সম্মান ও মর্যাদার মানদন্ডঃ বস্তুবাদী ও ইসলামি দৃষ্টিকোন (চতুর্থ পর্ব)

লিখেছেন লিখেছেন মোঃ মাসুম সরকার আযহারী ১১ নভেম্বর, ২০১৪, ০২:০৩:৪৭ রাত



ইসলাম মানুষকে আশরাফুল মখলুকাতের মর্যাদা দিয়েছে, তার দায়িত্ব-কর্তব্য এবং অধিকারসমুহ দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করেছে। আর এ ক্ষেত্রে সমতা, ন্যায়পরায়নতা, নিরপেক্ষতা ও বৈসম্যহীনতার প্রতি কড়া নজর রাখা হয়েছে। তাই সামান্যতম ব্যত্যয়ের সম্ভাবনা দেখা দিলে প্রতিবাদের সর্বোচ্চ ভাষা ও পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে। যার সমর্থন মিলে নিন্মোক্ত ঘটনার মাঝেঃ

মক্কার সর্দার ওয়াইনা ইবন হিস্‌ন একদিন বিশ্বনবীর(সাঃ) কাছে আসেন। তখন দরিদ্র সাহাবীদের অন্যত্যম সালমান ফারেসী(রাঃ)সহ কতিপয় দরিদ্র, নিঃস্ব ও ছিন্নমুল সাহাবী মজলিসে উপবিষ্ট ছিলেন। ওয়াইনা বললঃ এমন ছিন্নমুল মানুষের সাথে আমরা বসতে পারিনা।আপনি হয় তাদেরকে মজলিস হতে সরিয়ে রাখুন, নতুবা আমাদের জন্যে পৃথক মজলিসের ব্যবস্থা করুন।

অনুরূপভাবে উমাইয়া ইবনে খলফ বিশ্বনবী(সাঃ)কে পরামর্শ দেন গরীব মুসলমানদের পরিবর্তে কুরাইশ নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে রাখার জন্য। কারণ তারা ইসলাম গ্রহণ করলে, ইসলাম ধর্মের অভুতপূর্ব উন্নতি সাধিত হবে। তাদের এসকল সুন্দর সুন্দর পরামর্শ গ্রহণ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করে বিশ্বনবী(সাঃ)কে সম্মোধন করে ইরশাদ হচ্ছেঃ

"আপনি নিজেকে তাদের সাথে আবদ্ধ রাখুন যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের রবকে ডাকে তাঁর সন্তুষ্টির লাভের আশায়। আর পার্থিব জীবনের সৌন্দর্যের আশায় তাদের থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবেন না। আর যার অন্তরকে আমার জিকির থেকে গাফেল করে দিয়েছি, যে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যে কাজে কর্মে সীমালংঘন করে আপনি তার আনুগত্য করবেন না।" (সূরা আল-কাহ্‌ফঃ ২৮)।

একটু ভেবে দেখুন, প্রভাবশালী ও নেতৃস্থানীয় লোকদের জন্যে পৃথক বৈঠকের ব্যবস্থা করার পরামর্শটা কতইনা গ্রহণযোগ্য, চমকপ্রদ, বাস্তবসম্মত ও যুক্তিপূর্ণ ছিল। যাতে হযরত ওমর (রাঃ) এর মত মহান ব্যক্তিত্বও ইতিবাচক মত প্রকাশ করেছিলেন। (মা'আরেফুল কুরআনঃ মুফতী মুহাম্মদ শাফী')

কিন্তু তারপরও এসব তথাকথিত সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী, উপদেষ্টা, বস্তুবাদী সমাজব্যবস্থার কর্ণধারদের প্রজ্ঞাপূর্ণ, বিবেকসম্মত মহামুল্যবান উপদেশকে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করার ঐশী নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কারণ এ উপদেশ বাস্তবায়ন করার মানে হলো- অবাধ্য ধনীদের প্রতি বিশেষ সম্মান প্রদর্শণ। যা দরিদ্র মুসমলমানদের হৃদয়কে ভেঙ্গে খান খান করে দেয়া, তাদের হৃদয়কন্দর তুষের অনলের মত ঘুসে ঘুসে ব্যথায় ভরে দেয়ার নামান্তর। তাই এধরনের উপদেশ আল্লাহ তায়ালার কাছে পছন্দ হয়নি, গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। যার ফলে তিনি ঐসব তথাকথিত উপদেষ্টাদের উপদেশ প্রত্যাখ্যান করার নির্দেশ দিয়েই ক্ষান্ত হননি; অধিকন্তু সর্বাবস্থায় মুসলমানদের সাথে সম্পর্ক রাখার, তাদের প্রতি মনোযোগ নিবদ্ধ রাখার এবং তাদের কাছ থেকেই পরামর্শ গ্রহণ করার শিক্ষা দিয়েছেন। কারণ তারা সকাল-সন্ধ্যায় তথা সর্বাবস্থায় আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকে, তাদের সমস্ত কার্যকলাপ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জকের লক্ষ্যে নিবেদিত থাকে।তাই কেবল তাদের উপদেশই মুসলমানদের জন্য কল্যাণকর।

এ ঘটনার পর বিশ্বনবী (সাঃ) বলেছিলেনঃ ''সমস্ত প্রসংসা সেই আল্লাহর যিনি আমাকে মৃত্যুর পূর্বে আমার উম্মতের মধ্য হতে একটি কওমের সাথে নিজেকে আবদ্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। জীবদ্দসায় তোমাদের সঙ্গেই থাকবো এবং মৃত্যু যবনীকার ওপারেও তোমাদের সাথেই থাকবো'' (মা'আলিমুত তানযিলঃ আল্লামা বগবী)।আর ওমর (রাঃ) ওনার মতামত সঠিক ছিলনা বলে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন। (আত্‌তাহ্‌রীর অত্‌তান্‌ঊরঃ ইবনু আ'শূর)।

অনুরূপ আরেক ঘটনায় দেখা যায়, বিশ্বনবী (সাঃ) যখন মক্কার কতিপয় কুরাইশ নেতৃবৃন্দের সাথে গরীব মুসলমানদের পৃথক মজলিসে বসানোর ব্যাপারে চুক্তিপত্র লিপিবদ্ধ করতে হযরত আলী (রাঃ)কে নির্দেশ দেন, ঠিক সে মুহুর্তেই ঐশী নির্দেশের মাধ্যমে তা বারণ করা হয়(জামে'উল বায়ানঃ তবারী)। ঘোষণা হচ্ছেঃ

"আর আপনি তাদেরকে তাড়িয়ে দেবেন না, যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের রবকে ডাকে তাঁর সন্তুষ্টির লাভের আশায়। তাদের হিসাব বিন্দুমাত্রও আপনার দায়িত্বে নয় এবং আপনার হিসাবও বিন্দুমাত্র তাদের উপর নয় যে, আপনি তাদেরকে তাড়িয়ে দেবেন। আর (এমনটি করলে)আপনি জালেমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন"।(সূরা আল-আন্‌'আমঃ৫২)

(চলবে----)

আগের পর্বঃ

http://www.bdmonitor.net/blog/blogdetail/detail/10280/masumsarker/56718#.VGEZ5MkQMmY

বিষয়: সাহিত্য

১১৮৯ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

283102
১১ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৩:১৫

A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined offset: 7238

Filename: views/blogdetailpage.php

Line Number: 764

"> রায়হান রহমান লিখেছেন : ইসলাম মানুষকে আশরাফুল মখলুকাতের মর্যাদা দিয়েছে, তার দায়িত্ব-কর্তব্য এবং অধিকারসমুহ দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করেছে। আর এ ক্ষেত্রে সমতা, ন্যায়পরায়নতা, নিরপেক্ষতা ও বৈসম্যহীনতার প্রতি কড়া নজর রাখা হয়েছে। তাই সামান্যতম ব্যত্যয়ের সম্ভাবনা দেখা দিলে প্রতিবাদের সর্বোচ্চ ভাষা ও পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে।

ইসলামের তথাকথিত সমতা, ন্যায়পরায়নতা, নিরপেক্ষতা ও বৈসম্যহীনতার পরিচয় পাওয়া যায়- খোলাফারে রাশেদীন যুগে মুসলিমদের আভ্যন্তরিন খুন খারাপি, মারামারি, দখল, ক্ষমতার লোভ, হত্যাযজ্ঞ থেকেই বুঝা যায়।
১১ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৩:৩১
226373
মোঃ মাসুম সরকার আযহারী লিখেছেন : ভাই রায়হান রহমান আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
আমাদের মনে রাখতে হবেঃ মুসলিমদের কাজ কিংবা মুসলিম সমাজে প্রচলিত সকল রীতি-নীতি আর ইসলাম এক জিনিস নয়। ইসলা হচ্ছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (স) প্রদর্শিত জীবন বিধান। তাই মুসলিমদের কাজ দিয়ে ইসলামকে মূল্যায়ন করলে তা ইসলামের প্রতি সুস্পষ্ট অবিচার করা হবে।
১১ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৪:০০
226387

A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined offset: 7238

Filename: views/blogdetailpage.php

Line Number: 917

"> রায়হান রহমান লিখেছেন : দেখুন, বৃক্ষের পরিচয় ফলে। ইসলাম সিন্দুকে তালা মেরে রাখার কোন বস্তু না। যেখানে নবীজীর পরিবার বর্গ এবং ঘনিষ্ট সাহাবিদের মাঝেই ইসলাম নেই, তো ইসলাম আছে কোথায়? আমার আপনার মাঝে??
283144
১১ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ০৮:৩৭
মামুন লিখেছেন : লিখাটি পড়লাম। ভালো লেগেছে। ভালো লাগা রেখে গেলাম। ধন্যবাদ। Rose Rose
283149
১১ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ০৯:৫৩
মুহাম্মদ আমিনুল হক লিখেছেন : চমৎকার লিখেছেন। আরো লিখবেন আশাকরি....

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File