সম্মান ও মর্যাদার মানদন্ডঃ বস্তুবাদী ও ইসলামি দৃষ্টিকোন (তৃতীয় পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ মাসুম সরকার আযহারী ০৯ নভেম্বর, ২০১৪, ০৭:৩৪:০৩ সন্ধ্যা
সম্পদের প্রাচুর্যে যার সংসার কানায় কানায় টুইটম্বুর।আমোদ-প্রমোদ ও ভোগবিলাসের গড্ডালিকা প্রবাহে যে গা ভাসিয়ে দিচ্ছে। আনন্দের আতিশয্যে যে ধরাকে সরা জ্ঞান করছে। আমজনতার প্রশংসা কুঁড়াতে যে মাঝে মধ্যে কিছু আনুষ্ঠানিক দান-খয়রাত করছে, ভুখা-নাঙ্গা মানুষের প্রতি দরদ প্রকাশে যে বৎসরে একবার সস্তা কিছু কাপড়-চোপড় যাকাত আদায়ের নামে বিতরন করছে এমন ব্যক্তিকেই আমরা বিভিন্ন উপাধী ও সম্মানপদক দিয়ে সমাজের মাথায় তুলে রাখি।
পক্ষান্তরে দারিদ্রতার নিষ্ঠুর কষাঘাতে যার জীবন দুর্বিষহ, সাধ আর সাধ্যের প্রতিযোগিতায় যে প্রতিনিয়তই পরাভব মেনে নিতে বাধ্য, এমন ব্যক্তিকে আমাদের সমাজ তথা আমারা কিভাবে মূল্যায়ন করি? কথায় আছে- 'অভাব যখন দরজায় এসে দাঁড়ায়, ভালবাসা তখন জানালা দিয়ে পালায়'। তার মানে, অভাব নামক শত্রু দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তিকে ভালবাসতে, মানুষ হিসেবে প্রাপ্য সম্মান দিতে, সামাজিক মর্যাদা দিতে, আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ করতে, গুরুত্বপূর্ণ মজলিসে আমন্ত্রন করতে, গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন করতে এমনকি সমাজের স্বাভাবিক কাজ কর্মে অংশ গ্রহণের সুযোগ দিতেও আমরা কুন্ঠা বোধ করি।
আমাদের এই অপরিপক্ক মানসিকতার সরূপ উম্মোচীত হয়েছে নিন্মোক্ত আয়াত ও হাদীসেঃ
আল্লাহ তা'য়ালা ইরশাদ করেনঃ
"মানুষ এরূপ যে, যখন তার পালনকর্তা তাকে পরীক্ষা করেন, অতঃপর সম্মান ও নিয়ামত দান করেন, তখন বলেঃ আমার রব আমাকে সম্মান দান করেছেন। আর যখন তাকে পরীক্ষা করেন, অতঃপর রিযিক সংকুচিত করে দেন, তখন বলেঃ আমারা রব আমাকে হেয় করেছেন"(সূরা আল-ফজরঃ১৫-১৬)।
পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ বলেনঃ "কক্ষনো নয়" অর্থাৎ- ব্যপারটি আসলে এমন নয়। আল্লাহ কাউকে অঢেল সম্পদ দান করার মানে এ নয় যে আল্লাহ তাকে ভালবাসেন। কারণ তিনি অনেক কাফির কিংবা পাপীবান্দাকেও সম্পদশালী করে থাকেন। উদ্দেশ্য হলোঃ "কাফেররা যেন মনে না করে যে আমি যে অবকাশ দান করি তা তাদের জন্য কল্যাণকর। আমি তো তাদেরকে অবকাশ দেই যাতে করে তারা পাপের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারে। বস্তুতঃ তাদের জন্যে রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি''(সূরা আ'লু ইমরানঃ১৭৮)।
হযরত সাহল বিন সা'দ (রাঃ)হতে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর পার্শ্ব দিয়ে এক ব্যক্তি গমন করলেন।তখন তিনি তাঁহার পাশে উপবিষ্ট এক ব্যক্তিকে বললেনঃ এই ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার মতামত কি? সে বললোঃ এতো অত্যন্ত সম্মানীত ও ভদ্র লোক। আল্লাহর কসম! সে যদি বিয়ের প্রস্তাব দেয়, তার কাছে বিয়ে দেয়া হবে। সে যদি কারো জন্যে সুপারিশ কর, তার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।(অন্য বর্ণনায় আছে)সে যদি কোন কথা বলে, তার কথা শোনা হবে।রাসূল(সাঃ)চুপ থাকলেন। অতপর অন্য একজন লোক (রাসূলের পাশ দিয়ে)গমন করেন। এবার রাসূলুল্লাহ (সাঃ)বললেনঃ এই ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার মতামত কি? সে বললোঃ হে আল্লাহর রাসূল! সেতো গরীব মুসলমানদের একজন।সে যদি বিয়ের প্রস্তাব দেয়, তার কাছে বিয়ে দেয়া হবেনা। সে যদি কারো জন্যে সুপারিশ করে, তার সুপারিশ গ্রহণ করা হবেনা। সে যদি কোন কথা বলে, তার কথা শ্রবণ করা হবে না। অতপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ
"হা'জা খাইরুন মিন মিল্ইল আরদি মিছলা হা'জা" অর্থাত্- শেষোক্ত ব্যক্তিটি প্রথমোক্ত ব্যক্তির অনুরূপ পৃথিবীবোঝাই লোকের চেয়ে অধিক শ্রেয়।(সহীহ বুখারীঃ কিতাবুর রিক্বাক্ব)।
চলবে----
আগের পর্বঃ http://www.bdmonitor.net/blog/blogdetail/detail/10280/masumsarker/56648#.VF9tCHHpfIU
বিষয়: সাহিত্য
১২৪৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন