মায়ের খেদমতের শতাধিক পদ্ধতিঃ দ্বিতীয় পর্ব
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ মাসুম সরকার আযহারী ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০৮:১৪:৫৮ রাত
মায়ের খেদমত করে যাতে দুনিয়াতে বসে জান্নাত খরিদ করতে পা্রি, সে আশায় সবার সাথে শেয়ার করলাম ধারাবাহিক লেখার দ্বিতীয় পর্বঃ "কিভাবে মায়ের প্রতি সদ্ব্যবহার করব"। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমীন……।
১১। মায়ের সাথে সাক্ষাতের সময় তার মাথায়, হাতে চুম্বন করাঃ কাজটা যদিও খুবই ছোট; কিন্তু এর ফলে মা যে আনন্দ অনুভব করবেন তার পরিমান ভাষায় প্রকাশ করে শেষ করা সম্ভব না। আর এ কাজ নিয়মিত করলে আমার আপনার সন্তানও বড় হয়ে তাই করবে ইন-শা-আল্লাহ।
১২। কথা ও কাজের মাধ্যমে সন্তানদেরকে মায়ের মর্যাদার ব্যাপারে সচেতন করাঃ মায়ের সাথে সদ্ব্যবহারের ক্ষেত্রে সন্তানের সামনে নিজেকে একজন আদর্শ নমুনা হিসেবে উপস্থাপন করুন। আপনি কিভাবে মায়ের খেদমত করেন, কিভাবে তার প্রতি সম্মান প্রদর্শণ করেন, তাকে মর্যাদা দেন, তা আপনার সন্তানদেরকে প্রত্যক্ষ করার সুযোগ করে দিন। তাহলে তারাও আপানার মাকে এবং আপনাকে সম্মান করতে শিখবে এবং করবে।
১৩। মায়ের প্রয়োজন পূরণে সচেষ্ট হোনঃ বয়স অনুযায়ী প্রয়োজন মায়ের পূরণ করুন। বার্ধক্যে এক ধরণের জিনিসের প্রয়োজন; যৌবন কালে আরেক ধরণের। তাই মা আপনার শিশুকালে আপনার বয়সের বিভিন্ন ধাপে ধাপে যেভাবে আপনাকে প্রতিপালন করেছেন, আপনিও আপনার মায়ের সাথে তার বয়স অনুপাতে প্রয়োজন পূরণে সচেষ্ট হোন। মায়ের যখন যা প্রয়োজন তা পূরণ করতে সাধ্যমত চেষ্টা করুন। এবং সময়মত তা তার সামনে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করন। এটা মায়ের সন্তুষ্টি লাভের জন্য এবং তার অসন্তুষ্টি থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী পদক্ষেপ।
১৪। মায়ের সাথে কৃত ওয়াদা পূরণ করুনঃ মায়ের সাথে কোন ওয়াদা করে তা সময়মত পূর্ণ করতে সচেষ্ট থাকুন। পূর্ণ করা সম্ভব নয় এমন কিছু ওয়াদা করা থেকে বিরত থাকুন।
১৫। নিজের জীবনের সফলতায় মায়ের অবদান স্বীকার করুনঃ নিজের জীবনের সকল সফলতার জন্য প্রথমে আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাওফিক তারপর মায়ের অবদান স্বীকার করুন। এতে মায়ের অন্তরে সন্তানকে নিয়ে গর্ববোধ এবং এক ধরনের সুখ অনুভব করবেন। কারণ সন্তানের সফলতাকে মা তার নিজের সফলতাই মনে করেন। কোন কোন ক্ষেত্রে সুসংবাদ পেয়ে সন্তানের চেয়ে মা অনেক বেশী খুশী হয়ে থাকেন। কারণ সন্তানের সফলতাতো মায়ের অত্যন্ত ধৈর্য ও কষ্টের সাথে তাকে প্রতিপালনেরই ফসল।
১৬। বিতর্ক এড়িয়ে চলাঃ কোন বিষয়ে আপনার মতামত সঠিক হলেও তা নিয়ে মায়ের সাথে বিতর্কে জড়ানো উচিৎ নয়। বরং কল্যাণকর বিষয় হলে অত্যন্ত সহজ ভাবে বোধগম্য উপায়ে আপনার মতামত পেশ করুন। আর যদি তা গুরত্বপূর্ণ কোন বিষয় না হয় তাহলে নিজের মতের উপর মায়ের মতকে অগ্রাধিকার দিন। তার কথা মনযোগ দিয়ে শ্রবণ করুন।
১৭। মানুষের সামনে মায়ের মতকে তুচ্ছ না করাঃ মায়ের উপস্থিতি-অনুপস্থিতি সর্বাবস্থায় কারো সামনে মায়ের কোন মতামতকে তুচ্ছ বা হেয় প্রতিপন্ন করা উচিৎ নয়। মা জানতে পারলে খুব কষ্ট পাবেন।
১৮। অজ্ঞতার কারণে অসম্মান না করাঃ আধুনিক লাইফ স্টাইলের অনেক কিছুর সাথেই মা হয়তো পরিচিত নন। তাই বলে মাকে –"আশ্চর্য্য! এই সহজ জিনিসটা তুমি বুঝ না? এটাতো আজকাল বাচ্চা পোলাপাইনও বুঝে!" এ ধরণের কথা বলে মা'র অজ্ঞতার কারণে তাকে কখনো কষ্ট দেয়া উচিৎ নয়। যে বিষয়ে মা জানেন না, সে সম্পর্কে তাকে এমনভাবে জানানোর চেষ্টা করুন যাতে মা মনে মনে ভাবে আপনি নিজেই তা জানেন না।
১৯। মায়ের সামনে অট্রহাসি পরিহার করুণঃ মায়ের সামনে উচু স্বরে হাসা, উচ্চ আওয়াজে কথা বলা, অবজ্ঞা বা ক্রোধ প্রকাশ করা, তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া ইত্যাদি মায়ের মনে কষ্টের কারণ হয়ে থাকে।
২০। সুসংবাদ সর্বাগ্রে মাকে জানানঃ জীবনে যে কোন সফলতার সংবাদ সর্বাগ্রে মাকে জানান। এতে মায়ে মন অত্যন্ত খুশী হবে। আপনাকে মায়ের অন্তরের গভীরে স্থান করে দিবে। মা অনুভব করবেন- আপনি বড় হওয়া সত্ত্বেও এখনো মায়ের কাছে আপনার প্রয়োজন ফুরিয়ে যায় নি।
২১। স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নেয়াঃ সর্বাবস্থায় মায়ের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে খেয়াল রাখুন। বার্ধক্যে পৌঁছলে চলা-ফেরার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনে দিন। যেমন- ব্লাড প্রেসার, ব্লাড সুগার মাপার যন্ত্র, দাঁড়ানো বা হাঁটাচলার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, নিত্য প্রয়োজনীয় ওষুধ ইত্যাতি। আর্থিক সামর্থ থাকলে কয়েক মাস অন্তর অন্তর কম্প্রিহেন্সিভ চেকআপ এর ব্যবস্থা করতে পারেন।
চলবে………।
প্রথম পর্বের লিংকঃ
বিষয়: বিবিধ
১৩৯৭ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন