উৎসাহ ও অনুপ্রেরণার বিশাল এক মিনার শহীদ মনসুর আহমেদ.
লিখেছেন লিখেছেন মীম রহমান ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১১:৩৪:৫৩ সকাল
হাফিজুর রহমান.
১. অনেক বড় আশা নিয়ে মার্চ ফর ডেমোক্রেসির প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছিলাম. ভেবেছিলাম সেদিনের আন্দোলনই হবে আওয়ামী শাসনের যবানিপাত. কিন্তু........! আমাদের স্পট ছিল রামপুরা. খুব আশা নিয়ে সকালে রুম থেকে বাহির হয়ে রাস্তায় আসতেই বুঝলাম পরিস্থিতি অত ভাল নয়. যাক, মোড়ে মোড়ে আওয়ামী ক্যাডারদের সশস্ত্র মহড়া ও তল্রাশীর মাঝে রামপুরার শহীদী মসজিদে পৌছতে বেশ বেগই পেতে হয়েছিল. সকাল ১০ টায় মিছিল শুরু হওয়ার কথা, আমাদের জনশক্তির ১০০% ই উপস্থিত কিন্তু বিএনপির ওয়াদাকৃত লাখো আন্দোলনকারীর কাউকেই স্পটে পাওয়া গেলনা. পাশাপাশি উনাদের নেতারাও কিংকর্তব্যবিমূঢ়, কেউই মাঠে আসতে সাহস পাচ্ছেননা. যাক, যথাসময়ে আমাদের মিছিল শুরু হল, যৌথবাহিনী আর আওয়ামী ক্যাডারদের সম্মিলিত আক্রমনে আমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলাম. তবে আবুল হোটেলের সামনে বেশ শক্ত প্রতিরোধই গড়া হয়েছিল. আমরা বিক্ষিপ্ত হয়ে রামপুরার আবাসিক এলাকায় ডুকে গেলাম. তৎকালীন মহানগরী সভাপতি আহমদ সালমান ভাই আমাকে ফোন দিয়ে সবার খোজখবর নিতে বলেন. আমি সবার খোজ-খবর নেয়া শুরু করি. কিছুক্ষণ পরেই তিনি জানান যে, আমাদের একজন ভাই সম্ববত শাহাদাত বরন করেছেন. কিন্তু নাম বলতে পারতেছিলেন না. বললেন যে, "সে উত্তরা ইউনির্ভাসিটিতে পরেন. নাম সম্ববত মনসুর. একটু সবগুলো থানায় খবর নেন". আমি খোজ নেওয়া শুরু করলাম. তখন থেকে প্রায় আধাঘন্টা মনসুর ভাই সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত আমি অনেকটা পাথরের মত হয়ে গিয়েছিলাম. আজ ভাবতে খুব খারাপ লাগে যে, আমরা একই স্পটে ছিলাম কিন্তু আমাদের কিছুই হলনা আর মনসুর ভাই চলে গেল. যাক, খুবই কষ্ট পেয়েছিলাম শহীদ মনসুরের একজন দায়িত্বশীল হিসেবে তার জানাজায় অংশ নিতে না পারা এবং তাকে শেষবারের মত একনজর দেখা থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারনে. তবে কিছুই করার ছিলনা......!
২. এইতো মাস পাঁচেক আগে মনসুর ভাইয়ের কবর জিয়ারত ও তার মার সাথে দেখা করতে চাদপুর গিয়েছিলাম. কবর জেয়ারত শেষে যখন মায়ের সাথে কথা বলতেছিলাম তখন অনেক বেশী আবেগাব্লুত হয়ে যাই. মা বলতেছিলেন "আমার ছেলেমেয়েদের মধ্যে মানসুরই আমাকে সবচেয়ে বেশী আদর করত, ভালবাসত, বাড়ী এলে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিত". আমি অসুস্ত, আমার সবচেয়ে বেশী সেবা সেই করত. আর বলতো "মা, তুমি আমার জন্য দোয়া করো যেন আমি শহীদ হতে পারি."............! কিন্তু সে যে আমাকে ছেড়ে এভাবে চলে যাবে তা আদৌ বুঝিনি.
৩. আমার ছোট্র এ সাংগঠনিক জীবনে যত শহীদের জীবনী পড়েছি সবার জীবনেই কমন কিছু বিষয় দেখেছি. ব্যক্তিগতভাবে তারা কতইনা চমৎকার মানুষ ছিলেন, দুনিয়ার যে কোন প্রাপ্তির চেয়ে শহীদ হওয়াটাই সবচেয়ে বড় আশার বিষয় ছিল তাদের. শহীদ মানসুর চলে গেল কিন্তু সে মরেনী. আজও আমাদের মাঝে উৎসাহ ও অনুপ্রেরনার এক বিশাল মিনার হয়ে বেচে আছে. কিন্তু আমরাতো পারিনি তার রেখে যাওয়া কাজ শেষ করতে....! আজও এদেশবাসী জুলুমের হাত থেকে বাচতে পারেনী. আজও শোনা যায় অত্যাচারীর চিৎকার, ছেলে হারা মা/বাবার কান্না, আহতের রোনাজারি, মজলুমের আর্তনাদ. তাই, আসুন শহীদ মনসুর দিবসে নতুন করে শপথ নেই, "জালিমের মসনদ ভেঙ্গে মজলুমদের মুক্ত করি".
লেখক- সাবেক সেক্রেটারী, ঢাকা মহানগরী উত্তর.
বিষয়: বিবিধ
১১৪৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন