে মনে করেন আবার গ্রহণ করে টাকা নিয়ে যাবেন। চিকিৎসক বুঝতে পারবেন না। এটা তাদের ভুল ধারণা। তবে তিনি স্বীকার করেন, টাকার লোভে সাধারণত মাদকাসক্তরাই দ্বিতীয়বার এনএসভি করতে আসে। এমনকি অবিবাহিত মাদসক্তরা নিজেকে বিবাহিত পরিচয় দিয়ে স্থায়ী বন্ধ্যাকরণের এই পদ্ধতি গ্রহণের চেষ্টা করে। তবে চিকিৎসকরা চেষ্টা করেন কোনভাবেই যেন অবিবাহিত বা নিঃসন্তান অথবা এক সন্তানের পিতা কেউ ভুল বুঝে বা স্বেচ্ছায় যেন এই পদ্ধতি গ্রহণ না করেন। অন্তত দু’টি সন্তান আছে এ রকম ব্যক্তির জন্য এই পদ্ধতি প্রয়োজন।
আজিমুপরের মা ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের অধীক্ষক ডা. ইশরাত জাহান জানান, অবিবাহিত, নিঃসন্তান বা এক সন্তানের কম কেউ যেন ভুল তথ্য দিয়ে টাকার লোভে এই পদ্ধতি গ্রহণ না করে এজন্য স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। তারাই এনএসভি গ্রহণকারী সম্পর্কে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন। কিন্তু বাস্তবতা সমপূর্ণ ভিন্ন। আজিমুপরের মা ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সামনের সড়কের দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন স্বেচ্ছাসেবক বা দালালরা। গত ২৫শে অক্টোবর দুপুরে ওই সড়কে রিকশা (নম্বর-২০৬৬) চালাচ্ছিলেন গাইবান্ধার বাসিন্দা সুরুজ্জামান। হঠাৎ পথ আগলে দাঁড়ায় আল-আমিন নামক দালাল। সুরুজ্জামানকে বলে, তোমাকে যদি ২০০০ টাকা আয় করিয়ে দেই ক্ষতি আছে? কথা শুনে চমকে ওঠেন সুরুজ্জামান। আল-আমিন বলে, একটা ইনজেকশন নিবা। ব্যস। শরীরের কোন ক্ষতি নেই। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে টেনে নিয়ে যায় আল-আমিন। এনএসভি গ্রহণ করে বের হওয়ার পর চা পানের কথা বলে সড়কের এক পাশে নিয়ে যায় সুরুজ্জামানকে। তাকে দেয়া ২০০০ টাকায় ভাগ চায় আল-আমিন। এক পর্যায়ে প্রায় জোর করেই তার কাছ থেকে ১০০০ টাকা কেড়ে নেয় এই দালাল।
পরে সুরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, স্থায়ী বন্ধ্যাকরণের বিষয় তার স্ত্রীকে জানানোর পর বাড়িতে খুব ঝামেলা হচ্ছে। দালালের কথায় চিকিৎসককে তিনি দু’টি সন্তান রয়েছে জানালেও প্রকৃতপক্ষে তার একটি সন্তান। ওই সময়ে তার টাকার খুব প্রয়োজন ছিল যে কারণে তিনি দালালের কথায় রাজি হয়েছেন। এই প্রতিষ্ঠানের দালালদের মধ্যে আরও রয়েছে জামাল মাঝি, চান মিয়া মাঝি, আলী মিয়া, নয়ন মিয়া, সোহেল মিয়া, ওয়ালী উল্লাহ, রিয়াজ মিয়া ও সেন্টু।
এদিকে, রাজশাহীতে সদ্যবিবাহিত এক বাকপ্রতিবন্ধী যুবককে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে এনএসভি করা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতি (এফপিএবি)-র রাজশাহী কার্যালয়ে গত ১৪ই অক্টোবর চিকিৎসক খাজা ফেরদৌস তাকে এনএসভি করান। এ বিষয়ে ওই যুবকের মা বোয়ালিয়া থানায় একটি অভিযোগ করেছেন। এতে তিনি উল্লেখ করেছেন, নওগাঁর মান্দা উপজেলার খোকন ওরফে পরশ ও রাজশাহীর নওদাপাড়ার সাদিকুল ওই যুবককে অর্থের লোভ দেখিয়ে বন্ধ্যাকরণ করিয়েছে। এ ব্যাপারে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আইইএম বিভাগের পরিচালক ড. নাসির উদ্দিন বলেন, সরকারের এই কর্মসূচি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত সফল ভূমিকা পালন করছে। সরকারি কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীর অবহেলার কারণে এই কর্মসূচি বা মানুষের কোন ক্ষতি হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান। মানবজমিন
বিষয়: বিবিধ
১২৩৮ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এ কোন দেশ!!!
ফ্যামিলি প্ল্যানিং কর্মকর্তাঃ ঘটনা কি?
মহিলাঃ সবই উপরওয়ালার দান।
অথর্ব লোকজন নিয়ে কর্মকর্তা বাড়ির দোতলায় চলে গেল যেখানে খোদ বাড়িওয়ালা থাকতেন। সবাই চেপে ধরে বেচারা বাড়িওয়ালার ভেসক্টমি করে দিল।
মন্তব্য করতে লগইন করুন