বাহাস (বিতর্ক) নিয়ে বিতর্ক
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ মাসুম সরকার আযহারী ০৭ মে, ২০১৫, ০৭:৫২:০৮ সন্ধ্যা
খুব বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করলাম গত ৪ মে ২০১৫ ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতি ইন্সটিটিউট কর্তৃক আয়োজিত "হায়াতুন্নবী" বিষয়ক বাহাস (বিতর্ক)। অনলাইনে প্রচারিত ভিডিওতে যার শিরোনাম দেয়া হয়েছে "আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত বনাম আহলে হাদীস ভাইদের মধ্যে বাহাস, বিষয়: হায়াতুন্নবী(স)" Click this link । এই বিতর্ক নিয়ে আমার একান্ত ব্যক্তিগত কিছু অভিমত আপনাদের সাথে শেয়ার করার জন্যে এই লেখা।
১। প্রথমত "আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত বনাম আহলে হাদীস" শিরোনামটাই একটা বিতর্কের জন্ম দেয়। কারণ এতে যে কারো মনে প্রশ্ন জাগতে পারে- যারা "আহলে হাদীস" তারা কি তাহলে "আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত" এর বাহিরের কেউ?!!
২। হায়াতুন্নবী (তথা রাসুল (সা) ইন্তেকালের পর আলমে বারযাখে তথা কবর জগতে জীবিত আছেন কি না) এই বিষয়টা একটি মতবিরোধপূর্ণ বিষয়। তাই বিষয়টি নিয়ে একাডেমিক গবেষণা হতে পারে। পক্ষে-বিপক্ষে গবেষণাধর্মী পুস্তক, প্রবন্ধ লেখা যেতে পারে। পক্ষে-বিপক্ষের হাদিসগুলোর সানাদ, মাৎনগুলো চুলচেরা বিশ্লেষণ করে একটা অগ্রাধিকারযোগ্য মতে পৌঁছা সম্ভব।
৩। কিন্তু তা না করে- বিষয়টাকে সাধারণ মুসলিমদের সামনে তুলে ধরলে তাদের উপকারের চেয়ে অপকার বেশী হবে। কারণ কিছু মানুষের আকিদায় সন্দেহ-সংশয় তৈরী হবে। যাদের উলুমুল হাদিস, ফিকহ, উসুলুল ফিকহ, দ্বওয়াবেতুত তারজীহ (অগ্রাধিকারের নিয়ম-নীতি) সম্পর্কে সম্মক ধারনা নাই, তারা বিতর্ক শুনে কোন মতটি বিজয়ী, আর কোনটি বিজিত তা নির্নয় করতে কখনোই সক্ষম হবে না।
৪- এই বিতর্কের যারা আয়োজক, অংশগ্রহণকারী তাদের সৎ উদ্দেশের ব্যাপারে আমার কোন সন্দেহ নেই। তবে মুসলিম উম্মার চরম বিপদের মুহুর্তে এই ধরণের একটা বিষয়কে এত বেশী গুরুত্ব দেয়ার ব্যাপারে আমার যথেষ্ট আপত্তি আছে। তার কারণঃ
ক)- হায়াতুন্নবী বিষয়টি ইলমুল গাইবের (অদৃশ্যের জ্ঞান) সাথে সম্পৃক্ত। তাই এটি তাওকীফী বিষয় যা কুরআন, বিশুদ্ধ হাদিস এবং সাহাবাদের (রা) কথার উপর নির্ভরশীল। এখানে ওলামায়ে কেরামের ইজতিহাদ করার কোন সুযোগ নেই।
খ)- বিষয়টির পক্ষে-বিপক্ষে একাধিক বিশুদ্ধ হাদিস থাকায় কেউ দাবী করার কোন সুযোগ নেই যে "কেবল আমার মতই সঠিক। অন্যেরটা ভুল"।
গ)- হায়াতুন্নাবিতে বিশ্বাস করলে বা না করলে কারো ঈমান থাকবে না এমন দাবী কেউ কখনো করেন নি।
ঘ)- বিতর্কের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে কখনো সত্য পথে আনা যায় না। বরং তার একগুয়েমীর পরিমান আরো বাড়িয়ে দেয়া হয়। কারণ এখানে সত্য-মিথ্যা জানার চেয়ে বিজয়ী হওয়ার মানসিকতা কাজ করে বেশী। কারণ বিতর্কে বিজয়ী-বিজিত হওয়ার সাথে তার সম্মান-অসম্মান জড়িত। তাই যে করেই হোক বিজয়ী হতেই হবে এটাই থাকে সবার প্রধান লক্ষ্য। তাই যুক্তিতে হেরে গেলেও কেউ অপর পক্ষের মত মেনে নিয়েছে এমন দৃষ্টান্ত খুব বিরল ।
ঙ)- এ ধরণের বিতর্কের মাধ্যমে আলেমদের মাঝে পারস্পরিক ঐক্য, সমঝোতার চেয়ে দূরত্ব ও বিদ্বেষই বেশী বাড়বে।
তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে গুরুত্বের অগ্রাধিকারের (ফিকহুল আওলাভিয়াত) ভিত্তিতে আলেম সমাজের ঐক্যের জন্য সহায়ক বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করা দরকার। আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দান করুন।
বিষয়: বিবিধ
২১২০ বার পঠিত, ২১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ।
আপনার সময়োপযোগী বিজ্ঞ আসাধারন আলোচনার সাথে সহমত পোষণ করে বলছি বিভেদ নয় আমরা মানব জাতির মধ্যে ঐক্য চাই শান্তি আর কল্যাণের জন্য। যে যুক্তি মানুষের কল্যাণ ও শান্তি কেড়ে নেয় জন্ম দেয় বিলাপ আর অস্থিরতা তা চিরতরে খতম হোক।
চমৎকার একটি বিষয়ের উপর আলোকপাত করার জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
এই তথতাকথিত ধর্মিয় বাহাস এর অবসান ঘটানর কথা সেখানে এর বৃদ্ধি!!
ﺍِﻧَّﻚَ ﻣَﻴِّﺖٌ ﻭَّﺍِﻧَّﻬُﻢۡ ﻣَّﻴِّﺘُﻮۡﻥَ
“(মুহাম্মদ সা অবশ্যই (একদিন) মারা যাবে - তারাও নি:সন্দেহে একদিন মৃত্যুমুখে পতিত হবে।” [সূরা আঝ- ঝুমার: আয়াত ৩০]
কুরআনুল করীমে এ
বিষয়ে আরো অনেক আয়াত
আছে,
যাতে সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায় আল্লাহ্
সুবহানুহুতা’য়ালা নবীজী (সা এর জান নিয়ে নিয়েছেন। এছাড়াও আমরা জানি যে, রাসূলুল্লাহ (সা এর ইন্তেকালের পর সাহাবীগণ (রা উনার দেহ গোসল
দিয়েছেন, কাফন পড়িয়েছেন, জানাযার সলাত আদায়
করেছেন, এবং কবর দিয়েছেন। তিনি (সা যদি ইন্তেকালই
না করতেন
তবে সাহাবীরা অন্যান্য মৃত মানুষের মতো উনার (সা দাফন- কাফন করতেন না। ফাতিমা (রা পিতার সম্পত্তির ওয়ারিশ দাবী করেছিলেন শুধু এজন্যই যে তিনি (রা
বুঝতে পেড়েছিলেন যে উনার পিতা মুহাম্মদ (সা
মারা গেছেন এবং সেসময় কোন সাহাবী এর বিরোধিতা করেন নি। আবু বকর (রা ফাতিমা (রা এর কথা এই বলে প্রত্যাখ্যান করলেন যে ‘রসূলুল্লাহ্ (সা বলে গেছেন, আমাদের
(নাবীদের) কোন ওয়ারিশ হয়
না, আমরা যা ছেড়ে যাব
তা সদাকাহ হিসেবে গণ্য হবে। অবশ্য মুহাম্মদ (সা এর বংশধরগণ এ সম্পত্তি থেকে ভরণ-পোষন চালাতে পারবেন। আল্লাহ্র কসম! রসূলুল্লাহ (সা এর সদাকাহ তাঁর জীবদ্দশায় যে অবস্থায় ছিল আমি সে অবস্থা থেকে এতটুকুও পরিবর্তন করব
না......’ [বুখারী শরীফ হা: ৪০৪২] সাহাবারা (রা রসূলুল্লাহ (সা এর ইন্তেকালের পর সর্বসম্মতিক্রমে হযরত আবু বকর (রা মুসলিম জাহানের
খলিফা নির্বাচিত করেছিলেন। রসূলুল্লাহ (সা যদি কবরে দুনিয়াবী জীবনের মতো জীবিত থাকতেন
তবে তো আর আবূ বকর (রা
খলিফা নির্বাচন করার প্রয়োজন পড়তো না। আর এই
খলিফা নির্বাচনের
মধ্যে দিয়ে সাহাবীদের মধ্যে যে ইজমা প্রমাণিত হয় সেটাই বড় প্রমাণ যে নবী (সা ইন্তেকাল ফরমাইয়াছেন। আরেকটি বিষয় একটু
চিন্তা করে দেখুন! হযরত উসমান (রা ও হযরত আলীর সময় মুসলিমদের মধ্যে যে জটিলতা ও
ফিতনা তৈরি হয়েছিল তার সমাধানের জন্য কেউ তো কবরের নিকট যান নাই। তার সমাধানের জন্য কেউ তো নবীজী (সা এর নিকট এ বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করেন নাই। কারন
সাহাবীরা জানতেন কবরের নিকট যিনি শুয়ে আছেন
উনি (সা আর দুনিয়ার
মতো জীবিত নন।
কুরআনুল করীমের অনেক
আয়াতে স্পষ্ট উল্লেখ
করা হয়েছে যে, শহীদগণ মৃত নন, তারা জীবিত ও রিযকপ্রাপ্ত হন। নবীগণের বিষয়ে কুরআন কারীমে কিছু না বলা হলেও সহীহ হাদীসে তাঁদের মৃত্যু পরবর্তী জীবন
সম্পর্কে বলা হয়েছে বলা হয়েছে। আনাস ইবনু মালিক (রা বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা বলেন, ﻋَﻦ ﺃَﻧَﺲ ؛ ﺃَﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ : ﺍﻷﻧﺒﻴﺎﺀ ﺃﺣﻴﺎﺀ ﻓﻲ ﻗﺒﻮﺭﻫﻢ ﻳﺼﻠﻮﻥ
“নবীগন তাঁদের কবরের
মধ্যে জীবিত, তাঁরা সালাত আদায় করেন।” [আবূ ইয়ালা আল- মাউসিলী, আল-মুসনাদ ৬/১৪৭: বাইহাকী]
আবূ হুরাইরা (রা বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা বলেন, “যখনই কোন মানুষ
আমাকে সালাম করে তখনই আল্লাহ্ আমার রূহকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেন, যেন
আমি তার সালামের উত্তর
দিতে পারি” [আবূ দাউদ ২/২১৮, সনদ হাসান]
উপরের
হাদীসগুলো থেকে প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ (সা এর ইন্তেকালের পরে তাঁকে পুনরায় জীবন দান করা হয়েছে। এই জীবন বারযাখী জীবন,
যা একটি বিশেষ সম্মান ও গায়েবী জগতের একটি অবস্থা। এই অপার্থিব ও অলৌকিক
জীবনে তাঁর সালাত আদায়ের সুযোগ রয়েছে। কেউ সালাম দিলে আল্লাহ্ তাঁর রূহ মুবারককে ফিরিয়ে দেন সালামের জবাব দেওয়ার জন্য। দূর থেকে সালাম
দিলে তা তাঁর নিকট
পৌঁছানো হয়। এ বিষয়ে এর বেশি কিছু বলা যাবে না,
কারণ হাদীসে যতটুকু
বলা হয়েছে ততটুকুই
আমরা জানি।
বুঝতে হবে উম্মতের জানার প্রয়োজন নেই বলেই রাসূলুল্লাহ্ বাকী বিষয়গুলি বলেন নি।
কারণ হাদীসে যতটুকু বলা হয়েছে ততটুকুই
আমরা জানি। বুঝতে হবে উম্মতের জানার প্রয়োজন নেই বলেই রাসূলুল্লাহ্ বাকী বিষয়গুলি বলেন নি।
আপনার কমেন্টের মধ্যেই উত্তর আছে। আমি আর কী বলব?
চমৎকার বিষয়টি তুলে ধরে সচেতন করার জন্য শুকরিয়া!
"হায়াতুন্নবী" শব্দটি কি আদৌ ইসলাম সমর্থিত?
জাযাকাল্লাহু খাইর!
"হায়াতুন্নবী" শব্দটির অর্থ ও উতপত্তির উৎসটি জানাবেন অনুগ্রহ করে!
আহেলে হাদীস আর আহেলে সুন্নাহ ওয়াল জামাত, ইসলামে দৃশ্যমান বিভাজন এবং এক আতংকের নাম!
মন্তব্য করতে লগইন করুন