যুদ্বাপরাধীদের বিচার: সঙ্কিত বিএনপি.....!
লিখেছেন লিখেছেন মীম রহমান ০৫ নভেম্বর, ২০১৪, ০১:২৫:২২ রাত
২০০১ সালে চারদলীয় জোট যখন সরকার গঠন করে তখন বয়সে বেশ ছোট ছিলাম, রাজনৈতিক জ্ঞানও তখন খুববেশী হয়ে উঠেনী. তবে একটা বিষয় খুব ভালভাবে মনে আছে. আর তা হল নির্বাচন পরবর্তী তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার একটি বক্তব্য, ''এই সরকারকে (চারদলীয় জোট সরকার) একদিনও শান্তিতে থাকতে দিব না". আর হ্যাঁ, শেখ হাসিনা নির্বাচনের পরেরদিন থেকেই আন্দোলন শুরু করেছিলেন. তারপরও আওয়ামীলীগের ক্ষমতায় আসতে ৭ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে, আন্দোলন চালিয়ে যেতে হয়েছে, জেল খাটতে হয়েছে, গ্রেনেড হামলার শিকার হতে হয়েছে, বড় বড় নেতাদের জীবন দিতে হয়েছে (শাহ কিবরিয়া, আইভি রহমান, আহসানউল্রাহ মাস্টার).
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিএনপি অনেকটা আওয়ামী লীগকে শান্তিতেই রেখেছে. ২০০৯-২০১৩ এর মধ্যে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ২০ দলীয় জোটের সবগুলো মহাসমাবেশে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহনের সুযোগ হয়েছে. সবগুলো সমাবেশের আগে নেতৃবৃন্দ কঠোর কর্মসূচি আসছে বলে প্রচার করতেন. তাই অনেক বড় আশা নিয়ে মহাসমাবেশ গুলোতে যেতাম. কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য শুনে একসাগর হতাশা নিয়ে বাসায় ফিরতাম. "সরকারকে ৬ মাস সময় দিলাম/ ৩ মাস সময় দিলাম/ ঈদের পরই কঠোর আন্দোলন শুরু হবে'' এ ধরনের কথাগুলো শুধু বিরক্তই লাগত এবং এখনো লাগে. বস্তুত আন্দোলন কখনো ঘোষনা দিয়ে হয়না. এটা ধীরে ধীরে শুরু করে গতি বাড়াতে হয়. কিন্তু বর্তমান বিএনপি জানিনা কখনোই আর আন্দোলন শুরু করতে পারবে কিনা...!
গতবছরের ভোটারবিহীন নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার অভিপ্রায় নিয়ে সরকার গঠন করেছে. এজন্য তারা দুটো শক্তিকে তাদের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেছে. প্রথমত ইসলামী শক্তি তথা জামায়াত, যাদের যুদ্বাপরাধী হিসেবে গন্য করার মাধ্যমে শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে ফাসিতে জুলিয়ে শেষ করে দিতে চায়. এজন্যই তড়িঘড়ি করে এই ফাসির আয়োজন, জুলুম-নির্যাতন, মামলা হামলা. আর দ্বিতীয়ত জাতীয়তাবাদী শক্তি তথা বিএনপি, যাদেরকে নিজের দলের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি, বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানকে মামলার বিচারের মাধ্যমে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করে দলটিকে শেষ করে দিতে চায়.
এহেন পরিস্থিতিতে বিএনপি সম্ববত চরম সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে যা সত্যিই খুব বেদনাদায়ক. অনেকে অনেক কথা বলছেন. তারানকোর মিটিং, যুদ্বাপরাধীদের বিচারের ব্যপারে বিএনপি-আওয়ামীলীগ গোপন সমঝোতা ইত্যাদি. আমি অবশ্য এই কথায় বিশ্বাসী নয়. তবে, মীরজাফর কে ক্ষমতার লোভ দেখিয়েই তারা সিরাজউদ্দোলার বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছিল. কিন্তু পরবর্তীতে মীরজাফরের পরিনতি কী হয়েছিল তা সবারই জানা.
বিএনপি যদি মনে করে জামায়াত শেষ হয়ে গেলে তারা রাজনৈতিকভাবে ফায়দা লাভ করবে তাহলে এটা অনেকটা আকাশ কুশুম কল্পনার মত. কেননা জামায়াতকে দমাতে পারলে পরবর্তী টার্গেট অবশ্যই বিএনপি হবে. আর বিএনপিকে ধ্বংশ করতে আওয়ামীলীগকে খুববেশী কষ্ট করতে হবে না, নতুন করে কোন ট্রাইবুনালেরও প্রয়োজন হবেনা. বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের চলমান মামলাগুলো একটু তাজা করে দিলেই হবে. আর বিএনপির চতুর বামপন্থী নেতারা যদি মনে করে থাকেন তারা বেচে যাবেন তাহলে ওনারাও ভুল করবেন. কারন সবার বিরুদ্ধেই ডজন ডজন মামলা আছে. তাই বিএনপির একদম ইউনিট লেভেল পর্যন্ত নেতাদেরও ফাসির রায় দিতে খুববেশী কষ্ট হবেনা, কেননা ফাসি এখন খুবই কমদামী জিনিষ.
তাই এখন বাচঁতে হলে, দেশ ও ইসলামকে বাঁচাতে হলে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্ঠা ও দুর্বার গণ আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন. জানিনা জাতীয় নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে বিএনপির শীর্ষ নেতারা এটা কবে বুঝবেন...?
বিষয়: রাজনীতি
১৫৭২ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অসাধারণ বিশ্লেষণধর্নী লেখনীর জন্যে অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
স্বৈরাচার ক্ষমতালোভী আওয়ামী সরকার কে হটাতে ঐক্যবদ্ধ দূর্বার গণমুখী আন্দোলনের বিকল্প আসলেই নেই!
মন্তব্য করতে লগইন করুন