সন্তান মাতাপিতার অবাধ্য হয় যে কারণে
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ মাসুম সরকার আযহারী ১১ মে, ২০১৫, ০৩:০৫:৩৩ দুপুর
সন্তান পিতামাতার অবাধ্য হওয়ার পিছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। নিম্নে কয়েকটি কারণ সংক্ষেপে আলোচনা করা হলঃ
১. অজ্ঞতা ও মূর্খতা: মাতাপিতার অবাধ্যতার ইহকালীন-পরকালীন খারাপ পরিণতির এবং তাদের সাথে সদ্ব্যবহারের সুফলের ব্যাপারে অজ্ঞতা মানুষকে অবাধ্যতার দিকে পরিচালিত করে এবং সদ্ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখে।
২. কুশিক্ষা: পিতামাতা সন্তানদেরকে তাকওয়া, উত্তম আচরণ, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা, উন্নত চরিত্র গঠনের শিক্ষা না দিলে তারা ঔদ্ধত্য ও অবাধ্যতার দিকে ধাবিত হবে।
৩. অসঙ্গতিপূর্ণ আচরণ: পিতামাতা যখন সন্তানকে কোনো ভালকাজের শিক্ষা দেয়, অথচ তারা উক্ত শিক্ষানুযায়ী আমল করে না, বরং এর বিপরীত কাজ করে, তখন এই বিষয়টি ঔদ্ধত্য ও অবাধ্যতার উপলক্ষ হয়ে উঠে।
৪. অসৎসঙ্গের প্রভাবঃ বখাটে বন্ধু-বান্ধবরা সন্তানদেরকে নষ্ট করে ফেলে এবং তাদেরকে পিতামাতার অবাধ্য হওয়ার ব্যাপারে দুঃসাহস যোগায়। পিতামাতার প্রতি অত্যাচার ও নির্দয় ব্যবহার করতে উস্কানি দেয়।
৫. নিজেদের পিতামাতার অবাধ্যতার ফল : পিতামাতা তাদের নিজেরদের পিতামাতার সাথে অবাধ্য আচরণ করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদেরকে তাদের সন্তানদের অবাধ্যতা দ্বারা শাস্তি দেওয়া হয়ে থাকে। এতে সন্তানেরা অবাধ্য আচরণে তাদের পিতামাতার অনুসরণ করে।
৬. তালাকের ক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় না করাঃ পিতামাতার মাঝে কখনো বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটলে সন্তানরা যখন মায়ের কাছে যায়, সে তাদের পিতার দোষ-ত্রুটি বলতে থাকে এবং পিতাকে এড়িয়ে চলতে উপদেশ দেয়। তারা যখন পিতার কছে যায়, সেও তাদের মায়ের মত একই কাজ করতে বলে। ফলে সন্তানেরা পিতামাতা সকলেরই অবাধ্য হয়ে উঠে; আর এই অবাধ্য হয়ে উঠার পিছনে পিতামাতা উভয়ে দায়ী।
৭.সন্তানদের সাথে অসমআচরণ: মাতাপিতা সন্তানদের সকলকে সমান দৃষ্টিতে না দেখলে সন্তানদের মাঝে পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতার জন্ম দেয় এবং তাদেরকে পিতামাতার প্রতি ঘৃণা পোষণ ও তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার দিকে নিয়ে যায়।
৮. সুখ-শান্তি ও আবেগকে অগ্রাধিকার দেওয়া: কোনো কোনো মানুষের নিকট যখন বৃদ্ধ ও অসুস্থ পিতামাতা বিদ্যমান থাকে, তখন সে তার ধারণা ও বিশ্বাস অনুযায়ী নিজের সুখ-শান্তিকে প্রাধান্য দেওয়ার কারণে তাদের থেকে মুক্তি পেতে চায়— হয় তাদেরকে অক্ষম অবস্থায় ছেড়ে যাওয়ার মাধ্যমে, অথবা তাদেরকে বাড়িতে রেখে অন্য কোথাও বসবাস করার মাধ্যমে। অথচ সে জানে না যে, তার সুখ-শান্তি নিহিত রয়েছে তার পিতামাতার সাথে সার্বক্ষণিক অবস্থান ও তাদের সেবা-যত্ন করার মধ্যে।
৯. সঙ্কীর্ণ মানসিকতা: কিছু কিছু সন্তান চায় না যে, তার ঘরে কেউ সার্বক্ষণিক অবস্থান ও চলাফেরা করুক। সুতরাং সে যখন ঘরের আসবাবপত্র নষ্ট করে, তখন সে ভীষণভাবে রেগে যায়। আর এটা পিতামাতাকে কষ্ট দেয়। অনুরূপভাবে কিছু সন্তান এমন আছে যারা পিতামাতার আদেশ-নিষেধ পালন করতে বিরক্তি প্রকাশ করে। বিশেষ করে পিতামাতার কোনো একজন যখন রূঢ় ও কঠোর প্রকৃতির হয়।
১০. সন্তানদেরকে সদ্ব্যবহারের প্রতি উৎসাহ না দেয়াঃ সন্তান যখন সদ্ব্যবহার করে তখন কোনো কোনো পিতামাতা তাদেরকে এ আচরণের জন্য ধন্যবাদ দিতেও কৃপণতা করে। যদিও পিতামাতার অধিকার আদায় করা সকল অবস্থায় ওয়াজিব। কিন্তু সন্তানগণ যখন পিতামাতার পক্ষ থেকে উৎসাহ-উদ্দীপনা, দো‘আ ও সহযোগিতা না পায়, তখন অনেক সময় তারা বিরক্তিবোধ করে এবং পিতামাতার সাথে ভাল ব্যবহার করা ছেড়ে দেয় অথবা এই ক্ষেত্রে কমতি করে।
১১. খারাপ স্ত্রীর প্রভাব: কখনও কখনও মানুষ তার স্ত্রীর দ্বারা বিপদগ্রস্ত হয়। সে আল্লাহকে ভয় করে না এবং কারও অধিকার সংরক্ষণ করে না। সে তার স্বামীকে তার পিতামাতার অবাধ্য হওয়ার জন্য অথবা তাদেরকে ঘর থেকে বের করে দেওয়ার জন্য অথবা তাদের প্রতি উত্তম ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়ার জন্য প্ররোচিত করে। যাতে নিজেকে শুধু স্বামীর জন্য নির্দিষ্ট করে নিতে পারে।
১২. পিতামাতার কষ্ট অনুভবের কমতি: ছেলে-মেয়েদের মধ্যে কেউ কেউ আছে যারা তার পিতামাতার প্রতি কোনো খেয়ালই রাখে না। তারা তাদের জীবনের সমস্ত সুখশান্তি কুরবানি করেছে যে সন্তানের ভবিষ্যৎ নির্মানের জন্য, সেই সন্তানই তাদের বিপদের সময় খোঁজ খবর রাখে না!!
বিষয়: বিবিধ
১৯০৩ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক পিতামাতাই যুক্তি ও নিজেদের আচরন এর মাধ্যমে শিক্ষা না দিয়ে কেবল শাসন আর কঠোরতা প্রদর্শন এর মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়াকেই মনে করেন ভাল শিক্ষা দেওয়া। কিন্তু এটা অনেক সময়ই সন্তান এর মনে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
ভালো লাগলো পোস্টটি। প্রতিটি পয়েন্টই বাস্তব ও যুক্তিপূর্ণ। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন