রুটি এবং লেবুর শরবত বিক্রেতা থেকে রাষ্ট্রনায়ক এরদোগান.

লিখেছেন লিখেছেন মীম রহমান ০১ নভেম্বর, ২০১৪, ১০:০৫:৫৫ সকাল

প্রায় একযুগেরও বেশী সময় ধরে তুরস্কের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে যে লোকটি তিনি বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তায়িপ এরদোগান. ক্যারেশমেটিক লিডারশিপ বলতে যা বুঝায় সবই আছে এই মানুষটির মধ্যে. কী নেই..? অসাধারণ বক্তব্য, অন্যকে নিজের প্রতি আকর্ষন করার প্রচন্ড ক্ষমতা, অদম্য নেতৃত্বের গুনাবলী, দক্ষ সংগঠক, চমৎকার কুরআন তেলওয়াতকারী, আবৃত্তিকার, গায়ক এমনকি জনপ্রিয় একজন ফুটবলারও তিনি. মুহুর্তেই লাখো মানুষকে মাতিয়ে দিতে পারেন. ঘন্টার পর ঘন্টা যাদুর মতই লাখো লাখো মানুষ পিনপতন নিরবতায় মনোমুগ্ধকর ভাবে উনার বক্তব্য শুনেন. উনার নেই ক্লান্তি. ছুটে চলছেন তো চলছেনই. অনেকটা এককভাবেই চালান দল, দেশ ও জনগনকে.

১৯৫৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারী এক নিন্ম-মধ্যবৃত্ত পরিবারে উনার জন্ম. উনার পিতা কোস্টগার্ডে চাকুরী করতেন. এরদোগানের জীবনের আরেকটি আশ্চর্যের বিষয় হল উনি একজন মাদরাসার ছাত্র. ইস্তাম্বুলের একটি মাদরাসা থেকে হাই স্কুল লেভেল শেষ করেন ১৯৭৩ সালে. স্কুল ও কলেজ লেভেলে পড়া অবস্থায় পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করতে উনি শহরের রাস্তায় লেবুর শরবত ও সিমিট (তুরস্কে জনপ্রিয় একধরনের রুটি) বিক্রি করতেন. পরবর্তীতে ইস্তাম্বুলের মারমারা ইউনির্ভাসিটি থেকে যখন অর্থনীতি ও প্রশাসনিক বিজ্ঞানে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেন তখন তিনি একজন পাক্কা ফুটবলার. হয়তোবা অর্থাভাবেই ফুটবলকেই বেছে নিয়েছিলেন পেশা হিসেবে.

মাদরাসায় পড়া অবস্থায় আকৃষ্ট হন ইসলামী আন্দোলনের মহান আদর্শে. ১৮ বছর বয়সে যোগ দেন মিল্রি তুর্ক তালেবে বিরলিয়ি নামে তৎকালীন তুরস্কের মূল ইসলামী আন্দোলন মিল্রি গুরুশের ছাত্র সংগঠনে. একদম কর্মী থেকে শুরু করে একে একে থানা সভাপতি, জেলা সভাপতি এবং সর্বশেষ কেন্দ্রীয় সভাপতি হন. ছাত্রজীবন সমাপ্ত হলে মূল সংগঠনে (রেফাহ পার্টি) যোগ দেন এবং ৩১ বছর বয়সে ১৯৮৫ সালে রেফাহ পার্টির ইস্তাম্বুল সিটির সভাপতি হিসেবে মনোনীত হন. এর পাশাপাশি তিনি রেফাহ পার্টির যুব সংগঠনেরও কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন.

১৯৯১ সালে রেফাহ পার্টি থেকে এমপি নির্বাচিত হন. ২৭ মার্চ ১৯৯৪ সালে ইস্তাম্বুল সিটির নির্বাচনে বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন. মেয়র হয়ে সিটির উন্নয়নে ব্যপক প্রদক্ষেপ নেন. বিশেষ করে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, জানযট নিরসনে উনার কার্যক্রম ছিল চোখে পড়ার মত. অধিকাংশই দিনই নাকি উনি শ্রমিকদের কাজগুলো নিজে পর্যবেক্ষন করতেন. ২৬ মার্চ ১৯৯৭ সালে দেশে সেনাশাসন জারি হলে উনি গ্রেফতার হন, পরবর্তীতে মুক্তি পান. ১৯৯৮ সালে ইস্তাম্বুলের একটি প্রোগ্রামে ধর্মীয় কবিতা আবৃত্তির জন্য ১০ মাসের জন্য তার সাজা হয় এবং মেয়র থেকে অপসারিত হন.

পরবর্তীতে তুরস্কের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তিত হয়. অনেক ঘটনা প্রবাহের পর মূল দল থেকে বের হয়ে উনি নিজেই লিবারেলিজম এর আদলে একটি রাজনৈতিক দল খুলে বসেন. নাম দেন জাস্টিজ এন্ড ডেভেলপমেন্ট (একে পার্টি). এই দলটির মাধ্যমেই ২০০২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত ক্ষমতার মসনদে আছেন তিনি. পরপর তিন তিনটি সাধারণ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয় দলটি. আর এরদোগান তিন মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী থাকার পর এখন প্রেসিডেন্ট. কিন্তু মূল ক্ষমতা উনার হাতেই.

এরদোগান বেশ কিছু বিষয়ে অনেক বেশী সমালোচিত হলেও উনার অসাধারণ নেতৃত্ব সত্যিই প্রসংসার দাবীদার. ২০১৩ সালে একটি ছোট ঘটনাকে কেন্দ্র করে সব রাজনৈতিক দল একসাথে বিদ্রোহে নেমেছিল. পরিস্থিতি এতই খারাপ ছিল যে, উনার ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী কিংবা মন্ত্রীপরিষদ সদস্যরাও উনাকে পদত্যাগের ব্যপারে অনুরোধ করেন. কিন্তু উনি থেমে যাননি. একাই ঘুরে বেড়িয়েছেন গোটা দেশে. কোটি জনতাকে একাই বক্তব্য দিয়ে উনি নিজের অবস্থান বুঝিয়েছেন. এ ঘটনার পর উনার অবস্থান এতই সুদৃড় হয় যে, সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সব দল মিলেও একজন প্রার্থী দিতে পারছিলোনা. কেউই উনার পাহাড়সম জনপ্রিয়তার বিরুদ্ধে লড়তে সাহস করছিলেননা. পরবর্তীতে ওআইসির সাবেক মহাসচিব একমেলুদ্দিন এহসানুগলু সম্মিলিত বিরোধী দলের প্রার্থী হলেও উনি এরদোগানের কাছে ব্যপক ভোটে পরাজিত হন.

বিষয়: আন্তর্জাতিক

১৪০১ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

280198
০১ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:০৯
নিরবে লিখেছেন : ভালো লাগল। এমন ব্যক্তিত্ব আমার দেশে চাই।
০১ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:১৩
223849
মীম রহমান লিখেছেন : ধন্যবাদ.
280246
০১ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:২৩
এরবাকান লিখেছেন : অনেক তথ্যবহুল সুন্দর একটি লেখার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আশা করি তুরস্কের রাজনীতির অন্যান্য দিক গুলা তুলে ধরে আমাদের উপকৃত করবেন।
০২ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৩:৩৮
224015
মীম রহমান লিখেছেন : Happy
280255
০১ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:৪৩
আল্লাহর সন্তুষ্টি লিখেছেন : পিলাচ
০২ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৩:৩৮
224014
মীম রহমান লিখেছেন : Happy
280418
০২ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০১:০২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো
মাহাথির মুহাম্মদ ও জিবনের এক পর্যায়ে কফি ও চকলেট বিক্রি করতেন। এই ধরনের ক্ষুদ্র ব্যবসায়িরা সহজেই মানুষের সমস্যাগুলি বুঝতে পারেন কারন তাদের সাথে সাধারন মানুষের সংযোগ বেশি হয়। অতি উচ্চ শিক্ষিতরা হয় বাস্তবতার সাথে সম্পর্কহিন কিংবা পন্ডিতমন্য হয়ে থাকেন।
০২ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৩:৩৮
224013
মীম রহমান লিখেছেন : হুম.... ধন্যবাদ.

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File