সম্মান ও মর্যাদার মানদন্ডঃ বস্তুবাদী ও ইসলামি দৃষ্টিকোন (শেষ পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ মাসুম সরকার আযহারী ১২ নভেম্বর, ২০১৪, ১১:০৫:৫০ রাত
উপরোক্ত (পাঁচ পর্বের ধারাবাহিক ) আলোচনা হতে কারো মনে এধারণাও জন্মাতে পারে যে, ইসলাম বৈরাগ্যবাদ সমর্থন করে বিধায় সুন্দর পোশাক, দৈহিক শক্তি-সৌন্দর্য, এবং সম্পদের প্রাচুর্যের বিরোধী। প্রকৃতপক্ষে ইসলাম এ থেকে যোজন যোজন দূরে।
সৌন্দর্য সম্পর্কে ইসলামের বক্তব্য হচ্ছেঃ
"আপনি বলুনঃ আল্লাহর সাজ-সজ্জাকে যা তিনি বান্দার জন্যে সৃষ্টি করেছেন এবং পবিত্র খাদ্যবস্তুসমূহকে কে হারাম করেছে? বলুনঃ এসব নিয়ামত দুনিয়ার জীবনে মু'মিনদের জন্যে এবং কিয়ামতের দিন খাঁটিভাবে তাদেরই জন্যে"(সূরা আল-আ'রাফঃ৩২)।
ইবনে মাসউদ(রাঃ) হতে বর্ণিত এক হাদীসে বিশ্বনবীর (সাঃ) কাছে এক সাহাবী জানতে চানঃ কোন ব্যক্তি সুন্দর পোশাক পরিচ্ছদ, সুন্দর জুতা পরিধান করতে পছন্দ করলে তা গর্ব-অহংকারের অন্তর্ভুক্ত হবে কিনা। উত্তরে নবী করীম (সাঃ) বলেনঃ
"আল্লাহ তা'য়ালা সুন্দর, তিনি সৌন্দর্য ভালবাসেন"(সহীহ মুসলি্)।
অন্য এক হাদীসে রাসূল (সাঃ) বলেনঃ "গর্ব ও অপব্যয় না করে তোমরা খাও, পান করো, সদ্কা করো এবং পোশাক পরিধান করো। কারণ আল্লাহ তায়ালা বান্দার উপর তাঁর নেয়ামতের চিহ্ন দেখতে ভালবাসেন"(মুস্নাদঃ ইমাম আহমাদ)।
আর বৈরাগ্যবাদ সেতো নাসারাদের আবিষ্কার। ইসলামে এর কোন স্থান নেই। আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ "আর বৈরাগ্য, সে তো তারা নিজেরাই উদ্ভাবন করেছেঃ আমি তা তাদের উপর ফরজ করিনি" (সূরা হাদীদঃ ২৭)।
আর সুস্বাস্থ্য ও সুঠাম দেহের শক্তিশালী মানুষের ব্যপারে ইসলামের বক্তব্য হলোঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ "আল্লাহ তা'য়ালার কাছে শক্তিশালী মু'মিন দুর্বল মু'মিনের চেয়ে অধিক উত্তম এবং প্রিয়পাত্র। তবে উভয়ের মধ্যে কল্যাণ নিহিত রয়েছে"(সহীহ মুসলিম)।সুস্বাস্থ্য রক্ষায় ইসলাম কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। স্বাস্থ্যহানীকর সমস্ত উপায় ও উপকরণ নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি স্বাস্থ্যসচেতন হওয়ার প্রতি উত্সাহ প্রদান করেছে। ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূল (সাঃ) বলেনঃ "সুস্থতা এবং অবসর হলো এমন দুটি নেয়ামত যাতে অধিকাংশ মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত"(সহীহ বুখারী)।
ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত অপর এক হাদীসে রাসূল (সাঃ)এক লোককে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেনঃ "পাঁচটি বিষয়কে পাঁচটি বিষয়ের পূর্বে গুরুত্ব দিবেঃ যৌবনকে বার্ধক্যের পূর্বে, সুস্থতাকে অসুস্থতার পূর্বে, ধনাঢ্যতাকে দারিদ্রতার পূর্বে এবং অবসরকে ব্যস্ততার পূর্বে" (আল-মুস্তাদ্রিকঃ হাকিম)।
আর সম্পদ সম্পর্কে বিশ্বনবী বলেনঃ নেককার লোকের জন্যে বৈধ সম্পদ কতইনা উত্তম" (মুসনাদঃ ইমাম আহমাদ)। তাই নামাজ সমাপনান্তে সম্পদ উপার্জের ব্রত নিয়ে জমিনে ছড়িয়ে পড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছেঃ "অতঃপর নামায সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক) তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও"(সূরা আল-জুমুআহ্-১০)|
অতএব একথা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট, ইসলাম মানূষের দৈহিক শক্তি ও সৌন্দর্য, সম্পদের প্রাচুর্য সহ অন্যান্য বাহ্যিক মানবীয় গুণাবলীর যথার্থ মূল্যায়ন করেছে এবং সেগুলো অনুশীলনের প্রতি উত্সাহ ও অনুপ্রেরণা দিয়েছে। পাশাপাশি এসকল বাহ্যিক শোভা সৌন্দর্যকে মূল্যায়নের প্রকৃত মাপকাঠি স্থির না করে মানুষের নীতি-নৈতিকতা, আত্মার পরিশুদ্ধি, ঈমানের শক্তি, কর্ম ও চরিত্রের সততা এবং তার অন্তর্নিহিত সুকুমারবৃত্তিগুলোকেই বিচার বিশ্লেষণের প্রকৃত মানদন্ড দাঁড় করানোর শিক্ষা দিয়েছে।
আর এভাবেই ইসলাম বিশ্বমানবতার বিবেক চক্ষুর সামনে এক ব্যতিক্রমধর্মী মানদন্ডের দ্বার উম্মিলীত করেছে। মুসলমানগণ যুগ পরম্পরায় যার চর্চা অব্যাহত রেখেছেন। ইতিহাসের পাতায় পাতায় যার প্রমাণ আজও সোনালী অক্ষরে লিপিবদ্ধ আছে।
প্রক্ষাত আলেম আতা ইব্নু আবি রিবাহ যিনি ছিলেন একাধারে কৃষ্ণকায়, খোঁড়া, পঙ্গু, টেরা (যা পরবর্তীতে অন্ধত্বে রূপ নেয়), চেপ্টা-মোটা-নাসা বিশিষ্ট, কপর্দকহীন, বিকৃত দেহের একজন কৃতদাস। এতদসত্যেও তিনি সমগ্র মক্কার মুফতির আসন অলংকৃত করেছিলেন। ওনার বর্তমানে অন্য কেউ ফতোয়া দেয়ার আস্পর্ধা দেখাতোনা। দূরদূরান্ত হতে লোকজন ওনার জ্ঞানগর্ভ আলোচনা শুনতে আসতো। এমনকি স্বয়ং আমিরুল মু'মিনীন খলীফা সুলাইমান বিন আব্দুল মালিক তার দুই সন্তান সহ ওনার মজলিসে উপস্থিত হয়ে দ্বীনের বিভিন্ন বিষয়ের দর্স নিতেন।(তারিখু দিমাশ্কঃ ইবনু আসাকির)।
(সমাপ্ত)
********************************************************
আগের পর্বসমূহঃ
প্রথম পর্বঃ
http://www.bdmonitor.net/blog/blogdetail/detail/10280/masumsarker/56557#.VGOSGfmUeOw
দ্বিতীয় পর্বঃ
http://www.bdmonitor.net/blog/blogdetail/detail/10280/masumsarker/56648
তৃতীয় পর্বঃ
http://www.bdmonitor.net/blog/blogdetail/detail/10280/masumsarker/56718#.VGOR6vmUeOw
চতুর্থ পর্বঃ
http://www.bdmonitor.net/blog/blogdetail/detail/10280/masumsarker/56801#.VGORz_mUeOw
পঞ্চম পর্বঃ
http://www.bdmonitor.net/blog/blogdetail/detail/10280/masumsarker/56865#.VGORxPmUeOw
বিষয়: সাহিত্য
৯৩৫ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন