Good Luck Good Luckজালিমের জুলুম এবং মুমিনের বিজয়ঃ একটি কুরআনিক পর্যালোচনা

লিখেছেন লিখেছেন মোঃ মাসুম সরকার আযহারী ১২ এপ্রিল, ২০১৫, ০৩:২০:২৭ রাত



কোন ভূমিকা ছাড়া সরাসরি কুরআন থেকেই শুরু করছি।

১। আল্লাহ তা'আলা বলেন-"জালেমরা যা করে সে সম্পর্কে তোমরা কখনও আল্লাহকে বেখবর মনে করো না। তিনি তাদেরকে তো ঐ দিন পর্যন্ত অবকাশ (সুযোগ) দিয়ে রেখেছেন, যেদিন চক্ষুসমূহ বিস্ফোরিত হবে, তারা মাথা উপরে তুলে ভীত-সন্ত্রস্ত মনে দৌঁড়াতে থাকবে। তাদের দিকে তাদের দৃষ্টি ফিরে আসবে না এবং তাদের অন্তর-আত্মা উড়ে যাবে। (ইব্রাহিম-৪২-৪৩)

২। আল্লাহ অন্যত্র বলেন-"অবশ্য তোমাদের পূর্বে বহু দলকে ধ্বংস করে দিয়েছি, তখন তারা জালেম হয়েছিল। (ইউনুস-১৩)। অতঃপর আমি তোমাদেরকে যমীনে তাদের পর প্রতিনিধি বানিয়েছি যাতে দেখতে পারি (ক্ষমতা পাওয়ার পর) তোমরা কী কর। (ইউনুস-১৪)।

৩।আল্লাহ অন্যত্র বলেন- আর এমনিভাবে আমি প্রত্যেক জনপদে সেখানকার পাপীষ্ঠদের নেতা বানিয়েছি যাতে তারা সেখানে চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র করে। তাদের সে চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র তাদের নিজেদের বিরুদ্ধেই; কিন্তু তারা তা বুঝতে পারে না। (আনআম-১২৩)

৪- নমরূদ ৪০০ বছর অপ্রতিরোধ্য, অপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতার স্বাদ নেয়ার পর নিজেকে-

ক)- জীবন-মৃত্যুর মালিক মনে করেছিল। বলেছিল-"আমি জীবন দান করি এবং আমি মৃত্যু দান করি"। (আল-বাকারাহ-২৫৮)।

খ)- ইব্রাহিম (আ) কে আগুণে পুড়িয়ে মেরে নিজের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে চেয়েছিল। ফলাফল-

আল্লাহ তা'আলা লেংড়া মশা দিয়ে তাকে দুনিয়া থেকে বিদায় করে বুঝিয়ে দিলেন- তুমি যতই ক্ষমতার মালিক হওনা কেন তোমার সে দাপট, সে ক্ষমতা আল্লাহর সৃষ্ট একটি ক্ষুদ্র শারীরিক প্রতিবন্ধী মশার ক্ষমতার সমানেও নস্যি।

৫। ফেরাউন বিশাল ক্ষমতার মালিক হয়েছিল। সে-

ক)- সে নিজেকে প্রভু ও উপাস্য দাবী করেছিল। বলেছিল-"আমিই তোমাদের সর্বোচ্চ প্রভু, পালনকর্তা"। (নাযিআত-২৪) । "ফেরাউন বলল, হে পরিষদবর্গ! তোমাদের জন্য আমি ছাড়া আর কোনো উপাস্য আছে বলেতো আমি জানি না"! (কাসাস-৩৮)।

খ)- নিজের ক্ষমতার জন্য হুমকিস্বরূপ মূসা (আ) যাতে পৃথিবীতে আসতে না পারে সে জন্য ছেলে সন্তান জন্ম গ্রহণ করার সাথে সাথে মেরে ফেলার জন্য রাজকীয় ফরমান জারি করল। কিন্তু কোন লাভ হল না। আল্লাহ তায়ালা মুসা (আ) কে ফেরাউনের কোলের মধ্যেই লালান পালন করান। আপন মায়ের দুধ পান করার ব্যবস্থা করেন। নিজ সন্তানকে দুধ পান করায়ে ফেরাউনের কাছ থেকে পারিশ্রমিক পাওয়ার ব্যবস্থাও আল্লাহ করে দেন।

গ)-"নিঃসন্দেহ ফেরাউন তার দেশে উদ্ধত হয়েছিল এবং সে দেশবাসীকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে তাদের একদলকে দুর্বল বানিয়েছিল। সে তাদের পুত্র-সন্তানদেরকে হত্যা করত এবং মেয়েদেরকে জীবিত রাখত। নিঃসন্দেহে সে ছিল বিপর্যয়, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের অন্যতম।(কাসাস-৪)

ঘ)- ফেরাউনের দাম্ভিকতা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, সে তার মন্ত্রীপরিষদের এক প্রভাবশালী মন্ত্রী "হামান"কে লক্ষ্য করে বলেছিল। "হে হামান! তুমি আমার জন্য ইট পোড়াও, তারপর আমার জন্য একটি উঁচু দালান নির্মাণ কর, যাতে আমি মূসার উপাস্যের সন্নিকটে উঠতে পারি (মূসার উপাস্যকে উকি মেরে একটু দেখতে পারি)। আমি অবশ্য তাকে মিথ্যাবাদীদের একজন বলেই মনে করি।(কাসাস-৩৮)

ঙ)- আর ফেরাউন ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা/ বাহিনী অন্যায়ভাবে পৃথিবীতে গর্ব অহংকার করেছিল, আর তারা ভেবেছিল যে আমাদের কাছে তাদের ফিরিয়ে আনা হবে না। (কাসাস- ৩৯)

চ)-ফেরাউনের রাজ্যে ইসলামের কথা বলাই ছিল অপরাধ। তাই সে হুমকি দিল ঈমানদারদেরকে-" শীঘ্রই তোমরা পরিণাম জানতে পারবে। আমি অবশ্যই তোমাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে দেব (ডান হাত ও বাম পা অথবা তার উল্টা) । তারপর তোমাদের সবাইকে এক সাথে শূলীতে চড়িয়ে মারব (ফাঁসি দেব)।" (আ'রাফ-১২৩-১২৪)।

ফেরাউনের হুমকি-ধমকি শুনে ইমানদাররা ভয়ে আত্মসমর্পণ করেন নাই। তাদের বক্তব্য আল্লাহ কুরআনে তুলে ধরেছেন এভাবে-

"তারা বলল, আমাদেরকে তো মৃত্যুর পর নিজেদের পরওয়ারদেগারের নিকট ফিরে যেতেই হবে। 'আর তুমিতো আমাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিচ্ছ শুধু এ কারণেই যে, আমরা ঈমান এনেছি আমাদের পরওয়ারদেগারের নিদর্শনসমূহের প্রতি যখন তা আমাদের নিকট পৌঁছেছে। হে আমাদের প্রভু! আমাদের উপর সবর-ধৈর্য ঢেলে দাও এবং আমাদেরকে মুসলমান হিসাবে মৃত্যু দান কর। (আ'রাফ-১২৫-১২৬)।

ফেরাউন ও তার বাহিনীর পরিণতিঃ

১)- "অতঃপর আমি তাকে ও তার বাহিনীকে পাকড়াও করলাম। আর আমি তাদেরকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করলাম। অতএব দেখ, কেমন হয়েছিল অত্যাচারীদের পরিণাম!" (কাসাস-৪০)।

২)- তাদের পানিতে চুবায়ে মেরেই শেষ করেন নাই। ফেরাউনের মরদেহকে শুটকি বানিয়ে অনাগত ভবিষ্যতের সকল স্বৈরশাসকদের জন্য শিক্ষার উপকরণ বানিয়েছেন। আল্লাহ বলেন-" অতএব আজকের দিনে আমি তোর দেহকে বাঁচিয়ে দিচ্ছি যাতে তোর পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হয়ে থাকে। আর নিঃসন্দেহে বহু লোক আমার নিদর্শনের প্রতি লক্ষ্য করে না।(ইউনুস-৯২)

৩)- এখানেই শেষ নয় সেই দূর্বল অসহায় ইমানদা্রদের হাতে আল্লাহ ক্ষমতা ফিরিয়ে দেন। আল্লাহ বলেন- "আর আমরা চেয়েছিলাম দেশে যাদেরকে দূর্বল করা হয়েছিল তাদের প্রতি অনুগ্রহ করতে, তাদেরকে নেতা করতে এবং তাদেরকে দেশের উত্তরাধিকারী করতে এবং তাদেরকে দেশের ক্ষমতায় আসীন করতে এবং ফেরাউন, হামান ও তাদের সৈন্য-বাহিনী সেই দূর্বল দলের তরফ থেকে যা আশংকা করত তা তাদেরকে দেখিয়ে দিতে । (কাসাস-৫-৬)।

তাই ইমানদারের উচিৎ আল্লাহ তা'আলার ওয়াদায় বিশ্বাস রেখে সামনে এগিয়ে চলা। আল্লাহ ওয়াদা করেছেন-"আর তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। তোমরাই জয়ী হবে, যদি তোমরা মুমিন হও।" (আলে ইমরান-১৩৯)

দেখুন মিশরের যাদুঘরে সংরক্ষিত ফেরাউনের লাশঃ



বিষয়: বিবিধ

১৬৭০ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

314384
১২ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৩:৪১
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ!

অশান্ত মনটা যখন সবরের পরাকাষ্ঠার ব্যর্থ প্রচেষ্টায় অবরুদ্ধ, এই মুহূর্তে কোরআনের এই চির শ্বাশত আয়াতগুলির স্পর্ষে রহমার বর্ষনে সত্যি সবরুন জামিলের সন্ধান পায়! আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল!

সঠিক সময়ে তাৎপর্যময় পোস্টটি উপস্থাপন এবং শেয়ার করার জন্য আন্তরিক শুকরিয়া!

জাযাকাল্লাহু খাইর! Good Luck
১২ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৪:১০
255313
মোঃ মাসুম সরকার আযহারী লিখেছেন : আস্‌সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আপনার প্রথম উপস্থিতি এবং সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। জাযাকিল্লাহু খাইরান ফিদ্দুনিয়া ওয়াল আখিরাহ।
১২ এপ্রিল ২০১৫ বিকাল ০৫:২৫
255394
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : ওয়ালাইকুম আসসালাম ওয়ারহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ!
314388
১২ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৪:৩৭
স্বপন২ লিখেছেন : দুচোখ দিয়ে পানি এসে গেল। কোন কিছু বলতে
পারছিনা।
১২ এপ্রিল ২০১৫ সকাল ০৫:০৩
255314
মোঃ মাসুম সরকার আযহারী লিখেছেন : আস্‌সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আল্লাহ আমাদের অব্যক্ত,পুঞ্জিভুত ব্যথাগুলো শক্তিতে পরিণত করার তাওফিক দিন। আমিন।
314398
১২ এপ্রিল ২০১৫ সকাল ০৬:৫০
শেখের পোলা লিখেছেন : "লোকেরাকি মনে করে যে, 'আমরা ইমান এনেছি' একথা বললেই অব্যাহতি পেয়ে যাবে, আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না?"(আনকাবুত-২) "আর যারা অসৎ কার্য করে তারাকি মনে করে যে, তারা আমাকে এড়িয়ে যাবে? তাদের এ সিদ্ধান্ত কতই না মন্দ"৷(আনকাবুত-৪)
অতএব, একজন পরীক্ষায় পাশ করলেন আর এক দল জাহান্নামে নাম রেজিষ্ট্রী করল৷ ধন্যবাদ৷
১২ এপ্রিল ২০১৫ সকাল ০৬:৫৭
255326
মোঃ মাসুম সরকার আযহারী লিখেছেন : আস্‌সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আপনার সুন্দর মতামতের জন্য ধন্যবাদ। জাযাকাল্লাহু খাইরান।
314404
১২ এপ্রিল ২০১৫ সকাল ০৯:২৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : জালিমরা নিজেদের অমর মনে করে। কিন্ত মৃত্যু তাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
১২ এপ্রিল ২০১৫ বিকাল ০৪:৫৫
255387
মোঃ মাসুম সরকার আযহারী লিখেছেন : আস্‌সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। জাযাকাল্লাহু খাইরান। জাযাকাল্লাহু খাইরান।
314438
১২ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ১২:৪৩
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু শ্রদ্ধেয় আযহারী ভাইয়া। অনেক দিন পর আল কোরআন ও হাদিসের আলোকে আপনার চেতনা জাগ্রতকারী অসাধারণ লিখাটি পড়ে অভিভূত হলাম।

লিখার আবেদন, তথ্য এবং সর্বোপরি ফেরাউনের ছবি সম্বলিত পোষ্টটি এককথায় হৃদয়স্পর্শী এবং মুমিনের আত্মা শীতলকারী।

আপনার জন্য অনিঃশেষ দোয়া , শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা রইলো। সেইসাথে বোনের জন্য বেশী বেশী করে দোয়া করার জন্য বিশেষ অনুরোধ থাকলো ।
১২ এপ্রিল ২০১৫ বিকাল ০৪:৫৯
255390
মোঃ মাসুম সরকার আযহারী লিখেছেন : আস্‌সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। থিসিস কেন্দ্রিক ব্যস্ততার কারণে কয়েক দিন ব্লগে আসা হয় নি। দোয়া করবেন যাতে নিয়মিত হতে পারি। ব্যস্ততার মাঝেও সময় বের করতে পারি। মন্তব্য করে আপনার ভাল লাগা রেখে যাওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আন্তরিক দু'আ ও শুভকামনা রইল। জাযাকিল্লাহু খাইরান ফিদ্দুনিয়া ওয়াল আখিরাহ।
১২ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৮:৩৮
255442
সন্ধাতারা লিখেছেন : আপনার জন্য অবশ্যই প্রাণভরে দোয়া করি ভাইয়া। ব্লগে আপনার মত মানুষদের খুবিই প্রয়োজন। যদি সম্ভব হয় কোথায় এবং কীসের উপর থিসিস করছেন? কতদিনের কোর্স? জাজাকাল্লাহু খাইর।
১২ এপ্রিল ২০১৫ রাত ১০:৩৩
255447
মোঃ মাসুম সরকার আযহারী লিখেছেন : কিং আব্দুল আজীজ ইউনিভার্সিটি, জেদ্দা-সৌদি আরব। স্পেশালাইজেশান আল-কুরআনের তাফসীর। গবেষণার বিষয় "Jurisprudential Exegesis of the Quran: Compilation and Analysis"। তিন বছরের কোর্স। আড়াই বছর হয়েছে। হয়তো আরো এক বছর লাগবে। দোয়ার দরখাস্ত।
১২ এপ্রিল ২০১৫ রাত ১০:৫৩
255450
সন্ধাতারা লিখেছেন : শোকর আলহামদুলিল্লাহ্‌। ভীষণ ভালো লাগলো জেনে ভাইয়া যে আপনি স্পেশালাইজেশান আল-কুরআনের তাফসীর, গবেষণার বিষয় "Jurisprudential Exegesis of the Quran: Compilation and Analysis" এর উপর ডিগ্রী কোর্স করছেন মাশাআল্লাহ্‌। এটা আল্লাহ্‌ পাকের এক বিশাল অনুগ্রহ ও দয়ার দান আপনার উপর। প্রাণভরে দোয়া করি আপনার জন্য, দয়াময় আপনার আন্তরিক আকাঙ্ক্ষা, শ্রম ও সুপ্ত প্রতিভাকে আলোকবর্তিকারূপে বিশ্বময় বিকশিত করার তাওফিক দিন। আমীন।
314492
১২ এপ্রিল ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:১৩
সামছুল লিখেছেন : অতএব, তারা সামান্য হেসে নিক, এবং তারা তাদের কৃতকর্মের জন্য অনেক বেশি কাঁদবে।" (সূরা তাওবাহ - ৮২
১২ এপ্রিল ২০১৫ রাত ১০:৩৪
255448
মোঃ মাসুম সরকার আযহারী লিখেছেন : আস্‌সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। জাযাকাল্লাহু খাইরান।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File