আব্বু, এটা আমার শ্বশুর বাড়ি নয় এটা টর্চার সেল

লিখেছেন লিখেছেন মুসা বিন মোস্তফা ১৬ নভেম্বর, ২০১৪, ০৫:২৫:০৬ বিকাল



বাবার কাছে ফোন করে প্রায়ই কান্নাকাটি করত মা-হারা ডা. শামারুখ মাহজাবীন সুমী। মৃত্যুর আগের দিনও ফোনে বাবা নুরুল ইসলামকে বলেছিলেন, আব্বু, এটা আমার শ্বশুর বাড়ি নয় টর্চার সেল, তোমরা ঢাকায় চলে আসো। আমাকে টর্চার সেল থেকে নিয়ে যাও। আমি তোমাদের কাছে থেকে এফসিপিএস করব।

ডা. শামারুখ তার বাবাকে বলতেন, তারা (শ্বশুরবাড়ির লোকজন) আমাকে বাসায় চাকরানীর মতো সব কাজ করায়। সকালে নাস্তা বানানো, দুপুর ও রাতের খাবার সব রান্না করায়। পান থেকে চুন খসলেই গালিগালাজ আর চড়-থাপ্পড় দেয়।

শামারুখের বাবা প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম বলেন, এসব শোনার পরও মানসম্মান আর লোকলজ্জার ভয়ে সব মুখ বুঝে সহ্য করে যাওয়ার পরামর্শ দিতাম। কিন্তু সেই মুখ বুঝে থাকার পরিণতি এত ভয়াবহ হবে সেটা ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারিনি।

২ বছর আগে শামারুখের মা মারা যান। তাই বাবা নুরুল ইসলাম তাকে আদর করতেন অন্য সবার চেয়ে বেশি। তিনি জানান, যশোর-৫ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) খান টিপু সুলতানের ছেলে হুমায়ুন সুলতানের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার সময় তাদের প্রতারণা বুঝতে পারেননি তিনি। শামারুখের শাশুড়ি জেসমিন আরা একজন উচ্চশিক্ষিত ডাক্তার। হলিফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের প্রফেসর। একজন এমপি ও তার উচ্চশিক্ষিত স্ত্রী আপন ছেলেকে নিয়ে মিথ্যা বলতে পারেন এমনটি ধারণাও করেননি নুরুল ইসলাম। তারপর জেসমিন আরা ছিলেন ডা. শামারুখের প্রিয় শিক্ষিকা। সেই শিক্ষিকার কথায় তারই পুত্রবধূ হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হল শামারুখকে। শামারুখ রাজধানীর হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করেছেন। তিনি কলেজের ডিবেট ক্লাবের প্রেসিডেন্টও ছিলেন। ন্যাশনাল ডিবেট ফাউন্ডেশনের কো-অর্ডিনেটর হিসেবেও কাজ করেছেন। শালীন ও ভদ্র ব্যবহারের জন্য পুরো কলেজে সুনাম ছিল তার। সেই সুনাম থেকেই নিজের ছেলে হুমায়ুনের বউ করে নেন ডা. জেসমিন আরা।

নুরুল ইসলাম বলেন, শ্বশুরবাড়িতে প্রায়ই নির্যাতন করত শামারুখের স্বামী হুমায়ুন সুলতান সাদাব, শ্বশুর খান টিপু সুলতান ও শাশুড়ি ডা. জেসমিন আরা। সব নির্যাতন মুখ বুঝে সহ্য করত শামারুখ। সম্প্রতি নির্যাতনের মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ায় তা আর নিজের মধ্যে চেপে রাখতে পারছিল না। তখন আমাকে জানায়, তার লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়েছে। শ্বশুরবাড়ি তার জন্য টর্চার সেল-এ পরিণত হয়েছে।

বাবা নুরুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, আমি যদি আমার মেয়েকে নিয়ে আসতাম, তাহলে তাকে আজ এই নির্মম ঘটনার শিকার হতে হতো না।

তিনি অভিযোগ করেন, হত্যাকাণ্ডের ৩ দিন পার হলেও পুলিশ এখনও খান টিপু সুলতান ও ডা. জেসমিন আরাকে গ্রেফতার করেনি। কারণ তারা রাজনৈতিক প্রভাবশালী। এই প্রভাব খাটিয়ে ময়নাতদন্তের প্রকৃত রিপোর্ট পাল্টে ফেলার চেষ্টা করছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ডা. শামারুখ মাহজাবীন সুমীকে ধানমণ্ডির বাসা থেকে অচেতন অবস্থায় সেন্ট্রাল হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ডা. শামারুখ ধানমণ্ডির ওই বাসায় শ্বশুর-শাশুড়ি ও স্বামীর সঙ্গে থাকতেন। তাকে হত্যার অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবারই ধানমণ্ডি থানায় টিপু সুলতান, ডা. জেসমিন ও হুমায়ুনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন নুরুল ইসলাম। ঘটনার দিন হুমায়ুন সুলতানকে গ্রেফতার করা হলেও মামলার অপর দুই অভিযুক্ত আসামি টিপু সুলতান ও ডা. জেসমিন আরাকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ধানমণ্ডি থানার এসআই কাজী শরীফুল ইসলাম বলেন, বাসায় অভিযান চালানো হয়েছে। তারা বাসায় নেই। শুনেছি যশোরে গেছেন।

শনিবার সকালে এই প্রতিবেদক ধানমণ্ডির ৬ নম্বর রোডের ১৪ নম্বর বাড়িতে যান। ওই বাড়ির তিন তলায় থাকেন খান টিপু সুলতান। বাসার ওপরের তলায় যেতে বাধা দেন দারোয়ান প্রকাশ মণ্ডল। তিনি জানান, টিপু সুলতান ও তার স্ত্রী ডা. জেসমিন বাসায় নেই। শুক্রবার সন্ধ্যায় গৃহকর্মীকে বাসায় রেখে তারা যশোরে গেছেন। গৃহকর্মীর সঙ্গে কথা বলার জন্য বাসায় যেতে চাইলে তিনি বলেন, স্যারের নিষেধ আছে। বাইরের লোক ঢোকা যাবে না। আপনি গেলে আমার চাকরি থাকবে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টিপু সুলতান যশোরে যাননি। পুলিশের ধারণা, যশোরে যাওয়ার কথা বলে তারা আত্মগোপন করেছেন। এদিকে ডা. শামারুখের হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছেন হলি ফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। এ দাবিতে আজ রোববার কলেজের সামনে মানববন্ধন করবেন তারা।

হলি ফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপ্যাল অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, শামারুখের মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আমরা শোক প্রকাশ করছি। কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা শনিবার কালো ব্যাজ ধারণ করেন বলে জানান তিনি।

শামারুখের স্বজনরা অভিযোগ করেন, তাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর আত্মহত্যা বলে অপপ্রচার চালান শ্বশুর-শাশুড়ি ও স্বামী। এমবিবিএস শেষ করে এফসিপিএস করতে ও বিসিএস দিতে বাধা দেয় তারা। যৌতুকের জন্য চাপ দিত। মেয়ের সুখের জন্য কয়েক লাখ টাকা ফার্নিচারও দেয়া হয়। এরপরও তার ওপর নির্যাতন চলত।

বৃহস্পতিবার দুপুরে স্ত্রী আত্মহত্যা করেছেন বলে ধানমণ্ডি থানায় সংবাদ দিতে গিয়ে গ্রেফতার হন স্বামী হুমায়ুন সুলতান। ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে শুক্রবার তাকে আদালতে পাঠায় পুলিশ। ওই দিন তার রিমান্ড শুনানি না হওয়ায় তাকে কারাগারে পাঠান আদালত। আজ তাকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাইবে পুলিশ। যুগান্তর

নারীবাদী নেত্রীদের কখনো দেখি নাই এমন ইস্যুতে কিছু করে । আল্লামা শফি তেতুল বলায় তারা নামতে পারে কোমড় বেধে ।কিন্তু এখন মুখও খোলে না

বিষয়: বিবিধ

১৪১৭ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

284901
১৬ নভেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:৪৮
এ,এস,ওসমান লিখেছেন : আমার কিছু বলার নাই। এই সরকারের আমলে তাদের বিচার আশাও করা যায় না।
১৬ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:০৫
228151
মুসা বিন মোস্তফা লিখেছেন : আন্নে কি মনে করেন অন্য সরকার কিছু করবে ? লাখো লাখো মামলা এভাবেই দোষীদের বিচার ছাড়াই শেষ হয়ে যায়
Smug
284916
১৬ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৪
নিরবে লিখেছেন : কান্না ছাড়া কোন পথ নাই
১৬ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫৫
228190
মুসা বিন মোস্তফা লিখেছেন : Crying Crying
আরেকটা উপায় আছে । এসব জঞ্জাল গুলোকে বস্তায় বেধে ইন্ডিয়াতে পাঠানো
284934
১৬ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:৪৭
সন্ধাতারা লিখেছেন : Valuable writing vaiya. Jajakallahu khair.
১৬ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১০:৪০
228249
মুসা বিন মোস্তফা লিখেছেন : বারাকাল্লাহু ফিহ
284946
১৬ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:১৩
ফেরারী মন লিখেছেন : এতেই বুঝা গেলো বড় লোক হলেই সুখী হওয়া যায় না। Shame On You
১৬ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১০:৪০
228250
মুসা বিন মোস্তফা লিখেছেন : হেইডা পুরান কতা Don't Tell Anyone
284947
১৬ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:২৬
লোকমান বিন ইউসুপ লিখেছেন : এই লিংকটি স্টিকি করা হোক।
১৬ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১০:৪৩
228255
মুসা বিন মোস্তফা লিখেছেন : আমি ছেলে মানুষ Tongue m/ m/ m/ m/
284961
১৬ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১০:৪৪
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : I know maximum users রাজনৈতিক মন্তব্য করে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক আদর্শের লোকজনকে গালাগালি করে মনের ঝাল মেটাবেন কিন্তু আমি এসবের মাঝে যেতে চাইনা। আসলে দুনিয়াবী জাকজমকের প্রতি আমাদের লোভ এত পরিমান বেড়ে গেছে যে, আমরা দিন দিন লোভী হয়ে উঠছি। নিজেদের ইসলাম মানা পরিবার বলে দাবিদার ব্যাক্তিরাও সন্তানদের বিয়ের ব্যাপারে টাকা পয়সা আলা সো কলড স্মার্ট পরিবারের ছেলে-মেয়েদেরকেই বেছে নিচ্ছে। পারিবারিক যশ-ক্ষাতি-প্রতিপত্তি এসবই প্রধান যদিও এসব তরুণ-তরুণীরা পথভ্রষ্ট। অথচ বিয়ের ব্যাপারে স্পষ্টভাবে কোরান-হাদিসে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, মুমিন বিয়ে করবে শুধুমাত্র মুমিনকে। কাফির,মুশরিক,মুনাফিক,দুঃচরিত্র,ব্যাভিচারী তার জন্য হারাম। আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো বলেই দিয়েছেন বিয়ের ব্যাপারে তোমরা যদি বর/কণের মুমিন হবার ব্যাপারটি পাত্তা না দিয়ে সুন্দর চেহারা,ধন-সম্পদ,পারিবারিক যশ-ক্ষাতি ইত্যাদিকে প্রাধান্য দাও তবে অবশ্যই তোমরা ধ্বংশ হবে। এসবের বাস্তব উদাহরণই শামারুখ মাহজাবীনরা। এর মাঝে হয়ত আমাদের শিখার আছে। আর আমি অবাক হচ্ছি শামারুখের বাবার কান্ডজ্ঞানহীন আচরণ দেখে মেয়ে তাকে যখন তার দুরাবস্হার কথা জানাল এবং নিয়ে যাবার জন্য অনুরোধ করল এরপরেও বাবা হয়ে সে কিভাবে মেয়েকে শ্বশূরবাড়ি ফেলে রাখে??? আমি যদি এই লোকের চাইতে বয়সে বড় হতাম তবে নির্ঘাত তার গালে চড় মেরে দাগ বসিয়ে দিতাম।
১৬ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১১:২৯
228287
লোকমান বিন ইউসুপ লিখেছেন : পরিমিতিবোধ চর্চা করুন।
১৭ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:২৬
228436
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : ঘাটতি আছে বলে মনে হচ্ছে?? আপনাদের প্রধান সমস্যা হল আপনারা সংগঠনের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে চিন্তা করেন বাস্তবতাকে আর তার মাঝেই সমাধান খুঁজেন। উদ্দেশ্য, নিজের সংগঠনকে বড় করে দেখানো। যদিও আপনি কিছুটা ব্যাতিক্রম তবে আলাদা নন।
284983
১৬ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১১:৩২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : নারিবাদ চাঁদাদাতা কোম্পানিগুলির দড়িতে বাধা!
285034
১৭ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০২:০১
আফরা লিখেছেন : কিছু মানুষ আর মানুষ নাইরে ভাইয়া পশুর চেয়ে ও খারাপ হয়েছে । অনেক কষ্ট পাইলাম । Rolling Eyes Rolling Eyes

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File