বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অস্থিরতা, কারণ "ছাত্রলীগ"
লিখেছেন লিখেছেন সত্যের সেনানী ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১০:২৬:৪১ রাত
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অস্থিরতা, কারণ "ছাত্রলীগ"
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলছে অস্থিরতা। ছাত্রলীগের আধিপত্যের সংঘাত এর মূল কারণ। ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে বর্তমানে দেশের ৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতা চলছে।
এসব ঘটনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ঘটেছে হতাহতের ঘটনা। প্রাণ গেছে বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মীর।
অস্থতিশীল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হল সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ায় অবস্থিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এবং রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়।
অস্থিতিশীল কলেজগুলো হলো দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ
সম্প্রতি ছাত্রলীগের সহিংসতামূলক কর্মকাণ্ডে এর মধ্যে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ ছিল। গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক অস্থিরতায় ক্লাস ও পরীক্ষা পিছিয়ে অন্তত ছয় মাসের সেশনজটের সৃষ্টি হয়। সংঘাত-সংঘর্ষে এখন শিক্ষার্থীদের মাঝে তীব্রতর হচ্ছে সেশন জটের আশঙ্কা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ছয় বছরে ছাত্রলীগের অন্ত:কোন্দলসহ বিভিন্ন কারণে অন্তত ৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্ধারিতভাবে বন্ধ করতে হয়েছে। নিজেদের স্বার্থ নিয়ে সরকার-সমর্থক শিক্ষকদের নেতৃত্বে পরিচালিত আন্দোলনের কারণে অচলাবস্থা চলছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ছাত্রলীগের সাংগঠনিক দ্বন্দ্বসহ বিভিন্ন ঘটনায় সবচেয়ে বেশি বন্ধ ছিল কুষ্টিয়ায় অবস্থিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি সাড়ে পাঁচ মাস অনির্ধারিতভাবে বন্ধ ছিল। এর মধ্যে বাস দুর্ঘটনায় এক ছাত্রের নিহত হওয়ার ঘটনায় সৃষ্ট পরিস্থিতিতে গত রোববার আবার অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয় বিশ্ববিদ্যালয়টি। এতে সেখানে সেশনজট দীর্ঘ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন ঘটনায় গত ৬ বছরে বিভিন্ন সময়ে বন্ধ রাখা বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
২০ নভেম্বর সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের দুই উপদলের মধ্যে সংঘর্ষে এক বহিরাগত ছাত্রলীগ কর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। অথচ এখন প্রায় সব বিভাগের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। এর আগে ২০১৩ সালের ১২ মে ছাত্রলীগের দুই উপদলের সংঘর্ষে গ্রীষ্মকালীন ছুটি এক সপ্তাহ এগিয়ে আনা হয়।একজন শিক্ষার্থী বলেন, এখানে বর্তমানে প্রায় ছয় মাসের সেশনজট আছে। এখন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধে আরও কয়েক মাস পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও শিবিরের সংঘর্ষে দুজন মারা যাওয়াসহ কয়েকটি ঘটনায় ৭৩ দিন বন্ধ ছিল। ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ১০ মাসে ৫২ দিনও ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক শফিউল ইসলামকে হত্যার ঘটনায় ১৫ নভেম্বর থেকে অস্থিরতা চলছে। পূর্ব ঘটনার জের ধরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ২৩ নভেম্বর ছাত্রলীগের এক পক্ষের ওপর আরেক পক্ষের কর্মীরা হামলা চালান। এ ঘটনায় গুরুতর আহত এক ছাত্রের বাবা ছাত্রলীগের ১৩ জনের নামসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এ নিয়ে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক দ্বন্দ্ব আবার মাথাচাড়া দিল।
এদিকে নকলের দায়ে ছাত্রলীগের দুই নেতাকে বহিষ্কারের প্রতিবাদে ও ভিসির পদত্যাগের দাবিতে দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নভেম্বর মাসে ধর্মঘট পালন করেছে ছাত্রলীগ। ফলে ব্যাহত হয় স্বাভাবিক কার্যক্রম। দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি কমিটি নিয়ে গত ১৮ নভেম্বর সংঘর্ষ হয়। এখানে তিন মাস রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
পদোন্নতির সুবিধার দাবিতে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ২৭ অক্টোবর থেকে অচলাবস্থা চলছে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে ১১ নভেম্বর ছাত্রলীগের সঙ্গে শিবিরের সংঘর্ষ হয়। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইনানুযায়ী সেখানে রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকলেও ছাত্রলীগ কমিটি গঠন করে। এ নিয়ে গত জুলাই মাসে ছাত্রলীগের এক কর্মী খুন হন। এ ঘটনায় কয়েক দিন ছাত্রলীগ সভাপতি সুব্রত বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ কারণে সেখানে চাপা উত্তেজনা চলছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রফেসর সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ছাত্রলীগ এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের ওপর তারা ছড়ি ঘোরাচ্ছে, টাকা কামাচ্ছে। আর অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ্য লোকদের ভিসি না করার কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
এসব ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এই অশান্ত পরিস্থিতিতে তাঁরা ক্ষুব্ধ, হতাশ ও উদ্বিগ্ন। তবে শিক্ষার পরিবেশ স্বাভাবিক রাখার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে।
সংগ্রহ করা
বিষয়: রাজনীতি
১৩৪২ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন