এ জার্নি বাই ট্রেন
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ মাসুম সরকার আযহারী ০৪ মে, ২০১৫, ০৮:৪১:১৪ রাত
ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী আমরা প্রতিটি মানুষ এক অতি দ্রুতগামী চলন্ত ট্রেনের যাত্রি। ট্রেনটি মহান স্রষ্টার অপার সৃষ্টি মাধ্যাকর্ষণ শক্তির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে প্রতি সেকেন্ডে ২৯.৭৬ কি.মি. মিনিটে ১৭৮৫.৬ কি.মি. ঘন্টায় ১০৭১৩৬ কি.মি. বেগে আবর্তিত হচ্ছে। তাছাড়া লাটিমের মতো ট্রেনটি তার নিজ অক্ষে প্রতি মূহুর্তে পশ্চিম থেকে পূর্বের দিকে (ঘড়ির কাঁটার বিপরীত অভিমুখে) প্রদক্ষিণ করছে।
প্রতিটি মানুষ জীবনের ঊষালগ্নে যে দিন পৃথিবীতে প্রথম আলোর মুখ দেখেছে, সেদিনই সে এই দ্রুতগামী ট্রেনের একজন যাত্রী হিসেবে প্রথম আরোহণ করেছে।
আরোহণের পর থেকেই ট্রেনটি আমাদের প্রতিমূহুর্তে হর্ষ-বিষাদ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনার নিত্য নতুন দৃশ্য অবলোকনের সুগোগ করে দিয়েছে। সব কিছু দেখতে দেখতে আমরা সবাই ট্রেনের যাত্রী হয়ে চলছি আপন চিরস্থায়ী ঠিকানায়, শাশ্বত অজানা গন্তব্যের দিকে।
ট্রেনের ভেতরে আরাম আয়েশ, বিশ্রাম, নিদ্রা, বিনোদন, সংসার, ব্যবসা-বানিজ্য, শাশ্বত গন্তব্যের পাথেয় সংগ্রহ এমনকি ট্রেনের কিছু অংশ কেনা-বেচা সহ সব কিছু করার সুযোগ রেখেছেন মহাব্যবস্থাপক।
তবে ট্রেনে উঠার আগেই প্রত্যেকের জন্য "গোপন স্টেশন" নির্ধারণ করে রেখেছেন ট্রেন-যাত্রীদের মালিক ও মহাব্যবস্থাপক। কিন্তু কাউকে জানানো হয়নি তার স্টেশনের দূরত্ব। শুধু নামার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। কারণ স্টেশনে পৌঁছার সাথে সাথেই প্রত্যেককে ট্রেন থেকে অবতরণ করতে হবে। কারো কোন ওজর, আবদার, অনুরোধ, মামা-চাচা বা পৃথিবীর কোন প্রতাপশালীর টেলিফোন, কোন কিছুতেই এক মূহুর্ত সময় বেশী থাকার অনুমতি দেয়া হবে না।
কিন্তু কী নির্মম দৃশ্য!! দীর্ঘ ভ্রমনে অনেক কষ্ট করে যা কিছু কামাই করেছে স্থাবর-অস্থাবর সব কিছুই ট্রেনের ভেতরে রেখে প্রতিটা যাত্রীকে কেবল কয়েক টুকরা সাদা কাপড় নিয়েই নেমে পড়তে হবে। অথচ এই সম্পদ জামাতে গিয়ে সে ট্রেনের কত যাত্রীদের সাথেই না দুর্ব্যবহার করেছে, প্রতারণা করেছে, চুরিডাকাতি সহ সব অন্যায়-অবৈধ পথ-পন্থা অবলম্বন করেছে।
তাই বিলাসবহুল ট্রেন পেয়ে, আসল গন্তব্যের কথা ভুলে যাওয়া কেবল বিবেক-বুদ্ধিহীন যাত্রীর পক্ষেই সম্ভব। আর প্রকৃত বুদ্ধিমান হল সে, যে আরামদায়ক ভ্রমন করেও শাশ্বত গন্তব্যের পাথেয় সংগ্রহ করতে ভুলে যায় না। কারণ সে জানে-
সকল সম্পদ, পদ-পদবী থাকবে আপন স্থানে
যুগের ট্রেনে উঠার পরে নামতে হবে স্টেশনে।
বিষয়: বিবিধ
১৮৮১ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভয়ে ভীতিতে এবং আশায় তাঁরই মুখাপেক্ষী আমরা। জানিনা কখন কার সফর কোথায় শেষ হবে?? চির গন্তব্যে পৌঁছার পূর্বেই সকলকেই আল্লাহ্ পাক পর্যাপ্ত সামানা যোগাড় করার তৌফিক দিন। আমীন।
কঠিন কথা অনেক সুন্দর করে বলেছেন তবে ভয় ও লাগল ।
আল্লাহ আমাদের তৌফিক দিন যেন আমরা ট্রেন থেকে নামার আগেই সাথে নিয়ে যাবার মাল সংগ্রহ করতে পারি । আমীন ।
জাজাকাল্লাহ খাইরান ভাইয়া ।
চমৎকার, ভিন্নধর্মী অসাধারন উদাহরন সম্বলিত লিখাটির মাধ্যমে দুনিয়ার ক্ষনস্থায়ী জীবনকে স্মরন করিয়ে দেয়ার জন্য শুকরিয়া!
জাযাকাল্লাহু খাইর!
মন্তব্য করতে লগইন করুন